ছোট্ট পুতুলের দুষ্টুমী
----------------------------------------------------------------------------------------
জি০সি০ভট্টাচার্য, বারাণসী, উত্তর প্রদেশ
===================================================
বন্ধু দিলীপ ফোনে এক্কেবারে নাছোড়বান্দা হয়ে লেগেছিল সে’দিন আমার সাথে।
আমি যত বলি যে এখন আমার সময় নেই, তা সে শুনলে তো। মহা মুশ্কিলেরই ব্যাপার। শেষে বাধ্য হয়ে বললুম যে ‘আচ্ছা বেশ, রবিবারে যাব তোর বাড়িতে সকালের দিকে’।
দিলীপ বলল-‘সকালে হ’বে না। ঝামেলা তো হয় সন্ধ্যের পরে। তুই বিকেলের দিকে চলে আয়’।
‘আচ্ছা, তাই সই….… ‘ব’লে কোনমতে রেহাই পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলুম।
কিন্তু মুশ্কিল হ’লো এই যে আমার পরীর দেশের রাজকুমার ছেলে চঞ্চল তো আমার কাছে তখন নেই, দাদা ছুটিতে বাড়ী এসেই নিজের অপরূপ সুন্দর দুধের বরণ পুত্র রত্নটিকে নিয়ে গেছে বাড়িতে। অবশ্য আমাকে জিজ্ঞেস করে তবে চঞ্চল গিয়েছে, আমি না করলে যেতোই না, তা ঠিক।
কিন্তু একলাটি আমার আজকাল কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না।
কাজেই এখন বাদলকেই সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হবে আমাকে। আসলে বাদল তো আর জানেনা যে স্কুল থেকে বাড়ী ফিরতেই দাদা এসে চঞ্চলকে নিয়ে চলে গেছে। ছেলেটা যথারীতি আসবে বন্ধুর সাথে খেলবে বলে। তখন ওই দারুণ সুন্দর তেরো বছরের ছেলেটাকে সঙ্গে নিয়ে দিলীপের বাড়ী গেলেই ঠিক হবে। চাই কি বাদলকে আজ রাত ভোর না ছাড়লে ও হয়। ছেলেটার সাথে বসে দিলীপের সমস্যাটা বিশ্লেষণ করা দরকার। তাই বাদল ছেলেটাকে ছাড়া তো চলবেই না। ।
সেই মতো কাজ।
দিলীপ তো মহা খুশী।
বাড়িতে একা থাকে। অকৃতদার। আমাদের জন্য নিজেই চা জল খাবার আনতে ছুটলো।
আর সেই সুযোগে বাদল বাড়ির সব ঘর গুলো দেখে নিয়ে আবার বসবার ঘরের সোফায় এসে বসে পড়লো ভালোমানুষটির মতন মুখ করে।
‘কি বুঝলে, বাদল?’
‘কেউ আংকলকে মনে হয় একটু ত্যক্ত করছে….’
এই বলে তেরো বছরের সুন্দর মিষ্টি ছেলেটা মুখ টিপে একটু হাসলো। বাদলকে আর ও বেশী করে যা দারুণ সুন্দর দেখায় না, হাসলে পরে, সে আর কি বলবো।
দিলীপের সমস্যাটা তখন ও আমি কিচ্ছুটি তো জানি না, তাই চুপটি করে বসে রইলুম।
চা টা সেরে তখন বললুম—‘এইবার বলো বন্ধু, কি তোমার সমস্যা…’
‘আমি মারা পড়তে চলেছি ভাই, তুই বাঁচা…’
বাদল ললো--‘আংকল, এক্সক্যুইজ মি….কবে থেকে চলেছেন আপনি মারা পড়তে….যদি বলেন…………’
‘তা গত এক সপ্তাহ ধরে…’
‘সে কি আংকল? মারা পড়তে তো এতদিন লাগে না কারো…..আপনার লাগছে কেন, আংকল?’
‘কেননা মরছি যে খুব ধীরে ধীরে ….’
‘হুঁ….স্লো পয়জনিং করা হয়ে থাকে মানুষকে, তা তো জানি…..কিন্তু স্লো ডেথ তো শুনি নি কখনো…। আংকল সেটা কি করে হয় বলবেন কি একটু?’
‘বলবার আর কি আছে….?’
‘অনেক কিছুই আছে আংকল। আমরা তো আর সর্বজ্ঞ নই……সে যাক, .তা আপনি কি নিজেই রান্না বান্না করেন?’
‘হুঁ…’
‘দুই বেলাই….’
‘নাঃ, একবেলা করে ফ্রিজে রেখে দিই । অফিস থেকে এসে মাইক্রো ওভেনে গরম করে নিই। চা টোস্ট অবশ্য টাটকা বানাতে হয়…’
‘তা সেই খাবার কি ইদানিং কালে অদৃশ্য হয়ে যেতে শুরু করেছে?’
‘এ্যাই তুমি কি করে জানো এই কথা, ভাই?’
