• ৯ম বর্ষ ৬ষ্ঠ সংখ্যা (১০২)

    ২০১৯ , নভেম্বর



শুভ আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস
আনুমানিক পঠন সময় : ৫ মিনিট

লেখিকা : মনি রায় ঘোষ
দেশ : India , শহর : Kolkata

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , জুলাই
প্রকাশিত ৪৮ টি লেখনী ৪১ টি দেশ ব্যাপী ৩০৪৮৩ জন পড়েছেন।
--> মুষ্টিমেয় কিছু পুরুষের জন্য (যদিও তাদের পুরুষ বলা যায় কিনা সেটা সন্দেহের তালিকাভুক্ত) আমরা সকল পুরুষ কেই এক সারিতে দাড় করিয়ে দেই।
পুরুষ সম্পর্কে একটা গদাধরা চিন্তা ভাবনা পোষন করি। পুরুষ মানেই বদমেজাজি,পুরুষ মানেই পাথরের মতো শক্ত একটা বস্তু, পুরুষ মানেই মনের কোন বালাই নেই। এসব ভাবা আমাদের অধিকারের মধ্যে পড়ে।
সবসময় নারী হয়ে নারীদের কষ্ট, দুঃখ , যন্ত্রণা পাওয়া না পাওয়া গুলোই বড্ড চোখে পড়ে। নারীরাও মানুষ, তাদেরকেও প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে বলে বড্ড লাফালাফি করি।
পান থেকে চুন খসলেই আন্দোলন করি। নারী নির্যাতন বধু নির্যাতন আরো কত কি নির্যাতনের মামলা দায়ের করি। ধর্ষণ সেতো এক তরফা হিসেবেই ধরে নিয়েছি যুগ যুগ ধরে। পুরুষদেরও যে ধর্ষণ করা যায় সেটা তো ভাবতেই পারিনা কোন কালেও।

--> সবসময় ভাবি মেয়েরাই ছেলেদের চক্রান্তের শিকার হয়, মেয়েরা অবলা তাই ছেলেদের ফাঁদ বুঝতে পারেনা। কিন্তু একইভাবে ছেলেরাও মেয়েদের চক্রান্তের শিকার হয় আর অনেক ক্ষেত্রে তারাও মেয়েদের পাতা ফাঁদে আটকে পড়ে সেটা আর ভাবার প্রয়োজন বোধ করিনা।

--> সংসারে নারীর মূল্য অপরিসীম তাকে ছাড়া সংসার অচল। সেখানে একজন পুরুষের ভূমিকা কতটা সেটা কখনো ভেবে দেখিনা। একজন সন্তানের কাছে মা এর প্রয়োজন যতটা বাবারও তার থেকে কম নয়। অথচ আমরা সেটা খুব একটা স্বীকার করিনা। সব সময় মা কেই মাথায় করে রাখি। মাতৃদিবসে মা এর জন্য কবিতা লিখি মা এর সাথে ছবি পোস্ট করি। পিতৃদিবসে বাবার সাথে ছবি কিংবা বাবা কে নিয়ে লেখা দুটো লাইন খুব একটা চোখে পড়ে না।

--> সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত বাইরে থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করে  টাকা রোজগার করে তার পরিবার কে ভালো রাখার জন্য। নিজের ইচ্ছে অনিচ্ছের কথা ভুলে গিয়ে পরিবারের ইচ্ছে অনিচ্ছের মূল্য দিয়ে চলে তবুও সেই মানুষ টাকে নিয়ে কতটা ভাবি আমরা?

--> মেয়েটি যখন শ্বশুরবাড়ি যায় তখন বাবা মা কাঁদে। কাঁদে আত্মীয়স্বজন।
ছেলেটি যখন কাজের খোঁজে ঘর ছাড়ে,
তখন সবাই বলে এ আর এমন কি, ওকে তো যেতেই হতো যাওয়াটা প্রয়োজন।
মেয়েটির ঘর ছাড়ার কষ্ট সকলের চোখে পড়ে।
আর ছেলেটি এক আকাশ কষ্ট বুকে চেপে, হাসি মুখে ঘর ছাড়ে।

'ছেলেদের কাঁদতে নেই' এটাই ওদের মন্ত্র।
এই মন্ত্র শিখতে গিয়ে কখন যেন ওরা মানুষ থেকে হয়ে যায় যন্ত্র।

