কাল্লু রচনা
আনুমানিক পঠন সময় : ১৮ মিনিট

লেখক : জি.সি.ভট্টাচার্য
দেশ : India , শহর : Varanasi,u.p.

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১২ , নভেম্বর
প্রকাশিত ৪৪ টি লেখনী ৫০ টি দেশ ব্যাপী ৪১৪৫২ জন পড়েছেন।
কাল্লু রচনা

জি০সি০ভট্টাচার্য্য, বারাণসী, উত্তর প্রদেশ

আমি সবে শিরোনামটুকুই লিখেছি গল্পের, আর তাই পড়েই আমার রূপকুমার পরীর দেশের রাজকুমার 
ভাইপো চঞ্চল লাফিয়ে উঠলো। সুন্দর ছেলেটা চুপ করে আমার পাশে এতক্ষণ বসে আমি কি করছি 
তাই একমনে দেখছিল, তা বোঝা গেল।

‘ও কাকু, এ’সব আবার কি লিখছো, তুমি?’

নাঃ, এই হয়েছে আমার এক জ্বালা। একটু বড় হয়ে ওঠা বাচ্ছাদের সবসময় দেখি হাজারো প্রশ্ন। 
উত্তর দিতে দিতে আমার তো প্রাণান্ত ছেড়ে বাপান্ত হবার দাখিল। 

বললুম--‘আরে বাপু, ও আমি ঠিকই লিখেছি। কথাটা হবে রম্য রচনা, তা আমার রচনাকে রম্য 
বানাতে হ’লে কাল্লুজী ছাড়া গতি নেই তো, তাই সরল সমীকরণের নিয়মে রম্য=কাল্লু ধরলে, 
ভ্যালু রিপ্লেশমেন্টের পরে .কথাটা একদম ঠিক হয়, তাই নয় কি, চঞ্চল?’।

‘হিঃ....হিঃ.......হিঃ.....সে বেশ মজা তো, কাকু। তুমি না কাকু, বড় হয়ে ঠিক একটা গোমড়ামুখো 
ইস্কুল মাষ্টার হবেই। গল্পের মধ্যেও পড়া ঢুকিয়ে দিতে খুব ওস্তাদ। তা গল্পটা বলো তো আমাকে আগে, 
কাকু, .শুনি...’

‘হুঁ.....গল্প বলে কিচ্ছুটি থাকে না তো রম্য রচনায়, খালি মজাদার কথা। তবে কিন্তু কিছুটা গল্প অন্তত 
পক্ষে আমার এই রচনায় আছে। তা এখন কথা হচ্ছে এই, যে তুমি যদি অভ্র কি বোর্ডে বাংলায় টাইপ 
করতে পারো চঞ্চল, তা’হলে আমি গল্পটা ধীরে ধীরে বলে যেতে পারি।’

‘ল্যাপটপটা তুমি আমাকে দাও, কাকু। সে তো আমি খুব পারি। বড় হয়েছি না আমি এখন ...’

‘অবশ্য....অবশ্য, খুব ঠিক কথা, চঞ্চল। তেরো বছর বয়স হয়ে গেলে সে বড় তো একটু হয়ই.....
কচি কচি, নরম সরম,,   গোলগাল, তুলোর বলের মতন ছোট্টমতন বাচ্ছা  ছেলে একটা নিশ্চয়ই 
থাকে না কেউ তখন আর।।  এই তো, এই ছেলেটাকেই ধরে একটু টিপে টুপে দেখলেই তো দিব্যি 
করে বোঝা যায়..’

আমার কাতু কুতু খেয়ে চঞ্চল খিল খিল করে হেসে ফেলে বললো--‘যাও কাকু, খালি তোমার যত 
সব বাজে কথা.....ও’সব বাদ দিয়ে তুমি গল্পটি শুরু করো তো এখন আগে...’

বলছি----

‘আমি সেদিন গিয়েছিলুম সকাল বেলাতেই কাল্লুজীর বাড়ী গল্পের তাগাদায়। আমাকে যেতে দেখেই 
সে তড়াক করে কোলা ব্যাঙের মতন পেল্লায় এক লাফ দিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো—‘হে ভগবান, লাখ 
লাখ ধন্যবাদ তোমায়, ....ইয়া পরবরদিগার...অল্লাহ পাক, তেরা লাখ লাখ শুক্রিয়া.....’ 

কাল্লুজীর আপ্যায়নের বহর দেখে আমার তো চক্ষু চড়কগাছে।

বললুম---‘ভগবান থেকে আল্লাহ অবধি কাউকেই আজ বাদ দিচ্ছো না যে বড়, তোমার 
ব্যাপারখানা কি বলো তো, কাল্লুজী?’

‘আরে কি আবার ব্যাপার হবে, রে পন্ডিতজী? সব্বাইকেই তো ডাকছিলুম মনে মনে । 
তা কে যে আমার করুণ পুকার মানে ডাক শুনে দয়া করলো, তা কে জানে? তাই 
ভদ্রলোকের চক্ষুলজ্জায় ধন্যবাদ তো দিতেই হয় একটা করে সবাইকেই, না কী? .তা তোর 
জ্বালায় কি সে’টুকু ও সহজে হ’বার উপায় আছে না কী?
 
‘সে যাক। তা তুই এখন এক কাজ কর দেখি, রে পন্ডিতজী। তোর এই সব ঝকঝকে 
পোষাক আশাক সব দূর করে খুলে ফেলে দে দেখি ...সমস্ত এক টান মেরে...।’

আমি আঁৎকে উঠে বললুম---‘তা ...তার মা...মানে, কাল্লুজী?’