‘জানি, কেননা আপনার ফ্রিজ খালি তা আমি দেখে নিয়েছি। কোন ফ্যামিলির বিশেষ করে ব্যাচেলর মানুষের ঘরে ফ্রিজ থাকতে সেটা খালি চালিয়ে রাখবে….এটা ঠিক স্বাভাবিক নয়…’
‘তুমিই বলো ভাই, এটা কি আমাকে না খাইয়ে মারবার ফন্দি নয়? আমি কি হাওয়া খেয়ে থাকবো? যাই রাখি না কেন, সবই সাফ হয়ে যায় যে….’
‘নাঃ, দিব্যি করে খেয়ে দেয়েই থাকবেন, আংকল….অন্য দিন আর ও কি কি হয়েছে তাই বলুন…’
‘দিলীপ বলল-‘ এখন এই চলছে। এ’টা বন্ধ করতে পারলে হয়তো অন্য কিছু ঘটবে’।
‘তা বন্ধ করে দিলেই তো পারেন, আংকল’।
‘কি করে? খাবোটা কি?’
‘খেতে আর পাচ্ছেনই বা কই? কয়েকদিন না হয় কোন রেষ্টুরেন্টে গিয়ে বিকেলে খেয়ে আসবেন। সকালে অবশ্য রান্না আপনাকে করতেই হবে, তবে যা তৈরী করবেন, কম করেই করবেন। কিছুটি ফ্রিজে রেখে যাবেন না। তা’হলেই আর না খেয়ে মরবেন না’।
‘তা আংকল, আপনার ওপরে কি কারো রাগ থাকতে পারে, মানে আপনার ক্ষতি করতে পারে এমন কি কেউ আছে?’
‘নাঃ ভাই, তেমন কেউ তো নেই। তবে আমার ছোটভাই হয়তো ইদানীং একটু অপ্রসন্ন হয়ে আছে আমার ওপরে। পারিবারিক সম্পত্তির ভাগ নিয়ে মনোমালিন্য আর কি’।
‘তা দোষ আমার নেই তা জানো। আসলে আমার বাবার একটা নীলার আংটি ছিল। এদিকে এক জ্যোতিষী আমাকে ও নীলা ধারণ করতে বলেছেন। ভাইকে না দিয়ে তাই আমি আংটিটা রেখে নিয়েছি, অবশ্যই ভাইকে অর্ধেক মূল্য ধরে দিয়ে। তবু ও দিবাকর হয়তো তা’তে ঠিক সন্তুষ্ট হয় নি। খালি আমাকে পেলেই শোনায়, তুমি একটু সাবধানে থেকো দাদা। নীলা টিলা কি আর সবার সয়? বহু ঝামেলা এসে ঘাড়ে পড়ে যে….’।
‘তা হয়তো পড়ে, তবে এক সপ্তাহ আগে কেউ কি এসেছিল আপনার বাড়িতে, আংকল?
‘কই না তো, ভাই’।
‘কোন চিঠিপত্র এসেছিল?’
‘নাঃ……তবে একটা পার্শেল আসে গত শনিবার আমার নামে এক সন্দীপ কুমারের কাছ থেকে। লোকটা যে কে ঠিক মনে করতে পারি নি। প্রেষকের টাইটেল লেখা ছিল না। ঠিকানাটা ও ঠিক মনে পড়লো না যে বুঝবো কোন বন্ধুর উপহার । আমি তিনজন সন্দীপকে চিনি। তবে ওই নিয়ে আমি বিশেষ মাথা ঘামাই নি কেননা পার্শেলে একটা ছোট্ট পুতুল তো মাত্র এসেছিল’।
‘পুতুল? মানে আপনাকে খেলতে দিয়েছে? হিঃ…..হিঃ…..হিঃ…..সে ভারী মজা তো। তা পুতুলটা আছে কি?’
‘ওই তো, সামনের টেবিলে সাজিয়ে রেখেছি। দেখো না, ভাই। কিসের যে তৈরী তা ও জানি না, তবে কোন হাল্কা জিনিষ মানে প্ল্যাস্টিকের হবে হয়তো। ঠিক একটা বেড়ালের মুন্ডু যেন’।
‘শুধুই মুন্ডু? ধড় গেল কই?’
বাদল টেবিলের কোনায় রাখা পুতুলটাকে দেখলো মন দিয়ে আর ছেলেটার সুন্দর ভ্রুজোড়া ধনুকের মতন হয়ে গেল দেখা মাত্রই। মানে বাদল চিন্তিত। একটা পুতুল নিয়ে চিন্তার কি আছে? ব্যাপারটা কি?
‘আংকল, পুতুলের পিছনের এই সেলোফেন কাগজটা কি আপনি লাগিয়েছেন?’
‘নাঃ….ওমনিই এসেছে? আমি খুলি নি আর। খুব হাল্কা মতন। তুমি হাতে নিয়ে দেখো না।’।
‘সন্দেহজনক জিনিষ ….আমার মনে হয় না যে এই খেলনাটা এ’দেশে তৈরী। তবে অনেক পুরণো জিনিষ বলে বোধ হয়। কিন্তু পুতুলের মুন্ডু শুধু কেন? মনে হয় পুরো শরীরটা ও ছিল। কেটে আলাদা করা হয়েছে হয়তো। গালার মতন কিছু লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে কাটা জায়গায়, সেলোফেন কাগজের নীচে। পুরোটা থাকলে সহজেই বোঝা যেত যে জিনিষটা আসলে কি। আংকল, আপনি মাছ টাছ রান্না করে রাখতেন কি, ফ্রিজে?’
