আর দেরী নেই। পুরনো ঠাকুর দালানে রঙ চেপেছে। কাঠামোয় মাটির প্রলেপ সম্পূর্ণ। চারদিক রোদ ঝলমল, প্রচুর ব্যস্ততা। কুমোরের নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই। পিতৃপক্ষ শুরু, মহালয়া দোরগোড়ায়, বোধনের অপেক্ষা। এখন বাইরে উৎসবের ছোঁয়া, পুকুরে পদ্ম তাজা হয়ে ফুটে আছে, মনে উৎসবের রং সব মিলেমিশে একাকার। অপেক্ষার পল এক এক করে এগোচ্ছে আর আপামর মানুষের মনে উত্তেজনার পারদ চড়ছে। মন বলছে জগজ্জননী মা আসছেন, তাই জগতে আনন্দযজ্ঞে আজ সবার নিমন্ত্রণ। দেখতে দেখতে ষষ্ঠী চলে এলো, আজ সেই ষষ্ঠী, বিশেষ দিন।
বিশাল বনেদী ব্যানার্জি পরিবারের একমাত্র ছেলে আদিত্য রাজ ব্যানার্জী, রূপে, গুনে কারও চেয়ে কম যায়না। প্রাসাদোপম বাড়ি, গাড়ি, আভিজাত্যের ছোঁয়া বাড়ির প্রতি পরতে পরতে বর্ণসুষমায়। আজ বাড়িতে দেবী ষষ্ঠীর বোধন। কাঁসর, ঘন্টা, উলু, শঙ্খধ্বনি, ঝাড়বাতির আলোতে ঝলমল করছে গোটা বাড়ি। বরনডালায় বরন চলছে। দেবী পক্ষের দেবীবরনে বরনডালায় অর্ঘ্য সাজাতে ব্যস্ত সকল অতিথি, বধূ, মায়েরা। টাইলস বসানো মেঝেতে রঙ্গীন আল্পনা সবার নজর কাড়ছে, ধূপ আর ধুনোর ধোঁয়ায় মায়ের দু চোখ যেন জ্বলজ্বল করছে।
আভিজাত্যের উষ্ণ ছোঁয়ায় বড় হওয়া আদিত্যর হাতে দামী ব্র্যান্ডের সিগারেট। সেদিনই ঐতিহ্যর সঙ্গে আদিত্যর বিবাহ- বিচ্ছেদ। খুশীতে তার চোখ মুখ উজ্জ্বল আর মনও খুব চঞ্চল হয়ে আছে। ধনী পরিবারের ডঃ অম্বরীশ মুখার্জীর একমাত্র নাতনী পারমিতা আজ আর কিছুক্ষন বাদে তার জীবনে প্রবেশ করতে চলেছে। ভাবলেই মেরুদন্ডের মধ্যে একটা আলাদা ভাললাগা শিহরনে ছেয়ে যাচ্ছে এদিক ওদিক। পঞ্চইন্দ্রিয়ের চাহিদাগুলোকে আরও ভালভাবে শান দিয়ে তীক্ষ্ণ করে নিচ্ছে সে। সন্ধ্যে ৭ টা ৩০ মিনিটে রেজিস্ট্রার আসবে। আর সামান্য কিছুক্ষনই বাকী আছে। গাঢ় লাল শাড়িতে লাস্যময়ী পারমিতা সেজেছে মনের মত করে, যথাসময়ে রেজিস্ট্রার এলেন।
দুচোখে পরিপূর্ণ জল নিয়ে ঐতিহ্য আর দেরী না করে সই করে দেয়, অপরাধ একটাই, তার বাবার আর্থিক সামর্থ্য পুরু নয় তাই। চাইলে ঐতিহ্য ডিভোর্সটা নাও দিতে পারত। কিন্তু সে অপমানটাকে নিশ্চুপ ভাবে সাদরে গ্রহণ করেছিল। এক দুর্গার আগমন, আরেক দুর্গার বিসর্জন। কুঁড়িতেই ঝরে গেল প্রানচঞ্চল তরতাজা ফুটন্ত ফুল। অশ্রুসিক্ত চোখে করুন আকুতিতে মনের দুঃখ, কষ্টের আল্পনা দিয়ে বরন করে চলে যাচ্ছে বিসর্জ্জিত দুর্গা, নব দুর্গাকে স্বাগতম।
এদিকে মৃন্ময়ী বেশে আরও এক চিন্ময়ীর অভিষেক প্রাণপ্রতিষ্ঠা হচ্ছে, কি জানি প্রান এসেছে তো?? এলে হয়ত মূর্তির অন্তরে প্রবেশ করতেও পারে?? হয়ত দুচোখে দেখছে এই ঘটনার পরবর্তী পর্যায়, পরিনতি??
স্বাগতম মা দুর্গা
রচনাকাল : ৪/১/২০২০
© কিশলয় এবং সুমিতা সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।