‘বলি সব তাইতে তোর মানে আবার কি থাকবে রে পন্ডিতজী? এ্যাঁ......খোল তোর জামা প
্যান্ট,... পর গামছা....আর আমার মতন রাধারূপে লেগে পড় পনঘটে এসে পানি ভরন মে...’

‘সে কি, কাল্লুজী? শেষে গামছা? কিন্তু তাই পরলে ও রাধা হই কি উপায়ে, কাল্লুজী?’
‘আঃ, খেলে কচুপোড়া এই ওঁচা সাহিত্যিকের জ্যাঠা ম’শায়। আরে যেমনটি করে আমি হয়েছি 
রে পন্ডিতজী। তেমন করে তুই ও হবি’। 

‘আধুনিক রাধারা পনঘট তো দূর কথা, এই নলঘটে ও পানি ভরন কো আসে না 
নেমে । ওপর তলা থেকে একটিবার ভূলে ও নীচেই উতরে না, রে ভাই।... আধুনিক কৃষ্ণদেরই 
এখন এই কাজটি ও করে মরতে হয় রে পন্ডিতজী....বলি ঢুকল কিছু তোর ঘটে? ’

‘আমি ঠিক বুঝছি না এখন ও ব্যাপারটা, কাল্লুজী...’

‘তুই আর কি ছাই বুঝবি? ঘটে তো ঢুঁ...ঢুঁ...অষ্টরম্ভা তোর... শুধু জেন্ডার ইক্যুয়ালিটির ওপরে 
বড় বড়  ইন্টার ন্যাশন্যাল সেমিনারে প্লেনে চেপে গিয়ে খালি গলাবাজি করতে জানিস, পয়সার 
শ্রাদ্ধ করে। বিয়ে থা তো আর করলি নে রে, পন্ডিতজী। বুঝবি কি করে, যে কত ধানে কত চাল?’
 
‘আমার গ্রহ নক্ষত্রই খারাপ। কপালে সকাল থেকে এক কাপ চা ও জোটে নি আজ’। 
লাইট মানে পাওয়ারই নেই রাত তিনটে থেকে। তাই ওয়াটার পাম্প অচল। ট্যাঙ্কে জল ঢুঁ ...ঢুঁ.....
নীচের তলার কলে জল যা এসেছে তা সরু সূতোর মতন।  সেই জল বালতি বালতি করে ভরে 
এনে দোতলায় তিনটে ইয়া পেল্লায় সাইজের ড্রাম ভরতে হ’লে ঠিক বুঝতিস যে কোনটা 
ছেলেদের কাজ আর কোনটা মেয়েদের। তোর জেন্ডার ইক্যুয়ালিটির  আদ্যশ্রাদ্ধ সপিন্ডকরণ সব হয়ে যেত’।

‘এখন মেলা বাজে বক বক না করে, তুই লেগে পড় দেখি ভালো বন্ধু মানুষের মতন আমার 
সাহায্যে, টপাৎ করে। আড়াইখানা ড্রাম খালি হাঁ হাঁ করছেন এখন ও আর ন’টা বাজলেই এই 
জলটুকুও হবে ফুস ধা । তখন পথে বসে কাঁদতে হবে গঙ্গা থেকে জল টেনে এনে ওই ড্রাম ভরতে 
হ’লে....নে নে লেগে পড় ...ওঠ বলছি পন্ডিতজী....’

শুনে তো আমার মুখ চূণ.....কি গেরোয় যে পড়লুম সে আর কহতব্য নয়। মনে মনে বললুম 
যে রম্য থুড়ি কাল্লু রচনার না নিকুচি করেছে.......

সাতটা থেকে ন’টা অবধি কাল্লুজীর কুগ্রহ নক্ষত্রের ঠ্যালায় আমি তো কোমর ব্যাঁকা হ বনে গেলুম। 
সাত দু’গুনে চোদ্দোবার কষে কান মুললুম যে ফের যদি আমি কোনদিন ভূলে ও রম্য রচনার 
চক্করে পা দিয়েছি....ওরে বাপ রে। হয়তো পাঠক বলবেন যে বেশ তো রম্য হয়েছে রচনাটি.....
হুঁ....বাবার নাম ঠ্যালাজী থুড়ি ঠ্যালার নাম বাবাজী ....যে ভুক্তভোগী সেই বোঝে যে কতটা রম্য 
হয়েছে আমার অখাদ্য রচনা। কিন্তু আমার ও তখন  চেপেছে জেদ....

তা ন’টা বাজতেই জল বন্ধ আর আমি ও বললুম—‘আমার বন্ধুকৃত্য শেষ, কাল্লুজী। শেষকৃত্য 
ও বলতে পারো। আমি এইবার আসি.’

‘আরে দাঁড়া রে পন্ডিতজী। ও আবার কি কথা তোর? শেষকৃত্য হোক তোর শত্তুরের....আমি ও 
আসছি। বাজারের ব্যাগ আর পঞ্চাশটা টাকা অন্তত বাগিয়ে নিয়ে। ছেলেদের কাজের মধ্যে এই বাজার 
করাটাও পড়ে রে ভাই। দরকারে রান্নাটাও মাঝে মধ্যে করতে হয়। বাসন ধোওয়া তো অবশ্য 
কর্তব্য তাদের। নইলে এক হাজার টাকা নগদ মাস মাইনে দিয়ে কাজের লোক রাখতে হবে রে 
পন্ডিতজী। আমার সে গুড়ে ও বালি, তুই তো জানিসই সব, রে ভাই......’

‘কেন? ভাবিজী আছেন তো...’

