নীতি শিক্ষা
আনুমানিক পঠন সময় : ১২ মিনিট

লেখক : জি.সি.ভট্টাচার্য
দেশ : India , শহর : Varanasi,u.p.

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১২ , নভেম্বর
প্রকাশিত ৪৪ টি লেখনী ৫০ টি দেশ ব্যাপী ৪২৬৪৯ জন পড়েছেন।
নীতি শিক্ষা
-------------------------------------------------------------------
জি০সি০ভট্টাচার্য্য, বারাণসী, উত্তর প্রদেশ।
=============================
আমি চঞ্চল। 
আমার নাম এখন অনেকেই বে্শ জেনে ফেলেছে কাকুর গল্প লেখার কল্যাণে। আমার বন্ধু বাদল তো আমার নাম দিয়েছে ‘পরীর দেশের রাজকুমার’। আমি না কি একটা খুব খুব সুন্দর ছেলে বলে। 
সে কথা 	যাক। সুন্দর বা অসুন্দর হওয়া তো কারো নিজের হাতে নয়। কিন্তু বেশী সুন্দর ছেলে বা মেয়েদের অনেকেই বেশ হিংসে করে। আর তার ফল ও বেশ ভুগতে হয় অকারণে। এ আমি অনেক দেখেছি।
এখন আমি  একটা মজার নৈতিক শিক্ষার গল্প লিখতে চেষ্টা করছি বসে।
কি আর করি? নেই  কাজ তো খই ভাজ। স্কুলে যাওয়া  ও বন্ধ হয়েছে হঠাৎ।
তা হয়েছে কি তাই বলি আগে। 
সে’দিন সন্ধ্যাবেলায় যথারীতি বাদল আমাদের বাড়িতে চলে এসেছিল আমার সাথে খেলবে বলে। 
কাকু তখন আমাকে বাথরুম থেকে হাত পা মুখ ধুইয়ে এনে ড্রেস রুমে নিয়ে গিয়ে আমার স্কুলের সব পোষাক বদলাচ্ছিলো। আর একটু পরেই আমাদের জলখাবার খাইয়ে দিয়ে কাকু ছাদে খেলতে ও পাঠিয়ে দিল। 
কাকু সব কাজেই খুব চটপটে কিন্তু আমার কপাল মন্দ। 
ব্যাডমিন্টনের একটা ফোর হ্যান্ড স্ট্রোক খেলতে গিয়েই হয়ে গেল চিত্তির। কোথা ও কিছু নেই অকারণেই পা পিছলে মানে স্লিপ করে আলুর দম মানে আমি ধপাস ধাঁই হ’লুম। ভাগ্যে বাদল একলাফে এসে আমাকে ধরে ফেলল তাই আর চিৎপটাং হ’তে হ’লো না আমাকে কিন্তু কোমরে বেশ চোট তো লাগলোই। এমন অকারণে আছাড় আমি আর কখনো খাই নি তা ঠিক।
আমি তখন উঠতে ও পারছিনা দেখে বাদল বলল-‘পে লোড তো মোটে একুশ কেজি……কাকুকে আর ডাকতে হবে না । ও আমি নিজেই..’.।
বাদলের যেমন সব কথা। আমরা কি একটা মহাকাশ যানে রয়েছি না কি যে পে লোড হবে? বললেই ছেলেটা বলবে- ‘তা আছিই তো । পৃথিবী নামক মহাকাশযানে’। 
আর  আমার ওজন ও একটা এগারো বছরের ছেলের সমান ওজন বললে তো আর তা ও সত্যি হবে না। তেরো বছরের পরে ওজন তো বাড়েই ছেলেদের তা যতই রোগা ছেলে হই না কেন আমি। আর সবে চোদ্দোয় পা দিয়েছি।
তবে বাদল বেশ ব্যায়াম ট্যায়াম রোজ করে বলে দু’হাতে আমাকে সে অবলীলাক্রমে পাঁজাকোলা করে তুলে নিচে নিয়ে গিয়ে ঘরে বিছানায় শুইয়ে দিলো। 
কাকু ভ্রু কুঁচকে বলল-‘কি হয়েছে, বাদল?’
