‘কাকু, আমাদের একজন অতিথি হয়তো সমাগত প্রায়। আমি সিঁড়িতে তাঁর ভারী পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছি যে।
ভদ্রলোক বেশ স্বাস্থ্যবান মনে হয়। কোন কোন বংশের ধারায় ও এমনটি হতেই পারে, তবে এখন
আমাদের ডিনার ও এই অতিথির কারণে বিলম্বিত হতে পারে কিন্তু, কাকু .... হিঃ ... হিঃ ... হিঃ ...’
কাকু, রান্না বান্না সেরে নিয়ে নিজের মনে স্যালাড প্লেট, স্যূপ আর ফল কেটে প্লেটে রেখে আমাদের
ডিনার টেবিল সাজাচ্ছিলো। কাকুর সব কাজই খুব সুন্দরভাবে আর নিয়ম মেনে হয় যে। তবে সেই কাজে
কাকু একদম ডুবে যায়। যখন যা করে তাইতেই মন থাকে, কাকুর।। তাই হঠাৎ আমি এইকথা
বলতেই কাকু চমকে উঠলো।
‘সে কি চঞ্চল? এই শীতে আর এখন রাতের এই অসময়ে.....কি কান্ড। তার মানে আমাদের
খাওয়া দাওয়া মাথায় উঠলো। হে ভগবান.......’
‘তা তুমি গিয়ে রেডি হয়ে এসো, চঞ্চল। আমি বেল বাজলে তখন না হয় দরজা খুলবো গিয়ে।
কে আসছে তা কে জানে? নিজের কাজে একটু অন্যমনস্ক ছিলুম, তাই ধরতেই পারিনি।’
‘মনে হয় সকালের সেই টেলিফোনকর্তা...., কাকু’।
বলেই আমি কাকুর নির্দেশে নাইট ভিজন গ্লাশ আর সিকিউরিটি ওয়াচটা পরে নিতে পড়ার
টেবিল থেকে উঠে পাশের ঘরে চলে গেলুম।
কলিং বেল বাজতে কাকু উঠে দরজা খুলতে গেল।
আমি আগে নিজে তৈরী হয়ে নিলুম।
একটা মেরুন রঙের চকচকে হাফ প্যান্ট ও হলদে মতন বেশ পাতলা ধরনের পাখি আর
গাছ পালা আঁকা টি শার্ট ছিলো তখন আমার পরনে। ঘরের পোষাক। সে দু’টোকেই খুলে ফেললুম আমি।
তারপরে একটা নীল রঙের ফুল শার্ট প্যান্ট ও গোলাপী সোয়েটার পরে নিয়ে মাথায় টুপি,
চোখে নাইট ভিজন আর বাঁ হাতে স্টিলের বালা আর ওয়াচটা পরে পায়ে ও মোজা জুতো পরে নিলুম আমি।
তারপরে কিচেনে গিয়ে দু’কাপ চা তৈরী করতে পারি কি না সেই চেষ্টা শুরু করলুম। তেরো
বছর বয়স তো কবেই হয়ে গেছে আমার। এ’টুকু ও করতে না পারলে আমার কাকু তো কিছুটি
বলবে না তা জানি, তবে পরে শুনে মা ঠিক বলবে-- ‘বেশী সুন্দর ছেলের না নিকুচি করেছে, অকর্মার ঢেঁকি একটা...’
তা কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমি দিব্যি চা তৈরী করে নিয়ে সাথে ট্রেতে স্ন্যাক্স রেখে দু’হাতে
ভারী ট্রেটা ধরে নিয়ে পাশের ঘরে গিয়ে টেবিলের ওপরে রেখে দিয়ে আবার এসে দু’গ্লাশ জল
ও অন্য একটা ছোট ট্রেতে বসিয়ে নিয়ে গেলুম।
আমি গিয়ে দেখি যে বেশ স্বাস্থ্যবান এক ভদ্রলোক আমাদের ভিজিটার্স রিভলভিং চেয়ারে আসীন।
রঙ মাঝারী। বয়স মনে হয় ৪০/ ৪৫ হতে পারে।
শুনলুম আগন্তুক বলছেন –‘আর বলবেন না, স্যার। সকাল দশটার ট্রেন যদি রাত ন’টায় আসে তবে
অসময়ে তো গিয়ে পড়তেই হবে।আর যেখানে, যার কাছে যাবো, তিনিও অসুবিধায় পড়বেনই। আর আমাদের
রাণীনগর ও তো আবার মেন লাইনে নয়। কিন্তু আপনাকে একবার যেতেই হবে, স্যার। আমার অমন
দেবতুল্য জ্যাঠামশাইকে এক নৃশংস আততায়ীর হাতে প্রাণ দিতে হয়েছে। আমি তার যোগ্য শাস্তি চাই।
হ’লেনই বা তিনি আমাদের কাকা....’
কাকু, যতো বলে যে পুলিশ সে ব্যবস্থা অবশ্যই করবে, তা সে তিনি কিছু শুনলে তো। খালি বলেন---
‘না না স্যার, পুলিশের সাধ্যই নেই সেই অদৃশ্য হয়ে যাওয়া খুনীকে ধরবার। আমরাই দৌড়ে গিয়েও
কিছু করতে পারিনি। উল্টে খুনী সাজিয়ে আমার ভাই দু’জনকেই জেলে ভরে দেবে পুলিশ কাজ দেখাতে।
আমাদের দেশের পুলিশ তো ফুলিশ, স্যার। তেমনি হয়েছে কোর্ট কাছারীও। আগেই অন্তত দশ বছর জেলে
ঢুকিয়ে রেখে তারপরে বিচার দেখিয়ে যাবজ্জীবন ঠুকে দেবে বা শেষে ফাঁসীতেই ঝুলিয়ে ছাড়বে। ও’দের সব
এলেম আমার জানা আছে, স্যার। বলে আমাদেরই চোখের সামনে তিনি যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেলেন,
আর কেউ কিছু বুঝতেও পারলো না’।
‘নিন, আগে চা খেয়ে নিয়ে তারপরে বলুন--আপনি খুনের সময় সেখানে হাজির ছিলেন?
নিজের চোখে দেখেছেন হত্যাকারীকে অদৃশ্য হয়ে যেতে?’‘নাঃ, মানে আমি ঠিক দেখিনি কেননা জেঠুর
জন্মদিন উপলক্ষ্যে প্রত্যেকবার যেমন সবাই রাণীনগরের বাড়িতে যাই তেমনি এই বারেও
গিয়েছিলাম আর কি। তবে কাকা ও এতোদিন পরে হঠাৎ কোথা থেকে যে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন,
তা ভগবানই জানেন। আর গিয়েই সম্পত্তির ভাগ নিয়ে জেঠুর সাথে ঘোর বচসা। সম্পত্তি বাপের
নামে আছে এই বলে.......বেশ সাধু হয়েছিলেন কাকা, যা হোক’।
‘তা পরিবারের সবাই আইডেন্টফাই করে ছিলেন আপনার কাকাকে, অতোদিন পরে তাঁকে দেখা মাত্রই?’