‘আরে সে তো ...   ‘গৃহিনী গৃহমুচ্যতে...’ রে ভাই। সে কী নোকরাণী আমার ঘরের.... 
চল... চল... বেরিয়ে পড়া যাক। বসন্ত বাহার ক্যাফে হয়েই চল । এক কাপ চা ও তো 
আমার জুটবে আর তোর আগমনের কারণ মানে দরকারটা ও শোনা হবে আমার ...’

বুঝলুম যে এরপরে ও গরমা গরম পকৌড়া, কফি আর জিলিপির খরচ ও আমার।  
তা তাই সই। রম্য রচনা আমার চাইই। আমি ও আজ একদম  কাঠ কবুল.....।

‘হুঁ....এইবার বল রে পন্ডিতজী..’ 

চায়ের কাপে আরাম করে এক চুমুক মেরে বললো কাল্লুজী’।

‘তখন তুমি কি সব গ্রহ নক্ষত্রের কথা বলছিলে, কাল্লুজী?’

‘দূর দূর...ও সব বাজে। সব ধোকা। পন্ডিতদের আমদানির চক্কর খালি। সব ঝুঠ হ্যায়...’

‘তার মানে?’

‘মানে বুঝতে হ’লে সময় চাই যে একটু..... তার মানে আর ও দু’প্লেট পকৌড়া আর জিলিপির 
অর্ডার দিয়ে ফ্যাল রে পন্ডিতজী। নইলে এখুনি বিল এনে হাতে ধরিয়ে দেবে। যার অর্থ পয়সা দিয়ে 
কেটে পড়ো এইবার.....’।

‘তাও দিচ্ছি। তুমি বল’।

মনে মনে বললুম যে এত জিলিপির জোরে ও যদি আমার রচনা রম্য না হয় তো নাই হবে। 
বড় বয়েই গেল আমার...

‘তা শোন,....গত বছর একবার আমাকে একবার মায়কা যেতে হয়েছিল রে পন্ডিতজী...’ 

‘তোমার সব এক্কেবারে অসম্ভব কথা, কাল্লুজী। এই সব  বাজে কথা লিখলে আমার গণ ধোলাই 
ঠ্যাকায় কে? ওটা ও তো জেন্ডার স্পেসিফিক টার্ম। বিবাহিত মেয়েদের একচেটিয়া অধিকার। 
আমাকে গাল দিয়ে শেষে নিজেও দিব্যি করে জেন্ডার ইক্যুয়ালিটির চক্করে পড়ে গেলে তো এখন, কাল্লুজী?’

গরম জিলিপিতে কামড় দিয়ে কাল্লুজী বললো--‘আরে না রে পন্ডিতজী। বিয়ে থা কর। 
একটা .....তখন আপনিই সব বুঝবি.....বাপ ...রে... বাপ বলতে বলতে ঠিক বুঝবি’। 

‘জানিস তো--অসারে খলু সংসারে সারং শ্বশুর মন্দিরম্...’। 

‘বিয়ের পরে শ্বশুরালয়কেই নিজের মায়কা বানাতে হয়, রে ভাই। সেই যে কথায় আছে না —
‘বাপ মা ড্যাম ফল, তা খাওয়াইয়া কোন ফল? শ্বশুর শ্বাশুড়ী গুরুজন, ভক্তি করি সর্বক্ষণ। 
ঘরের উনি পরমেশ্বরী, ঘুরিয়া ফিরিয়া নমস্কার করি’। ........

‘ও রে বাবা রে । মরেছি...রে.....তা ঠিক আছে, বাবা। আগে কহ আর.....টানা বলে যাও...’

‘বলবোটা আবার কি রে পন্ডিতজী? আমারই দুর্বুদ্ধি, নইলে আমি মানে এই কাল্লুরাম রাম...চামার কুল 
শিরোমণি হয়ে আমি কিনা যাই যাত্রার শুভ দিন জানতে এক ছাইয়ের জ্যোতিষাচার্য্য পন্ডিতের কাছে। 
কোন দিন আমি বাইরে যেতে চাই, তা বলতেই আমার ছুটি হয়ে গেল’। 

‘ও তো হবে না ...হবেই না....মহা নক্ষত্র দোষ ...সাক্ষাৎ অশ্লেষা.....’

বললুম---‘পন্ডিতজী, তা’হলে পরের দিন গেলে কি হয়?’ 

‘পরের দিন যে মঘা রে চামার? মরবি গিয়ে আর লোকে এসে তখন আমাকে দূষবে। 
জানিস না ...অশ্লেষা...মঘা, সামলাবি ক’ঘা। ওটি হচ্ছে না.....’

‘আচ্ছা....তা’হলে তার পরের দিন কি যেতে পারি?’

‘আরেঃ ...রামঃ ...ছিঃ.......... ‘সোম শনিচর পুরব ন চালু, মঙ্গল, বুধ উত্তর দিশি কালু’ 
সাক্ষাৎ কাল সন্মুখে নিয়ে যাওয়া?..... বলি ফেরবার মতলবটা আছে, না কি তাও নেই তোর?’

তখন দেখা গেল দিন আষ্টেকের আগে যাত্রার শুভ দিনই নেই আর পরিবারের মানে আমার 
ঘরবালির হুকুম যে কালই যেতে হবে আমাকে। শ্বশুরের অসুখ বলে কথা। নিজেই ছুটতো বাঁই বাঁই করে 
ঘর দোর সব ভাসিয়ে দিয়ে মানে ফেলে রেখে।  নেহাৎ পাও ভারী বলে কথা ......এই একটিমাত্র 
পরিস্থিতিই হ’লো ছেলেদের স্বপক্ষে রে পন্ডিতজী। যত দজ্জাল বৌই হোক না কেন...’