‘আচার...।‘
‘হুম।তা কিসের? আমের না তেঁতুলের?’
‘মনে হয় জলপাইয়ের, কাকু। হিঃ….হিঃ….হিঃ….’
‘তা তোমাদের খেলা তো গোল্লায় গেলো। এখন কি করবে?’
‘তুমি তোমার এই পরী ছেলেটার এখন সেবা করো বসে। আর আমি বাড়ী যাই, কাকু। তবে ঘটনাটা বেশ সদেহজনক ভাবে হঠাৎ ঘটেছে. তা জানো তুমি কাকু? চঞ্চলের কিন্তু একটু ও দোষ ছিল না। ব্যাপারটা আমি ভাল বুঝছি না, কাকু। তুমি একটু সাবধানে থেকো’।
‘আগে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে দেখি এখন. পরে না হয় কোমরে ওপায়ে মালিশ ও করে দেবো’।
তা সে রাতে কাকুকে সত্যিই নিজের এই ত্রয়োদশোত্তীর্ণ হাঁদা ছেলের সেবায় লাগতে হ’লো ডিনারের আগে। কাকু সরষের তেল ব্যবহার করে না আমার জন্য আমার দুধের বরণ ত্বক হলদে হয়ে যাবে এই ভয়ে। তবে গন্ধে মনে হ’লো ইউক্যালিপটাশের তেলে কাকু কোন হোমিওপ্যাথিক ওষুধ মিশিয়ে নিয়েছে। 
রাত তখন মনে হয় এগারোটা হবে। আমি ঘড়ি দেখি নি। 
বিছানায় চুপটি করে পাশ ফিরে শুয়েছিলাম। স্পোর্টস ড্রেসটাও আমার বদলানো হয় নি। এখন সেগুলো সব ধীরে ধীরে সাবধানে খুলে ফেললো কাকু আমার ব্যথা জায়গায় না লাগে এমনভাবে আর তারপরে আমার পিঠে কোমরে ও পায়ে অবধি বেশ করে ওষুধ তেল মালিশ করতে শুরু করলো। আমার বেশ আরাম লাগছিলো।  
তখন হঠাৎ কে যেন বলে উঠল-‘তা বেশ হয়েছে’।
আমি বেশ চমকে উঠে তাড়াতাড়ি বেড কভারটাই টেনে নিলুম। তাই দেখেই কাকু বলল-‘কে?’
‘আমি। নাম মনে করুন নীলরতনবাবু…..’
‘আমি তো ঠিক চিনতে পারছি না আর দেখতে ও পারছি না আপনাকে’।
‘তা’তে আর হয়েছেটা কি, শুনি? আমাদের কি অতো সহজে দেখা যায়?’
শুনেই আবার চমকে উঠলুম আমি। কাদের দেখা যায় না সহজে রে বাবা?
‘তবে শুনছিটা কি করে আপনার কথা?’
‘সে তো তোমাদের সাউন্ড সিস্টেমের স্পিকারটার কল্যাণে। ভাবলুম যাই ছেলেটা কেমন আছে একটু দেখেই আসি না হয় গিয়ে।বিকেলে লুস্সু চ্যাংড়াটা ল্যাং মারায় ছেলেটা জোর আছাড় খেয়েছে শুনলাম। ব্যাটা তো নিজে মার্কামারা হতকুচ্ছিত ছিলো কি না? তাই মনে হয় হিংসেয়…………….. তবে সে তুমি যাই বল ভাই, তোমার এই ছেলেটা কিন্তু সত্যিই দারুণ সুন্দর…আর রূপে গুণে অতুলনীয়’।
কাকু কি্তু আমার এই প্রশংসায় গলে পড়বার পাত্রই নয়। উল্টে বেশ রাগতসুরে বলল-‘এই কাজটা আপনার কিন্তু মোটেই নৈতিক হয় নি। বিশেষকরে এতোরাতে আপনি হঠাৎ কারো বেডরুমে….. তা কতক্ষণ এসেছেন শুনি?’
