বাদলের ত্রিমাত্রিক জ্ঞান
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------জি০সি০ভট্টাচার্য, বারাণসী, উত্তর প্রদেশ, ভারত
=====================================================================================
যখনকার কথা বলছি, তখন আমার বয়স ছিল প্রায়… আট কি নয় বছর। মানে বছর চার পাঁচ আগের কথা আর কি।
আমি মানে যে চঞ্চল সে’কথা হয়তো আর বলতেই হবে না। কাকুর লেখার কল্যাণে অনেকেই এখন আমাকে দিব্যি করে চিনে ফেলেছে। আর এখন তো আমি ও মাঝে মাঝে লিখতে ছাড়ি না। অবশ্য সব কাকুর নামে চালিয়ে দিই।
তবে এখন ঘটনাটা আগে বলি।
তখন শীত কাল। মনে হয় নভেম্বরের শেষ। বেশ ঠান্ডা পড়ছে। সাড়ে চারটে পৌনে পাঁচটা বাজলেই অন্ধকার হয়ে আসে।
আমি তখন একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ক্লাশ ফোরে পড়ি বাড়ী থেকে স্কুলে যেতাম গাড়িতে করে। ড্রাইভার আংকল নিয়ে যেত, নিয়ে আসতো। আমার একমাত্র বন্ধু বাদল স্কুলে সবসময় পাহারা দিতো আমাকে। বাপী পুলিশ অফিসার হয়ে ও ঘুষ টুসের ধার না ধারলে তার ছেলের অনেক ঝামেলা হতেই পারে এই সব দেশে, তা ঠিক। বেশী সুন্দর ছেলে হ’লে আর তো কথাই নেই।
তা সে’দিন কি নিয়ে যেন দিন দুপুরে গন্ডগোল শুরু হয়ে গেল হঠাৎ আর স্কুলে ছুটি ও হয়ে গেল দুম করে। পরে আমার কাকুর কাছে শুনেছিলাম যে একটা স্কুল বাস না কী মদনপুরার মুসলমান পাড়ার একটা ছেলেকে ধাক্কা দিয়ে ছিল বলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লেগে গিয়েছিল শহরে।
তা না হয় লাগলো কিন্তু আমার যে হ’লো বেশ মুস্কিল। বাড়ির গাড়ী আসবে তো সেই চারটেতে। আর তখন বাজে মাত্র দু’টো। সব স্কুল বাস চলা ও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অন্য সব বাচ্চারা যে যার বাড়ী চলে যেতে শুরু করে দিয়েছে। বাদলের মা ও এসে গেছেন ছেলেকে নিয়ে যেতে। বাদল দারুণ বুদ্ধিমান ছেলে একটা। কাকু বলে সুপার জিনিয়াস।
আমাদের বাড়িতে ও স্কুল থেকে ফোন গেল। তা কেউ ধরলে তো। মা ঘুম দিচ্ছে নির্ঘাৎ করে, আর বাপী তো শহরের বাইরে। তখন মোগলসরাইয়ে পোষ্টেড।
বাদল বললো তার সাথেই ওদের বাড়ী চলে যেতে। তাই চলে যাই, আমি ও ভাবলুম কিন্তু আড়াইটে থেকে শহরে কার্ফু অর্ডার জারী হবে ঘোষণা হতেই আমি বেশ দমে গেলুম।
ওরে বাবা। তখন আবার বাড়ী যাব কি করে?
বাদল দুষ্টুমি করে মুখ টিপে সুন্দর করে হেসে বললো-‘চঞ্চল, তুই না হয় বৌদ্ধদের মতন করে ‘কাকুং শরণং গচ্ছামি….’ জপ কর মনে মনে। তোর কাকু ঠিক শুনে চলে আসবে তোকে নিয়ে যেতে, আর তোকে কখনো ছাড়বে ও না একলা, দেখবি’।
আমি রাগ করে অতো সুন্দর ছেলেটার পিঠে দুম করে এক কিল বসিয়ে দিলুম নির্ঘাৎ।
তা বাদল হিঃ হিঃ করে হাসতে লাগলো আমার মার খেয়েও, এমন পাজী।
তবে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো ছেলেটা আমার দুধসাদা চকচকে ডান হাতটা ধরে রেখে। একলা ছাড়বে না সে আমাকে। মাসিমা ও ছেলের মুখের দিকে একবার মাত্র তাকিয়ে দেখে চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইলেন। যেমন ছেলে তেমনই মা, কথা বলার ধার ধারে না কেউ। উঃ কি কান্ড রে বাবা……’।
শেষে সোওয়া দু’টো বাজলো দেখে বাদল তখন মায়ের সাথে স্কুল থেকে বেরিয়ে এলো। আর তখনি স্কুল গেটে বেগে এসে ব্রেক কষে থামলো আমার কাকুর সাইকেল।
বাদল আমার মুখের দিকে চেয়ে আবার অপরূপ সুন্দর দুষ্টু হাসি দিলো একটা। আমি তখন সে দিকে না দেখার ভান করে কাকুউ….বলে ডাক দিলুম।