‘তারপর, কাল্লুজী?’

‘তারপরে আবার কি হবে রে, পন্ডিতজী? একশো এক টাকা দক্ষিণা গাঁট গচ্ছা...দিয়ে ও পরদিনই 
রওনা হ’তে হ’লো আমাকে। দিন ক্ষণ গণনা সব চুলোয় গেলেন ঘরবালির গাল খেয়ে। 
বৌয়ের কথা ও শুনতে হ’লো বিস্তর। একশো এক টাকার শোক বলে কথা রে পন্ডিতজী.....’

‘তা আমি রিক্সা চেপে বেরুলে কি হয়, কপালে দুর্ভোগ থাকলে যা হবার তাই হয়। সবে লহুরাবীর 
বাবার মন্দির ছাড়িয়েছি, এক বেগবান অটো পেছন থেকে ছুটে এসে বাঁই করে ডাইনে ঘুরেই আবার 
বাঁয়ে ঘুরতে গিয়ে ঘুড়ি ভোকাট্টা করবার কায়দায় মারলো এক রাম ধাক্কা...’

‘তা তো সে মারতেই পারে একটু আধটু অমন। স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিকের মানবাধিকার বলে 
কথা, তায় রোজ নিয়ম মতন থানায় তোলা জমা ও করে বলে মনে হয়, নইলে অতো স্পীডে 
ইচ্ছেমতন বাঁই বাঁই করে অটো চালায় কখনো? কিন্তু তার ফলে তখন আমি পথের ধূলোয় দমাস 
করে গিয়ে ছিটকে পড়ে চিৎপটাং হয়ে দিনের বেলাতেই দিব্যি এক দুই বিশ পঞ্চাশ করে আকাশের 
তারা গুনছি, আর রিক্সার সামনের চাকাটা দেখি  দশ হাত দূরে ছিটকে পড়ে ও বোঁ বোঁ করে বেগে 
ঘুরছে, ফর্ক সমেত ভেঙে গিয়েছে বলে’।

‘তা সে ও সহ্য হয় কোনমতে কিন্তু আর ও দেখি যে  আমার বুকের ওপরে রিক্সাওয়ালা হাত পা 
ছড়িয়ে দিব্যি শুয়ে আছে। নড়ন চড়ন নেই। তাই আমার বেজায় রাগ হয়ে গেলো রে পন্ডিতজী। 
তুইই বল-এই কি বুকে বসে দাড়ী ওপড়ানোর সময় মানে বুকে শুয়ে আর কি? আর কিছু হাতের 
কাছে ধরবার মতন না পেয়ে, সে যে আমার দাড়িটাই আঁকড়ে ধরবে, সে কি আর আমি জানতুম 
রে পন্ডিতজী? আমার অতো সাধের দাড়ী অর্দ্ধেক ছিঁড়ে বিলকুল সাফ। না চাঁছলেই নয় এমন অবস্থা।  
সেই থেকে একদম দাড়ী মুড়িয়ে ছেড়েছি রে ভাই....’

‘ব্যথায় সমানে কোঁ কোঁ করতে করতে ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে উঠে অন্য একটা  রিক্সা নিয়ে আমি 
যখন রেল স্টেশনে গিয়ে কোনমতে পৌঁছলুম,  ততক্ষনে আমার ট্রেন ভাগলবা হয়েছে, রে পন্ডিতজী’।.

‘পরের ট্রেন সেই সন্ধ্যা পাঁচটায় আর সলেমপুর পৌঁছতেই রাত এগারোটা। ট্রেন আমাকে নামিয়ে 
দিয়ে কুয়াশা ঢাকা লাইন ধরে ভোঁ রবে ছুটলো ভটনির দিকে। আমাকে যেতে হবে সেই দেওরিয়া 
সদর। ট্রেন তো  নেইই; আর বাস, অটো, জীপ সব ওই শীতের রাতে গায়েব। স্টেশনে একটা 
চা’ওলা পর্যন্ত নেই রে পন্ডিতজী। কনকনে ঠান্ডা লোহার বেঞ্চিতে রাত ভোর, পেটে দমাদ্দম 
করে পাঁচ কিল মেরে বসে রইলুম। তা’তেই কি হয়, রে ভাই ? নেহাৎ একটা বালিশ অন্তত 
পেলে পেটটায় বাঁধা যেতো তখন। তা সে আর কে দিচ্ছে আমাকে তখন?। ’

কমপক্ষে বিশজন যাত্রী না হ’লে তো আর জীপ যায় না তাই পরদিন সকাল পৌনে সাতটায় 
একটা সরকারী বাস আসতে তাইতে উঠে দু’ঘন্টায় দেওরিয়া পৌঁছে ও কি রেহাই আছে? একদম 
ফাঁকা রাস্তা পেয়ে দারুণ স্পীডে বাস চালিয়ে ততক্ষনে চালক আমাকে চলৎশক্তিহীন করে ছেড়েছে 
দারুণ ঠান্ডায়। বাস স্ট্যান্ড থেকে.একটা সব্জির রিক্সা চেপে শ্বশুর বাড়ী পৌঁছে দেখি গেট বন্ধ। 
গেটের পাশেই দারোয়ানের ঘরের দরজা ও ভেজানো আর জোর নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছে সে তখন ও’।

