গন্ডমূর্খ অশিক্ষিত রমার বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাওয়া স্বত্তেও কোন পাত্র জোগাড় হচ্ছে না। দেখতেও সে আহামরি নয়।
তাই দুবেলা দাদা বউদির খোটা শুনেই তার দিন কাটাতে হয়। এটাকেই সে ভবিতব্য হিসেবে মেনে নিয়েছে।
তার যে আর বিয়ে হবে সেটা আর সে মনে করেনা। কম পাত্র তো আর এলোনা। সবাই দেখে চা বিস্কুট খেয়ে পগারপার। কেউ আর এমুখো হয়নি দ্বিতীয়বার।
এরম ভাবেই কেটে যাচ্ছিল দিন। দাদা বৌদির খোঁটা শুনেই তার জীবন কাটাতে হবে। মাঝে মধ্যে মরে যেতে ইচ্ছে করে রমার।খুব কষ্ট হয়।
তবে কার নিয়তি কখন কোন দিকে ঘুরে যায় সেটা বোধহয় স্বয়ং বিধাতারও অজানা।
রমার হয়ত কোন গুন নেই, কিন্তু ভগবান কাউকেই খালি হাতে পাঠাননা পৃথিবীতে। তাই রমারও একটা গুন ছিল, সেটা হল পরোপকারী।
নিজের হাজার কষ্ট থাকা স্বত্তেও অন্যের কষ্টে রমার মন কাঁদে। নিজের সামর্থ্যের বাইরে গিয়েও ঝাঁপিয়ে পড়ে সে।
যাকে যেভাবে পারে ওর সাধ্যের বাইরে গিয়েও সাহায্য করে। এতেই ওর আনন্দ এতেই ওর সুখ।
তাই সেদিন খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে ছুটে গিয়েছিল হাসপাতালে। বাড়ির লোকের আপত্তি থাকা স্বত্তেও এক বয়স্ক ভদ্রলোককে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছিল। খুব রেয়ার গ্রুপের রক্ত যেটা সচরাচর পাওয়া দুষ্কর। এই গ্রুপের রক্ত ব্লাড ব্যাংকেও খুব একটা থাকেনা তাই কোন ভাবেই পাওয়া যাচ্ছিল না। এর আগেও অনেক কে রক্ত দিয়েছে রমা। কিন্তু এবার রক্ত না দিলে ভদ্রলোক কে বাঁচানো যেতনা।
মোটা অঙ্কের টাকা দিতে চেয়েছিল রমাকে ভদ্রলোকের বাড়ির লোক। কিন্তু কারো কাছ থেকে কাজের মূল্য নেয়া রমার স্বভাব বিরুদ্ধ। ভদ্রলোকের শীঘ্র সুস্থতাকামনা করে সেদিন বাড়ি চলে এসেছিল রমা।
এই ঘটনার কয়েকদিনের মাথায় ওই ভদ্রলোক রমাদের বাড়িতে এসে হাজির। রমার এই উদারতা ওনার মন জয় করেছিল। তাই আগ পাঁচ না ভেবে ছেলের জন্য সম্বন্ধ নিয়ে হাজির হয়েছেন তিনি। ওনার ছেলেও এমন একজন কে জীবন সঙ্গী করতে কোন আপত্তি করেননি। তাই রমা বিবাহিত কিনা জেনে নিয়ে সোজা রমার বাড়ি চলে এসেছে। শুধু তাই নয় ওনাদের এনজিওর দায়িত্বটাও রমার হাতেই তুলে দিতে চায়। কারণ মানুষকে নিঃস্বার্থ ভাবে সেবা করার গুন তিনি রমার মধ্যে দেখেছেন।
যদিও রমার কাছে পুরোটাই সহানুভূতি মনে হয়েছিল তাই রাজি হয়নি প্রথমে। ওর মত একটা মেয়েকে এত ভালো ঘর থেকে এত সম্মান দিয়ে বউ করতে চাইবেই বা কেন। নিশ্চয়ই রক্ত দিয়ে জীবন বাঁচিয়েছে তাই দয়া দেখাতে এসেছে। কিন্তু ওনাদের ব্যবহার আর কথা বার্তা শুনে রমার ভুল ভেঙেছিল। বুঝতে পেরেছিল যে সবাই রুপের পাগল হয়না। গুনের কদর ও করতে জানে কেউ কেউ।
আজ রমা নিজের গুনে তার ভবিতব্য বদলে ফেলেছে। তার উদার মানসিকতা দিয়ে তার নিষ্ঠা দিয়ে অনেক মানুষের মন জয় করেছে। আসলে কার ভবিতব্য কাকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করাবে সেটা বোধহয় কেউই বলতে পারে না।
আজ দাদা বৌদি পাড়া প্রতিবেশী সকলেই রমার গুনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। রমা মনে মনে হাসে আর ভাবে মানুষ তার রঙ বদলাতে গিরগিটিকেও হার মানিয়েছে।
রচনাকাল : ১৬/১২/২০১৯
© কিশলয় এবং মনি রায় ঘোষ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।