বাদলটা যে পরে বড় হয়ে সব কিছু ভবিষ্যৎ কথা ও বলে দিতে পারবে ইচ্ছে করলেই, তা ঠিক বলে আমার মনে হ’লো। দারুণ ইনট্যুশান। আমি তো ছাই কিছুই পারব না। সুন্দর হওয়ার না নিকুচি করেছে। এ’কে লজিক্যাল ডিডাকশন না কি যেন বলে শুনেছি। আমার কাকুই শিখিয়েছে ছেলেটাকে। একদিনেই বাদল ও দিব্যি শিখে বসে আছে।
বাদল কাকুকে দেখেই বলল-‘কাকু, তুমি কিন্তু পনেরো মিনিট লেট। এখন আর তুমি চঞ্চলকে ওদের বাড়ী নিয়ে যেতে পারবে না’।
কাকু বলল-‘বড় বয়েই গেছে আমার নিয়ে যেতে। সব ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে…দেখতে থাক। তবে আমি পনেরো মিনিটে পাঁচ মাইলের বেশী পথ চলে এসেছি এই শহরের ভীড়ে। সেটা তেমন খারাপ কিছু নয়। তবে চঞ্চল, শিগ্গীর করে স্কুল ব্যাগ হ্যান্ডেলে ঝুলিয়ে উঠে বস ক্যারিয়ারে, আর বাদল তুমি ও এসে সামনে বসে পড়ো দেখি। এক যাত্রায় পৃথক ফল নাস্তি। মাত্র এগারো মিনিট সময় আছে। ও মাসিমা, আপনি বাড়ী চলে যান, আমি বাদলকে ও নিয়ে যাচ্ছি আমার কাছে। এখন ভাগ্য জোরে দু’টো ছেলেই আমার। পরে বাদলকে পাঠিয়ে দেব না হয়। পুলিশ মেয়েদের কিছু বলবে না, পনেরো মিনিট বাড়তি সময় পাবেন আপনারা, তবে ছেলেদের রাস্তায় দেখলেই পুলিশ ডান্ডা মারবে। ইস, মাত্র নয় মিনিট আছে আর। বাদল, কুইক….’
মাসিমা এবার ও কিছু বললেন না। হাঁটতে শুরু করলেন নির্বিকারভাবে। এই না হ’লে বাদলের মতন ছেলে হয় কখনো।
তা আমরা গিয়ে কাকুর সাইকেলে উঠতেই কাকু ব্যালেন্স সামলে নিয়ে চালিয়ে দিলো গাড়ী স্পীড নিয়ে। ঠিক আট মিনিটে এসে গেল বাড়ী, মানে কাকুর বাড়ী আর কি। আমাদের বা বাদলের বাড়ী বেশ দূরে। যাওয়ার সময় ছিলো না। সত্যি সত্যিই কাকুর দু দু’টো ছোট ছেলে লাভ হয়ে গেলো। আমি তো কাকুর হাতেই ছেলের মতন মানুষ হয়েছি, তবে বাদল প্রথম এলো ।
কাকু নিজের জন্য জল খাবার তৈরী করে রেখেছিলো ফ্রিজে। সব গরম করে নিলো। তিনটে পরোটা ও ভেজে নিলো সাথে।
তারপরে কাকু আমাদের স্কুলের মোনোওয়ালা নীল ব্লেজার দু’টো খুলে নিয়ে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে দিয়ে প্রথমে বাদলকে নিয়ে গেল কাকু বাথরুমে হাত পা মুখ ধুইয়ে দিতে। বাদলের অপরিষ্কার স্কুল ড্রেসগুলো সব খুলে নিয়ে কাকু ওয়াশিং মেশিনে ফেলে চালিয়ে দিলো মনে হ’লো আওয়াজে।
আর তখনি বাদল বলে উঠল-‘এ মা, কাকু কি করলে? সব ভিজিয়ে দিলে। এখন কি হবে?’
কাকু বললো—‘কিছুই হবে না। আমি তোমাকে একটা তোয়ালে পরিয়ে দিই এখন। ততক্ষন বসে তোমরা জলখাবার খাও। আমি অন্য জামাকাপড় আনতে পারি কি না দেখছি’।
‘কি করে দেখবে? বাইরে যে কার্ফু……কাকু’
‘সে থাক গিয়ে। তবে চঞ্চলের ড্রেসটা পরে কাচবো না হয়। শুধু হাত মুখ ধুইয়ে দিই এখন ছেলেটাকে এনে। আমাদের বাড়ির চারটে বাড়ির পরে খান্না বস্ত্রালয়। আমি ছাদ দিয়ে চঞ্চলের ড্রেস নিয়ে গিয়ে তার সাইজের নতুন ড্রেস কিনে আনছি। মনে তো হয় যে দু’জনের একই সাইজ হবে’।
‘আর যদি তা ও না পাও, কাকু। তখন?’
‘না পেলে নেই। বড় বয়েই গেল। দরকারই নেই। ভারী তো ন’বছরের দু’টো ছেলে। মেয়ে তো আর নয় যে …’
‘এ মা ছিঃ ……’.বলে বাদল ছুট্টে চলে এলো আমার কাছে একটা নীল তোয়ালে পরে।
তা কাকু নতুন ড্রেস কিনে এনে বাদলকেই আগে হাত ধরে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে সব পোষাক পরিয়ে দিতে তবে ছেলের আড়ষ্টভাব কাটলো। বাদলটা না হয়েছে ভীষণ সেন্সেটিভ ছেলে। একটুতেই দেখি ওর লজ্জা...’