‘হ্যাঁ, ভাই। সে দুঃখের কথা আর বলো না। আমার অতো সাধের মাছের ঝাল সব হাওয়া। তা তোমার কি মনে হয় বেড়াল পুতুলেই মাছের ঝাল খায়?…’
দিলীপটা যে চিরকালের পেটুকরাম তা বাদল জানেনা কিন্তু বুঝে গেল শুনেই।
গম্ভীর হয়ে বললো- ‘হুম। আমি তা বলিনি আংকল, তবে এখন তো আমাদের আর করবার কিছু নেই, তাই নতুন কিছু ঘটনা হ’লে জানাবেন। আমি কাকুর কাছেই থাকবো হয়তো দিন কয়েক……’
বলেই আমার দিকে চেয়ে মুখ টিপে একটু হাসলো ছেলেটা। কি সাংঘাতিক ছেলে রে বাবা, আমার সব প্ল্যান ও ঠিক ধরে ফেলেছে। আচ্ছা, বাড়ী যাই, দেখাবো মজা ছেলেকে।
দিলীপের বাড়ী থেকে ফিরছি।
পথে পড়লো নীলম রেষ্টুরেন্ট। দেখেই বাদল বলল-‘কাকু, বিরিয়ানী বা পোলাও আর মাছ ভাজা বা মাছের ঝাল যা পাওয়া যায়, নিয়ে যাবে? এখন তো আবার দারুণ শীতকাল । তোমাকে আর রান্না বান্না করতে হবে না রাতে বাড়ী গিয়ে। আর আমরাই সব গরম গরম খেয়ে ফেলবো, অন্য কেউ পারবে ও না এসে খেয়ে যেতে। হিঃ…হিঃ…হিঃ…..’
আমি বললুম—‘হুঁ, তা ঠিক। আজ মনে হয় ঠাডা বেশীই পড়ছে একটু । তুমি নিয়ে নাও তবে তাই। আমার এখনি শীত ও করছে বেশ। তুমি না হয় জিজ্ঞেস করো দেখি, যদি দু’গেলাস গরম বোর্নভিটা পাওয়া যায়। খেলে শীতটা একটু তো কাটবে’।
তা আমরা বোর্নভিটা খেয়ে, খাবার নিয়ে বাড়ী ফিরে গরম জলে হাত পা ধুয়ে গিয়ে বসলুম। বাদলকে জিজ্ঞাসা করলুম—‘বাদল, এখন বলো তো তুমি কি বুঝলে? ওই ছোট্ট পুতুলের সাথে কি ঘটনাগুলোর কোন যোগ আছে?’
বাদল আগে বাড়িতে ফোন করে সে তখন বাড়ী যাচ্ছে না, আমার কাছেই থাকবে তাই বলে দিয়ে ঘরে লাগানো রুম হীটার আর ব্লোয়ার দু’টোই চালিয়ে দিয়ে বাইরের পোষাক বদলাতে শুরু করলো। চঞ্চলের দামী পোষাকগুলো পরতে বাদল খুব সংকোচ করে কিন্তু তেরো বছরের পরীর দেশের রাজকুমার ছেলেটাকে হাতে পেলে আমার মতন জড়িয়ে ধরে আদরে আদরে অস্থির করতে ও ছাড়ে না।
বাদল ভেতরে পাতলা নেটের গেন্জী ও সরু জাঙিয়া পরে ছিল একটা। সেই অর্ন্তবাসের ওপরেই ঘরে পরবার চকচকে পাতলা একটা চক্কর বক্কর জামা আর হাফ প্যান্ট পরে নিলো সে চট করে। তারপরে সোফায় আমার পাশে এসে বসে পড়ে বাঁ হাতে আমার গলা জড়িয়ে ধরে বলল-‘ও কাকুউ, আমার কি মনে হয় জানো, কাকু। ওটা না, হয়তো কোন পুতুলই নয়। অন্য কিছু হ’বে। আমার সন্দেহ হচ্ছে। জিনিষটা অনেক পুরনো আর বিদেশী। একটা অদ্ভূত গন্ধ ও আছে পুতুলটার গায়ে। প্রোটেক্টিং কোট দেওয়া আছে মনে হ’লো। আমাকে এখন তাই একটু পড়াশুনো করতে হবে ইন্টারনেটে, কাকু’।
‘অন্য কিছু আবার কি রে, বাবা?’
