• ৯ম বর্ষ ৮ম সংখ্যা (১০৪)

    ২০২০ , জানুয়ারী



সৌন্দর্য্যবেষ্টিত তাজ
আনুমানিক পঠন সময় : ৪ মিনিট

লেখিকা : সুমিতা সরকার
দেশ : India , শহর : সোনারপুর

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , নভেম্বর
প্রকাশিত ১০ টি লেখনী ১৮ টি দেশ ব্যাপী ৫৮৮৩ জন পড়েছেন।
স্বর্গচ্যুত এক অপূর্ব উর্বশী কন্যা 
নেমে, এসেছিলেন পথভুলে।
নাম ছিল আর্জুমন্দ বানু বেগম।

শাহজাহান মীনাবাজারে একনজর
দেখেই হারিয়েছিলেন হৃদয়ের ভাষা,
চোখের দৃষ্টি অনুপম।

নিজের কাছে এনে ১৬১২ সালে সেই কন্যাকেই বিবাহের শুদ্ধিকরনে নাম
দিয়েছিলেন মুমতাজ মহল।

রোজকার নিত্য জীবন যাপন, দেশ,বিদেশ ভ্রমনে সেই  নারী, হয়েছিলেন সহধর্মিণী বিরল।

চতুর্দ্দশ সন্তান জন্মের সময় 
মারা যান মুমতাজ।
তারপর থেকেই শাহজাহানের 
হৃদয়ের মৃত্যু শুরু।

কথা দিয়েছিলেন শেষ সময়ে,
অন্তিম শয্যায় তৈরী করবেন এক স্মৃতি সৌধ, যা বিশ্বের দরবারে হবে 
এক শ্রেষ্ঠ কীর্তি পুরু।

শুরু হোল নির্মানকার্য বাগানবাড়ীর উত্তর ভাগে যমুনা নদীর কিনারায়,
তীরে শ্বেতশুভ্র পাথরের আস্তরন। 

সৌধের দক্ষিন দরজা দিয়ে ঢুকে আলো আঁধারি অন্ধকার ছায়ায় দুটি সমাধি, ক্ষেত্র ঘেরা নিদর্শন। 

সূক্ষ্ম জালির কাজে আটকোনা মর্মর, বেষ্টনি তিব্বতের ফুল লতাপাতার, পরচিনকারী, তিব্বতের টারকোয়াজ,কাশ্মীরের স্যাফায়ার,গুজরাটের অ্যাগেট, আরবের কার্নেলিয়ান, কাশগড়ের জেড, বদাকসামের ল্যাপিস লাজুলি আর শ্রীলঙ্কার থেকে মনি রত্ন এনে নানান নকশা, ধাতুর ফোয়ারা,
জালি, সমাধির দামী পাথর 
করেছিলেন অক্ষত। 

বৃক্ষশোভিত রাস্তা, ঝর্না, চৌবাচ্চা, বাগানের মাঝখানে একটি পাহাড়, চারটি নদী বয়ে গেছে আলাদা।
যা স্বর্গের নদী বলে অভিহিত।

সুদৃশ্য ঝর্না, মার্বেলের রাস্তা, ফুলের বিছানা, গোলাপ, ড্যাফোডিল, 
লাল বেলেপাথরের সমাধি, স্তম্ভ খিলান,
সবই এক স্বর্গীয় প্রেমের রূপ, 
হিসাবেই আজও প্রকাশিত।

১৬৩২ সালে বাইশ হাজার শ্রমিক সতেরো বছরের চেষ্টায় (একশো একাত্তর মিটার) পাঁচশো একষট্টি ফুট উঁচু স্মৃতি সৌধ করেছিলেন তৈরী। 

দিনের বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন রং,
সকালে গোলাপী, সন্ধ্যায় সাদা, 
রাতে সোনালী রঙের 
অপূর্ব সমাবেশের ফেরী।

এক অসাধারন সৌন্দর্য্যের মর্মরসৌধ, কবির কবিতা বিরহের 
অশ্রুজলের প্রতীক তাজমহল।

কালের কপোলতলে শুভ্রসম
নয়নের একবিন্দু জল।

শপথ করেছিলেন সম্রাট সারাজীবন 
যেমন স্ত্রী তার সাথে ছিলেন, 
মরনের পরেও তার কবরের পাশেই, 
তিনিও শায়িত থাকবেন।

বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্য প্রেম, বিচ্ছেদ, অনুতাপ, ভালবাসা দিয়ে ভরাট করা এক আত্মার উদাহরনের সফলতা।

মূল্যবান পাথর, বিতর্ক অতীত, ভালবাসার চকমকি পাথরের বিশুদ্ধতা,
সূক্ষ্ম অলঙ্করন, সৌন্দর্য্য দর্শন, নীলকান্ত মনি, এটাই তার বিশালতা।

সমাধি সৌধ আজও দাঁড়িয়ে 
নিয়ে তার অতীত ইতিহাস। 
কবরের নীচে শায়িত প্রিয়তমার অতৃপ্ত আত্মা এখনও খুঁজে বেড়ায় তার কাঙ্খিত পুরুষের শ্বাস............!!!!