তারপরে কাকু, আমার দিকে চেয়ে হেসে ঠাট্টা করে বলল-‘কি চঞ্চল, তোমার ও কিছু চাই?’
আমি মুখ নীচু করে বললুম –‘কাকু, তোমার যা ইচ্ছা হয়…’
শুনে কাকু হেসে এগিয়ে এসে নীচু হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে তুলে নিল।
তখনি ফোন বাজল। কাকু কিন্তু আমাকে ছাড়লো না। এগিয়ে গিয়ে বাঁ হাতে ফোন ধরতেই বাদল বলে উঠলো-‘কাকু, ঘুম ভেঙ্গেছে হিঃ হিঃ….’
কাকু ফোনে বলল-‘তোমার পরীর দেশের ছেলে স্কুলে গেছে, সে’খানেই খোঁজ করো না, আমি কি জানি, বৌদি?’
বলেই টপ করে ফোন রেখে দিয়ে কাকু আমাকে বলল-‘চলো, আপাতত এই নীল ড্রেসটাই পরিয়ে দিই তোমাকে, চঞ্চল । ঘরে ব্লোয়ার চললে ও ঠান্ডা লাগতেই পারে খালি গায়ে। কিন্তু বাইরে যেতে হ’লে একটা ব্লেজারে কি হবে? খান্নাদা আবার গরম পোষাক রাখেন না। এই হয়েছে ভারী মুস্কিল… বেশ কয়েকটা দিন তো কাটাতে হবে…একটা ডবল স্লিপিং ব্যাগ মাত্র পেয়েছি….’
বাদল বলল-‘রাতে তো হবে না কাকু। তবে দিনে হবে না কেন’?
‘আরে গেরোর প্রকোপ যে রাতেই বাড়ে…’
‘তা কি করবে আর কাকু? চঞ্চলকে ডবল জামা পরিয়ে দিও। দারুণ ফরসা আর সুন্দর ছেলেদের ঠান্ডা ও বেশী লাগে তো। আমি তো কালো ছেলে হিঃ হিঃ হিঃ …..আর বেশীদূর না যেতে হ’লেই হয়…’
‘আরে, দূর তো মোগলসরাই অবধি ও হতেই পারে…’
‘সে হ’লে হবে, কাকু। বাদল তোমার কাছে থাকবে আর দৌড়তে হবে না এ কি হয় কখনো, কাকু?’
আমি হাঁ করে দু’জনের সাংকেতিক ভাষ্য শুনছি তখন। কার্ফুর মধ্যে তায় রাতে কোথায় আমাদের যে যেতে হ’তে পারে তা আমার মোটা মাথায় কিছু ঢুকলে তো ছাই…
ঘরে বাদল রয়েছে বলে কাকু আমাকে ড্রেসরুমে নিয়ে গিয়ে আগে নতুন অন্তর্বাস পরাতে বসে বললো-‘বাদল ঠিক বলেছে, বাইরে যেতে হ’লে তুমি স্কুলের জামাটাও পরে নিয়ে তবে ব্লেজারটা পরবে, চঞ্চল। ভাগ্যিস কেচে দিই নি সে’টাও। আর আকাশের অবস্থা ও বিশেষ ভালো নয় দেখে এসেছি। এক্কেবারে তোমার মায়ের মতন মুখ ভার করে ওল ঢিবির মতন বসে আছে। কান্না ঝরাতেই পারে। আর তোমার বাপীর ফোন এ’লো বলে। বৌদিকে এক ডোজ দিয়েছি তো। স্কুলে পুলিশ এনকোয়ারী পৌঁছে গেছে এতক্ষনে আর আমি যে দু’টো ছেলেকেই সঙ্গে নিয়ে চলে এসেছি তাও জেনে গিয়েছে বৌদি। সুতরাং…’
আমি তো আগে হিঃ হিঃ করে হেসেই দিলুম কাকুর বর্ণনা শুনে।
তারপরে সব কথা এতক্ষনে বুঝতে পেরে বেশ বিজ্ঞের মতন ঘাড় নেড়ে বললুম-‘তা কাকু, বাদল হঠাৎ ও’ঘর থেকে বাইরে কোথায় যাচ্ছে বলো তো, মনে হয় কলিংবেল তো বাজেই নি’।।
আমাকে গেঞ্জী পরাতে পরাতে কাকু বলল—‘জলখাবারের পালা শুরু করে তখন না হয় জিজ্ঞাসা করবো। কেউই তো খাও নি দেখছি তোমরা...।’।
তা ঘরে যেতেই বাদল বলল—‘কাকু, ইন্টার মলিক্যুলার ট্রান্সমিশান মানে কি বলোতো’।
কাকু ও এমনধারা বেমক্কা প্রশ্নে ঘাবড়ে যাবার মতন ছেলেই নয়। মুখ টিপে একটু হেসে চেয়ারে বসে আমার দু’টো চকচকে হাত একসাথে করে ধরে কাছে টেনে নিলো।
আমার হাতের দুধসাদা আঙুলগুলো ধরে টিপে দিয়ে তুলে ধরল যেন আমি বাদলকে দু’টো হাত জোড় করে নমস্কার করছি। কাকুর ডিমনস্ট্রেশান।
আমাকে হাত তুলেই রাখতে বলে দু’হাত দিয়ে আমার আঙুলে বাইরে থেকে চাপ দিলো, কাকু। কিছুই হ’লো না। তখন কাকু আমার আঙুলগুলো ধরে টেনে সে’গুলোকে সব দুরে দূরে ফাঁক করে দিয়ে আবার চাপ দিলো। আমার বাঁ হাতের আঙুলের ফাঁকে ডান হাতের আঙুলগুলো ঢুকে গেলো।
তাই দেখে বাদল খিল খিল করে হেসে দিয়ে বলল-‘বুঝেছি কাকু...কথাটা হবে ইন্টার মলিক্যুলার স্পেশ ট্রান্সমিশান......একটা পদার্থ অন্যটার মধ্যে দিয়ে দিব্যি গলে বেরিয়ে আসতে পারে এই পদ্ধতিতে...।’
বোঝ ঠ্যালা। দুই প্রতিভাবানের মধ্যে আমি তো হাঁ করে আছি। এবার কাকু বলল-‘কেউ কি এসেছিলো, বাদল?’