‘তা ঠিক জানি না, কাকু তবে ওটা খুব দুষ্টু। মনে হয় আংকলকে অনেক জ্বালাবে। কেউ ইচ্ছে করেই পাঠিয়েছে মনে হয়, নীলার অভিশাপ দেখাতে…’।
‘আমি তো এখন ও ঠিক কিছুই বুঝছি না, বাদল। আর এই সব ঘটনার জন্য একটা পুতলকে দায়ী করাই কি ঠিক? শুনলে লোকে হাসবে যে। তখন? তবে এই শীতে বসে তুমি ইন্টারনেট নিয়ে থাকো মেতে। আমি কিন্তু নড়ছি না। আমি বরং পুতুল প্রেষকের ঠিকানাটাকে বসে বসে ফোনে যদি ভেরীফাই করা যায় তো তাই না হয় দেখি। জায়গাটা বেশী দূর তো নয়। আর ওই পাড়ায়ই তো আমার বন্ধু কাল্লুরাম থাকে। অসুবিধে কিছু হবে বলে মনে হয় না।’।
বলেই সুন্দর ছেলেটাকে বুকে চেপে ধরে একটা নরম দামী কম্বল দিয়ে জড়িয়ে নিলুম বাদলকে ঘিরে নিয়ে। রাগ হয় কিনা ছেলেটার এই শীতের মধ্যে ফ্যান্সী ড্রেস পরা দেখে। তাই।
আমার কান্ড দেখে খিল খিল করে হেসে ফেলে অপরূপ সুন্দর ছেলে বাদল বললো—‘ও কাকুউ, তুমি তো আবার একটু শীত কাতুরে ছেলে কি না, তাই তোমাকে ক্ষ্যাপাতে চঞ্চলের এই সুন্দর পাতলা পোষাকটা এখন আমি পরেছি। এটা দেখে তোমার রাগ বেশী হ’লে, তখন তুমি কি করো তাই দেখবো বলে, কাকু। তা হ’লেই হয়তো বেড়াল পুতুলটার ও রাগ হ’লে সে যে কি করবে তা একটু বুঝতে পারবো… হিঃ…..হিঃ……হিঃ………’
‘কি? আমি বেড়াল? দাঁড়া ও তো। দেখাই তবে মজা’।
‘হিঃ…হিঃ…হিঃ…করো দেখি কি করবে তোমার রাগ হ’লে, কাকু’।
‘তা আমি বেশী কি আবার করবো, শুনি? তবে কিন্তু এখনই তোমার পরনের এই সমস্ত বাজে মার্কা পোষাকগুলোকে সব একে একে খুলে নিয়ে টান মেরে দূর করে ফেলে দেব। কিচ্ছুটি রাখবো না তা কিন্তু ঠিক। একটা ও না। দু’চোখের বিষ আমার। হ্যাঁ না তো। খালি দেখি এই ছেলের সব দুষ্টুমী….গরম কাল পেয়েছে যেন। ঠান্ডা লাগলে তখন কে বুঝবে ঠ্যালা, তাই শুনি? যত্তো সব…….’
‘এ মা ছিঃ…ইইইইইই…………’ বলে উঠে দাঁড়িয়ে মা কালীর মতন করে এত্তোবড়ো এক জিভ কেটে বাদল হেসে ফেলে বললো -‘এই এত্তোবড়ো একটা ছেলেকে তবে কি তুমি এখন, এক্কেবারে ল্যাংট করে রাখবে, কাকুউ?’
‘হুঁ, তাই করতে হবে তো। সে নইলে হবেই না’।
দু’ হাত উল্টে বেশ হতাশ ভাব দেখিয়ে বাদল বললো--‘তা সে যা করতে হয়, তাই না হয় করো, কাকু। তবে আমি বুঝে গিয়েছি যে হয়তো আংকলের ও জামা কাপড় ও…এইবারে একে একে……কথায় আছে না খাওয়া পরা….খাওয়ার পরেই তো পরার সমস্যা আসে, কাকু….ওই যাকে বলে রোটি কাপড়া মকান …তাই আর কি, কাকু .হিঃ…. হিঃ…. . হিঃ….’
কি ছেলেরে বাবা। আমাকে তো বেড়াল বলেই দিলো আবার।
তা বেশ খানিকক্ষণ পরে আমি বাদলকে ছেড়ে দিতে তখন সে সত্যিই সেই শীতের রাতে একটা মাত্র শাল জড়িয়ে নিয়ে কম্প্যুটার টেবিলে গিয়ে ইন্টারনেট নিয়ে বসে পড়লো। কি পড়বে কে জানে?