‘নাঃ, সে কী আর সহজে হয়, স্যার? তবে তাঁর পরিচয় পত্র ছিল ঠিকই। শরীরের গঠন দেখে ও বেশ ধরা
যায় যে তিনি এই মজুমদার বংশেরই ছেলে কি না। আমাদের পারিবারিক অনেক লোক অগোচর কথা ও
তিনি শুনিয়ে ছিলেন, স্যার। শেয়ে নিজের স্কুল ফাইন্যালের সার্টিফিকেট ও দেখান, তখন জেঠু মেনে নেয়’।
‘তা জেঠুর জন্মদিনের নেমন্তন্নে আমিই পৌঁছেছিলাম একদম লাষ্ট। যখন এই ভয়ংকর কান্ড ঘটে যায়,
তখন ও আমি টি এস্টেট থেকে কোলকাতায় এসে সে’খান থেকে গিয়ে রাণীনগরে পৌঁছাই নি।
আসলে সে’খানেও দারুণ ট্রেন লেট। তবে আমার জেঠতুতো, খুড়তুতো দুই ভাই অলোক আর
গোলোক ছিলো, ওদের মধ্যে অলোকের বিয়ে হয়েছে তার স্ত্রী রুমা ও ছিলো। সবাই তো দেখেছে।
রাগের মাথায় দুম করে গুলি চালিয়ে দেন কাকা, তর্কাতর্কি বাড়তে। মনে হয় লাইসেন্স বিহীন চোরাই
জিনিষ ছিল অস্ত্রটা। .....’
‘চাকর জলধর ও অলোক আর গোলোক শংকর দু’জনে দৌড়ে গিয়ে কাকাকে আটকাতে ও
ধরতে চেষ্টা ও করেছিলো। স্টেশন অবধি ধাওয়া করে ও কিন্তু কাকার আর কোনো পাত্তাই পায়নি।
তখন প্রায় সাড়ে সাতটা বাজে। আমি সবে গিয়ে প্ল্যাটফর্মে নেমেছি। সেখানেই ওদের সাথে আমার দেখা হয়......’
‘সে’দিন কত তারিখ ছিলো?’
‘তা ও মনে আছে, স্যার। ২৪ ডিসেম্বর। ২৫ ডিসেম্বর আমার জেঠুর জন্মদিন যে। তাই।
‘আপনাদের পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ডটুকু সংক্ষেপে যদি একটু বলতেন ...’
‘দেখুন, স্যার। আমার বাবা কাকারা তিন ভাই। আমার বাবা রুদ্রশংকর মেজো, দেবশংকর
বড় আর শিবশংকর ছোটভাই মানে যিনি আমার কাকা হন। তবে সেই কাকা বিয়ে থা করলেও
ছোটবেলা থেকেই ধর্ম কর্ম নিয়েই মেতে থাকতেন। আঠারো বছর বয়সে একটা ছেলে হয় তাঁর
কিন্তু তার পরেই তিনি গৃহত্যাগী ও নিরুদ্দেশ হয়ে যান। সবাই ভাবে যে তিনি হিমালয়ে গিয়ে সাধু
সন্ন্যাসী হয়ে আছেন বা মোক্ষলাভ করেছেন’।
‘আমার জ্যেঠা ও একটু কেমনধারা মানুষ ছিলেন যেন তবে ঘর সংসার করেছেন। অলোক তাঁর
ছেলে। তিনি কোন এক অফিসে কেরাণী ছিলেন, এখন রিটায়ার করে বাড়িতেই আছেন। বিষয়
সম্পত্তি যা আছে আমাদের তা সবই বাবার টাকায় কেনা হয়েছিলো। তাঁর চায়ের বাগান ছিলো।
ব্যবসায় প্রচুর অর্থসঞ্চয় করলে ও তিনি তাঁর বাবার মত নিয়ে এবং তাঁর নামেই মানে আমার
দাদুর নামেই সব সম্পত্তি কিনেছিলেন। তখনকার রীতি নীতি একটু অন্য রকমের ছিল আমাদের পরিবারে’।
‘তবে বাবা যখন মারা যান ট্রেন অ্যাক্সিডেন্টে মানে যে এ০সী০ কোচে তিনি বাড়ী ফিরছিলেন
সেই কোচে সর্ট সার্কেট হয়ে হঠাৎ আগুন ধরে গিয়ে, তখন আমার দু’ভাই বেশ ছোট।
আপনার এই ছেলেটির মতনই বয়স। তখন কিই বা বোঝে তারা? আমার বয়স তখন ১৮ -১৯ হবে।
আমাকেই ব্যবসায় বসিয়ে দিয়ে জ্যেঠা সংসারের হাল ধরেন। কিছুদিন পরে আমি ব্যবসা নিয়েই
ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কারণ ছিল। জেঠু অক্ষম হয়ে পড়ছিলেন আর কাকী, জেঠি সবাই একে একে গত
হয়েছিলেন। আমার মা তো বাবার সাথেই মারা যান’।
‘ফলে জেঠু বাধ্য হয়ে তাড়াতাড়ি করে অলোকের বিয়ে দেন কিন্তু ব্যবসার সব দায়িত্ব এই
রামশংকরের ঘাড়েই এসে পড়ে। অবশ্য অলোক কিছু কিছু সাহায্য করে থাকে, আর গোলোক
তো নিজের পড়াশুনো নিয়েই ব্যস্ত। এম০এ০ পাশ করে আবার কি যেন পড়বে ঠিক করেছে’।
‘তবে আমাদের বংশে যে কিছু দেবোত্তর সম্পত্তি আছে তা আমরা জানতুম না। গত বছর জন্মদিনের
সময়ে জেঠুই সেটা আমাদের জানান এবং বলেন যে ও সম্পত্তি তো ভাগ হবে না তাই সব সম্পত্তিই
পরিবারের কেউ একজন অছি মানে ট্রাষ্টি হয়ে রক্ষণাবেক্ষন করবে। এই প্রথা’।
‘তা আমি তো ভাইদের মধ্যে সবার বড়, তাই আমারই দেখ ভাল করবার কথা। কিন্তু আমি তো থাকবো
চা বাগানে, রাণীনগরে সম্পত্তি কে দেখে? তাই অলোককে সেটা দিয়ে যেতে চেয়েছিলেন জেঠু। আমরা
আর কি বলবো? কুলদেবীর মন্দির, পুকুর, ধানজমি, আম বাগান আর রাণীনগরের বাজার সব মিলিয়ে
এখনকার দিনে কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি। একজনকে তো ঘরে থেকে দেখাশোনা করতেই হবে আর
আমাকে তো ব্যবসা নিয়ে বাইরেই কাটাতে হয়। কি আর করা যাবে? মনে একটু রাগ হয় বই কি,
স্যার। তবে কাকা এসে জেঠুর ফন্দি ভেস্তে দেন কেননা তিনি বর্তমান থাকতে অলোক ওই দেবোত্তর
পায় কি করে? গন্ডগোল বাধে এই নিয়ে। কে আর নিজের মুখের গ্রাস ছেড়ে দিতে চায়, স্যার?’
‘কিন্তু এখন আমার খুব ভয় করছে, স্যার। এক বৃদ্ধ জেঠু মাথার ওপরে ছিলেন। মাথার ওপরে
একটা ছাদ তো ছিলো। এখন তো আর আমাদের তা ও রইলো না । কাকা ও এখন খুনে আসামী
হয়ে পুলিশের ওয়ান্টেড। তাও ধরা পড়েন নি। আর গোলোকটাতো কোন কাজেরই নয়। এক অলোক
থাকবে রাণীনগরে আর আমি সেই ডুয়ার্সে.....যদি হঠাৎ অলোকের বা আমারই কিছু হয়ে যায়,
তখন আমাদের পরিবারটা ভেসে যাবে, স্যার। কাকা যদি তখন কোন সুযোগে এসে আবার........’।
‘আচ্ছা বেশ, আমি আপনার কেসটা টেক আপ করছি। আপনার চিন্তা নেই’।
‘ওঃ, ধন্যবাদ, স্যার। বাঁচলুম। আমার ছুটে আসা সার্থক হ’লো। তা আপনার ফী কতো, বলুন, স্যার?