‘তা মিনিট পনেরো হয়েছে বই কি’।
শুনে কাকু বেজায় রেগে বলল-‘ঘোর অনৈতিক। হ’লোই বা একটা ছোট ছেলে। কিন্তু দেখছেন যখন যে আমি ছেলেটার সুশ্রুষা করছি ঘরে কেউ নেই ভেবে তখন বিনা নোটিশে এসে……  আপনি বসে বসে সবই দেখছেন কি বলে’?
‘সে বাপু তুমি যাই বলো ….বসে বলো বসে আর ভেসে বল ভেসে…..। ভারী তো একটা চোদ্দ বছরের ছেলে।তার আবার কথা কি? আর আমরা তো এখন মানুষের মধ্যে গণ্যই হই না। আমাদের নৈতিকতার বিচার তোমরা মানুষেরা করবেই বা কি করে? ইচ্ছে থাকলেই বা কি? আটকাতে পারবেই বা কি করে? তবে তোমাকে এখন বলেই ফেলি যে আমি মানুষটা আগে ও খুব একটা সুবিধের  ছিলুম সেটি যেন ভেবো না। আর তোমাদের ওই ভগবান ভদ্রলোক ও তেমনি ধুরন্ধর। বুঝলে। আমার মতন একজন নৈতিক শিক্ষককে একদম সোজা করে ছেড়েছেন। তবে স্বভাব………….তা শুনবে আমার গল্পটা?’
‘হুম….বলতে আজ্ঞা হোক…….’
‘শোন, আমি ছিলুম এক কড়া মাষ্টার কেননা তখন ও কর্পোরাল পানিশমেন্ট গোল্লায় চলে যায়নি হতচ্ছাড়া সব পাবলো আর স্কিনার ফিনারদের জ্বালায়। মনোবিজ্ঞানের না কাঁথায় আগুন। ছেলেগুলোকে যদি আপাদ মস্তক রাম ধোলাই দিয়ে হাতের সুখই না করা যায় তবে মাষ্টারী করে হবেটা কি? ছাই……..গালাগালিটা তো ফাউ’।
‘আর তখন বেত তো চলতোই সাথে নানাধরণের শাস্তি ও কিছু কম ছিল না। যেমন ধরো ছেলেরা পড়া না করলেই নীলডাউন করা; কান ধরে ওঠবোস বা ক্লাশের বাইরে বা বেঞ্চে  দাঁড় করানো থেকে শুরু করে ঝাল কাঁচা লন্কা চিবোতে দেওয়া ও ডিটেনমেন্ট সবই চলতো। এমন কি ঘোরতর অপরাধী আর একটু বড় মানে তোমার ছেলের মতন বয়সে যাদের লজ্জাবোধ বেশ বেড়েছে মানে তেরো  চোদ্দ বছর বয়স হয়ে গেছে আর কি, তেমন ছেলেদের ধরে পোষাক খুলে নিয়ে দু’হাত চেপে ধরে রেখে সব ক্লাশে ঘোরানো অবধি আকছার হ’তো। কথায় কথায় গার্জেন কল বা টিসি দেওয়া কেউ জানতোই না। এর জন্য সব ক্লাশে মনিটর ও অ্যাসিস্ট্যান্টদের গ্রুপ থাকতো যাদের নাম ছেলেরা দিতো জল্হাদ গ্রুপ’।
‘ফলে কড়া ডিসিপ্লিন ছিল। যা পড়ানো হ’তো তা সবাই মনে তো রাখতোই সাথে জীবনে অভ্যাস ও করে দেখাতে হ’তো ছেলেদের’।
‘যেমন একদিন আমি ক্লাশ ফাইভে গিয়ে পড়ালুম- ‘কখনো মিথ্যাকথা বলিবে না। গান্ধিজী আজীবন মিথ্যা বলেননি তাই ……..আজ তিনি আমাদের রাষ্ট্রপিতা। তোমরা ও বলিবে না’। 
একটা দুষ্টু ছেলে বলে ফেলল-‘তাই তিনি আজ আর নেই। অকালে গুলী খেয়ে মরেছেন। আমাদের ও মরতে হবে, স্যার’।
