--সকাল থেকে চুপচাপ বসে আছো, কি হয়েছে তোমার মা??
--কিছুনা রে। আসলে এই দিনটা এলেই তোর বাবার কথা বড্ড মনে পড়ে। জানিস আজকের দিনে সবার প্রথম আবীর আমার কপালে ছোয়াঁতো। তার পর বাকি সবাইকে। আমার জীবন থেকে সব রঙ কেড়ে নিয়ে কোথায় যে চলে গেল মানুষ টা.... বলেই শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছল সুনীতা।
হ্যা বেশ কয়েক বছর হয়ে গেল সুদীপ্ত বাবু।
এই ক বছরে কোন দোলেই সুনীতা রঙ ছুঁয়ে দেখেনি। অন্য কেউ মাখাতে এলেও বারণ করে দিয়েছে।। একটা মানুষের সাথেই তার মনের রঙ ওতপ্রত ভাবে জড়িয়ে ছিল। মানুষ টাই যখন নেই তখন আর কিসের দোল কিসের রঙ।
সুমিত জানে এই দিনে মা এর মন খারাপ হয়ে যায়। ও প্রত্যেক বছর চেষ্টা করে নানান ভাবে মা এর মন ভালো করার কিন্তু মা সারাদিন নিজেকে ঘর বন্দি করে রাখে। আর চোখের জল ফেলে।
জানালা দিয়ে বাইরের দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে সুনীতা। হঠাৎ পেছন থেকে এসে আবীর মাখিয়ে দিল রিয়া। ব্যাপারটা হঠাৎ ঘটাতে বেশ চমকে উঠল সুনীতা । ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে রিয়ার দিকে। রিয়া হো হো করে হাসছে।
খুব বেশি হলে বছর সাতেক বয়স হবে মেয়েটার। এই বছর এই পাড়াতে নতুন এসেছে। খুব মিষ্টি একটা মেয়ে। মাঝে মাঝেই সুনীতার কাছে আসে আর সুনীতাও এই কদিনে ওকে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছে।
সুনীতার সারা মুখে আবীর। কিন্তু এবার আর একটুও রাগ হল না ওর। রিয়া কে কাছে টেনে খুব আদর করল সুনীতা। না বুঝে রঙ মাখিয়ে দিয়েছে বাচ্চা মেয়েটা। তবুও তো একটু হলেও রঙের ছোঁয়া লেগেছে। এত বছর পর মা এর গায়ে রঙ দেখে সুমিত ও ভীষণ খুশি। ও নিজেও কোনদিন মা এর গায়ে রঙ মাখাতে সাহস পায়নি। কারণ ও জানে বাবা মারা যাওয়ার পর মা রঙের থেকে দুরেই থাকে। কিন্তু আজ সবটাই একটু অন্যরকম হল। মা এর মুখ টাও খুশিতে ভরে উঠেছে। মানুষ যাকে ভালোবাসে তার হাত থেকেই প্রথম রঙ মাখাতে চায়। রিয়াও তো সুনীতার কাছে ভালবাসারই মানুষ।সুমিতও যদি জোর করে কখনো রঙ মাখাতো তবে হয়ত সুনীতা রাগ করত না কিন্তু সুমিত সেই সাহস কখনো দেখায়নি।যেটা আজ রিয়া করে দেখালো।
"রঙের ছোঁয়া লাগুক সবার হৃদয়ে,আগলে রাখুক একে অপরকে ভালোবাসা দিয়ে।"
রচনাকাল : ৯/৩/২০২০
© কিশলয় এবং মনি রায় ঘোষ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।