‘দেখতে তো কাউকেই পাইনি। কেননা আমাদের দৃষ্টি ও শ্রবণ শক্তি বড়ই সীমিত যে, কাকু। একটা বাদুড় বা পেঁচার চেয়ে ও অনেক কম। তাই শুধু শুনেছি...কাকু’।
‘কি?’
‘বলছি—আমি না কাকু,......ইন্টার মলিক্যুলার ট্রান্সমিটার আর থার্ড বা ফোর্থ ডায়মেনশানের জগতের কিছু কথা, জেনে ফেলেছি হঠাৎ করে। মনে হয় নিকট ভবিষ্যতে আমাদেরই কাজে লাগতে ও পারে। আমাদের এই জগত না কী ত্রিমাত্রিক ও নয়। দ্বিমাত্রিক মাত্র। কাগজের পৃষ্ঠা শুধু একমাত্রিক, সেও দ্বিমাত্রিক নয়, আমরা যদি ও তাই মনে করি। আমরা তো আর সময় মাত্রা দেখতেই পাই না শুধুই কল্পনা করি। তাই ভবিষ্যৎ ও কিচ্ছুটি জানতেই পারি না। কিন্তু ত্রিমাত্রিক জগৎ থেকে সহজেই তা দেখা যায় যেমন একমাত্রিক জগতের সব কিছুই দ্বিমাত্রিক জগৎ থেকে দেখা যায়। আগেকার দিনে মুনি ঋষিরা ভূত ভবিষ্যৎ সব জানতে পারতেন হয়তো এই এক জগৎ থেকে অন্য জগৎয়ে ধ্যানযাত্রার মাধ্যমে। একেই হয়তো নরলোক, দেবলোক, গন্ধর্বলোক, প্রেতলোক এই সব বলা হয়েছে পুরাণে, কাকু’।
‘তা আমাদের ভর বা আকার ও আয়তন আছে। আর দৈর্ঘ্য আর প্রস্থ বা উচ্চতা বা নিম্নতা বা অবনমন সব মিলিয়ে কিন্তু একটাই মাত্রা যার একক মিটার। ভর বা মাস অন্য মাত্রা যার একক গ্রাম। সময় তৃতীয় মাত্রা যার একক সেকেন্ড। চতুর্থ মাত্রা স্পেশ বা শূণ্য যার একক লাইট ইয়ার। পঞ্চম মাত্রা হ’লো ওয়ার্ম হোল যার একক জুল......’
‘বাদল, এতো সব বৈজ্ঞানিক তথ্য শুনলে কোথায় তুমি, বাদল?’
‘কাকু, আমার হঠাৎ করে একটু আগে কেমন যেন মনে হ’লো বাইরে থেকে কেউ নক করলো। আমি বাইরে গিয়ে দেখি যে কেউ নেই কোথাও। তখনি না হঠাৎ করে হ’লো এই মাস ট্রান্সমিশন অফ নলেজ বা ইনফর্মেশন যাই ব’লো, কাকু। এটা কি মাস না স্পন্টেনাস লার্নিং তা আমি ঠিক জানি না, কাকু। তবে আমার যেন মনে হয় এই পদ্ধতিটা প্রাচীন গুরুকুল সিস্টেমের সময় বেশ প্রচলিত ছিল। নন ভার্বাল ট্রানজ্যাকশান। তবে মাত্র কিছু শিষ্যরাই এ’টা গ্রহণ করতে পারতো বলে গুরুগৃহে থেকে করতে হ’তো যোগ্যতার্জন। তাই না কাকু? অপাত্রে বিদ্যাদান নিষেধ ছিল তো তাই ...। হিঃ হিঃ হিঃ ’
আমি চমকে ঊঠলুম বাদলের কথা শুনে। দশ বছর ও বয়স হয়নি যে ছেলের সে যা বলছে , কাকুর কাছে শুনেছি যে সে বিষয়ে এখন ও গবেষণা করছেন বড় বড় পদার্থবিদ ও শিক্ষাবিদেরা। মনে হ’লো বাদল আরও কিছু জেনেছে নইলে ইন্টার মলিক্যুলার এলো কি করে?’
তা আমাদের কথা শেষ হ’বার আগেই ফোন বাজল।
বাপীর ফোন।
বাপীর ধমক শোনা গেল--‘এ্যাই সিদ্ধার্থ, হাঁদারাম...তুই চঞ্চলকে বাড়ী নিয়ে গেছিস তোর বৌদিকে সে’ কথা বলিস নি কেন?’