রাত দশটা বেজে গেল ছেলের তাই নিয়ে।
তখন আমি উঠে গিয়ে চটপট করে খাবার দাবারগুলো গরম করে এনে বাদলকে খেতে ডাকলুম। খেতে বসে বললুম—‘বাদল, এর মধ্যে আমি ফোনে জেনে নিয়েছি যে ওই ঠিকানায় ওই নামের কিন্তু কোন লোক থাকে না’।
বাদল কেমন অন্যমনস্ক ছিল। বললো-‘সে তো জানা কথাই, কাকু। যাক, তবু ভেরীফাই হয়ে গেলো যে ওটা কেউ দুষ্টুমী করতেই পাঠিয়েছে। আমার সন্দেহ অমূলক নয়’।
খেয়ে দেয়ে উঠে ব্রাশ ট্রাশ করে আমি সোজা বিছানায় গিয়ে গরম লেপের মধ্যে ঢুকে পড়লুম। বাদলকে নিয়ে বেশীক্ষণ পায়চারী ও করা হ’লো না আমার।
পরদিন আর এক কান্ড।
বিকেলে বাড়ী ফিরেই দিলীপ ফোনে মহা হৈচৈ বাধিয়ে ছাড়লো। কোথায় কিসের একটা পার্টিতে যাবার কথা ছিল তার। তাই স্যুটকেস থেকে একটা দামী স্যুট টাই সব বের করে টেবিলে রেখে গিয়েছিল। বাড়ী ফিরে এসে দেখে সব নিপাত্তা হয়ে গেছে । ‘
‘ও রে বাবা রে…সর্বনাশ হয়েছে….আমার রেমন্ডের দামী স্যুট…..এক্কেবারে গায়েব…তুই শিগ্গীর করে চলে আয়, সিদ্ধার্থ।
আমি বললুম-‘এখন গিয়ে কি করবো আমি? তুই বরং দেখ, কারো কাছে ধার টার করে বা কোন ড্রাই ক্লিনারকে ভজিয়ে যা পাস তাই পরে পার্টিতে চলে যা এখন। বেনারসে এই ধান্ধা ও বেশ চলে রে, ভাই। কিছু ভাড়া লাগবে অবশ্য তোর। আমরা পরে গিয়ে খুঁজে দেখব। যাবে আর কোথায়? ঘরেই আছে কোথাও…’
বলেই বাদলের রোটি কাপড়ার কথা মনে হ’তেই হাসি পেয়ে গেলো আমার।
শেষে আমি বেড়াল প্রমাণিত হয়ে গেলুম যে। শুনলেই ওই অতি সুন্দর দুষ্টু ছেলেটা যা হাসতে শুরু করে দেবে না সে আর বলবার নয়। কি যে করি। আর বলতেও তো হবেই বাদলকে। ভালো গেরো হ’লো তো আমার।
পরদিন সকালেই যেতে হ’লো দিলীপের বাড়ী আবার গোটা দুই ফোন পেয়ে। অনেক খুঁজে ও তার দামী রেমন্ড স্যুট কিন্তু পাওয়া গেলো না।
বাদল বললো-‘এ’দের বেশী শক্তি তো নেই, কাকু। তবে এখন হাজার খুঁজে ও কিন্তু পাওয়া যাবে না। কয়েকদিন পরে যখন আর খোঁজা হবে না তখন হয়তো দেখা যাবে যে সামনেই কোথাও পড়ে আছে’।
‘তুমি কাদের কথা বলছো, বাদল?’
‘হিঃ…হিঃ…হিঃ….মনে করো এই ছোট্ট পুতুলটার’।
আমার বাদলের এই ঠাট্টা শুনেই রাগ হয়ে গেলো তবে জানা গেল যে কাল ফুল স্লিভ সাফারী স্যুট পরেই দিলীপ কাজ চালিয়ে ছিল। ধার করতে হয় নি। আর ফিরেই নিজে কেচে ও দিয়েছিল।
দিলীপ ব্রাশ করতে বাথরুমে চলে গেল, আমাদের চা টা দিয়ে।
আর পরক্ষনেই তার জোরালো চীৎকার শোনা গেল---‘ওরে বাবারে। এ আবার কী? কালকে নতুন কলগেট এনেছি, যেমনকে তেমনিটিই তো আছে ও দেখছি কিন্তু এ…এ…কী? এতো হাল্কাই বা লাগছে কেন আর টিপলে খালি ভুস ভুস করে হাওয়াই বা বেরোয় কেন? অ্যাঁ…..পেষ্ট গেল কোন চুলোর দোরে? ও রে বাবারে…..এই সর্বনাশা নীলা পরে এখন আমার যে এখন মরে নীল হবার দশা হ’লো রে।….’
দিলীপের কথাবার্তার ধরণই ওই রকমের তবে বাদল তো শোনা মাত্রই হিঃ…..হিঃ……..হিঃ………… করে হেসে দিলো।
আমি বেশ বুঝতে পারলুম যে আজ আবার আর এক নতুন দুষ্টুমী হয়েছে করা দিলীপের সাথে। কি গেরো বলো তো। কি যে করা উচিৎ, তাই ঠিক করতে পারলুম না আমি। পুতুলের কথা তো আর কেউ বিশ্বাস করতে চাইবে না, তা ঠিক কথা। মনে হয় যে দিলীপ ও বিশ্বাস করেনি। অগত্যা তখন বাড়ী ফিরে আসতে হ’লো। বাদলের স্কুল আছে। ছেলেটাকে এখন নাইয়ে খাইয়ে স্কুলে পৌঁছে দিতে হ’বে । আবার বিকেলে গিয়ে স্কুটারে করে বাড়ী নিয়ে আসতে ও হবে। তা করতে হোক গিয়ে, তবু যতদিন না চঞ্চল আসছে, আমি বাদলকে ছাড়ছি না। আর দিলীপের সমস্যাটা ও তো মেটাতে হবে।
তা পরদিনই আবার বিকেলে ফোন।
দিলীপ বললো-‘ও ভাই সিদ্ধার্থ, আমাকে তুই এখন একটু এসে দয়া করে বাঁচিয়ে তোল। কেউ আমার সাথে দেখি খালি মস্করা করে। আমার চেয়ারের মোটা গদিতে বন্ধ ঘরে কেউ জল ভরিয়া রাখছে আজ। বাড়ী ফিরে যেমন বসছি জামকাপড় বদলাইয়া, অমনই ফচচচ্…করে জল ছিটকাইয়া এই শীতের মধ্যে সব ভিজায়ে দিলো। ও রে বাবা রে…..’