‘তা শ্বশুর বাড়িতে ট্রেসপাশিং তো করাই যায় রে পন্ডিতজী তাও এই অবস্থা বিপাকে পড়ে। 
স্বয়ং রাম চরিত মানস রচয়িতা গোস্বামী তুলসীদাসজী ও সেই কর্মে পিছপা হন নি। আমি 
কোন ছার। তিনি তো আবার বৌ মানে বিদ্যোত্তমার ঘরে ও রাতে ট্রেস পাশ করে জব্বর 
গলাধাক্কা ও না কী খেয়েছিলেন। আমার সে এলেম থাকলে তো রে ভাই। কোনমতে গেটটা 
ডিঙিয়ে দারোয়ানের ঘরে ঢুকে তারই খাটিয়ার মোটা রজাইয়ের ভেতরে ঢুকে পড়লুম, প্রাণটা বাঁচাতে’।

‘ঘুম ভেঙে উঠে অবশ্য তাকে সব কথা আগে বলতেই হ’লো। তা ভোজপুরী দারোয়ানটিকে 
বেশ ভালোই বলতে হয়। দর্দ হর মানে ব্যথা নাশক তেল এনে মালিশ টালিশ করে ও একলোটা 
দুধ ও পাঁচশো গ্রামের মতন ছাতু নুন লংকা দিয়ে মেখে এনে খেতে ও দিলো সে। শেষে আমাকে 
শ্বশুরমশাইয়ের কাছে পেশ করলে। তিনি তখন সবে মাত্র একধামা পাকা পেয়ারা সামনে 
নিয়ে ব্রেকফাষ্টে বসেছিলেন। 

গোড় লাগবার পরে মানে.....প্রণামান্তে বললুম---‘আপনার না কী শুনলাম খুব অসুখ, 
তাই আপনার মেয়ে আমাকে ....’

‘হুঁ, তা একটু সর্দিমতন কালকে হয়েছিলো বটে। তাই আমরুদ দিয়ে ব্রেকফাষ্ট সারছি, দেখছো না। 
বসে পড়ো.... বসে পড়ো। এই নাও ......চেখে দেখ আগে...’

বলেই কিলোখানেক ওজনের বেশ বড় গাছপাকা একটা হলদে সবুজ রঙের পেয়ারা আমার হাতে 
তুলে দিয়েই হাঁক দিলেন---‘আরে রমওয়া রে, জল্দি সে একগো খটিয়া তো বিছা লাকে। 
হামার জঁওয়াই রাজা কা ভুঁইয়া মে বৈঠী? কিতনা বড়া সরকারী অফসর হও বনারস মে...’

বলা বাহুল্য রামের টিকি ও দেখা গেলো না আর নিয়ম মতন আমাকে ও মাটিতেই বসে 
পড়তে হ’লো শ্বশুরের পাশে....। 

একগাল হাসলেন তিনি তাই দেখে। পরে এই নিয়ে পাড়া ময় গুমোর করে যে বেড়াবেন তিনি, 
তা বলাই বাহুল্য.......

মুখে অবশ্য বললেন---‘আরে আরে জঁওয়াই রাজা কা করতে হো...?’

‘এটা কি আপনাদের গাছের পেয়ারা?’

‘হাঁ, ওহি সমঝো বেটা, অব হামার পেড় কা অমরুদ ভি হ্যায়। লেকিন গোলুয়া কে বাগ 
কে অমরুদ কা কোই জবাব নেহী। ছোট্টু সাঁঝ কো যায়কে লে আয়া থা না দীবার ফাঁদ কে....’

শুনে আমি চুপ।

তারপর, কাল্লুজী?’

‘তারপরে আবার কি থাকবে রে, পন্ডিতজী? সেইদিনই আমার সোজা ঘর বাপসী। তা এখন ওঠ। 
বাকিটা বাজারটা সারতে সারতে বলছি। বিল মিটিয়ে দিয়ে চলে আয় দেখি চটপট করে’। 

‘বাজার সেরে ফেরবার পথে কাল্লুজী বললেন---‘জানিস রে পন্ডিতজী। আমি ও তো কাল্লুরাম আছি, না কী? 
তারপরে আদাজল খেয়ে সেই জ্যোতিষাচার্য্যের পিছনে লেগে পড়লুম’।

‘তা একদিন শুনলুম যে বুড়োর ছেলে এলাহাবাদ যাচ্ছে। অমনি আমি ও গিয়ে বাজার থেকে খান 
তিনেক পত্রা মানে পঞ্চাঙ্গ মানে কি বলে পাঁজি কিনে আনলুম, ঘরবালিকে লুকিয়ে, নগদ পয়সা দিয়ে।  
বোঝ, আমার মাথায় রোখ চেপেছে তখন কতটা। তা দেখি যে সে’দিনের নক্ষত্রটা অশ্লেষা নয় কোন 
পত্রাতেই। আমি চুপ’। 

‘লেকিন ফির নজর তো রাখতেই হয়। পরের মাসে ফের ছেলে আবার রওনা আর পড়বি তো পড় 
সেই অশ্লেষা নক্ষত্রে....। আর যায় কোথায়? অফিসের মাথায় তিন ঘা জুতো মেরে তার পিছন  
ও লটকে গেলাম। ওমা,...কোথায় কি? সে দিব্যি গিয়ে যজমানের ঘরে কথা টথা সেরে মোটা 
দক্ষিণা ও ছাঁদা সব বেঁধে নিয়ে একপেট ভালোমন্দ গুরুভোজনের পরে বাসে চড়ে বিকেল নাগাদ 
নির্বঘ্নে ঘর বাপস। আর আমি এ’দিকে স্টেশনের জনতা খানা চিবোচ্ছি। মানে সাতটি শুকনো 
পুড়ি আর একথাবা আলুর সব্জী...পনেরো টাকা দাম আর তাও সব একদম  ঠান্ডা...পুড়ি শুকিয়ে 
কাঠ...চিবোয় কার বাবার সাধ্য ...’