--> বেকার ছেলেদের ঘরে বাইরে কতটা লাঞ্ছনা গঞ্জনা সহ্য করতে হয় সেটা শুধু সেই বেকার ছেলেটাই জানে। মা বাবা আত্মীয়স্বজন এমনকি প্রেমিকার লাঞ্ছনা গঞ্জনা ও দুবেলা হজম করতে হয়। অথচ একটা মেয়ে সারাজীবন বেকার থাকলেও তাকে সেভাবে কোন কথা শুনতে হয় না।কারণ মেয়েরা ধরেই নিয়েছে তাদের দায়িত্ব কেউ একজনক ঠিক নেবে, নিতেই হবে।

--> বিয়ে করলে বউকে তো খাওয়াতেই হবে, সন্তান দের সব দায়িত্ব ও নিতে হবে এটাই নিয়ম। এই নিয়মই চলে এসেছে বছরের পর বছর ধরে।
কখন যে এসব নিয়ম, এসব দায়িত্বের নীচে চাপা পড়ে মানুষটা শেষ হয়ে যায় তার খেয়াল কজন রাখে।

--> নারী দিবসে নারী দের নিয়ে কত কবিতা কত শ্লোগান কত অনুষ্ঠান আরো কত কিছু যে করা হয় তার ইয়ত্তা নেই। অথচ পুরুষ দিবসটা সেভাবে কারো মনেও থাকেনা। মনে রাখার প্রয়োজনও মনে করে না। আর কোন পুরষ তার জন্য আন্দোলনেও নামেনা।

--> মা যেমন কষ্ট করে সন্তানের জন্ম দেয় তেমনি বাবার ভূমিকা ও তো কম নয়। কিন্তু আমরা মা কে নিয়েই বেশি মাতামাতি করি। একজন পুরুষের চোখেও জল আসে সেও কাঁদে সেও অভিমান করতে জানে সেও ভালবাসতে জানে অথচ উপরোক্ত সব কটা অনুভূতি আমরা নারী দের জন্যই তুলে রাখি। যেন এই অনুভূতি গুলোতে পুরুষের কোন ভাগ নেই। এগুলো সব নারীদের একান্ত নিজস্ব সম্পত্তি।

--> আইনি ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও মেয়েদের কথা অগ্রগণ্য।
আর তার সুবিধাও তারা এক বিন্দু ও নিতে ছাড়েনা। এমন অনেক নারী আছে যারা এই আইনি ব্যবস্থার দোহাই দিয়ে পুরুষদের পায়ের তলায় দাবিয়ে রাখে। কখনো কখনো আবার পুরুষের ভালোবাসাটাকেও কাজে লাগায় নিপুণ ভাবে। কিছু হলেই ছেলে মেয়ে নিয়ে চলে যাওয়ার ভয় দেখায় কিংবা আইনের প্রশ্রয় তো আছেই।

--> নিজেদের মানুষ প্রমাণ করতে গিয়ে অনেক সময় নারীরাও অমানুষ হয়ে ওঠে। তাই অনায়াসে লেডিস কামরা থেকে একটা বাচ্চা ছেলেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে পারে। সমাজে নিজেদের অধিকারের প্রভাব ফেলতে গিয়ে কখন যে অপব্যবহার করে বসে তার হিসেব আর রাখেনা।

--> সব নারী যেমন এক নয় তেমনি সব পুরুষ ও এক নয়। যারা অপরাধমূলক কাজ করে তাদের কে শুধুই অপরাধী বলা হয়,নারী বা পুরুষ বলা হয় না। তাই সবসময় পুরুষ দের কে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোটা বন্ধ করা উচিত। ভালো মন্দ মিলিয়েই মানুষ।আমরা নারী দের সন্মান দিতে গিয়ে অনেক সময় অকারণে পুরুষদের অপমান করে বসি।