মুমতাজ হয়ত পরোক্ষে শাহজাহানকে একথাই বলতে চেয়েছিলেন যে এক তাজমহল গোড়ো, হৃদয়ে তোমার আমি হারিয়ে গেলে, না থাক যমুনা কাছাকাছি, ক্ষতি নেই দুটি চোখে যমুনাকে ধোরো। না থাকুক গায়ে তার চুনী,পান্না, তোমার প্রেমের ছোঁয়া রেখে, স্মৃতির অলঙ্কারে ঢেকে, তাকে আরও অপরূপা কোরো, না উঠুক তার পাশে পূর্নিমা চাঁদ, তোমার প্রানের আলো জ্বেলে, মনের জোস্নাটুকু ঢেলে তাকে আরও অপরূপা কোরো....!!

পর্ব - (২)

প্রেমের হদিশ মাপতে গিয়ে 
শাজাহানও বেদখল,

যমুনার তীরে উঠল গড়ে 
অনন্য তাজমহল। 

শোক ভুলে গিয়ে সম্রাটও
আনন্দযাপনে করেন বিহার,

মমতাজের আত্মা আজও কাঁদে,
শোনা যায় হাহাকার।

রানীর স্মৃতিতে করেননি রাজা 
মোটেই স্থাপত্য সৃষ্টি, 

ইতিহাসে নাম অক্ষত রাখতে
সচেষ্ট তার কীর্তি। 

শাজাহানের ভালবাসা আদৌ কি
পেয়েছিল মমতাজ?? 

নাকি সবটাই ছিল নাটক আর
 দেখনদারীর ভাঁজ।

যে সম্রাট ভালবাসায় নাকি 
পাগল ছিলেন তার??

মৃত্যুর শোক ভুলে কিভাবে করেন
পুনর্বিবাহের অঙ্গীকার..........??

মুমতাজের প্রথম স্বামীকে হত্যা করেই
শাহজাহান বিয়ে করেন তার পছন্দের মানুষটিকে, চতুর্দ্দশ সন্তানের জন্ম দিতে গিয়েই মুমতাজ মারা যান, এটা কি ভালবাসার নিদর্শন? 

আসলে শাজাহান হয়ত ভালবাসতেন মুমতাজকে, কিন্তু কোথাও একটা ব্যাভিচারী জীবনযাত্রার মধ্যেও তিনি বিচরন করতেন। নাহলে মুমতাজের মৃত্যুর পর ১ বৎসর যেতে না যেতেই তার বোনকে কি ভাবে বিবাহ করেন??

মুমতাজের মৃত্যুর পর শুধু তার মনোরঞ্জনের জন্য ৫০০ দেহপসারিনী ছিল, প্রতিটি রাতে তাকে অনাবিল আনন্দ দেবার জন্য। একজন প্রকৃত প্রেমিক কিভাবে পারেন? যাকে কিনা হৃদয়ের এত কাছে রেখেছিলেন মৃত্যুর এক বৎসরের মধ্যেই তাকে ভুলে যেতে?? কখনো সম্ভব?? 

আসলে মুমতাজের নামের মাধ্যমে তিনি ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম স্বর্নাক্ষরে সাজিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন, এটাই হোল প্রকৃত বাস্তব।

সেই জন্যই স্মৃতি সৌধ নির্মাণ হওয়ার সাথে সাথেই সমস্ত শ্রমিকদের হাতের আঙ্গুল কেটে দেন, কিছু শ্রমিকের প্রান নিয়ে নেন, যাতে দ্বিতীয় তাজমহলের পুনর্নির্মাণ না হয়, তাহলে তিনি তো আর ইতিহাসের পাতায় বিখ্যাত থাকবেন না।

প্রিয় তাজমহলের কিছু না জানা কথা -
তাজমহল নির্মানের জন্য পাঞ্জাব থেকে আনা হয় স্বচ্ছ মার্বেল পাথর, চীন থেকে সবুজ পাথর, তিব্বত থেকে স্বচ্ছ ও নীল পাথর এবং শ্রীলংকা থেকে নীলমনি। তাছাড়া ভারত, পাকিস্তান, পারস্য ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ২৮ রকমের মূল্যবান পাথর দিয়ে তৈরি করা হয় এই অনন্য স্থাপত্য।

• তাজমহলের প্রধান ডিজাইনার হলেন ইরানের বিখ্যাত স্থপতি ওস্তাদ মুহাম্মদ আফেনদি।

• গম্বুজগুলো ডিজাইন করেন ইসমাইল আফেনদি

• লাহোরের কাজিম খান ছিলেন প্রধান স্বর্ণকারক।

• দিল্লির চিরঞ্জীলাল হলেন প্রধান ভাস্কর।

• ইরানের আমানত খান হলেন খোদাই শিল্পী।
রচনাকাল : ১৬/১/২০২০
© কিশলয় এবং সুমিতা সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger
সমাপ্ত



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 1  Canada : 7  China : 30  France : 2  Germany : 1  India : 207  Ireland : 43  Russian Federat : 6  Ukraine : 18  United States : 340  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 1  Canada : 7  China : 30  France : 2  
Germany : 1  India : 207  Ireland : 43  Russian Federat : 6  
Ukraine : 18  United States : 340  
  • ৯ম বর্ষ ৮ম সংখ্যা (১০৪)

    ২০২০ , জানুয়ারী


© কিশলয় এবং সুমিতা সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
সৌন্দর্য্যবেষ্টিত তাজ by Sumita Sarkar is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০১৫৫৬৬৭
fingerprintLogin account_circleSignup