ঝড়ের সন্ধ্যায়
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
জি০সি০ভট্টাচার্য্য, বারাণসী (উত্তর প্রদেশ)
======================================================================================
মাঝে মাঝে দেখা দেয় আশ্বিনের মাসে
ঝড়ের প্রবল রূপ যে দিনের শেষে,
তেমনি এক দিনে বন্ধু্ বিমলের সাথে
পিকনিক শেষে ফিরি, বেনারসের পথে।
আকাশ মেঘেতে ছেয়ে হ’ল অন্ধকার
চালনা করিতে ভাবি বেগেতে স্কুটার,
তখনো রয়েছে যেন শান্ত চরাচর
হঠাৎ সামনে দেখি, এক হলুদ চাদর।
আসিতেছে ধেয়ে তাহা আমাদেরি পানে
বিমল বলিল ভাই, বাঁচিব না প্রাণে,
চাদর নহে যা দেখ, ধূলার প্রাচীর
ঘোরাও বাঁয়ের পথে, হ্যান্ডেল গাড়ীর।
দূরে দেখা যায় এক কুটীর কাহার
নিতে হবে আশ্রয়, উপায় বাঁচার,
তৎক্ষণাৎ সেই পথে চলিনু ছুটিয়া
তবু ও বহিয়া গেল ঝড় আগাইয়া।
চোখে অন্ধকার দেখি প্রচন্ড ধূলায়
মড় মড় রব জাগে, গাছের মাথায়,
কাহারো ঘরের চাল উড়ে যায় আগে
কোথাও লাইট পোষ্ট ভেঙে পড়ে বেগে।
বিপর্য্যয় দেখি ভয়ে ঊড়ে গেল প্রাণ
উড়ে যায় দেখি কারো ক্ষেতে পাকা ধান,
ভেঙে পড়ে আম্র বৃক্ষ শাখা পথ ‘পরে
মাথা বাঁচে আমাদের, ঘোরাতে স্কুটারে।
ছোটো ঢিল, কাঠ কুটো, উ’ড়ে পড়ে গায়
খুলিয়া যাইবে খুলি লাগিলে মাথায়,
ভয়েতে পালায় ছুটে, গরু ও ছাগল
কোথায় পড়িবে গিয়া, ভয়েতে পাগল।
আকাশ হইতে নামে যত চিল, পাখি
আশ্রয় লইতে সবে করে ডাকা ডাকি,
যতক্ষনে কাছে আসে সেই ঘর খানি
ততক্ষনে বর্ষনের , আরম্ভিল ধ্বনি।
ফেলিয়া স্কুটার সব জিনিষ সমেত
দাওয়াতে উঠিতে হ’ল, আমাদের দ্রুত ,
তখনি বাড়িল বেগ, বর্ষন প্রবল
হয়েছিল ধূলোতে মোর বড় অমঙ্গল।
চশমা ঝাপসা হ’য়ে চোখ করে কর কর
দেখিতে না পাই কিছু সেথা অতঃপর,
জলের বিষম ছাঁটে ভিজিল শরীর
দরজা ঠেলিয়া যাই ঘরের ভিতর ।
।
অন্ধকার ঘরে প্রশ্ন ‘কে’? সুগম্ভরে
পরিচয় দিতে কহে বসিতে সাদরে,
ঘোর অন্ধকারে কিছু না হয় ঠাহর
রই দাঁড়াইয়া মোরা ঘরে অতঃপর ।
মাথায় উঠিল পিকনিকের আনন্দ
টিঁকিতে না পারি ঘরে, বড়ই দুর্গন্ধ,
সাথে নেই টর্চ তাই না পাই উপায়
কে যেন হাঁকিল ঘরে, কেন করো ভয়?
