যেদিন হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকে বাবা টা মরে গেল সেদিন ছোট্ট মিনু খুব কেদেঁছিল।ছোট হলেও বুঝতে পেরেছিল ওর বাবা আর কথা বলবেনা।অনেকবার ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছিল।কিন্তু নাহ।চিরতরে চুপ হয়ে গিয়েছিল ওর বাবা।মা টা তো সেই জন্মের সময়ই মরেছে।ছিল এই বাবা টা।সেও ওকে একা রেখে চলে গেল।বাবা মা বড্ড স্বার্থপর।একবারও ওর কথা ভাবল না।এখন কি হবে মেনুর?কার কাছে থাকবে?কে ওকে ঘুম পাড়িয়ে দেবে?সারাদিন রিক্সা চালিয়ে এসে বাপ বেটিতে একসাথে খেতে বসতো।তারপর মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিত।
বস্তির একজন মিনু কে সেদিন এক বড়লোক বাবুর বাড়িতে কাজে রেখে আসে।দশ বছরের ছোট্ট মিনু পরিস্থিতির চাপে পড়ে হঠাৎ করেই যেন অনেকটা বড় হয়ে গেলো।সারাদিন কাজ করত আর রাতে বাবার ছবি টা বুকে চেপে ধরে কাদঁতো।তারপর ঘুমিয়ে পড়ত।ওই বাড়ির বাচ্চা দুটো যখন পিঠে ব্যাগ নিয়ে স্কলে যেতো তখন মিনুর চোখ দুটো চিকচিক করত।বস্তির পেছনে একটা স্কুল আছে গরিবদের জন্য।ওখানেই ভর্তি করে দিয়েছিল মিনুকে।বাবা বলত,তোকে অনেক পড়াবো মিনু।কিরে পড়বি তো?মিনু ঘাড় নেড়ে বলত হ্যা বাবা পড়ব।আমি চাকরি করব তারপর তোমাকে আর রিক্সা চালাতে হবেনা।তোমার হাত গুলোতে কেমন ঘাঁ হয়ে গেছে।বলেই দুহাতে ফু দিয়ে দিতো।
আসার সময় বই গুলো নিয়ে এসেছিল কিন্তু পড়ার আর সময় হয়ে ওঠেনা।
এই বাড়ির গিন্নি মা খুব রাগী।উনিশ থেকে বিশ হলেই মিনুর পিঠ লাল করে দেয়।বাবা কোনদিন একটা টোকা ও মারেনি মিনুর গায়ে।আর সেই মিনু আজ মার খাচ্ছে দুবেলা করে।
তাতে কি হয়েছে ভাত ও তো খাচ্ছে দুবেলা।
যার মা নেই বাবা নেই তাকে আদর করে কেউ খাওয়ায় না।সেটা এতদিনে মিনু বুঝতে পেরেছে।সেদিন এই বাড়ির ছেলে মেয়ে দুটো কে গিন্নি মা নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছিল,মিনু হা করে তাকিয়ে ছিল সেদিকে,বাবা এরম করেই খাইয়ে দিত ওকে।
খাবারে লোভ দিচ্ছে সেই অভিযোগে সেদিন কি মার টাই না মারল মিনু কে।
সেদিন পাড়ার দোকানে কিছু খুচরো জিনিস আনতে গিয়েছিল মিনু,ওর স্কুলের দিদিমনির সাথে দেখা হলো হঠাৎই।
কিরে মিনু স্কুলে আসিস না কেন?
মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল,কি বলবে দিদিমনি কে?
দিদিমণি কে সেদিন কিছু না বললেও মিনু কে দেখে সে অনেকটাই আচঁ করতে পেরেছিল।তারপর মিনু কে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল।পিঠে মারের দাগ গুলো দেখে চোখের জল আটকে রাখতে পারেনি।শিশু শ্রম আইনত অপরাধ তবুও এই সমাজে শ্রমিকদের লাইনে শিশুদের সংখ্যা টাই বেশি।পুলিশের কাছে যেতে চেয়েছিলে মিনুর ওপরে হওয়া অত্যাচারের কথা জানাতে কিন্তু মিনু বাঁধা দিয়েছিল।দুঃসময়ে দুমুঠো ভাত দিয়েছিল ওরা সেটা ও ভুলবে কিকরে।
মিনু কে একটা হোমে পাঠিয়ে দিয়েছিল দিদিমনি।শিশু নিকেতন নামে সেই হোমে গিয়ে মিনু নিজের কাছে সেদিন প্রতিজ্ঞা করল,বড় হয়ে শিশু শ্রমের বিরুদ্ধে লড়াই করবে ও।অনাথ শিশুদের পাশে দাঁড়াবে।ওর মত কাউকে ও আর এরকম অমানুষিক অত্যাচারের শিকার হতে দেবেনা।
(শিশু শ্রমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান
ওদের স্বপ্ন গুলো কে সত্যি হতে সাহায্য করুন)
রচনাকাল : ৩১/৫/২০২০
© কিশলয় এবং মনি রায় ঘোষ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।