‘বলবো না। সবাই নাকে সর্ষের তেল দিয়ে অতো ঘুমোয় কেন? স্কুল থেকে ক’বার ফোন গেছে তুমি তাই জেনে নাও আগে, দাদা।
‘জেনেছি। সাত বার…’
‘তবে? আজ থেকে ছেলেটা আমার কাছেই থাকবে…’
‘সে তোরা বৌদি ঠাকুরপোয় মিলে বুঝে নিবি। আমার ওই গোবর গনেশ ছেলে দিয়ে কোন কাজ নেই। বাদল কোথায় এখন তাই বল?’
‘তোমারই তো ছেলে….আমি আর কি বলবো?’
‘আঃ…খালি বাজে কথা বলে। দেব এক থাপ্পড়….বাদলকে আমার চাই…’
‘কখন?’
‘কখন আবার? এখুনি…’
‘মাথা খারাপ। আমি এখন একটা কচি বাচ্ছা ছেলে নিয়ে এই ঠান্ডায় রাতে মোগলসরাই যাই আর কি? তায় নেই গরম ড্রেস…’
‘কেন? ওঃ আচ্ছা বুঝেছি। আমি গরম ড্রেস ও পাঠাচ্ছি মাষ্টার বন্ডের জন্য। আর মোগলসরাই আসতে ও হবে না। জীপ যাচ্ছে। পড়াও পার হয়ে মাইল খানেক এলেই হবে…’
‘আবার কোন ঝামেলা মাথায় নিয়েছ, শুনি?’
‘সে আর বলিস না, সিদ্ধার্থ। ভয়ংকর পথ দুর্ঘটনা। প্রায় রোজই হচ্ছে। পাহারা বসিয়ে ও আটকানো যাচ্ছে না কিছুতেই। পাহারা দিলে বন্ধ হয় আবার যে কে সেই’।
‘তা কবে থেকে হচ্ছে?’
‘রাস্তাটা জি০টি০রোড। বেনারস টু মোগলসরাই সোজা চলে গেছে। তা খুব খারাপ অবস্থায় ছিল। ভাঙ্গা চোরা খানা খন্দে ভরা। মাস দু’য়েক আগে সারানো হয় আগাগোড়া, তারপরেই শুরু….’
‘তা তো হ’তেই পারে। বেনারসে এই জন্য কখনোই কোন পথ মেরামত করানো হয় না তা জানো না। যে সরকারই থাকুক না কেন ক্ষমতায়। শুধু ভাষণ দিয়ে যায় যে চার কোটি টাকা অবমুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। তিন মাসের মধ্যে প্রতিটি সড়ক ঝকঝক করবে। আয়নার মতন মুখ দেখা যাবে। গাড়ী চললে আর ধূলোর ঝড় উঠবে না কাল বৈশাখীর মতন। কিন্তু ফল যথা পূর্বং তথা পরং। সব ফাঁকা আওয়াজ। উল্টে রোজ রাস্তা খুঁড়ে খুঁড়ে সড়কে গর্ত নয়, গর্তের মধ্যে সড়ক মানে রাজপথ বানিয়ে রাখা হয়। বেষ্ট ন্যাচারাল স্পীড ব্রেকার। নইলেই যে সব আশী মাইল স্পীডে ছুটবে মদ খেয়ে হিন্দুস্তানীর দল। তা ওই রাস্তাটা আবার মরতে খামোকা সারাতে গেল কেন?’।
‘ন্যাশনাল হাইওয়ে যে…’
‘আরে রাখো ফেলে তোমার হাই ওয়ে নর্দমাতে। দরকার হয়, বাইপাশ বানাও, ফ্লাই ওভার বানাও কিন্তু ভূলে ও রাস্তা মেরামত করাটা কিছু নয়। এখন বাদল কি করবে তাই বল শুনি’।
‘সে সব যা বলছিস, আমিই না হয় রেকমেন্ড করিয়ে দেব। হয়ে ও যাবে তৈরী সময় মতন। তবে বাদল এখন গিয়ে দেখবে শুধু…’
‘তা’তে হবেটা কি? ছাই…’
‘সে তোকে ভাবতে হবে না, বুদ্ধুরাম । মাষ্টার জেম্স বন্ড ভাববে…’
‘তা বেশ। একটা কচি ছেলেকে নিয়ে…আর সে একটাই বা হ’তে যাবে কোন দঃখে? দু’টোই তো। তাদের নিয়ে এই ঠান্ডায় রাত দুপুরে কার্ফুর মধ্যে তোমার যতো টানাটানি। তবে আমরা এখন খাবার বানাবো, খাবো, বিশ্রাম করবো। রাত দশটা বাজবে। তখন জীপ পাঠিও। সঙ্গে তিনটে রেনকোট, গরম পোষাক, টর্চ, ছড়ি, শাবল এই সব থাকা চাই । আমার সাইকেল ও নিয়ে যেতে চাই জীপের মাথায় তুলে। জীপে চড়ে অনুসন্ধান হয় না’।
‘ও কে। ডান। রাখছি। ততক্ষন তুই তোর বৌদির সঙ্গে বোঝাপড়া করে নে যে চঞ্চল কোথায় কার কাছে থাকবে’।