ফলে তার কপালে তখনি জুটলো দশ ঘা বেত ও খালি গায়ে বেঞ্চে দাঁড়ানো। ছেলেটার বয়স কম মানে মাত্র দশ বছর । কি আর করা? তবে পরদিন সে যখন বলে দিলো যে সে নিজে দেখেছে যে কোন বদমায়েস পিওন রোজ টিফিনে যে আদা আর নুন দেওয়া ভিজে ছোলা ছাত্রদের দেওয়া হ’তো তার থেকে বেশ কিছুটা চুরী করে নিতো তখন সেই ঘটনার পরে সেই পিওন পরমানন্দ যাদব সাসপেন্ড হয়ে গেল এবং তার দশদিন পরে ছেলেটি স্কুল থেকে বাড়ী ফেরার পথে অপহৃত হ’লো। আর তার খোঁজ রইলো না। 
আমি দ্বিতীয় দিন পড়ালুম –‘কখনো না বলিয়া পরের মানে অ্ন্যের দ্রব্য মানে জিনিষ লইবে 
না।  এমন কি পথে কারো জিনিষ পড়িয়া থাকিতে যদি দেখ, তাহা ও তুলিয়া লইবে না। ইহা চুরী এবং মহাপাপ’। 
সে’দিন ছিল এগারো ক্লাশ। 
একটা বছর সতেরে]র ছেলে বলল-‘ তাহলে জোর করে কেড়েই নেব তো. স্যার?
‘ব্যাস, আর তাকে ছাড়ি আমি কখনো। দশ মিনিট পরে সবাই দেখতে পেলো যে সেই ফর্সা ছেলেটা স্কুলের গেটের সামনে একদম খালি গায়ে স্ট্যাচু হ’য়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে দশ ঘা  বেত খেয়ে। ফর্সা ছেলেদের বেত মেরে ও সুখ ছিলো রে দাদা। লাল লাল কি সুন্দর দাগ ফুটে উঠতো তাদের গায়ে। কালো ভূত ছেলেগুলোকে যতই বেত মারো কিছু নয়………ছ্যাঃ’ 
‘পরের দিন কিন্তু সে আমাকে একটা একশো টাকার নোট এনে  দিয়ে বললো- ‘স্যার, করিড়োরে পড়ে ছিল। নিশ্চয়ই কোন স্যারের পকেট থেকেই পড়ে গেছে কেননা আমাদের কারো পকেটেই তো একশো টাকার নোট থাকে না । তখন একশো টাকার অনেক দাম ছিল। মাইনেই তো পেতুম সাতশো টাকা’। 
‘তা আমি অন্যায় করি নি বাপু। কয়েকজন সহকর্মিকে জিজ্ঞাসা ও করলুম ঠিকই কিন্তু কেউ যখন আমার টাকা বলে দাবী করলো না আমার কড়া জেরার মুখে পড়বার ভয়ে,  তখন আর কি করা? জলয়োগের দোকানে গিয়ে বাধ্য হয়ে আমাকেই ক’দিন ভূরিভোজন করে ফেলতে হ’লো। টাকাটা তো আর নর্দমায় ফেলে দিতে পারি না আমি……হেঃ…..হেঃ…….হেঃ………’  
‘আমি তৃতীয় দিন পড়ালুম –ছেলেরা  শোন,  কোন অপরিচিত লোকের সাথে মিত্রতা বা ঝগড়া করিবে না। তাহার উপকার ও যাচিয়া গিয়া করিবে না। পথে কোন অশক্ত মানুষকে  দেখিলে ও সে যদি সাহায্য চায় তখন সাহায্য করিতে পার’।।
‘পরের দিন একটি ছেলে সকালে নদীতে চান করতে গিয়ে শুনলো….. বাঁচাও ….বাঁচাও…… চিৎকার। কে একজন ডুবছে। ছেলেটা জলে লাফিয়ে পড়লো। উদ্ধার ও করতো ডুবন্ত মানুষটাকে ঠিক কিন্তু সে এমনভাবে তাকে আঁকড়ে ধরলো যে………..’