--> একটা মেয়ে সুইসাইড করলে আগে একটা ছেলেকে সন্দেহ করা হয়। হয়ত সে সম্পূর্ণ অন্য কারণেই এই পথ বেছে নিয়েছে তবুও সন্দেহের তীরটা কোন এক অদৃশ্য ছেলের দিকেই থাকে।আর যখন একটা ছেলে আত্মহত্যা করে তখন দোষ টা সম্পূর্ণ তার নিজেরই হয়। নিশ্চয়ই নেশা ভান করত নিশ্চয়ই খারাপ ছেলেদের পাল্লায় পড়েছিল বা হয়ত কোন খারাপ বা নিষিদ্ধ কোন কাজ করেছে তাই গা বাঁচাতে এই পথ বেছে নিয়েছে।

--> টানা দশ বছর মেয়েটিকে ভালোবেসেছে।ছেলেটি ব্রাহ্মণ, মেয়েটি সিডুলকাস্ট তবুও বাবা মা কে রাজি করিয়েছে ছেলেটি। দশ টা বছর মেয়েটিকে কখনো স্বামীর মত কখনো বাবার মত করে আগলে রেখেছে। কিন্তু একদিন ছেলেটি শুনল মেয়েটি তার থেকে মুক্তি চায়। অন্য কারো সাথে ভালো থাকতে চায়। ওর থেকেও নাকি ভালো কারো সন্ধান পেয়েছে।
দশ বছর সমস্ত সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আজ তার মন অন্য কোথাও পারি জমিয়েছে।
ভেতর থেকে ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে ছেলেটি।সবটুকু উজাড় করে দিয়েও তার হাতে শূন্য ছাড়া আর কিছুই নেই। অথচ মেয়েটি দিব্যি আছে। অন্য গাছ অন্য ফলের স্বাদ নিতে ব্যস্ত। ছেলেটি আর কি কোনদিন কাউকে ভালোবাসতে পারবে?

--> একটা ছেলেও স্বপ্ন দেখে একটা ছেলেও পাগলের মতো ভালবাসতে পারে। কারো বিপদে এগিয়ে যাওয়ার প্রবণতা মেয়েদের থেকে ছেলেদের অনেকাংশে বেশি। ছেলেরা যতটা ভালো বন্ধু হতে পারে মেয়ে রা তার এক ভাগও পারেনা।

--> পুরুষ মানেই ধর্ষক নয়। পুরুষ মানেই বাসে ট্রেনে বুকে পেটে হাত বোলানো নয়। পুরুষ মানেই আতঙ্ক নয়। পুরুষ মানে ভরসাস্থল। পুরুষ মানে বাবার ছায়া, ভালবাসার নিরাপদ আশ্রয়।

আজ উনিশে নভেম্বর পুরুষের দিন।
সকল পুরুষ দের জানাই পুরুষ দিবসের শুভেচ্ছা।
রচনাকাল : ১৯/১১/২০১৯
© কিশলয় এবং মনি রায় ঘোষ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 6  Canada : 22  China : 23  Europe : 6  France : 1  Germany : 5  Hungary : 4  India : 278  Ireland : 16  Mongolia : 1  
Russian Federat : 6  Saudi Arabia : 4  Sweden : 9  Ukraine : 32  United States : 455  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 6  Canada : 22  China : 23  Europe : 6  
France : 1  Germany : 5  Hungary : 4  India : 278  
Ireland : 16  Mongolia : 1  Russian Federat : 6  Saudi Arabia : 4  
Sweden : 9  Ukraine : 32  United States : 455  
লেখিকা পরিচিতি -
                          মনি রায় ঘোষ ৮ ই ফেব্রুয়ারি, বাংলাদেশের বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তারপরে, খুব ছোটবেলায় তাঁর পরিবার কোলকাতা পাড়ি দিয়ে এখন কোলকাতার সোদপুর নিবাসী।

খুব ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যের প্রতি তাঁর ভালবাসা আর সেই থেকেই লেখার জগতে পদার্পণ। বিভিন্ন পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তার জন্মস্থান বাংলাদেশ থেকেও তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তিনি কবিতা, প্রবন্ধ, ছোটগল্প এবং অনুগল্প লেখেন। এছাড়াও অনলাইন পত্র পত্রিকাতেও তার লেখা পাওয়া যায়। 
                          
  • ৯ম বর্ষ ৬ষ্ঠ সংখ্যা (১০২)

    ২০১৯ , নভেম্বর


© কিশলয় এবং মনি রায় ঘোষ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
শুভ আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস by Moni Roy Ghosh is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৫৩৮৮৯৩
fingerprintLogin account_circleSignup