বাদলের স্কুল ড্রেস চেঞ্জ করছিলাম তখন আমি। জলখাবার ও খায়নি ছেলেটা। শুনেই তো বাদল হেসেই কুটি পাটি হয়ে গেল।
তারপরে ফোনেই বললো—‘ও কিছু নয় আংকল। সকালে হয়তো আপনারই হাত থেকে অসাবধানে জল পড়ে গিয়ে এই কান্ড হয়েছে’।
দিলীপ তা মানতেই নারাজ। বলে আমি কি বেকুব না কি হে যে এই শীতে বসবার চেয়ারের গদীতে কষে জল ঢালবো আর সব ভুলে মেরে দিয়ে তার ওপরেই এসে ধপাস করে বসে পড়ে সব শুদ্ধু ভিজে মরবো। তোমরা কি যে বলো….?’
তা আমি তখন ছেলেটার হাত মুখ ধুইয়ে কোথায় জলখাবার খাওয়াবো না দিলীপের বাড়ী ছুটবো? আর গিয়েই বা কি করবো? বাদল যা বলেছে হয়তো তাই হয়েছেও।
তবে সে ঝামেলা দেখি যে আর থামেই না।
পরদিন বাদলকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে ফিরছি, হঠাৎ করে মুঠোফোনর চেঁচানি শুরু হয়ে গেল। যেন ঠিক ….. ‘পেঁচা কয় পেঁচানি, খাসা তোর চেঁচানি…’.
অসময়ে শুনলেই আমার রাগ হয়। বাধ্য হয়ে স্কুটার থামিয়ে ফোন ধরলুম। কি আর করবো? আমি তো আর এই দেশের হিন্দীভাষী এক্সপার্ট নই যে এককানে ফোন চেপে ধরে রেখে ঘাড় কাত করে ঘাড়বেঁকা হয়ে ফোনে কথা বলতে বলতে বাঁই বাঁই করে স্কুটার চালিয়ে ছুটবো।
দিলীপের ফোন। কি না অফিসের বড়বাবু তার চৌদ্দপুরুষকে উদ্ধার করে দিয়েছে।
আমি শুনে বললুম—‘তা সেটি তো শুনেছি যে খুবই উত্তম কথা। নরকস্থ তো আর করেননি। সেটি না কি আরো বিশ্রী ব্যাপার হয় রে, ভাই। আর বড়বাবুদের সেটি না কি একচেটিয়া অধিকার…’
‘তুই ঠাট্টা করস আমার লগে? আমি সুইসাইড কইরা ছাড়ুম আজ, এই তোরে কইয়া দিলাম আর পেল্লায় এক ভূত হইয়া তোর ঘাড় মটকাইয়া ছাড়ুম…’;
ওরে বাবা রে। এ তো দেখি আজ বেজায় খেপেছে। তায় একলা থাকে, ব্যাচেলর মানুষ। যা বলে তাই করে বসলে আটকাবে কিসে? শেষে আমি আত্মহত্যার প্ররোচনার কেসে ফেঁসে যাই আর কি? কি গেরোয় পড়া গেলো বলো তো।
বললুম—‘কি যে বাজে বকিস, তার আর ঠিক থাকে না তোর কোনদিন। কি হয়েছে আগে বলবি তো। আমি এখন মাঝ রাস্তায়। তোর তো দেখি তর সয় না…’
‘বলবোটা আর কি? আমার সর্বনাশ হয়েছে। মাথাটাই বিগড়ে গিয়েছে…’
‘বিলক্ষন…বলে যা…’
দিলীপ ঠিক বুঝতে ও পারলো না আমার ঠাট্টা।
হাঁউ মাঁউ করে বললো-‘আমার কলমটা কেউ পাল্টে দিয়েছে। নীলের বদলে লাল কালি বেরুচ্ছে। তাই দিয়ে অফিসের এন্ট্রি মানে হাজরী খাতায় সই করে এসে নিজের সীটে বসে খান দশেক চেকও দিব্যি করে লিখে ও ফেলেছি, খেয়ালই নেই। এখন সাড়ে দশটায় বড়বাবু হাজিরা খাতায় সবার সইয়ের নীচে যেমন সই করেন লাল কালিতে তাই করতে গিয়েই রেগে আগুন তেলে বেগুন…আমাকে যাচ্ছেতাই করলেন ইন্টারকমে.. ‘বড়বাবু হবার শখ হয়েছে বেশী…গুনে গুনে ঠিক তিনটে ডিমোশান না দিয়েছি রিকমেন্ড করে তো কি বলেছি আজ …’
‘তবে তুই নীল থেকে লাল হয়েছিস বল। তা চেক গুলোকে সই হয়ে আসতে পাঠিয়ে দিলেই ব্যস…. ‘বাকি কুছ বচা তো মঁহগাই মার গই..’ হয়ে যাবি তুই, চাকরী নট…’