‘আমার তো অশ্লেষার এই পক্ষপাতিত্ব দেখে সত্যি বলছি রে ভাই, বেজায় রাগ হয়ে গেলো রে পন্ডিতজী’। 

‘মনে মনে বললুম দাঁড়া ও, অশ্লেষা মঘার না নিকুচি কিয়া হ্যায়। দেখাচ্ছি মজা। আসুক আবার 
ঘুরে সেই ছাইয়ের অশ্লেষা। পন্ডিত বেটাকে সেই দিনই ডাকবো আমার নিজের গ্রামের অজ বাড়িতে 
ওই রাম কথা করাবার ছুতোয়ই। ডবল দক্ষিণা দিয়ে। দেখি যেতে রাজি হয় কি না? আমাকে অবশ্য 
একটু প্রচ্ছন্ন থাকতে হবে যাতে কিছু সন্দেহ করতে বা বুঝতে না পারে। যাতায়াত খরচ বলে একশোটা 
টাকা মনি অর্ডার করে দিলেই হবে। খরচ তো হবে সাকুল্যে তিরিশটা টাকা ’

‘তা আবার যাবে না? দেখি যে বুড়ো ঠিক গড়গড়িয়ে গিয়ে হাজির। নক্ষত্র তিথি কিছুটির পরোয়া না করে। 
তা পূজা পাঠ কথা ভোজন সব হয়ে যেতে ইয়া এক ছাঁদায় সব পাওনা গন্ডার জিনিষ পত্র বেঁধে নিয়ে সন্ধ্যা 
নাগাদ বৈলগাড়ী চেপে পন্ডিতজী তো রওনা। গ্রামের স্টেশন পাঁচ কোশ পথ আর সেই এক প্যাসেঞ্জার ট্রেন ভরসা’। 

‘আমি গ্রামের কয়েকটা বেকার ছেলেকে ডেকে প্রত্যেককে নগদ দশ দশ টাকা কবুল করে তখনি সেই পথে 
রওনা করিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে নিলুম। কোন ভারী কাজ আছে? প্রথমে তো একটা ষাঁড়কে তাড়িয়ে নিয়ে 
গিয়ে ওই বৈলগাড়িকে চাকা ওপরে তুলে গড়গড়িয়ে চলবার ব্যবস্থা করা। তা সে খুব পারবে গ্রাম দেহাতের 
দুষ্টু ছেলের দল। পরে কিছু সামান্য কাজ আর ও ঠিক করে ফেলবে তারা। তাই আমি যখন অকুস্হলে 
গিয়ে পৌঁছলুম তখন জ্যোতিষাচার্য্য মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি দিচ্ছেন আর কোঁ কোঁ করছেন ব্যথায় ঠিক 
আমার মতন। গোরুর গাড়ী আড় হয়ে পথে পড়ে আছে। একটা চাকা ছিটকে বেরিয়ে গেছে। গোরু 
ও চালক সব ভাগলবা হয়েছে’।

‘আমাকে দেখেই তিনি বললেন—‘আরে কলুয়া রে,....হম তো আজ মর গইলি রে...তু এঁহা কৈসে রে?’

‘গাঁও যা রহা থা, পন্ডিতজী। আউর কৈসে লেকিন আপ জমীন পর কৈসে লেটে হ্যায়? দিন মে 
আসমান কে তারে গিন রহে হ্যায় ক্যা? শাম ঢলতে শিয়ার হুঁড়ার কুছ আ গয়া তো ক্যা হোগা? 
আপ উঠিয়ে। ঘর জাকর লেটিয়ে’........
   . 
‘চোপ্প, বদমাস...তেরা ইহ গাঁও হ্যায় য়া মরঘট রে? একঘন্টে সে পড়া করাহ রহা হুঁ 
কোই উঠানেবালা ভি নহী আতা রে...’

‘গাঁ ও এঁহা পর হ্যায় কঁহা পন্ডিতজী? ওহ তো চার কোশ দূর...স্টেশন পাশ মে হ্যায়। 
এক কোশ দূর...আপ উঠিয়ে...মৈ লে চলতা হুঁ আপকো...’

‘ক্যা কহা? এক কোশ? পৈদল.....বাপ রে...মর গইলি রে। মেরে লিয়ে তো এক কদম 
ভি চলনা মুশ্কিল হো গয়া রে। তু কুছ কর রে কলুয়া...পহলে মুঝে উঠা তু...’

‘পরের ঘাড়ে বসে ভূরিভোজন করে সুপুষ্ট সেই দশাসই ভূঁড়িসমেত তাঁকে টেনে তোলা কি আমার 
একলার সাধ্য, রে পন্ডিতজী? আর সে’খানে আমি অতোবড় ভূঁড়িটাকে বাদই বা দিই কি দিয়ে? 
মহা মুস্কিল তখন আমার....’

‘একটা বাঁশের টুকরো কুড়িয়ে এনে তাই দিয়ে চাড় দিতে গেলুম, তো একশো কিলোরও বেশী সেই ওজন 
কি আর সহজে ওঠবার, রে পন্ডিতজী? মচাৎ করে ভেঙেই গেল সেটা। অর্ধোথ্থিত ভুঁড়ি আবার ধপাস....
রে রে করে উঠে .গাল দিয়ে ভূত ভাগিয়ে দিলেন তিনি আমার...। তা কি আর করা? পরোপকারের মতন  
পূণ্য কর্মে একটু আধটু গালাগাল তো খেতেই হয়। অতোবড় ভূঁড়িটা শেষে যদি আমাদের গাঁয়ের 
শেয়াল কুকুরের পেটে যায় সেটা কি আর ভালো দেখায়?  তাই  তখন একটা আস্ত বাঁশ এনে তাঁর 
শরীরের নীচে ঢুকিয়ে চাড় দিতে কোনমতে তিনি উঠলেন বাপ রে মাই রে করতে করতে.’