মানে, ও’সব পরে নেব বা দেখা যাবে যেন বলবেন না, স্যার। হয়তো আমিই গোলোকবাসী হয়ে
পড়লুম জেঠুর মতন....তখন?’’
চা ও স্ন্যাক্স শেষ হ’তে তিনি থামলেন।
কাকু বললো—‘আগেই ফী? যদি আততায়ী কে ধরতে না পারি?’
‘সে কি হয়? আপনি এতো বড়ো ডিটেক্টিভ। আপনার দাদা সি০আই০ডি০ পুলিশের এতো বড়
একজন অফিসার.’
‘এ’সব খবর আপনি কার কাছে পেলেন?’
‘মা...মানে কে যেন বললো। ও হ্যাঁ, আমাদের গোল্ডেন ক্রাউন টি এস্টেটের ম্যানেজার মিঃ দেশাই তো বললো।
আপনার ঠিকানা ও সেই দিলো....’এই বলেই তিনি পকেট থেকে একটা খাম বার করে টেবিলে
রেখে দিয়ে নিজের একটা ভিজিটিং কার্ড বার করে কাকুকে দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন।
‘আপনি রিং করে জানিয়ে দিলেই আমি টিকিট পাঠিয়ে দেব, স্যার। আপনার এই সুন্দর মতন
ছেলেটিকে ও সাথে নিয়ে যেতে পারেন। তবে আজ অনেক লেট হয়ে গেল আপনার। আপনাদের
ডিনার হয়তো এখন ও হয় নি। ভেরী সরি, স্যার। আচ্ছা আসি এখন। ও০কে০...........গুড নাইট। বাই.....’
বলেই তিনি বেরিয়ে গেলেন।
কাকু গিয়ে দরজা বন্ধ করে এলো।
আমি ট্রে দু’টো দু’হাতে ধরে তুলে নিয়ে ওয়াশ বেসিনে রাখতে গেলুম।
কাকু আবার চট করে ডিনার টেবিল সাজাতে বসলো। আমি সাবধানে গিয়ে খামটা খুলে গুনে দেখলুম।
হাজার টাকার পঁচিশখানা লাল চকচকে নোট রয়েছে। দেখে খাম রেখে দিয়ে গিয়ে আবার নিজের পোষাক
চেঞ্জ করে হাত মুখ ধুয়ে এসে ডাইনিং টেবিলে বসে পড়লুম। ঘরে তো ঠান্ডাই নেই, তাই।
কাকু আমার রূপোর চকচকে প্লেটে মাইক্রো ওভেন থেকে গরম গরম খাবার বার করে সাজিয়ে দিলো।
সোনার গুলো কাকু পূজোর সময় সাজায়। ঘরে রুম হীটার আর ব্লোয়ার মেশিন দুই চলছিলো বলে ঠান্ডা
তো বোঝাই যাচ্ছিলো না নইলে এই পাতলা পোষাক পরে বসে খেতে হ’তো না আর আমাকে। তবে কাকু
খুব অন্যমনস্ক ভাবে খেয়ে যাচ্ছিল। এমন কি আমার মুখের দিকে একবার ও তাকাচ্ছিলই না। কাকুকে
বেশ ভাবিত মনে হ’লো। সে যাক গিয়ে।
কাকু, খেয়ে দেয়ে ব্রাশ করে এসে নিজের সোফায় বসে পড়লো। তখন আমি সব বাউল, প্লেট, কাঁটা চামচ,
টেবিল নাইফ তুলে নিয়ে টেবিল মুছে দিয়ে ওয়াশ বেসিনে গিয়ে একটা প্ল্যাস্টিকের বড় গামলায় গরম
সাবান জল আর অন্যটায় পরিষ্কার গরম জল ভরে নিয়ে প্লেট, ট্রে সব ধুয়ে ফেললুম চট করে। আমার জামা
টামা সব এই শীতে যাতে না আমি ভিজিয়ে ফেলি ট্যাপ খুলতে গিয়ে, তাই কাকু এই ব্যবস্থা করেছে। তবু ও জামার হাত
টাত তো সব ভিজেই গেলো। জামা প্যান্ট ও একটু ভিজলো বই কি।
সে যাক গিয়ে। কি আর করবো।
সব সেরে গিয়ে দেখি যে, কাকু বসেই আছে চোখ বন্ধ করে। বিছানা ও ঠিক করে নি। কাগজ ও পড়ছে না।
তাই আমি আগে গিয়ে বেড কভার তুলে বিছানা ও মশারী ঠিক করে নিজের আধ ভিজে পোষাক গুলো খুলে
রেখে দিয়ে কাকুর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে কাকুর দু’কাঁধের ওপর হাত দু’টো রাখতেই কাকু চোখ খুলে
তাকালো। আমার গেঞ্জীটা ভিজে কিনা দেখে নিয়ে কাকু একটানে সেটাও খুলে ফেলে দিয়ে আমার দুধ
সাদা মসৃণ চকচকে শরীরটা দু’হাতে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকে চেপে ধরে বসে রইলো বেশ কিছুক্ষন।
তারপরে আমাকে নিয়েই উঠে ব্লোয়ারের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে আমার গালে, ঠোঁটে, কপালে, বুকে বেশ
কয়েকটা চুমু খেলো, কাকু।
কাকুর আদরে আমি খিল খিল করে হেসে দিতে কাকু গম্ভীর হয়ে বলল—‘এইবার বলে ফেলো তো
দেখি যে কি বুঝলে তুমি এই উড়ো কেসের ব্যাপারে, চঞ্চল? কোন অসঙ্গতি থাকলে সে’টি ও বলো
দেখি, শুনি..................’ বলেই আমাকে সমেত কাকু একটা গরম শাল জড়িয়ে নিলো।
আমি তো কাকুর জাপানী পুতুল ছেলে। তাই আদর তো করবেই কাকু। আমি কাকুর কথায় হেসে
বললুম-‘ফী নিজে থেকেই আগাম দিয়ে গেছেন উনি। তোমাকে চাইতেও হয় নি, কাকু। তোমার
বুদ্ধির দাম আছে, কাকু, পঁচিশ হাজার .....হিঃ ....হিঃ .....হিঃ ....’
‘ওটা আমার বুদ্ধির মূল্য নয় রে, ভাই। মনে হয় ওনার নিজের সিকিউরিটি মানি......গোয়েন্দা
পুলিশের ভাইকে হাতে রাখা ও বলতে পারো। আচ্ছা আগে বলো’
‘কাকুউ,.........উনি খুব তীক্ষ্নদৃষ্টি যুক্ত লোক, কাকু। নাইট ডিজনে আমি চোখ ঢাকলে ও আমার
মুখের সৌন্দর্য উনি দেখে ফেলেছেন, যেমন দেখেছেন ডাইনিং টেবিলে পড়ে থাকা দু’টুকরো শশার কুচি।
তুমি সরাতে পারো নি আর...তাইতেই উনি বুঝে নিয়েছেন যে আমাদের
ডিনার করা হয় নি এখন ও নইলে .........টেবিল তো মোছা হয়েই যেতো...’
