• ১০ম বর্ষ ২য় সংখ্যা (১১০)

    ২০২০ , জুলাই



জীবনসঙ্গী
আনুমানিক পঠন সময় : ৪ মিনিট

লেখিকা : মনি রায় ঘোষ
দেশ : India , শহর : Kolkata

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , জুলাই
প্রকাশিত ৪৮ টি লেখনী ৪০ টি দেশ ব্যাপী ২৯৮১০ জন পড়েছেন।
দেখতে দেখতে পাঁচ বছর কমপ্লিট হলো। সুদেব আজ বিদেশ থেকে ফিরছে। বিদেশ থেকে ডাক্তার হয়ে ফিরছে সুদেব। অনিল বাবু আর রিয়া এয়ারপোর্টে এসেছে সুদেব কে রিসিভ করতে।

রিয়া আজ ভীষণ খুশি। অনিল বাবুর চোখে মুখেও খুশি যেন উপচে পড়ছে। হবেনাই বা কেন। সুদেব যে তার হবু জামাই। হ্যাঁ তেমনটাই তো কথা ছিল।

সুদেবকে নিয়ে বাড়ি ফিরল অনিল বাবু।
আজ সুদেবের পছন্দের রান্নাগুলোই করেছে অনিমা দেবী। হবু জামাই এর জন্য সেই কাকভোরে উঠে থেকে রান্না শুরু করেছেন। পাড়ার অনেকেই বারবার করে আসছে জামাইকে দেখতে। এতদিন অনিমা দেবী আর অনিল বাবু সবার কাছে হবু জামাইকে নিয়ে এত গল্প করেছে যে লোকের কৌতুহল আরো বেড়ে গেছে।
সুদেবের ডাক্তারি পড়ার সমস্ত খরচ অনিল বাবু দিয়েছেন সেটা একটাই শর্তে। তাদের একমাত্র মেয়েকে বিয়ে করতে হবে। সেদিন সুদেব বিনাবাক্যেই রাজি হয়েছিল এই প্রস্তাবে।তার বদলে সুদেবের ও একটা ইচ্ছের কথা জানিয়েছিল সবাইকে।
আজ বিকেলেই সুদেবের সাথে বিয়ের কথা নিয়ে বসবে এমনটাই ঠিক করল অনিল বাবু।
নাহ্ শুভ কাজ ফেলে রাখা ঠিক নয়।
কোলকাতায় একটা সাজানো ফ্লাট ও কিনে ফেলেছেন তিনি মেয়ে জামাই এর জন্য । যাকে বলে এলাহী ব্যাপার।অনিল বাবুর টাকা পয়সার কোন অভাব নেই।তাই কোন কিছুতেই তিনি কৃপণতা করেন না। যাকে বলে একেবারে দিলখোলা মানুষ। মেয়েকে ডাক্তারি পড়াতে চেয়েছিলেন কিন্তু মেয়ের সেভাবে পড়াশোনার দিকে কোনদিন আগ্রহ ছিল না তাই আর বৃথা চেষ্টা করেননি।
তাই সুদেব কে দিয়েই তার ইচ্ছে পূরণ করেছিলেন।
বিকেলে সুদেবের কাছে বিয়ের কথা বলতেই সুদেবও তার ইচ্ছের কথাটা পুনরায়ায় মনে করিয়ে দিল সবাইকে।
অনিল বাবু কিছুতেই রাজি হলেন না এই প্রস্তাবে।
প্রচন্ড রেগে গেলেন সুদেবের ওপরে।
যদিও সুদেবের কোন দোষই ছিল না। এই ইচ্ছের কথা সে অনেক বছর আগেই বলেছিল সবাইকে। তখন সবাই মেনেও নিয়েছিল। তাহলে আজ এই আচরনের কারণ সুদেবের বোধগম্য হচ্ছে না। রিয়া চুপ করে দাড়িঁয়ে রইল দরজার বাইরে। সেই ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছে সুদেবের সাথেই ওর বিয়ে হবে। তাই মনে মনে সুদেব কেই স্বামীর আসনে বসিয়েছে রিয়া। কিন্তু অনিল বাবু সোজা বলে দিলেন সুদেবের এই ইচ্ছের কোন মূল্য নেই তার কাছে। আর এদিকে সুদেব তার ইচ্ছের বাইরে কিছু করবেনা পরিস্কার জানিয়ে দিল।
সেই কোন ছোটবেলা কুসুমপুর গ্রামের এক ভাঙা মন্দিরের সামনে কুড়িয়ে পেয়েছিল বারো বছরের  ছোট্ট সুদেবকে। সেবার কুসুম পুরে পৌষ মেলায় সবাই মিলে গিয়েছিলেন অনিল বাবুরা।
সুদেবের মুখে শুনেছিলেন যে ওর কেউই নেই। মা ছিল সেও সাতদিনের জ্বরে ওকে ছেড়ে চলে গেছে। পড়াশোনার প্রতি সুদেবের প্রবল আগ্রহ  দেখে অনীল বাবু সুদেবকে ভালো স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। তারপর সুদেবের সমস্ত দায়িত্ব নিজেই বহন করেন। সেদিন সুদেব বলেছিল বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায়। শুনে খুব আনন্দ পেয়েছিলেন অনিল বাবু। মেয়েকে দিয়ে যেটা হয়নি সেটা না হয় সুদেবকে দিয়েই হোক্ কিন্তু পরিবর্তে তার মেয়েকে বিয়ে করতে হবে এটাই ছিল তার শর্ত।
আর সুদেব বলেছিল ডাক্তার হয়ে তার গ্রামে ফিরে যাবে। অসহায় মানুষগুলোর চিকিৎসা করবে।
