• ৯ম বর্ষ ৮ম সংখ্যা (১০৪)

    ২০২০ , জানুয়ারী



মজার ব্যাপার
আনুমানিক পঠন সময় : ৪ মিনিট

লেখক : জি.সি.ভট্টাচার্য
দেশ : India , শহর : Varanasi,u.p.

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১২ , নভেম্বর
প্রকাশিত ৪৪ টি লেখনী ৪৮ টি দেশ ব্যাপী ৩৮৪৫৭ জন পড়েছেন।
মজার ব্যাপার
---------------------------------------------------------------

গৌরব ছেলেটার বয়স সবে আট বছর হয়ে গেলে কি হয়, সে বেশ অদ্ভূত আর মজার ছেলে হয়ে উঠছে দিন কে দিন। আগে ও এই আমার মা মরা ছেলেটার কথা লিখেছি।
এই যেমন সেদিন বিকেলে স্কুল থেকে সে ফিরে এলে জলখাবার খেতে দিয়েছি হঠাৎ বলে কিনা-’বাপী, ভৌ মানে কি? পাড়ার ভুলো যে বলে সবসময়’।
আমি হাসি চেপে বললুম-‘তুমি কে?’
‘আর গরররর…মানে?’
‘তা বেশ ভালো’
‘হুঁ আমার ও তাই মনে হয়েছিল। আচ্ছা কেঁই….কেঁই…কেঁই বললে তার মানে?’
‘উঃ রে বাবা.…বড্ড লেগেছে আমার…’
‘হুঁ….আর আস্তে করে মাথা  নাড়লে কি বোঝা যায়?’
‘কি গেরো…..কে মাথা নাড়ে আবার? ভুলো?’
‘নাঃ… গোলাপ গাছ…’
‘এটা মোটেই ঠিক কাজ নয়’
‘তুমি না…এক্কেবারে ঠিক বলেছ বাপী। জল দিতে দেরী হলেই রাগ…এখন .তোমার একটা প্রোমোশান পাওনা হয়ে গেলো বাপী  তবে খুব সাবধান  বাপী…...তোমার সামনে কেউ বাধা হ’তে পারে। আমি জেনে আসছি এখনি….’
বলেই ছেলে উধাও। পাগল আর বলে কাকে  ….। 
উঃ কি যে করি আমি এই ছেলে নিয়ে। এই যুগে দেখি মানুষ করতে হলে ছেলের বাপী না হয়ে তার বেস্ট ফ্রেন্ড হতে হবে। জ্বালাতন…আর কাকে বলে?
দশ মিনিট পরে ছেলেটা ফিরে এসে বেশ গম্ভীর মুখে বললো-‘ বাপী, তুমি এমন ভূলো কেন বলতো দেখি?’
‘মা…মানে ? শেষে কুকুর?’
‘হিঃ…হিঃ….হিঃ…যাঃ কি যে বলো না তুমি বাপী? ভূতের ভূ…বলেছি ভুলোর ভু নয়। তোমার অফিসের একজনের গত মাসের খান সাতেক ছুটির দরখাস্ত আজ ও তুমি পাঠাও নি কেন তাই বলো আগে?’ 
আমার অতি সুন্দর ছেলের কথা শুনে একটা বিষম খেলুম আমি।   
তখন মনে পড়ল অনেক কথা…..
এ্যাই খেয়েছে রে…..লোকটা হলো অর্জুন চন্দ্র দাস…বড়বাবুর খুব পেয়ারের লোক…খালি তার খোশামোদ করে আর বড়বাবু ছুটি নিলেই অফিসে সেও কাট মারে। 
আমার জুনিয়ার তবে ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খেতে ওস্তাদ….আমার জায়গায় তার প্রোমোশনই হবার কথা পাকা হয়েই আছে সব…তবে যে দিন তার মেন্টর বড়বাবু ছুটি নেন, সেইদিন আবার আমিই চার্জে থাকি তো তাই একদিন রাগ করে তাকে বলেছিলুম যে অন্ততপক্ষে একটা হাফ ডে সি০এল০ ও না নিলে সোজা রিপোর্ট করে দেবো।
ব্যস….  আমার ওপরে তো রেগে আগুন তেলে বেগুন হয়ে উঠলো একেবারে…..তাই এখন অফিসে এসেই খসখস করে একটা করে দরখাস্ত লিখে আমার টেবিলে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে গট গট করে চলে যায় সে। 
পুরোদিন কাট মেরে আধাদিনের ছুটি। তাই সই….বড়বাবুর ভয়ে কে ম্যানেজারকে গিয়ে বলতে সাহস পাবে?
তা এ সব কথা এই ছেলেটা জানলো কি করে? অ্যাঁ….এ তো দেখছি ঘোর রহস্য,,,,,
‘এটা আবার কে বললো তাই শুনি? গোলাপ গাছ?
‘না………কাকু…’
‘সেটা আবার কে?’
‘কাক….বাগানে আম গাছে থাকে…মানুষের ভাষা বেশ বোঝে…বলতে পারে না অবশ্য…তবে ইসারায় সব বলে আর তাকে আমি কাকু বললে খুব খুশী হয়…’
সে তো হবেই…..মানে শেষে আমি ও হলুম গিয়ে একটা….উঃ….কি ছেলে রে বাবা….
‘তা সেই বা কি করে জানে?’
‘কেন? তোমার সাথে রোজই তো অফিসে ও যায়…আদেশ আছে না…’
‘কার?’
‘মা……বলেই ছেলেটা মুখে হাত চাপা দিয়েই আবার ছুটে পালালো…
উঃ খাঁটি পাগল…
তবে মনে করে সব দরখাস্তগুলো কালকে পাঠাতেই হবে  ব্যাকডেটে সই করে,,,,ছুটি নেওয়ার ও একটা সীমা আর কারণ দুই থাকা উচিত…..
