সম্পর্ক গুলো বাঁচতেই চায়। ওদের বড্ড বাঁচার নেশা। যে সম্পর্ক গুলো ভেঙে যায়, আর এগোতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়ে তাদের কিন্তু বড্ড অভিমান হয়। তারা চায় কেউ এসে মাথা নত করে তাদের সামনে এসে দাঁড়াক। তাদের অভিমান ভাঙাক। একটা ছোট্ট চাড়া গাছের মত জল দিয়ে সার দিয়ে আবার নতুন করে প্রানের সঞ্চার করুক। কোন কোন সম্পর্কের সুতো টা বেশ শক্ত হয়। দুপক্ষ যতই টানাটানি করুক না কেন সুতো টা কিছুতেই ছেড়ে না। বরং মুচকি হাসে আর ভাবে এই সুতো ছেঁড়া তোমাদের কম্ম নয়। কারণ সম্পর্ক টার মধ্যে নিঃশ্বাস নেয়ার মত একটা বড় জানালা থাকে। একটা বিশ্বাসের চাড়াগাছ থাকে যেটাকে দুজনেই সময় সুযোগ মত দেখভাল করে। একটা আবেগ থাকে যেটা ওদের শক্ত করে বেঁধে রাখে। ওপর থেকে নয় ভেতর থেকে।
কোন কোন সম্পর্কের সুতো বড্ড নরম বড্ড আলগা। একটু টানাটানি করতে না করতেই ছিঁড়ে খানখান। চাইলেও আর জোড়া লাগানো সম্ভব হয়ে ওঠেনা।
আসলে প্রত্যেকটা সম্পর্কেই একটা বড় জানালা খুব প্রয়োজন। যাতে দিনের শেষে দুজনেই লম্বা নিঃশ্বাস নিতে পারে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে। একটা আকাশ এর নীচে এসে দুজন যখন দাঁড়াবে তখন সম্পর্কের বেড়াজালে নিজেদেরকে বন্দি বলে মনে হবেনা। ওপর ওপর যাই হয়ে যাক না কেন ভেতরের সুতো টা যেন আবেগ আর অনুভূতি দিয়ে শক্ত করে বাঁধা থাকে।কেউ যেন কারো কাছে বোঝা না হয়ে দাঁড়ায়। সম্পর্কের বোঝা বড্ড ভারী।সবাই সেটা বইতে পারেনা। একটা সম্পর্কের অনেক উপাদান থাকে। ভালোবাসা, বিশ্বাস, অধিকারবোধ, সন্দেহ, আর সবথেকে বড় যেটা, একে অপরকে প্রতিপালন করার তীব্র ইচ্ছে। একে অপরকে নিজেদের সম্পত্তি ভেবে নেয়ার বাসনা। সব মিলিয়ে সম্পর্ক টা বড ভারী হয়ে ওঠে। তাই একটু খানি বিশ্বাস একটুখানি শ্রদ্ধা আর একটুখানি ভালোবাসা এই তিনটের একটু একটু থাকলেই বোধহয় সুতো টা অনেক শক্ত হতে পারে। সম্পর্কটাও নিঃশ্বাস নিতে পারে নিজের মতো করে।বাড়তি জিনিস গুলো বরং ছেঁটে ফেলে দেয়াই ভালো। কি লাভ অযথা বোঝা বাড়িয়ে। প্রত্যেকটা সম্পর্কের মধ্যেই একটা নিজস্বতা থাকে।তার নিজের ছন্দ থাকে,গন্ধ থাকে। তাকে ঠিক তার মত করেই এগোতে দেয়া উচিত। তাকে তার মত করেই বাঁচতে দেয়া উচিত।
নিজেদের সমস্ত সমস্যা, পাওয়া - না পাওয়ার হিসেব, নিজেদের হতাশা, এসব উগড়ে দিয়ে সম্পর্কের নিজস্বতা নষ্ট করা বোধহয় উচিত না।কিছু জিনিস, কিছু কথা, কিছু ঘটনা একান্তই নিজের থাকা উচিত। কিছু ইচ্ছে অনিচ্ছে থাকুক না ভীষণ রকম নিজের। বন্ধ দরজার প্রতি কৌতুহল মানুষের চিরকালের। একবার খুলে দিলে কৌতুহল একটু একটু করে হারিয়ে যায়।
যে দরজা টা না খুললে কারো ক্ষতি হবেনা সে দরজাটা না খোলাই ভালো।
যদি একটা সম্পর্কের চারাগাছ কে নিজেদের মত করে চারাগাছ থেকে বটগাছে পরিণত করা যায় তবে বাঁচিয়ে রাখার আনন্দটা সবথেকে বেশি উপলব্ধি করা যায়।
রচনাকাল : ২৫/১১/২০১৯
© কিশলয় এবং মনি রায় ঘোষ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।