‘কি আর করা? সে’দিন একটা শোকসভা করিয়ে স্কুলে ছুটি দিতেই হোল। কি করে ডুবন্তকে ধরতে হয় সাবধানে আর নিজেকে বাঁচিয়ে তাই সে কি জানতো?’

  ‘আর একদিনের কথা। ………সাইকেলে চেপে স্কুলে যাচ্ছি। আমার আগে আগে কয়েকটি ছেলে ও যাচ্ছে। এক জায়গায় হঠাৎ তারা দাঁড়িয়ে পড়লো। আর কি সব পরামর্শ করতে লাগলো। কিন্তু একটু পরে সবাই এগিয়ে যেতে তখন আমি এগিয়ে গিয়ে দেখি যে সে’খানে কার রএকটা মনিব্যাগ পড়ে আছে। খপ করে তুলে নিয়ে খুলে ফেলতেই হাতে পেলুম নগদ দু’শো টাকা। বাহবা……..আমার বরাতকে…….ঃমাসের শেষে যখন হাতে একটা ও পয়সা নেই সেই সময়ে এ তো স্বর্গলাভ….স্কুলে যেতে ক্লাশে ছেলেরা অবশ্য তাদের নৈতিক শিক্ষার ব্যবহার রিপোর্ট করলো। আমি ও তাদের বাহবা দিলুম বইকি। নইলে নৈতিক শিক্ষার মান বাঁচে না’…….।
‘একদিন আবার আমি পড়ালুম—‘অন্যের জিনিষের বিষয়ে কৌতুহল দেখাইবে না। তাহা অন্যের কাছে চাহিবে না এমন কি ছুঁইবে ও না । যাহা তোমার জিনিষ নয় তাহাতে তোমার কোন অধিকার নাই’।
একটা ছেলে বলে ফেলল-‘স্যার, এই স্কুলটা ও তো আমার নয়। এখানে আসবার অধিকার যারা স্কুল তৈরী করেছে তাদের দিয়ে দিন না’….
‘আর তখন একটা গোটা ঝাল লংকা তাকে চিবোতেই হ’লো। বিনা মার খেয়ে ও সে কেঁদে বাঁচে না তখন’।    
‘কয়েকদিন পরে ভোররাতে খুব ঝড় জল হ’লো। গ্রামে হ’লে সকালে আম টাম কুড়োতে যেতুম ঠিক। শহরে তো আর সে সমস্ত নেই তবু ও সকাল হ’তেই বেরোতে হ’লো কেননা রাত ভোর কারেন্ট নেই। গরমে অস্থির। আর খানিক গিয়েই দেখি কার একটা পাতলা দামী চকচকে জয়পুরী লেপ ঝড়ে উড়ে এসে পড়ে আছে। ভিজে একসা। হয়তো কেউ কেচে শুকোতে দিয়েছিল। ঝড় উড়িয়ে এনেছে। ওয়াশেবল জিনিষ তো তাই  আমার বহুদিনের শখ ছিল কিন্তু পয়সার অভাবে কিনতে পারি নি। যা দাম…..’
‘ভাগ্যে পথে তখন ও জন মানব নেই। খপ করে তুলে নিতে গেলুম আমি নীচু হয়ে। তা তখন কি আর জানি ছাই যে লেপের আড়ালে একটা ঝড়ে ছিঁড়ে পড়া ইলেক্ট্রিকের তার ও আছে……কেন যে কারেন্ট বন্ধ তা জানতে পারা গেল ঠিকই তবে তার আর কোন দরকা রইলো না কেননা ফল যা হবার তাই হয়ে গেছে ….. তা বুঝলে কিছু এইবার?’