‘হুম.....’
‘আচ্ছা কাকু, তুমি ওনার হাতের আঙুলগুলো একটু লক্ষ্য করে দেখেছিলে? আমার তো তুমি বলো
যে না কি আর্টিস্টিক আঙুল.... চাঁপাফুলের কলির মতন... হিঃ......... হিঃ......... হিঃ.............
আর তোমার না কি ফিলোজফার্স আঙুল কিন্তু ওনার আঙুলগুলো কোন বর্গের, কাকু?
খুব মোটা শক্ত চৌকো ও কেমন বেঁকামতন....... দেখলেই ভয় করে। মানে মনে হয় যে কোন
কাজ ইনি করতে পারেন..........’
‘কাজ শব্দটার আগে কিন্তু একটা যুতসই বিশেষণ বসানো খুব দরকার। চঞ্চল, তোমার লজ্জা
করে সভ্যতা করবার এখন কোনো দরকার নেই, চঞ্চল। বিশ্লেষণ হবে ফ্যাক্ট বেসড তবেই সত্যকে
খুঁজে বার করা যাবে ..............’
‘কাকু, আমি ও তোমার সাথে সত্যকেই খুঁজছি......... তবে আমি ২৪ তারিখের রাণীনগর স্টেশনের
ট্রেন লগ বুক আর গোল্ডেন ক্রাউন টি এস্টেটের ব্যালান্স শীট ও বাজেটের ফ্যাক্ট অ্যান্ড ফিগারসগুলো
দেখতে চাই, কাকু। যদি কোনো অসঙ্গতি ধরা পড়ে.......’
‘ও০ কে০, আমি দাদাকে ফোন করে দিচ্ছি। তুমি আগে আর ও বলে যাও, অ্যাসিস্ট্যান্ট সাহেব....’
‘উনি একবছর আগে ও পারিবারিক দেবোত্তর প্রপার্টির কথা জানতেন না। তা ঠিক...’
‘হুম’
‘লোকে চুপি চুপি খুন করে লুকিয়ে বেড়ায় আর এই কেসে খুন করা হয়েছে সকলের সামনে। ইচ্ছে করে
যেন সবাইকে দেখিয়ে আততায়ী বলছে যে আমি অদৃশ্য হয়ে যাবার মন্ত্র জানি। তাই আমি আজ বেপরোয়া ...
মরীয়া.....অনেক সহ্য করেছি.........আর নয়........এক এক করে সবাইকে আমি কুকুরের মতন গুলী করে
মারবো, দেখি কে আমাকে ধরতে পারে? মানে সে সিওর যে কেউ তাকে কখনো ধরতে পারবেই না
...আর তার আছে দারুণ একটা রাগ.....তাই না, কাকু? ওনার কাকার কেন এই রাগ? তিনি যদি গৃহত্যাগই
করেছিলেন ...’
আমার কথা শুনে কাকু মিনিট কয়েক আমার বড় বড় পদ্মপাতার মতন আকর্ণ বিস্তৃত চোখদুটোর দিকে
অবাক হয়ে চেয়ে রইলো আর তারপরেই আমাকে দু’হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সে যা আদর করতে
শুরু করলো না, সে আর আমি কি বলবো। ইচ্ছে হয়েছিলো বলি যে --কাকু, আমি কি এখনও তোমার
সেই দু’ বছরের কচি বাচ্ছা ছেলে আছি না কী? কি আর করি আমি? দু’চোখ বন্ধ করে রইলুম, কাকুর
যা ইচ্ছে হয় তাই করুক বলে।
প্রায় পনেরো মিনিট পরে কাকু একটু শান্ত হয়ে আমাকে নিয়েই বাপীকে ফোন করতে চললো আর
চুপি চুপি তিন চারটে কাজ করতে হবে বলে দিল। স্টেশন, টি এস্টেট, রাণীনগরে মজুমদার বাড়ী সর্বত্র
সি০আই০ডি০ পুলিশকে লুকিয়ে থাকতে হবে বলে দিলো। শেষে আজকের রাণীনগরের রিটার্ন ট্রেন
ও কভার করতে বলে ফোন রেখে দিলো।
শেষের কাজটা কেন করা উচিৎ তা আমি ঠিক বুঝলুম না যেমন হঠাৎ কাকু অতো এক্জাইটেড কেন হয়ে
উঠলো, সেটা ও আমি বুঝতে পারিনি। নির্ঘাৎ অজান্তে আমি এমন কিছু একটা কথা কাকুকে বলে ফেলেছি
যা এই কেসে খুব ভাইটাল পয়েন্ট।
কিন্তু সেটা যে কি তাই ঠিক করে ধরতে পারলুম না আমি। নিজের অজান্তে আমি এমন অনেক কথা বলে
ফেলি প্রায়ই। আর তারপরে তো কাকু আমাকে নিয়ে লেপের মধ্যে ঢুকে পড়লো তখনই। যাক গিয়ে।
এখন তো ঘুমোই। পরে দেখা যাবে।
................
পরদিন সকালে ও দিনে কাকুর ফোন বাজলো পরপর দু’বার।
প্রথমে সকাল আটটায়।
আমার বাপীর তরফ থেকে পুলিশের একজন লোক জানালো যে রাম শংকর মজুমদারের এস০ ফোরে
রিজার্ভেশন ছিল রাত একটার পাঠানকোট এক্সপ্রেশে এবং তিনি বেনারস ক্যান্ট থেকে ট্রেনে উঠেছেন।
ইনফর্মার চেক করেছে আর মোবাইলে তার ফটো ও তুলে নিয়ে গিয়ে প্রমাণ হিসেবে জমা ও দিয়ে দিয়েছে।
এই ট্রেন বেলা দু’টোয় বর্ধমান পৌঁছায়। সেখান থেকে লোকালে একঘন্টা রাণীনগর। তবে শীতকাল বলে
ট্রেন আসতেই লেট করেছে তিনঘন্টা। পথে আর ও লেট হবেই। সাতটার আগে তিনি রাণীনগরে পৌঁছতে
পারবেন বলে মনে হয় না।
দ্বিতীয় ফোনটা ছিল রামশংকর বাবুরই।
তিনি ট্রেন থেকেই ফোন করে ছিলেন । ট্রেনের জোর শব্দ মোবাইলে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিলো। তিনি কাকুকে
জানালেন যে তিনি তখন ও বাড়ী গিয়ে উঠতে পারেন নি কিন্তু সেখানে এক আততায়ীর গুলিতে তাঁর ভাই
অলোক নিহত হয়েছে ক্ষেতের কাজ তদারক করার সময়। খবর পেয়েছেন তিনি একটু আগে ফোনেতে।
যে কিষাণরা কাজ করছিল, তারা ভয়ে দৌড়ে পালিয়ে গিয়ে গোলোককে জানায় যে আততায়ীকে স্পষ্ট
দেখা গিয়েছে দিনদুপুরে। তিনি অবশ্যই তার কাকা। খুন করেই তিনি দৌড়ে পালিয়ে যান। আর তাঁকে
গোটা গ্রামে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় নি। শেষে তিনি জানতে চাইলেন কাকু কবে যেতে পারবে।
শুনে কাকু এক্কেবারে চুপ।
আমি জিজ্ঞেস করলুম—‘কাকু, তুমি যাবে? তবে মনে হয় এই আততায়ী অতি ধূর্ত। রামশংকর বাবু বা
তোমার সি০আই০ ডি০ পুলিশ কেউ রাণীনগর পৌঁছবার আগেই কাজ সেরে ফেলেছে। হিঃ....হিঃ....হিঃ.....