টাকার অভাবে সেদিন মা এর জন্য ডাক্তার ডাকতে পারেনি। মাকে ওষুধ খাওয়াতে পারেনি।ওষুধ খাওয়ালে হয়ত মা বেঁচে যেত। কেউ সেদিন এগিয়ে আসেনি। বিনা চিকিৎসায় চোখের সামনে মরতে দেখেছে মাকে। সুদেব একটা মূহুর্তের জন্যও সেই দিনগুলো ভোলেনি। ভোলেনি তার মাকে। রাজ্য সমেত রাজকন্যা পাওয়ার এত বড় সুযোগ পেয়েও সুদেব সেই ইচ্ছের কথা ভোলেনি।
অনীল বাবু ভেবেছিলেন বিদেশে গিয়ে বড় ডাক্তার হলে ছোটবেলার এসব ইচ্ছের কথা সুদেব হয়ত বেমালুম ভুলে যাবে। কিন্তু এত বছর পরেও যে সব মনে রাখবে সেটা ভাবতেই পারেনি কেউ।
কিন্তু তার একমাত্র মেয়েকে ওই গ্রামে গিয়ে থাকার অনুমতি সে কিছুতেই দেবেন না। সোনার চামচ মুখে নিয়ে যার জন্ম সে কিনা থাকবে ওই গ্রামে গিয়ে?
কিছুতেই না।
এই বিয়ে তাহলে কিছুতেই হবেনা।
ঠিক সেই মুহূর্তে রিয়া ঘরে ঢুকল।
আর অনিল বাবুকে চমকে দিয়ে বলল,
"বাবা আমি সুদেব কেই বিয়ে করব। আর ওর সাথে ওর গ্রামে গিয়েই থাকব। যে নিজের সুখের কথা না ভেবে গ্রামের অসহায় মানুষ এর কথা ভাবছে সে নিশ্চয়ই তার স্ত্রীকে অযত্নে রাখবে না। তোমাদের তো গর্ব করা উচিত বাবা। এমন একজনের হাতে মেয়ে কে তুলে দিতে পারছ যার কাছে সততাই সবকিছু । বিলাসিতার কোন দাম নেই। যে অসহায় মানুষ দের পাশে দাঁড়াতে চায়।বিনা পারিশ্রমিকে তাদের চিকিৎসা করতে চায়।কজন এমন করে ভাবতে পারে বলোতো বাবা। এমন একজন চিকিৎসক আমাদের দেশে বড্ড প্রয়োজন। তাই আমি খুব গর্বের সাথেই সুদেবকে অনুসরণ করতে চাই। তাছাড়া সুদেব ছাড়া অন্য কাউকে স্বামী হিসেবে মানতে পারবনা। তাই সুদেব যেখানে যাবে আমিও সেখানেই যাবো।এটাই আমার সিদ্ধান্ত।"
কিছুক্ষণের জন্য অনিল বাবু অবাক চোখে তাকিয়ে রইল রিয়ার দিকে।
কবে এতটা বড় হয়ে গেল মেয়েটা।
চোখের কোনটা চিকচিক করে উঠল অনিল বাবুর।
ছোট থেকে মেয়ে যা চেয়েছে তাই দিয়েছেন আজও মেয়েকে সে কষ্ট দিয়ে নিজের ইচ্ছের দাম তিনি দিতে চান না। মেয়ে যাতে ভালো থাকবে সেটাই হোক্।
এতক্ষণ মাথা নীচু করে বসে ছিল সুদেব। সবটা কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু রিয়া এসে সমস্ত জট খুলে ফেলল নিমেষেই।
এবার সুদেব মাথা তুলে তাকাল তার সেই ছোট্ট খেলার সাথী রিয়ার দিকে। হ্যা রিয়াই ওর উপযুক্ত জীবনসঙ্গী। এতে আর কোন সন্দেহ নেই সুদেবের।
রচনাকাল : ১/৭/২০২০
© কিশলয় এবং মনি রায় ঘোষ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 17  China : 34  Germany : 3  Hungary : 2  India : 168  Ireland : 13  Russian Federat : 11  Saudi Arabia : 3  Sweden : 9  Ukraine : 14  
United States : 271  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 17  China : 34  Germany : 3  Hungary : 2  
India : 168  Ireland : 13  Russian Federat : 11  Saudi Arabia : 3  
Sweden : 9  Ukraine : 14  United States : 271  
লেখিকা পরিচিতি -
                          মনি রায় ঘোষ ৮ ই ফেব্রুয়ারি, বাংলাদেশের বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তারপরে, খুব ছোটবেলায় তাঁর পরিবার কোলকাতা পাড়ি দিয়ে এখন কোলকাতার সোদপুর নিবাসী।

খুব ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যের প্রতি তাঁর ভালবাসা আর সেই থেকেই লেখার জগতে পদার্পণ। বিভিন্ন পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তার জন্মস্থান বাংলাদেশ থেকেও তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তিনি কবিতা, প্রবন্ধ, ছোটগল্প এবং অনুগল্প লেখেন। এছাড়াও অনলাইন পত্র পত্রিকাতেও তার লেখা পাওয়া যায়। 
                          
  • ১০ম বর্ষ ২য় সংখ্যা (১১০)

    ২০২০ , জুলাই


© কিশলয় এবং মনি রায় ঘোষ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
জীবনসঙ্গী by Moni Roy Ghosh is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৪৮৩৬৫১
fingerprintLogin account_circleSignup