  ‘হুম, যা বোঝবার আমি বুঝেছি আগেই কিন্তু আপনি্ তো স্যার বেশ একটু ইয়ে মানে কি বলে ইনকরিজিবল মানে এই মনে করুন জিনিয়াস গোছের লোক……আমি আপনার আমাদের ঘরে সময় অসময়ে বিনা অনুমতির এই অনুপ্রবেশ আটকাবো কি করে বলুন তো দেখি, স্যার।
কি? কি বললে? তুমি মানুষ হয়ে কি না আমাকে আটকাবে? ছ্যাঃ……..এই শালার পদ্মপলাশ লোচন ছেলেকে আর আমি কোনদিন ও ছাড়বো? তুমি কি তাই ভেবেছ? আর তুমি তাড়াবে আমাকে? আরেঃ ছোঃ    …..সুমেরু পর্বত যদি মক্ষিকায় নাড়ে….পড়েছ?’
‘হুম…..রামায়ণে আছে….’
কাকু এই কথা বলতেই দমাস করে দামী স্পিকারটা ফেটে চৌচির হয়ে যেতে কাকু –‘আরেঃ ….এ কি? এ…এ কি?’ করে উঠলো। 
 এইবারে আমি বললুম –‘কাকু, ওনাকে আটকানো যাবে খুব সহজেই. কাকু। মানুষ হয়ে ও। ওনারা তো রামকে বলেন আম, হরিকে বলেন অরি আর মাধবকে বলেন যাধব। মানে ঠাকুর দেবতার নাম সহ্য করতেই পারেন না। তাই ভোরে উঠে রাম নামের একখানা ক্যাসেট না হয় চালিয়ে দিতে হবে………….’
কাকুর সাধের মিউজিক সিস্টেমের পরে এইবারে টি০ভি০টা থেকে আওয়াজ শোনা গেল-‘কি? কি বললি শয়তান ছেলে? ভয় নেই ডর  নেই …..যতবড় মুখ নয় ততবড় কথা। আজ আমি এই শালার ছেলের সুন্দর মুখ জন্মের মতন এখনই শেষ করে দিয়ে যাবই ……’
আমাদের খাটের পাশেই একটা সেকেলে পালিশ করা কাঠের বড় আলনা ছিল। জামা কাপড় বোঝাই করা। আমার তো মনে ও ছিল না। টি০ভি০টা তার পাশেই ব্র্যাকেটে বসানো ছিল । আওয়াজটা সেইখান থেকে আসছে মনে হ’তেই সে’দিকে তাকিয়ে  দেখলুম আমি…..আর সঙ্গে সঙ্গেই…..ও কাকু…………..বলে চেঁচিয়ে উঠলুম। 
দুলছে…….গোটা ভারী আলনাটা সবসুদ্ধ ভীষণভাবে দুলছে। ভূমিকম্প না কি?
আর তারপরেই সেটা হঠাৎ হুড়মুড় করে সবশুদ্ধ এসে আমার মাথা ও মুখের ওপরে সশব্দে আছড়ে পড়লো। আমি ভয়ে চেঁচিয়ে উঠলুম জোরে। কিন্তু আমার মুখ মাথা কিছুই  ভাঙলো না দেখে ভারী অবাক  হয়ে গেলুম আমি। 
ও হরি ,,,দেখি যে কাকু বাদলের মতন ক্ষিপ্রতায় আমার ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়েই ডান হাত তুলে পড়ন্ত আলনাটাকে ধরে পেছন দিকে একধাক্কা মেরেই উঠে দাঁড়িয়ে টেবিল থেকে গঙ্গাজলের শিশিটা তুলে নিয়েছে।
এই শিশিটা কি কাকু আগেই টেবিলে এনে রেখেছিল? কে জানে? রোজ তো থাকে না।
আলনাটা পিছন দিকে ঠিকরে গিয়ে দেওয়ালে ধাক্কা মেরে স্থির হ’লো। আর টি০ভি০ সেটটা ছিটকে এসে পড়লো তবে ছোট সেট তো। তাই তার অ্যান্টেনা আর কেবল কর্ড ও প্লাগের মোটা তারগুলোয় জড়িয়ে গিয়ে শূন্যেই ঝুলতে রইলো আর কাকু ও সেটা খপ করে ধরে টেনে তুলে আবার ব্রাকেটে বসিয়ে দিল।
 কাকুর হাতে জোর আছে নইলে এখন ও কাকু আমাকে মাঝে মাঝে একটানে কোলে তুলে নিয়ে পায়চারী করতে পারে কখনো? আমি কি আর সেই তিন বছরের কচি বাচ্ছা ছেলে আছি না কি?