এখন তো তোমাকে প্লেনে যেতে হবে’।
আমি ঠাট্টা করলুম একটু আমার সুন্দর ছেলে কাকুকে।
কিন্তু শুনেই কাকু লাফিয়ে উঠে বললো—‘কারেক্ট, ঠিক বটে, ঠিক। একেই বলে লোহার বাসর ঘর।
হুঁ....আমি ও দেখছি ছিদ্র আছে কি নেই......’
আর বলেই না কাকু ও তক্ষুনি করে ইন্টারনেটে মেক মাই ট্রিপ ডট কম খুলে বসে গেল ।
কি ছেলে যে না একটা আমার কাকু।
খানিক পরেই কাকু বললো—‘ও চঞ্চল, সকাল সাতটার স্পাইসজেটের একটা আর বিকেলে সাড়ে
চারটেতে জেট কনেক্টের একটা মাত্র ফ্লাইট আছে কোলকাতার। এখন বাজে একটা। চঞ্চল, বি কুইক।
ফোনটা আমাকে দিয়ে তুমি চট করে গেট রেডি হয়ে নাও দেখি আর আমি আমার কুম্ভকর্ণ মার্কা
পুলিশ অফিসার দাদাকে একটু গাল দিয়ে নিই, ততক্ষন।
তা বাপীকে কাকু কি বললো তা আমার আর শোনা হ’লো না কেবিন ব্যাগেজ গোছাতে গিয়ে।
চেক ইন ব্যাগেজ নেবার সময় নেই। দেড়টায় ই-টিকিট নিয়ে পুলিশ জীপ হাজির। সাইরেণ বাজিয়ে
ছুটলো জীপ। লাল বাহাদুর শাস্ত্রী এয়ারপোর্ট। ৩৯ মাইল রাস্তা। তিনটেয় পৌঁছে দিলো আমাদের।
দু’টো বোর্ডিং পাশ নিয়ে সিকিউরিটি চেকিং সেরে চারটেয় প্লেনে বোর্ড ইন করলুম আমরা। একঘন্টার
রাস্তা কোলকাতা। এসে গেল নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস ইন্টার ন্যাশনাল এয়ার পোর্ট। পৌনে ছ’টা।
দমদম বিমান বন্দর। পুলিশ জীপ তৈরী ছিল। হুটার বাজিয়ে আমাদের নিয়ে ছুটলো।
সোজা রাণীনগর।
পাঠানকোট এক্সপ্রেস তখন ও বর্ধমান জংশন স্টেশনে ইন করেনি। ছটা বেজে যাবে ট্রেন ঢুকতে।
ততক্ষনে স্টেশান পুলিশে ঘিরে ফেলেছে। প্রতি মুহূর্তে ওয়াকী টকিতে মেসেজ আসছে।
এস০ ফোর -৩২ চেকিং......হ্যাঁ, রামশংকরজী আছেন। পরিচয় পত্র টত্র সব আছে সাথে।
খবর পেয়ে মরীয়া হয়ে কাকু বলল- ‘সব ঠিক আছে যদি তবে ওনার ওজনটা একটু জানাতে
পারবেন? আমার ভিজিটার্স চেয়ারে অনেক সুক্ষ্ম যন্ত্রপাতি লাগানো আছে। তাই ওনার অনেক
ভাইটাল ডাটা আমার রেকর্ডে আছে। ওজন তার মধ্যে একটা।
একটু পরেই উত্তর এলো- ‘৬৮ কে০জি০’।
‘সে কি? কাল রাতে যে ৮৬ কে০জি০ ছিল। অক্ষর দু’টো রাতারাতি উল্টে গেল কী করে রে বাবা?
সন্দেহজনক........ঘোরতর সন্দেহজনক ...। আপনি ওনাকে এখন মোটেই ছাড়বেন না....আটক করে রাখুন।
আমরা আসছি। দাদাকে জানিয়ে দিই এই ওজন ওল্টানো রহস্য তারপরে আগে রাণীনগর যাই।
ততক্ষনে সকালের স্পাইসজেটের কোলকাতা ফ্লাইটের প্যাসেঞ্জার লিষ্ট মোবাইল ই-মেলে এসে হাজির।
কিন্তু সেখানে কাকুর সন্দেহ মতন রামশংকরের নাম নেই। না থাকবারই কথা। তিনি তো ট্রেনে........।
কাকু পুলিশের ওয়াকী টকি তুলে নিয়ে বললো-‘আসল নাম যদি ধৃত ব্যক্তি না বলে তবে থার্ড
ডিগ্রীর প্রয়োজন হতেই পারে। আমার ধারণা তার নাম রাম কিংকর। লিষ্টে এই নামটা তো পাওয়া গেছে।
নাম ভেরিফাই করা সম্ভব হ’লেই সব বোঝা যাবে.’
আমি জানতে চাইলে কাকু আমার কানে কানে বললো—‘চঞ্চল, মোগলসরাই জংশনে এই বদলটি ঘটেছে।
আমার মনে হয় রাম শংকর নিজের জায়গায় রাম কিংকরকে ট্রেনে তুলে দিয়ে পরিচয় পত্র বদল করে
ও মেক আপ করে চেহারা বদল করে সোজা এয়ার পোর্টে চলে গেছেন।
বাপী দেখি কাকুর গাল খেয়ে সুপার ফাস্ট দুরন্ত ট্রেনের মতন ছুটছে। ততক্ষনে রাণীনগরের ২৪ ডিসেম্বরের
ট্রেন লগ বুকের পাতা স্ক্যান হয়ে ই-মেলে এসে হাজির। রিপোর্টে লেখা--- না, বিকেলের পরে স্টেশনে
আসা কোন ট্রেনই সেদিন লেট ছিলো না। সন্দেহ আর ও বেড়ে গেলো আমাদের।
‘টি এস্টেটের কি অবস্থা? শিগ্গীর জানাও..’.....কাকু ওয়াকী টকি হাতে নিয়ে আবার বলল।
কয়েক মিনিট পরেই খবর এলো গোল্ডেন ক্রাউন টি এস্টেটের আর্থিক অবস্থা বিশেষ সুবিধের নয়। ব্যালেন্স
শীটে অনেক গোঁজামিল আছে বলে মনে হয়। সময় লাগবে চেকিংয়ে তবে এই এস্টেট ভেতরে ভেতরে বিক্রী
ও হয়ে যাবার কথা শোনা গেছে। ডীল একরকম ফাইন্যাল। সামান্য ফর্ম্যালিটি শুধু বাকী আছে। বিক্রেতা
রামশংকর মজুমদার, ক্রেতা মগন লাল।
কাকু বলল-‘সর্বনাশ। মালিক তো তার বাবা। নির্ঘাৎ জাল দলীল তৈরী করেছে। উঃ কি ধূর্ত লোক রে বাবা....
এইজন্যেই আমাকে পঁচিশ হাজার দিয়ে গেছে........’
আমি বললুম—‘কাকু, আমি একটা কথা জানতে চাইবো?’
‘কি, চঞ্চল?’