‘তার কোন দরকার নেই, দাদা’। বলেই ফোন রেখে দিল কাকু।
কিন্তু রেহাই নেই। তখুনি আবার টিং টাং…কাকুর বৌদির কাঁদুনি শোনা গেল ফোনে।
শেষে কাকু ফোনটা আমাকে ধরিয়ে দিলো নিজের বৌদির সাথে পেরে না উঠে। বাদলই ইসারা করেছিল। আমি ফোন ধরতেই হাত নাড়লো।
আমি বললুম-‘মা, আমার বুঝি রাগ হয় না। সব্বাই বাড়ী চলে গেল। আমি একা পড়ে আছি। বাদল ও আটকে গেল আমার জন্য। মাসিমা ও। কাকু না এসে পড়লে….উঁ উঁ উঁ ...।।আমি এখন কিছুতেই বাড়ী যাবো না, যাও। তায় বাপী আবার বাদলকে অনুসন্ধানে পাঠাচ্ছে কোথায়। আমি সঙ্গে যাব না বুঝি…’
আমি খট করে ফোন রাখতেই বাদল হিঃ...হিঃ ...করে হেসে দিলো। সঙ্গে আমিও। মা কে আচ্ছা জব্দ করে দিয়েছি। খুব মজা লাগছে। কাকু এখন আমাকে ধরে বাদলের সামনেই দশটা চুমু খেলে ও কিছ্ছুটি বলবো না। অবশ্য এমনিতে ও বলি না আমি কাকুকে কিছু। কাকুর ছেলে নিয়ে কাকু যা খুশী করতেই পারে ঘরে বসে ...।‘
তা খাওয়া দাওয়া হ’তে না হ’তেই জীপ এসে হাজির। কার্ফুতে বেরুতে হ’লে পুলিশ জীপই হচ্ছে বেষ্ট বাহন। কাকু আমাদের নিয়ে তৈরী হতে শুরু করলো অভিযানে যাত্রার জন্য।
কাকুর সাইকেল মাথায় নিয়ে আর আমাদের তিনজনকে পেটে পুরে জীপ ছুটলো বাঁই বাঁই করে। শন শন করে বইছে ঠান্ডা হাওয়া দেখে বাদল বলল-‘কাকু, চল্লিশ মিনিটে না পৌঁছলে আমাদের কপালে আছে নির্ঘাৎ করে এই ঠান্ডায় বৃষ্টিতে ভেজা। তুমি স্পীড বাড়াতে বলো গাড়ির...’
মালবীয় পুল দিয়ে কাশীর বিখ্যাত গঙ্গা পার হয়ে পড়াও ছাড়িয়ে মাইল খানেক গিয়ে থামলো জীপ। আমরা ও নামলুম। সাইকেল নামানো হ’লো। কাঁধে একটা সাইড ব্যাগ ও হাতে সাইকেল নিয়ে কাকু অনুসন্ধানে রওনা হ’লো। অবশ্যই আমার ডান হাতটা বাঁ হাত দিয়ে ধরে নিলো, কাকু। বাদলের হাতে চার শেলের টর্চ।
জয় মা দুর্গা...
বাদল বলল-‘কাকু, দিনটা আজ ভালো নয়। শনিবার। অমাবস্যা কিনা বলতে পারবো না। না এলেই হ’তো। দূরে মনে হয় শিয়াল ডাকছে। রাস্তা মনে হয় বেশ ভিজে। হয়তো এ’দিকে বৃষ্টি হয়েছে। ঘোর অন্ধকার পথ। লাইট নেই কোথাও। এই হ’লো খাঁটি বেনারসী জি০টি০ রোড, কাকু হিঃ...হিঃ...হিঃ......’
‘তবে পথের পাশ দিয়ে চল, বাদল এ’খানে আছে মাটি আর ঘাস...জল গিয়েছে শুষে...’
কিন্তু খানিক পথ গিয়েই তখন একপাশে সাইকেল দাঁড় করিয়ে লক করে রেখে তারপরে পথে উঠেই চলতে হ’লো আমাদের। পথ চওড়া করা হয়েছে বলে পাশের মাটি সংকীর্ণ।
‘কাকু, রাস্তাটা কেমন চট চট করছে...। তাই না...জুতো আটকে যাচ্ছে আমার। মনে হয় কোন গাড়ী থেকে অনেক তেল পড়ে গিয়েছে। সাবধান, কাকু...’।
‘তাই তো মনে হয়….কিন্তু কতো তেল পড়েছে যে গোটা রাস্তাটাই…..’
‘ও কিসের শব্দ...কাকু? আরে সামলে কাকু...’
বলেই বাদল আমাকে টেনে নিয়ে বাঁ দিকে লাফিয়ে পড়ল হঠাৎ, সাথে কাকু ও...।
পরক্ষনেই সে’খান দিয়ে ভীম বেগে পিছন থেকে এসে সামনের দিকে ছুটে চলে গেল একটা দৈত্যের মতন ভারী ট্রাক। সব লাইট নিবিয়ে ছুটছে জেটের মতন। কয় বোতল যে টেনেছে ড্রাইভার থুড়ি পাইলট ...
‘কি সাংঘাতিক রাস্তারে বাবা...’
