নতুন ফ্ল্যাটে আসার পর থেকেই একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে রুমকিদের সাথে।যদিও বিল্ডিংটা এখনো পুরোপুরি তৈরি হয়নি।রুমকিদের তাড়াহুড়োতে প্রমোটার রতন মল্লিক একটা ফ্ল্যাট মোটামুটি তৈরি করে দিয়েছিল আর তার পরেই রুমকিরা উঠে এসেছে নতুন ফ্লাটেও।রুমকি আর অনিরুদ্ধ দুজনেই চাকরি করে।সারাদিন ওরা বাইরেই থাকে।কিন্তু রাতে ফিরে যে একটু শান্তিমতো ঘুমোবে তার উপায় নেই। একটা মেয়েলি কন্ঠ খুব নিচু স্বরে কাঁদতে থাকে রাতভোর।প্রথম প্রথম ভেবেছিল আওয়াজটা বাইরে থেকে আসে।কিন্তু পরে বুঝতে পারল আওয়াজ টা বিল্ডিং এর ভেতর থেকেই আসছে। কদিন এভাবেই চলছিল কিন্তু এবার ওদের ব্যাপারটা স্বাভাবিক লাগলনা মোটেও।তাই বাধ্য হয়ে প্রমোটারকে ডেকে সমস্তটা খুলে বলল ওরা।কিন্তু কোন লাভ হলনা। এটা নাকি সম্পূর্ণ ওদের মনের ভুল,এমনটা নাকি হতেই পারে না।এমনটাই বোঝানো হলো ওদের।আর এসব বুঝিয়েই বিদায় নিল প্রমোটার।এই ঘটনার
ঠিক দুদিন পরেই এক বৃদ্ধ লোক সন্ধ্যের দিকে রুমকিদের ফ্ল্যাটে এসে কড়া নাড়ল। সেদিন একটু ওরা তাড়াতাড়ি ফিরেছিল অফিস থেকে।দরজা খুলে দিতেই বৃদ্ধ লোকটি ভেতরে ঢোকার অনুমতি চাইল।
কিছু দরকারি কথা আছে বলে নিজেই হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ল ভেতরে।রুমকি আর অনিরুদ্ধ দুজনেই বেশ অবাক হয়ে গেল।জানা নেই শোনা নেই ভেতরে ঢুকে পড়ল কেন হঠাৎ করে?সময় নষ্ট না করে বৃদ্ধ লোকটি বলতে শুরু করল--আপনারা যার কান্না রোজ শুনতে পান সে এই বিল্ডিং এই থাকে। এবার সত্যিই খুব অবাক হলরুমকিরা।এই লোকটি কি করে জানলো?তাহলে কি উনিও কান্না শুনতে পায়?
তারপর লোকটির মুখে যা শুনল তাতে ওদের সারা শরীরে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল নিমেষের মধ্যে।
এই বিল্ডিংটা তৈরির সময় বিনতি নামের একটি মেয়ে কাজ করত এখানে।অভাবের সংসার তাই ষোল বছরের মেয়েটিকেও কাজে নামতে হয়েছিল।উঠতি বয়সের মেয়ে শরীরে ভরা যৌবন।লোকের নজরতো পড়বেই।তাই নাইট ডিউটির নাম করে প্রমোটার রতন মল্লিক আর তার চ্যালারা মিলে বিনতির সর্বস্ব লুট করেছিল।আর তারপর প্রমাণ লোপাট করতে এই বিল্ডিং এর নীচেই মেরে মাটি চাপা দিয়ে দেয়।মেয়েকে খুঁজতে যখন এই বিল্ডিংএ এসেছিল ওর বাবা তখন রতন মল্লিক আর তার সাগরেদ দের কথা বার্তা আড়াল থেকে সবটা শুনেছিল। সবটা জানার পর বিনতির বাবা পুলিশের কাছেও গিয়েছিল কিন্তু রতন মল্লিকের বিরুদ্ধে পুলিশও কোন পদক্ষেপ নিতে রাজি হয়নি।ঘটনার কদিন পর বিনতির বাবাকেও গাড়ি চাপা পড়ে মরতে হয়েছিল।গরীব দের জন্য কোন আইন নেই কোন আদালত নেই।আছে শুধু অকালমৃত্যু।
কথাগুলো বলে বৃদ্ধ লোকটি হাউমাউ করে কেঁদে উঠল।যাওয়ার সময় একটা খবরের কাগজ রেখে গেল।কাগজে বিনতি আর তার বাবার ছবি।বিনতির বাবার ছবি দেখে আঁতকে উঠল রুমকি।একটু আগে যিনি এসেছিল তার সাথে হুবহু মিল।তাহলে কি বিনতির বাবা ই এসেছিল?কি হচ্ছে এসব কিছুই মাথায় ঢুকছে না ওদের।রুমকির ছোট মামা পুলিশের উচ্চপদস্থ অফিসার।সাহসী হিসেবেও খুব নাম ডাক।রুমকি মামাকে ডেকে সবটা বলল।এবং ঘটনা টা যে সত্যি সেটাও জানালো ওদের।রুমকির মুখে সবটা শুনে কড়া তদন্তের নির্দেশ জারি করল রুমকির ছোট মামা।বিনতি আর ওর বাবার মৃত্যুর যেন সঠিক বিচার হয় আর রতন মল্লিকের যেন উপযুক্ত শাস্তি হয় সেটা দেখার দায়িত্ব এখন রুমকিদের।
এবার হয়ত বিনতি আর ওর বাবার আত্মার চির শান্তি পাবে।
রচনাকাল : ৩/৩/২০২০
© কিশলয় এবং মনি রায় ঘোষ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।