‘শেষে খুঁড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটতেও হ’লো তাঁকে আমার কাঁধে ভর দিয়ে’।

‘তবে গ্রামের পথ তো খুব একটা ভালো নয়। মাঝপথে দেখি কারা বেশ করে জল ঢেলে কাদা 
হোড় করে রেখেছে। পন্ডিতজীর হাওয়াই চপ্পল (অপবিত্র চামড়ার জুতো তিনি আবার পরেন না 
আর কাঠের খড়ম এই দেশে এখন আর ছাই মেলে ও না ) সেই কাদায় পড়তেই তিনি আবার .........
আঁই রে বপ্পা রে মর গইলি রে......... বলেই ধপাস ধাঁই....। কিন্তু তিনি তো চিৎ হয়েই খালাস 
এ’দিকে তো.আমারই  খালি খাটুনি বাড়লো আবার। মারো চাড় হেঁইও ....জোরসে মারো হেঁই ও.....

আবার পথ চলা। খানিক গিয়েই আবার বিপত্তি। পথে বড় বড় বাবলা কাঁটার মতন বিচ্ছিরি 
জিনিষ পড়েছিলো অনেক...অন্ধকারে পা দিতেই হাওয়াই চপ্পল ভেদ করে সেই সাংঘাতিক কাঁটা 
পন্ডিতের পা ও এফোঁড় ওফোঁড় করে দিতেই চপ্পল পায়ে সেট হয়ে আটকে গেলো আর পন্ডিত 
তো পরিত্রাহী চিৎকার করে আমার কানের সব পোকা বার করে ছাড়লেন। 

‘এঃ হেঃ হেঃ....সর্বনাশ ...একটু দেখে চলতে হয় তো। এখন তো বহুত মুশ্কিল হয়ে গেলো...
একটা প্লাস বা সাঁড়াশী অন্তত না হ’লে এ কী আর টেনে বার করা যাবে? আর সে’সব 
কিছু এখন পাই কোথায়? আপনি বসে পড়ুন ...দেখি যদি দাঁত দিয়ে টেনে বার করতে 
পারি....নইলে আপনাকে এইভাবেই হাঁটতে হবে...’

‘ওরে বাপরে...না রে...মরে যাবো রে। বড় যন্ত্রনা হচ্ছে রে কালুয়া তুই যে ভাবে পারিস 
বার কর কাঁটা আগে...’

‘দেখি..... নাঃ....হচ্ছে না...বহুত মোটা পা...দিনটা মনে হয় আপনার ভালো নয় আজ। 
অযাত্রা মানে অশ্লেষায় বেরিয়ে ছিলেন না কী পন্ডিতজী?’

‘নিকুচি করেছে তোর অশ্লেষার...আমার প্রাণ বাঁচা রে কলুয়া নইলে বরম হত্যা লাগবে তোর আজ‘

‘অনেক কষ্টে কন্টকোদ্ধার তো হ’লো কিন্তু পন্ডিত আর চলতে পারে না। কি করি? কোনমতে 
একটা বাঁশের চালি তৈরী করে তাইতে তাঁকে শুইয়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে রথ টানার মতন হিড়হিড় 
করে আমি টেনে নিয়ে চললুম মাটির ধূলোভরা পথ দিয়ে আর ধূলোর ঝড় উঠে তিনি ঢেকে গেলেন। 
তাই করে যখন স্টেশনে পৌঁছানো গেল ততক্ষনে ট্রেন চলে গেছে। একমাত্র ট্রেন। সারারাতে আর কিছু নেই। 
বললুম—‘হুজুর, রাতে প্ল্যাটফর্মেই থাকুন। কাল সকালে গাড়ী পাবেন...আমি এখন যাই...’

তিনি তখন শুনেই চিৎকার করে কান্নাকাটি জুড়ে দিলেন।

‘আরে কালুয়া রে...হম মর যাইবি রে...রাতভর ইস জাড়ে মে...নহি রে ...কুছ পরবন্ধ কর রে ...
পানি লা দে রে মুঝে পহলে...ধূল সে মৈ বুড় গইলি রে ....মেরি তো আজ বহুত দুর্গতি ভয়ল 
রে তেরে গাঁও মে আকর রে ...কম সে কম এক পুরবা চায় তো পিলা দে রে...মেরা 
গোড়বা তো সুজকে অনন্নাস বন গয়ল হও রে ...’

‘সে চিৎকার তো আর থামেই না। কি করি? জল চা সবই ব্যবস্থা করে এনে দিতে হ’লো 
আমাকেই তখন। নইলে গ্রামের মান থাকে না। শেষে গিয়ে স্টেশন মাষ্টার পাঁড়েজীর সাথে 
কথা ও বলতে হ’লো। ফিরে এসে তাঁকে জানালুম—‘পন্ডিতজী, করাহিয়ে বাদ মে ...আভি 
শুনিয়ে ...ইস স্টেশন মে রাত বারহ বজে কে বাদ কোই রহতা নহি...বিজলী ভি নহী....গাঁও 
কা স্টেশন.....শিয়ার হুঁড়ার সব আকর....’