কিন্তু অফিসে গিয়ে দেখা গেল তা ও নেই….খোশামোদে কি না হয়? যে বাপ এখন ও পেন্সন নিচ্ছে সে গতমাসে মারা গেছে বলে ছুটি নেওয়া ও যায়। আমি কারণটা লাল কালিতে আন্ডারলাইন করে প্রশ্নচিহ্ন বসিয়ে পাঠিয়ে দিলুম।
আর কি আশ্চর্য দেখো…আধঘন্টা পরেই ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ডেকে পাঠালেন…
‘স্যার…আসতে পারি?’
‘এসে বসুন…এই দরখাস্তগুলো এতো দেরী করে আজ পাঠিয়েছেন কেন?’
‘স্যার… অডিটের জন্য সব ফাইল ঠিক করতে বলেছিলেন আপনি আমাকে তাই যথাসময়ে সই করে ও পাঠিয়ে উঠতে পারি নি…ইন ফ্যাক্ট ফাইলের তলায় পড়ে গিয়ে ছিল…’
‘আজ সব ফাইল অডিটে চলে গেছে তো?’
‘অবশ্যই স্যার…’
‘তা এই প্রশ্নচিহ্নটা কিসের ওপরে দিয়েছেন আপনি? পরিষ্কার করে হ্যাঁ বা না লিখবেন তো..’
‘আমি তো সি০এলয়ের ব্যালান্স জানি না স্যার….আর কারণটা ও ঠিক…’
‘ঠিক কি?’
‘স্যার….ঠিক মনে হয় না কেননা উনি তো পেনসন হোল্ডার আর সেরকম কোন রিপোর্ট তো এখন ও আসেনি…তাই…’
‘বাবলু…’
‘ইয়েস স্যার…’
‘পেন্সনের এস০ও০ কে ফোন দাও…’
‘হ্যাঁ স্যার….এই….এই যে স্যার…’
‘হ্যালো….দেখুন একটা খবর চাই …হ্যাঁ ডি০এল০ দাস…ওঃ আচ্ছা ও  কে…থ্যাংক্স..’
‘আপনি এখন যেতে পারেন…’
‘থ্যাংক য়ু স্যার…’ 
আমি চলে এলুম। আর তখনি কাজে বসে গেলুম তাড়াতাড়ি…..কিছু আর মাথা ঘামাবার মতন সময় পেলুম না …
বাড়ী ফিরতে গৌরব হেসে জানতে চাইলো-‘বাপী…..চিঁ চিঁ মানে কি?’
রাগ করে বললুম- ‘তা জানি না…মনে হয় ছুঁচোর কেত্তন হবে…’
‘হিঃ….হিঃ….হিঃ….ছুঁচো কোথায় পেলে তুমি বাপী? যাঃ….এ তো ইঁদুরে বলে…’
‘ওই হলো….একই কথা…’
‘মোটেই না ….তবে স্লিপ অফ টাং আর স্লিপ অফ পেন ও কি একই কথা? তফাৎ কি বল তো বাপী…?’
‘দ্বিতীয়টায় দোষ ধরা পড়ে যায় প্রথমটায় নয়…..কথা বদলানো সম্ভব……লেখা নয়…….আরেঃ  হঠাৎ তুমি এই কথা জানতে চাইছো কেন গৌরব?’
‘পরে বলছি….আগে জলখাবারের ব্যবস্থা দেখে আসি….গরররররর…..হিঃ হিঃ…’  
দিন কুড়ি পরে একটা অফিসিয়াল প্রোমোশানের চিঠি হাতে এলো। 
আমি বড়বাবু মানে এস০ও০ হয়ে গেছি আর পরে জানলুম দাসবাবু এ০এস০কে০ হয়ে অন্য ব্রাঞ্চে চলে গেছেন মানে অ্যাসিস্টেন্ট স্টোর কিপার। ম্যানেজিং বোর্ড ডিমোট করে দিয়েছে মিটিংয়ে….পাওনার অতিরিক্ত ছুটি নেওয়া ও সরকারী পেন্সন হোল্ডারকে মৃত বলে ছুটি চাওয়ার জন্য…গতমাসের মৃত ব্যক্তি এইমাসে এসে পেন্সন নিয়ে গিয়েই সব মাটি করেছেন…..দাসবাবু তাড়াতাড়িতে ফাদার ইন লয়ের জায়গায় শুধুই ফাদার লিখলেন যে কি করে তা খোদা মালুম…আমি বুঝতেই পারলুম না কিচ্ছুটি….কি সব কান্ড রে বাবা…. 

09452003290
  
‘   
 
 
   







  
রচনাকাল : ২৬/১২/২০১৯
© কিশলয় এবং জি.সি.ভট্টাচার্য কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 40  China : 29  France : 2  Germany : 2  Hungary : 3  India : 203  Ireland : 5  Japan : 1  Poland : 4  Russian Federat : 4  
Serbia : 1  Sweden : 7  Ukraine : 12  United Kingdom : 1  United States : 317  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 40  China : 29  France : 2  Germany : 2  
Hungary : 3  India : 203  Ireland : 5  Japan : 1  
Poland : 4  Russian Federat : 4  Serbia : 1  Sweden : 7  
Ukraine : 12  United Kingdom : 1  United States : 317  
  • ৯ম বর্ষ ৮ম সংখ্যা (১০৪)

    ২০২০ , জানুয়ারী


© কিশলয় এবং জি.সি.ভট্টাচার্য কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
মজার ব্যাপার by GCBhattacharya is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০১৫৫৬৯২
fingerprintLogin account_circleSignup