ছপাৎ……………….খানিকটা জল ছুঁড়ে দিলো কাকু আর সত্যি বলছি মনে হ’লো কি যেন একটা সাঁত করে সরে গেল জানলার দিকে। 
আবার ….ছপাৎ……
দড়াম করে জানলাটা খুলেই আবার বন্ধ হয়ে গেল।
‘আপদঃ শান্তিঃ……’ 
এই বলে কাকু ফিরে এসে গঙ্গা জলের শিশিটা যথাস্থানে  রেখে টেবিলের ড্রয়ার খুলে দেখি বিন্ধ্যাচল থেকে আনা মন্ত্র পড়া লাল সূতো বার করছে আগে আমার হাতে বাঁধবে বলে। তার মানে কাকু বাদলের সংকেত শুনে আগে থেকেই তৈরী হয়েই ছিলো। এই না হ’লে কেউ আমার মতন একটা পরী ছেলেকে মানুষ করতে পারে?’
কাকু বলল-‘উঃ…… কি সাংঘাতিক সব জিনিষ রে বাবা….ঘরে ও আপদ কম নয় দেখি……..’ 
এখন এই সব কথা বললে কেউ বিশ্বাস তো করবেই না উল্টে লোকে আমাদেরই পাগল বলবে ঠিক। তা বলুক গিয়ে। তাদের তো আর মাথায় কিছু এসে আছড়ে পড়ছে না আমার মতন আর শুকনো ছাদে আছাড় ও খেতে হচ্ছে না। । যার ঘাড়ে পড়ে সেই বোঝে…… আর তখন সে বাপ রে বাপ …..বলে মানতে ও বাধ্য হয়। বাদল একটা জিনিয়াস ছেলে বলেই ঠিক কিছু সন্দেহ সে করেছিল আর তাই যাবার আগে সাবধান করে দিয়ে গেছিল কাকুকে। কাকু ও তো কিছু কম যায় না। সত্যি বাপু তাই হয়তো লোকে বলে যে  জিনিয়াসদের দুনিয়া হয় আলাদা। 
আমার কাকু ও তো তৈরী হয়েই ছিল। আর আমি তো ছাই কিছুটি বুঝিনি। রতনে রতন চেনে। 
আর যা চাপা ছেলে না একটা আমার কাকু। মুখে কিছুটি বলবে না তবে  কাজে করে ফেলবে ঠিক।   ভূতপ্রেত অপরাধী যেই হোক, জিনিয়াস না হ’লে তাদের হাতে রহস্যভেদির  পরাজয় তো হবেই।
০৯৪৫২০০৩২৯০
রচনাকাল : ২০/৯/২০১৫
© কিশলয় এবং জি.সি.ভট্টাচার্য কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger
সমাপ্ত



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Australia : 1  Canada : 5  China : 12  France : 1  Germany : 4  Hungary : 1  India : 213  Japan : 1  Russian Federat : 5  Saudi Arabia : 5  
Sweden : 7  Ukraine : 23  United Kingdom : 2  United States : 317  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Australia : 1  Canada : 5  China : 12  France : 1  
Germany : 4  Hungary : 1  India : 213  Japan : 1  
Russian Federat : 5  Saudi Arabia : 5  Sweden : 7  Ukraine : 23  
United Kingdom : 2  United States : 317  


© কিশলয় এবং জি.সি.ভট্টাচার্য কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
নীতি শিক্ষা by GCBhattacharya is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৪৮৪৯২৮
fingerprintLogin account_circleSignup