‘একদম ঠাট্টা নয়, এই আমি কয়ে দিলাম তোরে। আমি বেজায় সিরিয়াস কিন্তু… ভাগ্যিস গালাগাল খেয়ে তাকিয়ে দেখলুম চেকগুলোর দিকে। তখন দেখি যে সব লালে লাল করে রেখেছি। এখন এই এতোগুলো চেকের ওয়েস্টেজ শো হয় কি করে? আজ দড়ি কিনে নিয়ে তবে বাড়ী যাব, মনে রাখবি। আর জলখাবার খেয়েই পাখায় ফাঁস বেঁধে ঝুলে পড়বো, এই বলে রাখছি। এর নড়চড় হবে না। বাই…’
‘আঃ, বাঁচালি ভাই। জলখাবার খেয়ে তারপরে তো। তা ঠিক আছে, ততক্ষনে আমি ঠিক পৌঁছে যাব। ভাবিস না…’
মনে মনে বললুম কি পেটুক রে বাবা। ব্যাটা শেষে কি না সুইসাইড করবে আর তাও আবার পেট পুরে জলখাবার আগে খেয়ে নিয়ে তার পরে। নির্ঘাৎ করে পেনটা কোথাও নিজেই বদল করে বসে আছে।
বিকেলে বাদলকে সঙ্গে নিয়ে দিলীপের বাড়ী গিয়েই চক্ষুস্থির আমার। সত্যিই সে দেখি ইয়া বড় আর মোটা এক দড়ি কিনে এনেছে। সর্বনাশ। বহুকষ্টে তাকে নিরস্ত করি। এই কাজ তো দিলীপের বৌয়ের করবার কথা না। সে ও কি না আমার কপালে?
বললুম—‘তা পেন ফেন তোর আলমারিতে তুলে রাখার কথা। এমনি যেখানে সেখানে ফেলে রাখিস কেন শুনি? বদল হয়ে যেতেই পারে। এতো অসাবধান ও অমনোযোগী কেন যে তুই, তা ও বুঝিনা। দেখছিস যখন এই রকম কান্ড হয়ে চলেছে যখন’।
তা পরদিন সকাল সাড়ে আটটায় নিজের সাইকেলখানা টানতে টানতে দিলীপ এসে বাড়ীতে হাজির হ’তেই আবার চমকে উঠলুম আমি।
‘কি হয়েছে? এতো সকালে যে?’
‘সকাল কই? আমি তো অফিস যাচ্ছি। আমার অফিস সেই কাছারীর কাছে । যেতে একঘন্টা সময় লাগে। পথে ভীড় ও জ্যাম থাকলে দেড় ঘন্টা। তা বেরিয়ে দেখি যে সাইকেলের কোন চাকাতেই হাওয়ার বংশ নেই। এখন কোন দোকান ও খোলেনি যে হাওয়া ভরিয়ে নেব। কি যে করি? তুই বল’।
‘কি আর করবি? কাল হয়তো তুই দেখিস নি। হয় পাংক্চার হয়েছে আর নয় তো ভাল্ব ফেটেছে। চল তোকে আমি পৌঁছে দিয়ে আসি আজ। সাইকেল রেখে যা, আমি দুপুরে ঠিক করিয়ে রাখবো। ফেরার পথে নিয়ে যাবি। আমিই গিয়ে তোকে নিয়েও আসবো পাঁচটাতে’।
‘সে সব লাগবে না । আমিই অটো ধরে চলে আসবো’।
তাই করলুম আমি।
সে দিন গেল।
পরের দিন সকালেই দিলীপের আবার ফোন। তা ও ঠিক সাতটায়। সবে জলখাবার খেয়ে উঠেছি আমরা।
‘কি হয়েছে?’
‘না তুই শিগ্গীর করে চলে আয়। আমি বাড়িটা সারাবো বলে আমার ব্যাংক থেকে লোন নেবো ভেবে একটা দরখাস্ত করে ছিলাম কিছু দিন আগে। কাল স্যাংশন অর্ডার এসেছে। আজ বাড়ির কাগজপত্র জমা দিলে চেক পেয়ে যাবো। তা আলমারী থেকে সব কাগজপত্র আমার গায়েব হয়ে গিয়েছে আর তাই না দেখে আমি তো মাথায় হাত দিয়ে বসে আছি’।
শুনেই আমার মনে হ’লো এই রে, বাদলের মকান ও হাজির হয়েছে এসে এইবারে। ক্ল্যাইম্যাক্স আসন্ন তবে নির্ঘাৎ করে।
তা বাদল ছেলেটাকে সঙ্গে নিয়েই যেতে হ’লো।
বাদল গিয়েই গম্ভীর মুখে জিজ্ঞাসা করলো –‘এই বাড়িটা কি আংকল শুধু আপনার নামে?’
‘হুঁ, নইলে লোন পাবো না যে’।
‘কিন্তু বাড়িটা তো দেখছি বেশ পুরোনো। আপনিই কি কিনেছিলেন?’
‘না, আমার বাবার বাড়ী’।
‘তবে আপনার ভাইয়ের নামে নেই কেন? বাড়ী ভাগ হয় নি তো?’
‘আমি টাকা দিয়ে তার অংশ ও কিনে নিয়েছি যে’।
‘নীলার মতনই?’