‘রামশংকর বাবুর ফোনে ট্রেনের ও ইঞ্জিনের শব্দ স্পষ্ট শোনা গিয়েছিলো কিন্তু। এস০ ফোর তো লাগানো হয়ে
থাকে ইঞ্জিনের পরে দু দু’টো পার্শেল ভ্যান ও সেকেন্ড ক্লাশ কোচ আর তিনটে রিজার্ভ কোচের মানে
সাতখানা কোচের পরে.....তাই তো? সেখান থেকে কেউ ফোন করে থাকলে ট্রেন
চলবার শব্দ শোনা যেতে ও পারে কিন্তু ইঞ্জিনের শব্দ অতো স্পষ্ট হ’তে পারে কি, কাকু?’
পুলিশ জীপে না বসে থাকলে কাকু কি করতো আমাকে নিয়ে তখন তা বলা খুব কঠিন তবে কাকুর চমকে
ওঠা দেখে আমি মজা পেলুম ও মুখে রুমাল চাপা দিলুম চট করে নইলে ঠিক দারুন রকমের একটা হাসি
এসে যেতো আমার। আর কাকু যেতো রেগে।
‘হুঁম,... রাতের জন্য পাওনা থাক ....’
এই বলেই কাকু মোবাইলে বাপীকে ধরে বললো-‘দাদা, অবস্থা সঙ্গীন। মনে হয় অপরাধী ভাগলবা হয়েছে,
তোমার ছেলেটা যেন কি? নির্ঘাৎ একটা বিলেটেড কেস এই ছেলে ...নইলে কেউ সেই বেলা একটা থেকে
সাতটা বাজায় একটা ভাইটাল কথা বলতে? .তুমি এখুনি দেখ দেখি দমদম থেকে দুপুরের পরে এখন অবধি
কটা ফ্লাইট ছেড়ে গেছে আর কটাই বা ছাড়বে? প্রত্যেক ফ্লাইটের প্যাসেঞ্জার লিষ্ট চাই। রাম শংকর বা রাম
কিংকর যে রামকেই পাও, ছাড়বে না। আমি রাণীনগর স্টেশন রোড গোটাই চেক করবো গিয়েই ।
অদৃশ্য হবার জন্য আস্তানা আছেই একটা কোথাও না কোথাও। বড় শহর তো আর নয় যে ...’
আমি মুখ তুলে বললুম—‘কাকু, পাবলিক ওয়াশরুম না হ’লে কোন ট্রেনের বাথরুম হ’লে ও তো কাজ চলে যায় ...
হিঃ... হিঃ....হিঃ....’
আর বলেই মুখে রুমাল ........
ততক্ষনে আমরা পৌঁছে গেছি রাণীনগর তাই কাকুর হাতের চড়টা আর খেতে হ’লো না আমাকে
এই ফাজলামী করবার জন্য।
অনেক পুলিশ ছিলো রেল স্টেশন।
সব জায়গায় খোঁজা ও হয়েছিলো আগেই।
তখন কাকুর সামনে আবার ও হ’লো। ফল কিছুই নয়।
রামের দেখা পাওয়া কি অতো সহজ? আমি বলতে যাচ্ছিলুম। ভয়ে বলা আর হ’লো না আমার।
কাজের সময় কাকু থাকে এক্কেবারে দারুণ সিরিয়াস । বাপীর মতনই। দুই ভাই এ বলে আমাকে দেখ ও
বলে আমাকে। কখনো এ ওকে বলে গাধা তো কখনো অন্যজন বলে কুম্ভকর্ণ....জাগো। সে খুব মজা।
ওই বিশেষণটা আবার বাপীর না কি খুবই অপছন্দের.... হিঃ....হিঃ....হিঃ.........নেহাৎ ছেলে হয়ে জন্মেছি
....কি যে করি? নইলে ইচ্ছে ছিল বাপীকে একবারটি কুম্ভকর্ণ বলে ডেকে দেখতে......
কি হয়। তা ছোটদের অনেক ইচ্ছে এমনিধারা অদ্ভূত হয়েই থাকে। সে সব না কি বড়দের
কখ্খনো কিছুতেই বলতে ও নেই। .
তবে কাকু সিরিয়াস থাকলে তখন ফাজলামি টামি এক্কেবারেই নট অ্যালাউড আ্যাট অল।
শুনলেই এক চড় কষিয়ে দেয়। সুন্দর আর পরীর দেশের রাজকুমার ছেলের আদর মাথায়
ওঠে তখন কাকুর। সে আমি ঠিক জানি।
তখন বড়রা রসিকতা ও বোঝে না। সে খুব জ্বালাতন।
সে দিক দিয়ে স্বামী বিবেকানন্দের মতন গম্ভীর ও সিরিয়াস মানুষ ও বেশী মজার ছিলেন শুনেছি।
আমার কাকুই ‘বহুরূপে বিবেকানন্দ’ পড়ে বলেছে। সন্ন্যাস নিয়ে তখন তিনি পুরো দেশে পরিব্রাজক
হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পরনে গেরুয়া, হাতে লাঠি বা দন্ড নিয়ে। ছবিতে আছে। তখন একদিন অন্যএক
সন্ন্যাসী মহারাজ এসেই তাঁর সাথে কথা বলতে শুরু করেন।
প্রথমেই প্রশ্ন –‘আপনি কি সন্ন্যাসী?’
স্বামীজী বলেন-‘হ্যাঁ’
তা’তে ও রেহাই নেই । আবার প্রশ্ন –‘তা আপনি কি গিরি না পুরী?’
স্বামীজী কি বলেন?
সন্ন্যাসীতে ও যে অনেক জাত। জ্বালাতন আর বলে কাকে?
বললেন-‘না পুরী টুরী নই, কচুরী.....’
হিঃ.....হিঃ.......হিঃ.....
তবে আর একটা মজার কথা তখন আমার মাথায় ঘুরছিলো পাক খেয়ে কিন্তু ছাই বলি কি করে
আমার কাকুকে? বললেই বলবে আমি একটা বিলেটেড ছেলে। তা অবশ্য বলতেই পারে আমার কাকু।
আরে বাবা যতই সুন্দর ছেলেই হই না কেন আমি কি বাদল না কাকু, কী? কাকুর তো বটেই বাদলের
মাথা ও ঠিক কম্প্যুটারের মতন কাজ করে। দু’ সেকেন্ডে সব ডাটা অ্যানালিসিস শেষ ।
আর আমার বেলা? হুঁ.........
ভগবান ভদ্রলোক মেরে রেখেছেন যে আমাকে সব দিক দিয়ে। কি যে করি? গুণ তো কিছু দেন নি,
খালি রূপ দিয়ে আরো ও মেরেছেন।
তাই কাল রাতে তখন কাকুর আদরে কথাটা আমার একটু ও ভাবাই হ’লো না। শেষে তো বিছানায়
শুয়ে লেপ মুড়ি দিতেই ঘুমিয়েই পড়লুম, ছাই। যাঃ........
আর আজ সকালে উঠে নেয়ে টেয়ে তৈরী হয়ে জলখাবার খেয়ে উঠতেই ফোনের উৎপাতে অস্থির।
কোনমতে লাঞ্চ করেছি কাকুর সাথে।
তারপরে তো এখন এই রাণীনগরে এসে পড়েছি।
বললুম—‘কাকু, রাতে থাকবে কোথায় এ’খানে?’
‘কেন? মিঃ রাম শংকরের বাড়ী। তিনিই তো আসতে বলেছিলেন আমাদের কালকে। অবশ্য শোকের বাড়ী।
পর পর দু’জন নিহত। তা কি আর করা যাবে? এই রাতটা তো থাকতেই হবে। কাল তো অন্তিম সংস্কার
হবে বডি পাওয়ার পরে। তারপর আমরাও নিজের.......’