‘কাকু, রাস্তা যেমন পাইলট ও তেমন। ট্রাকের গায়ে ড্রাইভিং সীটের পাশে লিখে রাখে দেখেছ তো কাকু...আচ্ছা, কাকু...কাছে পিঠে কোনও তেল মিল বা ডিপো আছে কি? আমি মবিল বা পেট্রোল বা ডিজেলের গন্ধ তো পাচ্ছি না...’।।
‘তা থাকতে ও পারে। দাদা ঠিক বলতে পারবে। তবে দূরে তো হবেই ...তেল কি গড়িয়ে আসবে এতোদূর অবধি?’
‘হঠাৎ সামনের দিকে অনেকটা দূরে গাড়ির ব্রেকের তীক্ষ্ন কর্কশ ধ্বনির সাথে জাগলো দুম ধড়াম ধাঁই গড়গড় হড় হড় দমাস করে এক ভীষণ শব্দ ঝন্ঝনা।
আমি ভয়ে পিছিয়ে এসে বাদলে বাঁ হাতটা ধরে বললুম—‘বা ...বাদল, ও কিসের শব্দ।?’
‘ভয় পাস না চঞ্চল। ও কিছু নয়। হয়তো আর একটা পথ দুর্ঘটনা ঘটে গেলো। আমরা কিছুই করতে পারলাম না...আদিবাসী সন্ত্রাসবাদ...। তবে তারা এতো আধুনিক যন্ত্র পায় যে কোথায় তা ভগবানই জানেন। ছত্রিশগড়ে বা ঝাড়খন্ড রাজ্যে ও আছে এই জ্বালাতন। মাওবাদ, নক্সালবাদ কত যে বাদ আছে তার আর ঠিকই নেই। সাবধানে এগিয়ে চল ...। দেখতেই পাবি...’।
সত্যিই তাই। সামনে পথ একদম কাদা কাদা আর তাইতে গভীর ভাবে আঁকা রয়েছে সদ্য টাটকা ট্রাকের চাকার টায়ারের দাগ। এঁকে বেঁকে সামনে এগিয়ে গিয়েছে। পথ এতো স্লিপারী যে পা রাখাই মহা দায়। সাবধানে আরও খানিক পথ এগিয়ে দেখি যে ভয়ানক দৃশ্য।
পথ জুড়ে বড়ো বড়ো কয়লার চাঙড় ছড়িয়ে ডাঁই হ’য়ে পড়ে আছে। একটা বিরাট গাছ
আড় হয়ে পড়ে আছে আর সেই ট্রাকটা উল্টে গিয়ে ছিটকে পড়েছে পাশের নালার মধ্যে । সব চুপচাপ মানে চালক খালাসী সবাই অজ্ঞান আর নয়তো পরপারে।।
‘বাদল, এ কী ভয়ানক কান্ড হয়েছে? পুলিশকে ডাকতে হবে যে ….’
‘কাকু, এটাই হয়ে চলেছে। তাই আমাদের ডাক পড়েছে। তবে তেলটা ইচ্ছাকৃতভাবে ফেলা হয়েছে কোন বড়ো ট্যান্ক থেকে। হয়তো প্ল্যাস্টিক মানে পলিমারের আধুনিক ট্যান্ক। লোহার ট্যান্কে ইন্টার মলিক্যুলার ট্রান্সমিশন হয় খুব কম। রাস্তাটা তৈরীর সময়ে কিছু করা হয়েছে কারসাজী। মাইক্রো পাইপ গ্রিড ও থাকতে পারে পথের নীচে বসানো। আর এই সাথে একটা হীট ইন্ডাকশান কয়েল হ’লেই সকাল হবার আগেই সব তেল উড়ে যেতে বাধ্য। রাইস ব্রান না কিসের তেল তা কে জানে? কিন্তু এই সব অশিক্ষিত আদিবাসীবহুল এলাকায় কাদের এতো আক্রোশ হ’তে পারে, কাকু’?
