আমি ভীত। যথেষ্ট ভয়ে আছি। তবে এ কথা সত্যি যে এই ভয়টা হঠাৎ করে আজই সৃষ্টি হয়নি, বরং বহুদিন ধরে এই ভয়ের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণাগুলো নানান ঘটনার মধ্য দিয়ে জমতে জমতে আজ একটা ভেজানো তুলোর মতো কুঁচকে যাওয়ার অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এইমুহুর্তে আমার শরীর জল ঠান্ডা প্রায়, মাথায় নানারকমের দুশ্চিন্তা। বিশ্বাস করুন, সোশাল নেটওয়ার্ক এ ছড়িয়ে পড়া তরুণীর ছবিটি আমার সমস্ত খারাপ ভাবনার গতিকে তরান্বিত করে দিল। একটা সুন্দর প্রাণকে কয়েকটা মানসিক বিকারগ্রস্ত ভুখার দল নিজেদের পাশবিক শক্তি দিয়ে শেষ করে ফেলল। জানি, এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে নানান মুনির নানান মত আসবে, নানান ফিলোসফি দাঁড় করানো যায়। তবে মোদ্দা কথা হল আমি আমার গণতান্ত্রিক দেশে ভয় পাচ্ছি। আর ভয়ের চেয়েও বেশি অবাক হচ্ছি এইসব তথাকথিত রেপিস্ট দের দেখে। হুবহু আমার মতোই তারা। আমার মতোই কথা বলে, হাঁটতে পারে, খেতে পারে, ভাবতে পারে, বুঝতে পারে, গায়ে লোম আছে, একেবারে হোমো সেপিইন্স হতে গেলে যা যা গুণাবলী দরকার তাদের মধ্যে সব আছে। Anglia Ruskin University এর criminology department এর মধুমিতা পান্ডে নামে এক তরুণীর থিসিস পড়ছিলাম যেখানে সে ভারতের ১০০ জন রেপিস্ট এর ইন্টারভিউ নিয়েছে, তিহার থেকে শুরু করে বিহারের জেল পর্যন্ত সমস্ত জেলে যে সমস্ত আসামি ধর্ষণের অভিযোগে বন্দী আছে, তাদের সাক্ষাৎ নেওয়ার পর মধুরিমাও বেশ অবাক। তার কথায় "they are a part of our own society. They are not aliens who’ve been brought in from another world." তাদের সাথে কথা বলতে বলতে বেশ কয়েকবার সে ভুলেও গেছিল যে তারা আর দশজন মানুষের মতো নয়, তারা আসলে ধর্ষক। আমাকে এই কথাটাই চিন্তিত হতে বাধ্য করছে। তারাও যে আমাদের সমাজেরই অঙ্গ। তারাও যে আমাদের মতোই দেখতে। আমার এক মা আছে, বোনেরা আছে, আমার প্রেমিকারা আছে, আমার বান্ধবীরা আছে, আমার চেনা পরিচিত অপরিচিত বহু মহিলাই তো আছে। তারা চিনবে কি করে? আমার পাশের বাড়ির দাদা যার সাথে আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক, সেই আসলে নয় তো? কিম্বা পাড়ার কাকুটা? কিম্বা কলেজের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ফেরিওয়ালা? বিশ্বাস করুন, এক পর্নসাইটে ওই ধর্ষিতা তরুণীর নাম trending list এ দেখার পর থেকে আয়না তে নিজেকে দেখতেও ভয় হচ্ছে, আমিই নয়তো? আমার আমির মধ্যেই সেই ধর্ষক বাস করে না তো? এর নিবারণ জানা নেই। এর থেকে রক্ষার উপায় জানা নেই, এই অসুস্থতার ওষুধের নাম কোন ডাক্তারের জানা নেই। তবে এটুকু জানি মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে দেশে একটা বিপদ আসবে। আর তার আগেই একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করা খুব দরকার। এই গণতান্ত্রিক দেশ আমি চাইনি। এই দেশ আসলে হয়ে উঠছে নবারুণ বাবুর মৃত্যু উপত্যকা, তাঁর মতো করেই গলা খেঁকিয়ে আবার বলার সময় এসেছে, #এই_মৃত্যু_উপত্যকা_আমার_দেশ_নয়
যে শিক্ষক বুদ্ধিজীবী কবি ও কেরাণী
প্রকাশ্য পথে এই হত্যার প্রতিশোধ চায় না
আমি তাকে ঘৃণা করি-
এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না
এই জল্লাদের উল্লাসমঞ্চ আমার দেশ না
এই বিস্তীর্ণ শ্মশান আমার দেশ না
এই রক্তস্নাত কসাইখানা আমার দেশ না
রচনাকাল : ৩/১২/২০১৯
© কিশলয় এবং অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।