‘তা মিঃ সেন, আপনি কি আমাদের একটু পৌঁছে দিতে পারবেন? সন্ধ্যের পরে তো এ’খানে দেখি
অটো সার্ভিস ও বন্ধ.....’
‘অবশ্য। আমাকে তো যেতেই হবে, সবার জবানবন্দী মানে স্টেটমেন্ট নেবার জন্য। আসুন, জীপে উঠে পড়া যাক...’
তা সে’খানে গিয়েই উঠতে হ’লো আমাদের। একটা ঘর ও পাওয়া গেলো। জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হ’তে
সে’খানে বসে কাকু সব শুনলো।
চাকর, গোলোক শংকর, রুমা নামের এক মহিলা ও যারা সেই বাড়িতে এসে দুপুরে খবর দিয়েছিলো সবাই
একে একে এসে বিবৃতি দিলেন।
একই ধারা সবাইকার কথা। নো ভ্যারিয়েশন।
তবে জানা গেল যে গোলোক বাবু ঘটনার সময় বাড়িতেই ছিলেন। দুপুরে খেয়ে উঠে বারান্দার মাঝখানের
বড় ঘরেই একটু শুয়ে ছিলেন, অ্যাটাচড্ বাথ বলে। গোলমাল শুনে উঠে এসে সব জানতে পারেন ও
তখনই পুলিশে খবর দিতে তিনি লোক পাঠান। তাঁর ও অনেকটা রামশংকর বাবুর মতনই চেহারা।
বংশের ধারা হয়তো। কি করেন শুনে বললেন-‘পড়ি। আমি সবার ছোট। পড়াশুনো নিয়েই আছি।
এম০এ০ করেছি। এ’বার বি০এড০টা সেরে ফেলবো মনে ভাবছি।পারলে এম০এড০ ও । তবে সব ঝক্কি
এখন তো এসে আমার ঘাড়েই পড়বে। কতদূর কি যে করে উঠতে পারবো, তা এখন বলতে পারছি না, স্যার’।
তাঁর গলার স্বর একটু অস্পষ্টমতন লাগলো। শোকে দুঃখে হয়তো কান্নাকাটি করেছেন......তাই ভাবলুম আমি।
তবে কাকু ও আমি দু’জনেই নির্বাক শ্রোতা।
পুলিশ ইন্সপেক্টর মিঃ সেন সদলবলে চলে যাবার পরে জলধর নামের যে বাড়ির চাকর.ছিলো, সেই এসে
আমাদের বারান্দার মাঝখানের একটা বড় ঘরে একটা খালি খাটে তোষক, চাদর সব এনে পেতে দিলো।
বাথরুমে সাবান তেল স্যাম্পু তোয়ালে সব রেখে আমাদের জন্য বালিশ নিয়ে এসে রেখে ছত্রীতে জড়ানো
মশারিটা খুলে ঠিক করে টাঙিয়ে রেখে দিয়ে শেষে চা বিস্কুট ও এনে দিলো।
রাতের খাবার ও ভালোই পাওয়া গেলো। গরম গরম লুচি, ছোলার ডাল, বেগুন ভাজা, পোলাও আর ছানার
তরকারি, চাটনী, মিষ্টি দই, রসগোল্লা ....। সব নিরামিশ আহারের ব্যবস্থা, তবে অতিথি সৎকারের কাজটি
যা হ’লো, মন্দ নয়।
রাত এগারোটায় বাপী ফোন করে জানালো যে ট্রেন...প্লেন কোন পরিবহনেই রামশংকরের বা রাম কিংকরের
পাত্তা মেলে নি। আর বাপী নিজেই বর্ধমানে এসে সব চেক করেছে খানিক আগে। তবে রাম শংকরের টিকিট
কনফার্ম ছিলো না তাই সে টি০টি০আই০ সাহেবকে নগদ তিনশো দক্ষিণা দিয়ে ওই বার্থটি জোগাড় করেছিলো’।
‘তিনি মোগলসরাইয়ে গাড়ী ছাড়তে টিকিট চেক করেন সবাইকার। সে’খানে ডিউটি চেঞ্জ হয়েছিলো সব
টি০টি০আই০দের। তবে চার্জ বুঝিয়ে দিতে আগের টি০টি০আই০ যে রিজার্ভেশনের সীট দিয়েছিলেন,
তাইতে রামশংকরের নামে এস০ফোর- ৩২ য়ে টিক দেওয়া ছিলো বটে। তাই তিনি রামশংকরকে টিকিট ও
সারচার্জ সমেত রসীদ নিয়ে ট্রেনে উঠে যেতে দেন, রেলের স্বার্থেই। টাকা ও রসীদ বই তিনি জমা দিয়েছেন।
বেচারার তিনশো আর হজম হ’লো না তোর জ্বালায়। অতঃ কিম্ বলে ফেলো, সোনার চাঁদ ভাইটি আমার।
এতো দৌড়ে সবদিকেই অশ্বডিম্ব লাভ হয়েছে আমাদের আজ......’
রামে রামে ভেদ করা কঠিন।
কাকু তো চুপ এক্কেবারে। মুখ তুম্বো।
আমি ইশারায় চুপি চুপি ধীরে কাকুকে বললুম-‘বাপীকে না কাকু, কাল সকালে রাণীনগরে
আসতে বলো, কাকু। অশ্বডিম্বের ওমলেট সহকারে আমরা চা খাবো। হিঃ..হিঃ..হিঃ..........’.।
আর কাকু ও না কি যে দুষ্টু ছেলে একটা তাই দেখো। হুবহু ফোনে তাই বলে দিলো আর দুই ভাইয়ে
লেগে গেল ধুন্ধুমার।
আমি বললুম—‘চুপ চুপ, কাকু। শিগ্গীর করে ফোন রাখো তুমি । এ’টা আমাদের বাড়ী নয় তো .....
বিপদ হয়ে যাবে’।
কাকু ফোন রেখে আমাকে নিয়ে শুয়ে পড়বার আয়োজন করছে দেখে গিয়ে কাকুকে জড়িয়ে ধরলুম আমি।
কাকু এতো বড় একটা ছেলেকে নিজের কোলে তুলে নিলো একটানে। আমি অবশ্য তাই চাইছিলুম মনে মনে।
দু’হাতে কাকুর গলা জড়িয়ে ধরে কানে কানে কথা বলা সহজ হয় বেশ।
চুপি চুপি বললুম-‘কাকু, আজ কপালে প্লেনে চড়া ছিলো বটে তবে ঘুম নেই’।
‘বুঝেছি। তা অশ্বডিম্বদু’টো তো যোগাড় করতে হবে নইলে অমলেট....’
‘কাকু, ওই তো জলধরদা রেখে গেছে বিছানায়, তুমি দেখোই না, স্যার’।
‘হুম..........বুঝেছি এইটাও । মুদ্রাদোষ তো.......?.’
‘চুপ চুপ, কাকু। দেওয়ালের ও কান আছে । আগে তুমি লাইট অফ করো। রামকে আর লাভ করতে
পাবে না এখন কেউ, সে আশা দুরাশা, কাকু।
কেননা তিনি সত্যিই এখন গোলোকবাসী হয়েছেন মনে হয়, কাকু.....’