শুনেই তো তিনি ককিয়ে উঠলেন—

‘অরে বপ্পা রে ...হম মর যাইবি রে ...হমে জানবর খা যাই রে ...তু মুঝে বচা 
রে কালুয়া ...তু যো মাগবে, হম দেব রে...ই...ই লে রূপেয়া.....’

‘লেকিন রাত মে প্যাজেঞ্জার ট্রেন তো নেই...আর বাস ও চলে না। একটা বয়ল গাড়ী 
ভি নেহী কি আপকো হম গাঁও লে জায়ে। তবে একঠো মালগাড়ী যাবে...কিন্তু....’

‘কিন্তু কি রে বুরবাক? তু রূপেয়া দেকর ওহি মে  পরবন্ধ কর কুছ.....’

তা করছি তবে ওহি মালগাড়ী মে অনেক গায় বয়ল যায় তো ...তাদের সাথে আপনি 
কি যেতে পারবেন? যদি গুঁতিয়ে টুঁতিয়ে বা কামড়ে দেয়?.....’

‘আরে নহী রে ....তু দুসরা কামরা দেখ রে কলুয়া   বয়ল হমে আজ মার ডারিস...’

‘তবে না হয় তাই দেখি... হয়তো কয়লার ওয়াগন আছে কয়েকটা ...দেখি যদি তাই জোটে 
আপনার আজকের ঘোর অশ্লেষা মানে অযাত্রার বরাতে...তা আরও কিছু টাকা না পেলে 
হয়তো তা ও হবে না কেননা খালাসীদের দিতে হবে তো। নইলে আপনাকে চড়াবে কে 
কয়লার গাদার ওপরে........?’

তা তিনি ট্যাঁকে যা ছিল সবই বার করে দিতে সেই ব্যবস্থাই হ’লো। 

খানিক পরে তাঁকে গিয়ে বললুম—‘পন্ডিতজী, অব আপ চিন্তা না করে। সব পরবন্ধ হো গয়া। 
অব অউর মত করাহিয়ে। এই লিজিয়ে দর্দ হর টিকিয়া আর পানি। সাথ মে এক পুরুবা 
চায় ফির। পি লিজিয়ে। লেকিন ফির অব মত কহিয়েগা কি মেরে গাঁও মে আপকো কিসি 
নে পরবরিশ...সেবা নহী কী। রাত বারহ বজে সিঁড়ি মানে মই দিয়ে আপকো ওয়াগন পর 
চঢ়া দেগা রাম খেলাওন খালাসী। সাড়ে বারহ পর মালগাড়ী খুল যাই ইঁহা সে আউর ফির 
সুবহ তিন বজে বনারস।  নন স্টপ রান....’। 

তাঁর ওষুধ চা সব খাওয়া হ’তে শেষে আমি বললুম—‘ইস টিকিয়া সে আপকা দর্দ ঘট 
যাই জরুর। বহুত মুশ্কিল সে রাম খেলাওনবা জুটা কর  লায়া আপ কা করাহনা শুনকর।  
লেকিন নীদ ভি আই আপ কো কুছ কুছ।  অব সাবধান। আপ ঘোড়া বেচ কর ভৈঁস কি 
তরহ একদম সে সো মত যাইয়েগা । বনারস মে জরুর উতর যাইয়েগা। নহি তো ই 
গাড়ী লে যাই আপকো সিধে বনগাঁইগাঁও হোকর গৌহাটী’। 

‘আরে বপ্পা রে.... মাই রে ....আজ ম্যয় কিস মুহুরত মে ঘর সে নিকলা থা রে....
তো কেঁও রে কলুয়া? ই মুগলসরাই ভি না রুকি?’

আমি রাগ করে বললুম--‘অশ্লেষা নক্ষত্র মে আউর কিসমে পন্ডিতজী? বিশওয়াস না হো 
তো পত্রা দেখ লিজিয়েগা জাকর কল।  হাঁ নহী তো’। 

‘অব পন্ডিতজী, উ কা হও কি ই কোই প্যাসেঞ্জার ট্রেন তো হ্যায় নহী কি হর স্টেশন পর ই 
রুকি য়া  ফির মুগলসরাই জরুর রুকি। বনারস রুকবানে কি বাত তয় হুই হ্যায়... 
এহী সে তিন মিনট বঁহা জরুর ঠহরী নহী তো কোই ঠহরাও থোড়ে হি না হ্যায় বনারস ইস 
টরেন কা? ই গাড়ী একবার খুলি তো  কম সে কম কোই শও তিন শও কিলোমিটার 
কা এক রান হোই। ফির মেরা কোই দোষ নহী। হাঁ নহী তো। ম্যয় চলা। পাঁও লাগি পন্ডিতজী। 
রাম রাম....’।

০৯৪৫২০০৩২৯০
রচনাকাল : ৩০/৬/২০১৪
© কিশলয় এবং জি.সি.ভট্টাচার্য কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger
সমাপ্ত



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Australia : 1  Bangladesh : 5  Canada : 6  China : 42  France : 2  Germany : 4  Iceland : 1  India : 272  Ireland : 2  Russian Federat : 4  
Saudi Arabia : 2  Sweden : 7  Ukraine : 23  United Kingdom : 4  United States : 716  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Australia : 1  Bangladesh : 5  Canada : 6  China : 42  
France : 2  Germany : 4  Iceland : 1  India : 272  
Ireland : 2  Russian Federat : 4  Saudi Arabia : 2  Sweden : 7  
Ukraine : 23  United Kingdom : 4  United States : 716  


© কিশলয় এবং জি.সি.ভট্টাচার্য কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
কাল্লু রচনা by GCBhattacharya is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৩৭৬৯৪৮
fingerprintLogin account_circleSignup