আছে খাট এক পাশে বসে পড়ো এসে
এ বর্ষন থামিবে যে কিছুকাল শেষে,
হাতড়ায়ে বসিতে , উড়ে ধূলার সম্ভার
ক্যঁiচ কোঁচ শব্দে মনে ভয়ের সঞ্চার।
কাশি আসে জোর , মোর সেই সে ধূলাতে
বিমল দঁlড়ায়ে রয় বিষম ভয়েতে,
তৃতীয় বার কহে কেহ, এসে এই ঘরে
অনেকে পেয়েছে রক্ষা, নাহি ডর ওরে।
অন্ধকারে ভয় নেই , ভয় তো আলোতে
শোনাই কাহিনী এক, পারিবে বুঝিতে,
এক রায় বাহাদুর ছিল, বড়ো জমীদার
সম্পত্তি এ সবই তাঁর ,ঘর, বাড়ি,দোর।
যেখানে করিলে স্নান, পিকনিকে ভাই
সেই দিঘি, আম্র বন, ছিল তাঁর ঠঁiই,
নায়েব ছিল যে দুষ্ট, করিল শোষণ
জমীদারী, ধন সবই করিল হরণ।
কপর্দকহীন হয়ে জমীদার শেষে
উদ্বন্ধনে প্রাণ তিনি দিলেন হতাশে,
নায়েব মালিক হয়ে গ্রাসিল সকল
অত্যাচারী জমীদার হয় সে প্রবল।।
ফলিল সে ফল যবে , পাপের সকল
বিদ্রোহ করিল প্রজা, আদিবাসী দল,
পালায় বাঁচাতে প্রাণ, লাঠিয়াল, দ্বারী
নির্জন আবাস হয়, নাহিক প্রহরী।
ঘিরিয়া রাখিল বাড়ী, নব্য জমীদার
পালাইতে পথ নাই, বন্ধ ঘরের ভিতর,
শেষ শয্যা রচে রাতে, তা’র পক্ষা ঘাতে
নীরব হইল কন্ঠ, ঘরের মাঝেতে।
কোন স্বর নেই আর, সব চুপ চাপ
বাইরে হাওয়ার সাথে বর্ষণের দাপ,
কহিল বিমল , চলো যাই বাইরেতে
এ’ ঘরে দুর্গন্ধ বড়ো প্রাণ চায় যেতে।
‘
ঘুলাইয়া উঠে গা , ঘুরিতেছে মাথা
নরকেতে যেন এসে ঢুকিয়াছি হেথা,
তখন পড়িল মনে, আছে লাইটার
আলো তো সামান্য, চাই শেষ দেখিবার।
দ্রুতহাতে টেনে এনে, টিপিয়া হাতল
জ্বালিয়া দিলাম শিখা, শেষের সম্বল,
ঘুরায়ে দেখিনু এক খাট সে বিশাল
তাহার কোনেতে আমি, বসিয়া কেবল।
ঢাকা সব পুরু কালো, ধূলি আবর ণে
শায়িত আছেন সেথা, কোনো একজনে ,
কাছে গিয়া দেখি , এক বিকট কন্কাল
তাহার অস্থির ’পরে, কালো ও বিশাল ।
তিনখানা তীক্ষ্ন বাণ, লৌহ ফলা ল’য়ে
কন্কালের গলা, বুক, ও পেটে বিদ্ধ হয়ে,
অনুমানে বুঝিলাম, কেহ লয়ে ধনুর্বাণ
বিষাক্ত তীরের লক্ষ্য , করিল সন্ধান।
জানলার পথে বিষ, তীর নিক্ষেপনে
হয় পক্ষাঘাত, স্বর বন্ধ, অশক্ত উত্থানে,
পড়িয়া রহিল বহুদিন, মৃত্যু আশে
অনাহারে প্রাণ সেই ত্যজিলেক শেষে।
জীবন্ত সমাধি লাভ হয়েছে তাহার
পেয়েছে পাপের ফল, শেষে অনিবার,
গলিত শবের দ্রবে, বিছানা ভিজিয়া
বহু, বহু দিনে সবই গেছে শুকাইয়া।
ভ্যাপসা দুর্গন্ধে সেথা, তিষ্ঠানোই দায়
চীৎকারে বিমল শুনি, পেয়ে অতি ভয়,
দূড় দাড় শব্দে মোরা বাহির হইয়া
উঠিয়া স্কুটারে দিই জোরে চালাইয়া।
বন্ধ ঘর ছিল যদি, কেবা খুলে দিল?
কেমনে প্রবেশি মোরা, কেই বা ডাকিল?
জনহীন ঘরে কেবা শুনাইল গাথা?
আলোতে হবে যে ভয়, কে কহিল কথা?
অন্ধকার, ঘোর বর্ষা, পথেতে পিছল
চলিনু ছুটিয়া মোরা, ভুলিয়া সকল,
ভুলায়েছে বহু কিছু কাল, মহাকাল
আশ্বিনের ঝড় মনে আছে চিরকাল।
********************************
০৯৪৫২০০৩২৯০
রচনাকাল : ১৪/৩/২০১৩
© কিশলয় এবং জি.সি.ভট্টাচার্য কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।