‘অ্যাঁ, হ্যাঁ……….হ্যাঁ, তাই’।
‘তা বেশ, এমন তো হয়েই থাকে। তা সেই লেনদেনের রসীদখানা দেখান দেখি আগে…’।
‘এ…এ তুমি কি বলছো, ভাই? আরে সে সব তো গুড ফেথে হয়েছে, আমি কি নিজের ভাইকে দিয়ে রসীদ লিখিয়ে রেখেছি?’
‘হুঁ, এই তবে মোটিভ। এতোদিনে বোঝা গেলো সব ব্যাপারটা। তা আপনি নকল বার করিয়ে নিন না কাগজপত্রের আর অফিসে জমা দিয়ে দিন। সমস্যাটা কিসের?’
‘অনেক সময় লাগবে যে’।
‘তা দিন কয়েক লাগবে বই কি? তবে যদি দলিল ঠিকমতন রেজিষ্ট্রী করা না হয়ে থাকে মানে আপনার ভাইয়ের নো অবজেকশন সমেত দরখাস্ত জমা দিয়ে বেনামা না করানো হয়ে থাকে আর কি, তাহ’লে সেই বেনামার কাগজ তো সহজে পাবেন না আপনি। তাই রসীদ দেখাতে বলছিলাম আপনাকে, আংকল। কেননা কোর্টে তো প্রমাণ চাইবে যে আপনি ভাইকে অর্ধেক টাকা দিয়েছেন….…’
দিলীপের মুখটা হাঁ হয়ে গেল বাদলের কথা শুনে।
বাদল আবার বললো-‘তবে আমরা এখন আসি, আংকল। আপনি একলা মানুষ। সারাদিন তো বাড়ী থাকেন না। কেউ নকল চাবী দিয়ে তালা খুলে ঢুকে এইসব অসুবিধা আপনার জন্য তৈরী করছিলো তা তো হ’তেই পারে, আংকল। পুতুলের দ্বারা বা নীলার গুণে এই সব কি হয়, আংকল?’
‘তবে, ওই পুতুলটা ও বেশ দামী জিনিষ একটা। আস্ত থাকলে আপনি বেশ ভালোই দাম পেতেন। মনে হয় মিশরের জিনিষ। বেড়ালের মমির একটা টুকরো। আপনি হয়তো জানেন যে পিরামিডের মধ্যে হাজার হাজার বেড়ালের মমি ও পাওয়া গিয়েছিলো। অনেক সে’খানের যাদুঘরে রাখা আছে। কয়েক হাজার মমি বিনামূল্যে বিশ্বের বড় বড় মিউজিয়ামকে দান করে ও দেওয়া হয়েছে। তার পরে ও কয়েক হাজার প্রাচীন মিশরের বেড়াল ঠাকুরের মমিকে শেষে অত্যাধুনিক সব চোরের ঠ্যালায় বাধ্য হয়ে দামী উর্বরকে বা সারে পরিণত করে ফেলা হয়েছে। আপনি ইন্টারনেটে দেখে নেবেন, আংকল। ও’টা পাঠিয়ে আপনাকে শুধু সাবধান করা হয়েছিলো, আর কি। পরীক্ষা করিয়ে দেখলে আর তখন মমি শুনলে বাড়তি একটু ভয় পেতেন আপনি, এই আর কি । তা সত্বে ও আপনি সাবধান হন নি। বাড়ীর তালা বদলাননি বা গা তালা ও লাগিয়ে নেন নি গেটে। অবশ্য চোরকে তাইতেও হয়তো আটকানো যেতো বলে মনে হয় না তবে আপনি দামী ও দরকারী জিনিষ বা কাগজপত্র সব ব্যাংকের ভল্টে রেখে দিলেই পারতেন। সে’দিক দিয়ে আপনি খুব ভূল করেছেন’।
‘এইবার কিন্তু একটু সাবধান হবেন, আংকল। আমরা এখন যাই’।
কাতর ভাবে দিলীপ বললো--‘সিদ্ধার্থ, তুই দলিলটা খুঁজবি না একটু ও?’
আমি বললুম--‘কি হবে আর এখন মিছে খুঁজে? দলিল যে চুরী করা হয়েছে তা তো বেশ বোঝাই যায়। তুই না হয় পুলিশে একটা এফ০ আই০আর০ করিয়ে দে আজকেই। তারপরই নকলের জন্য দরখাস্ত ও করে দে একটা। বাড়ির দলিল কোন মহার্ঘ্য বস্তু না আজকালকার কম্প্যুটারের যুগে কেননা আসলটা তো থাকে সরকারের কাছে। আমাদের দেয় তো একটা নকল মাত্র। তাই বাদল ঠিকই বলেছে রে। ও বাজে কথা বলবার ছেলে তো নয়। তোর দলিল ঠিক থাকলে নকল ঠিক পেয়ে যাবি তুই ….তা আমরা এখন আসি রে ভাই। বাদলের স্কুলের সময় তো হয়ে আসছে। বাই বাই……….’
০৯৪৫২০০৩২৯০
রচনাকাল : ২৭/১২/২০১৩
© কিশলয় এবং জি.সি.ভট্টাচার্য কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।