‘তাইতো ভাবছি রে ভাই…’
‘সে’সব বাড়ী গিয়ে ভাবলেই হবে, কাকু। এখন পিছন ফিরে দৌড় দিতে হবে আমাদের যে। এর চেয়ে ও ঘোর বিপদ আসন্ন। আমাদের সাইকেলে আছে রেনকোট আর ভয়ানক বৃষ্টি শুরু হবে ঠিক পাঁচ মিনিটের মধ্যে…সুতরাং…’
‘না বাদল। আমি কি অতো বোকা? রেন কোট আছে আমার এই সাইড ব্যাগে। এক্ষুনি পরে ফেলবো আমরা….এই নাও বাদল। চঞ্চল, এইটা তোমার …পরে ফেল। আর এইটা আমার…’
রেনকোট পরে তিন পা যেতে না যেতেই চড়বড়িয়ে বৃষ্টি এসে গেলো। কোনমতে ভিজতে ভিজতে সাইকেলে গিয়ে উঠলুম আমরা।
পড়াও মোড়ে সেই পুলিশ জীপটা থাকবার কথা।
ও হরি। কোথায় কি? শীতের বৃষ্টিতে বসে ভিজতে পুলিশও কেউ রাজি নয় দেখে হতাশ হয়ে কাকু বাড়ীর পথ ধরলো। পুলিশে আটকালে আই কার্ড দেখালেই হবে বলে।
অনেক রাতে বাড়ী ফিরে গরম জলে হাত পা ধুয়ে গরম হরলিক্স করে এক কাপ করে খেয়ে কাকু আমাদের নিয়ে স্লিপিং ব্যাগে ঢুকে পড়লো।
কাকুর আদরে লজ্জা পেয়ে বাদল বলল-‘এ্যাই ধ্যাৎ কাকু। আমাকে নয়, তোমার পরী ছেলেকে ধরে কষে আদর করো এখন দেখি। ছেলেটা যা মিষ্টি না, ঘুম এসে যাবেই তোমার এক্ষুনি। তবে কি না ওই রাস্তাটা আবার খুঁড়ে দেখতেই হবে’।
পরের দিন বেলায় আবার সে’খানে আমাদের যেতে হ’লো বাপীর সাথে জীপে চড়ে।
আর গিয়ে সেই মতন কাজের নির্দেশ ও দিতে হ’লো।
তা সত্যিই এক মাইক্রো পাইপ গ্রিড পাওয়া গেলো সড়ক খুঁড়ে। বাদলের অনুমান সঠিক। আধ মাইল দূরে এক গ্রামের মধ্যে ঝুনঝুনওয়ালা অয়েল মিলের আন্ডার গ্রাউন্ড তেল স্টোরেজ ট্যান্কার বসানো হয়ে ছিল, তা ও জানা গেল। আর তাদের বেশ কয়েকটা বন্ধ ট্যান্কার একদম প্রায় খালি হয়ে বসে আছে দেখে মালিকের চক্ষু তো চড়ক গাছে উঠেই গেল সাঁ করে।
শেষে প্রায় পঁচিশ ত্রিশ হাত রাস্তা খুঁড়ে ফেলবার পরে কি না মিললো একখানা লালচে মতন পাথর। প্রায় আড়াই হাত লম্বা। একসময় হয়তো সিঁদুর মাখানো থাকতো।
বাদল দেখেই বললো-‘মনে হয় ইনি আদিবাসীদের পথ দেবতা। হয়তো কোন গাছ তলায় ছিলেন। ঝড়ে গাছ গিয়েছে পড়ে আর রাস্তা মেরামতের সময় দেবতা চলে গিয়েছেন পথের নীচে। এটা ও গ্রামবাসীদের রাগের একটা কারণ হতেই পারে।
বাপী জিজ্ঞাসা করলো-‘তবে এর সমাধান কী, মাষ্টার বন্ড?’
মিষ্টি করে হেসে সুন্দর ছেলে বাদল বলল—‘বেশী আর কি, আংকল? পথ দেবতার এখানেই একটা ছোট মতন মন্দির তুলে তাঁকে বসিয়ে দিয়ে রাস্তাটা একটু বাঁ দিকে ঘুরিয়ে দিলেই হবে। ঝুনঝুনওয়ালা অয়েল মিলের ট্যান্ক তাঁরা নিজেরাই সরিয়ে নিতে পথ পাবেন না। বহু তেল নষ্ট হয়েছে যে। কিন্তু দুর্ঘটনার মাল লুঠের পথ তো বন্ধ হয়ে যাবে, এরা সেটা সহজে মানবে বলে তো আমার মনে হয় না’।
তখন আর কি? তাই করা হ’লো।
সেই পথদেবতার মন্দির সে’খানে আজ ও আছে। পথ দুর্ঘটনা ও এখন তারপর থেকেই বন্ধ হয়েছে। সব গাড়ীর চালকেরা সেখানে গিয়েই গাড়ী স্লো করে আর একটা প্রণাম ঠুকে ছুঁড়ে দেয় একটা এক কি দু’টাকার গোল চকচকে কয়েন। তারপরে এগিয়ে যায় সাহস করে। এমনি ধারা মহিমা সেই পথ দেবতার।
কেউ ওই পথে গেলেই দেখতে পাবেন। এখন মন্দির ও বেশ বড় হয়ে উঠেছে দেখতে দেখতে। একজন পূজারী ও সেবায়েত ও জুটে গিয়েছে। রোজ অনেক ফুল মালা ও ভোগ চড়ানো হয়। বেশ রমরমা অবস্থা। আমাদের দেশে ধর্ম সর্বোপরি। মানুষ অনেক পিছনে।
কিন্তু এতো সব হয়ে ও আমাদের ওপরে সন্ত্রাসবাদীদের রাগ বেড়েছে বই কমেনি একটু ও। আর তার ফলে আমাদের ওপরে দিন সাতেকের মধ্যেই হ’লো দ্বিতীয় আক্রমণ। টার্গেট ছিলাম সোজাসুজি আমি । উদ্দেশ্য আমার দুর্ধর্ষ জবরদস্ত পুলিশ অফিসার বাপীকে এক হাত দেখে নেওয়া। কৌশলটা কিন্তু সেই ইন্টার মলিক্যুলার..না কি যে বলে সেই.।।
তা আমি সেই ঘটনাটা না হয় পরের বারেই লিখবো ভাবছি। আজ আমার যে হাত ব্যথা করছে অভ্র কি বোর্ডে ক্লিক করতে করতে।
তাই আজ এই অবধিই।।
বাই বাই।
০৯৪৫২০০৩২৯০
‘
রচনাকাল : ১৫/১১/২০১৩
© কিশলয় এবং জি.সি.ভট্টাচার্য কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।