মূল্যবোধ
জি০সি০ভট্টাচার্য্য. বারাণসী. উত্তর প্রদেশ
রাত বেশ হয়েছিল সেবার নিজের গাঁয়ে ফিরতে।
অনেকদিন পরে ছুটি পেয়েছিলাম।
আর কেই বা আছে সে’খানে যে যাব?
হঠাৎ মনে হলো হয়তো পিসেমশাই আছেন এখন ও অথবা পিসিমা যাদের ওপরে ভার দেওয়া ছিল বাড়িটার।
না থাকলে সবই হয়তো গেছে বেহাত হয়ে।
আর ট্রেনটা ও লেট করে বেশ জব্দ করলো। সন্ধ্যার পরে তো ভ্যানরিক্সা ও নেই যে উঠবো। যাক। থাকিতে চরণ ভয় কি….আমি তো গ্রামেরই ছেলে।
নেমে পড়লাম মেঠো পথে।
আর সে কি পথ। ফুরোয় আর না। হাঁটছি তো হাঁটছিই।
হঠাৎ কে যেন বলে উঠলো--‘স্যার, ওই কলমটা কি আপনার পকেট থেকে পড়ে গেল?’
‘না’
যত্ত সব। আমার পকেটে বলে কলমের বালাই নেই তার আবার পড়ে যাওয়া।করি মিলিটারী সার্ভিস। সবে ক্যাপ্টেন হয়েছি….
একটু গেছি, আবার কে একজন বলে উঠলো-‘এই রে। আপনার পকেট যে ছেঁ,ড়া স্যার। মনিব্যাগটা তো পড়েই গেল। তুলে নিন…’
‘ওটা আমার নয়’
‘সে কী? তুলে দেখুনই না একবার। মনে হয় অনেক টাকা আছে…’
‘যা আছে তা থাক…’
খানিকটা যেতেই লাগলো এক হোঁচট আবছা অন্ধকারে…পড়লুম ধপাস করে। হাতের ব্যাগটা ছিটকে গেল। আমি ও তুলতে গেলুম।
‘এই নিন স্যার আপনার ব্যাগ’
‘তুমি কে হে?’
‘এই গ্রামের অজ নুখ্যু একজন চাষাভূষো মানুষ, স্যার]
‘হুঃ….চাষারা ও দেখি গাঁয়ে ইংরেজী বলে আজকাল। হতেই পারে জনশিক্ষিার ফল…তা বেশ। তবে ওটা আমার নয়। আমার ব্যাগ আমি পেয়ে গেছি। এখন তোমার নামটি বলে ফেলো দেখি…’
‘আপনি চিনবেন না…যেতে দিন। তবে ব্যাগটা নিলে পারতেন…’
‘আমি হন হন করে এগিয়ে গেলুম রাগ করে। গ্রামে থাকে অথচ পরিচয় দিতে চায় না, এ তো ভালো কথা নয়’।
‘আরে রে রে….লাগলো তো…ডালটা নিচু খুব। নিন উঠুন আমার হাত ধরে’
‘আবার মস্করা। আমি মিলিটারী সার্ভিসে থেকে ও আমাকে উঠতে হবে তোমার হাত ধরে? তা বেশ দাও দেখি হাতটা এগিয়ে…’
‘আরেঃ….এ তো আমার বন্ধু রমেশের হাত মনে হয়…বলি তুমি কি রমেশ না কি?’
অ্যাঁ হ্যাঁ…. এই নিন আপনার সুটকেশ। আসুন…’
‘তুমি যদি রমেশ তবে আমাকে আপনি আঁজ্ঞে করছো যে বড়? এমনিতে ও গ্রামে কেউ ওই সব শহুরে আদিখ্যেতার ধারই তো ধারে না…’
আরে আপনি হলেন শহুরে তায় বড় চাকুরে। একটু সম্মান না দেখালে কি হয়, স্যার?’
‘আঃ কি ভারী সুটকেশ রে বাবা। এ তো দেখি তোলাই সহজ নয় আমার পক্ষে। এ হলোটা কি? নাঃ…..ব্যাগ থেকে টর্চটা আর না বার করলেই নয় এখন দেখছি। সুটকেশটা খুলে দেখি একবার…’
‘আরে করেন কি? করেন কি? দিন আমিই ওটা বয়ে নিয়ে যাই এখন খানিক..’
‘তবে রে? খপ করে হাতটা ধরে এখনি…’
‘নাঃ আমার হাতটা বোঁ করে একপাক শূণ্যে ঘুরে আসতেই ব্যাজার হয়ে বললুম-‘ওঃ তোমরা? এতদিন পরে বাড়ী এলুম কোথায়
আদর যত্ন সম্মান করবে তা নয় । বেঁড়ে রসিকতা হচ্ছে…’
‘না স্যার সম্মানই করছি। কলমটা সোনার ছিল। মণিব্যাগে ও অনেক টাকা ছিল। ব্যাগটায় তো ছিল বেশ কখানা আকবরী মোহর আর সুটকেশ ভর্তি ছিল হীরে মুক্তো । এইসবে…..তা আপনি তো নিলেনই না স্যার’…
হুঁঃ শহুরে মূল্যবোধের পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। বুঝতে পারছি। তা এখন বাড়িতে নিয়ে তোল দেখি আমাকে। তারপরে সব শাস্তি যা দের না তোমাদের একখানা তখন বুঝবে ঠ্যালাটি…’
‘ তবে স্যার সব কিছুই আপনার বাড়িতে পৌঁছ দিই আমরা। আপনি ওই টাকা দিয়ে আপনাদের বাড়িতে একখানা ইস্কুল না হয় খুলে দেবেন। সবই তো পড়ে আছে এখন। কেউ তো নেই। আর অন্য শাস্তি দেবেনই বা কি করে? ওতেই সব হবে।‘
=============================================
০৯৪৫২০০৩২৯০
রচনাকাল : ৩০/৬/২০১৬
© কিশলয় এবং জি.সি.ভট্টাচার্য কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।