আমার দ্বিতীয় কথাটা এতোক্ষনে কাকুকে বলতে পেরে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলুম আমি কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে
কাকুর মুখটা একদম ফ্যাকাশে মেরে গেল দেখলুম। দৌড়ে গিয়ে লাইট অফ করলো কাকু আর আমাকে
নিজের বুকে এতো জোরে চেপে ধরলো যে আমার সত্যি সত্যি যেন দম বন্ধ হয়ে এলো
আর অনেক চেষ্টা করে ও আমার মুখ দিয়ে একটা ক্ষীণ আর্তনাদ বেরিয়ে গেল।
তবে এ’কথা আমাকে মানতেই হবে যে আমার কাকু একখানা বাহাদূর ছেলে বটে। মুহুর্তের মধ্যে নিজেকে
সামলে নিলো। আমাকে নীচে নামিয়ে দিয়ে ছুটে গিয়ে বিছানায় কি সব ঠিক ঠাক করে রেখে মশারী ফেলে
দিয়ে এলো আর হ্যান্ডব্যাগ থেকে একটা শাল বার করে নিয়ে আমাকে টেনে নিয়ে আলমারীর পাশে ঘরের
কোনে বসে পড়লো পা পোষটা টেনে নিয়ে। আমাকে কোলে তুলে বসিয়ে নিয়ে শাল দিয়ে জড়িয়ে নিলো,
মশা আর শীতের ভয়ে। সে’খানে বেনারসের মতন শীত নেই বটে তবে মশা দারুণ।
অন্তহীন প্রতীক্ষার বিনিদ্র রজনী ।
শিকারী ও ডিটেক্টিভদের এই ভাগ্য।
মা থাকলে ঠিক বলতো এই দুই অকর্মাদের না কাঁথায় আগুন।
ভোর রাতে একটু তন্দ্রামতন এসেছিলো যেন আমার।
কোথায় যেন খুট করে একটা শব্দ হ’লো তখন আর চমকে উঠে দেখি যে আবছা অন্ধকারে আমাদের
খাটখানা আস্তে আস্তে নীচে নামছে
ছত্রী মশারী সমেত। খুব ধীর গতি, যাতে ঘুম না ভেঙে যায় আমাদের।
যাঃ....গেলো.....সবটাই মাটির মধ্যে ঢুকে গেল।
কাকু, অবশ্য একটু ও নড়লো না। আমি ও বেশ হতভম্ব হয়ে আবছা আঁধারে চুপটি করে বসে সব দেখছি।
খাটের মাথার দিকে একটা জানলা অল্প খোলা ছিলো। তাই অন্ধকার বেশ হালকা মতন। হয়তো ভোর ও
হয়ে এসেছিলো। তখন তো আর তা বুঝতে পারিনি আমি।
তবে এটা বুঝলুম যে কাকুর ডান হাতে আমাদের বাদলের তৈরী পিন স্টেপলিং মেশিনটা ধরা আছে।
সাংঘাতিক অস্ত্র ....পাঁচ হাতের রেঞ্জে পিন গেঁথে দিতে পারে নিমেষে আর নিঃশব্দে.......
কিন্ত ওর মর্ম সিকিউরিটি জওয়ান কি বুঝবে, ছাই? বাদল তো নিজের জীবনের প্রথম সিকিউরিটি চেকিংয়ের
দিনই একজন সিকিউরিটি জওয়ান-- জলের বোতল নিয়ে ফ্লাইটে যেতে পারবে না বলায় বোতল খুলে
জলটা খেয়ে নিয়ে বোতলটা ফেরৎ দিয়ে বলেছিলো ....তা বেশ তো সিকিউরিটি আংকল, বোতলটা
আপনি তবে না হয় রেখেই দিন। সেই থেকে সব ডোমেস্টিক ফ্লাইটে এক বোতল জল অ্যালাউড হয়ে
গেছে সিকিউরিটিদের নিয়মে।
খানিক পরে দেখি আস্তে আস্তে উঠে এলো খাটটা আবার। মশারিটা গোঁজা ছিলো । এখন খুলে ঝুলছে
মনে হ’লো তবে বালিশ লেপ তোষক চাদর একটা ও খাটে আছে বলে মনে হ’লো না আমার। হায় রে,
কাকুর অশ্বডিম্ব। সব তো দেখি গেল। অমলেট আর হয় কি করে? খাটটাকে নীচে কাত করা হয়েছিলো
মনে হয়। অটোমেটিক মেশিনেই হয়েছে সমস্তটি করা, তা ঠিক।
ক্রমে সামান্য একটু ভোর হয়ে এলো আর কাকু আস্তে করে আমাদের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে নিঃশব্দে
বেরিয়ে এলো সেই সাংঘাতিক ঘর থেকে। আবছা অন্ধকারের মধ্যে বাড়ির পিছনদিক দিয়ে ভাঙা
পাঁচিল ডিঙিয়ে সোজা পুকুর পাড়ে এসেই ফোন করলো বাপীকে।
‘এখুনি চলে এসো। অশ্বডিম্বের অমলেট ঠান্ডা হয়ে গেলে আমার দোষ নেই কিন্তু’।
বাপী বললো--‘আমি তোর নষ্টামির কথা শুনে আর ছেলেটাকে সঙ্গে নিয়ে এই জোড়া খুনের খুনীর
সন্ধানে এসেছিস জানতে পেরে রাতেই এসে গেছি। থানায় এখন বসে আছি। ততক্ষন ঢাকা দিয়ে
রাখ তোর অমলেট। ঠান্ডা না হয়। মিঃ সেন, এখুনি জীপ লাগান.......’
তার পর আর কি?
আমাদের সেই ঘরের দরজা ভাঙবার আগেই পুলিশ এসে বাড়ী ঘিরে ফেলতে শেষে সবাই জানলো
যে পথে আমরা যাচ্ছিলাম অমলেট হতে, সেই পথেই নীচের পাতাল কুপে গোলোক শংকর ও গড়িয়ে
পড়ে অদৃশ্য হয়ে গোলোকে গিয়েছেন।
তাঁর বেশে যিনি রয়েছেন তিনি শয়তান শিরোমণি রামশংকর। অসম্ভব ধূর্ত আর ছদ্মবেশ ধরতে ওস্তাদ।
আমার কাকু পরে বলেছিলো যে তাঁর হাতের ও আঙুলের গড়ন না কি কিরোর মতে অপরাধী প্রবৃত্তির
লোকের বা হত্যাকারির হাত। যা দেখে সেই রাতে আমি ঠিক ভয় না পেলে ও বেশ ঘাবড়ে গেছিলাম,
আর কি।
তাঁর ডান হাত ছিলো রাম কিংকর।
তবে তার বিরুদ্ধে একটাই চার্জ আনা হ’তে পারে।
সে নিজের একটা নকল বা ডুপ্লিকেট আই০ডি০ কার্ড দিয়েছিলো রাম শংকরকে ফ্লাইটের ই- টিকিট বুকিং ও
বেনারসের লাল বাহাদুর শাস্ত্রী এয়ার পোর্টে চেক ইন করবার জন্যে।
আর নিজে দিব্যি রামশংকর সেজে.....। তবে ওজনটাই সব মাটি করে দিলো অবশ্য।
মার্ডারে সাহায্য করা আর কি। তার জন্যে ও তো তার সাজা মানে শাস্তি হবেই।
০৯৪৫২০০৩২৯০
রচনাকাল : ২৪/১/২০১৪
© কিশলয় এবং জি.সি.ভট্টাচার্য কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।