• ৯ম বর্ষ ৭ম সংখ্যা (১০৩)

    ২০১৯ , ডিসেম্বর



সাক্ষী রজনীগন্ধা
আনুমানিক পঠন সময় : ৪ মিনিট

লেখিকা : সুমিতা সরকার
দেশ : India , শহর : সোনারপুর

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , নভেম্বর
প্রকাশিত ১০ টি লেখনী ২২ টি দেশ ব্যাপী ৬৪৬০ জন পড়েছেন।
সুচিত্রা ভালবাসত ঋষিরাজকে, দুজনের দেখা হয়েছিল এক বিয়েবাড়িতে।তারপর থেকেই তাকে ভাল লেগে গিয়েছিল সুচিত্রার। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে জানাতে পারেনি ঋষিকে।অনেক ভেবে চিন্তে একদিন ঋষির সাথে দেখা করে সে।

ঋষিকে কথাটা জানাবার পরেও ঋষি সে ব্যপারে বিশেষ আগ্রহ দেখায় নি।

কিন্তু ততদিনে যে সুচিত্রা মনে মনে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। শরীর, মন সবকিছুই কল্পনায় ঋষিকে উৎসর্গ করে ফেলেছে সে!! কিন্তু ঋষি যে প্রকাশ বা উৎসাহ কিছুই বিশেষ দেখাচ্ছে না।

এম.এ ফাইনাল ইয়ার শেষ হয়ে গেছে সুচিত্রার, বাড়ি থেকে পাত্র দেখা হচ্ছে। বাবা মা দুজনেই একটু গোঁড়া প্রকৃতির। 
মাকে অনেক কষ্ট করে বলে কিছুটা রাজী করিয়েছিল সুচিত্রা। বাবাকে বলার আর ধৃষ্টতা হয়নি।

ঋষির বাড়িতে বাবা মা খুবই রক্ষনশীল, সে জানত বাবা মা কোনোদিনই তার পছন্দ মেনে নেবে না। তাই এ বিষয়ে সে বিশেষ আগ্রহ দেখায় নি।

এক বসন্তের বিকেলে ঋষি ব্যালকনিতে বসে আছে, হঠাৎই বিয়েবাড়িতে সুচিত্রার সেই মুখটা মনে পড়ে গেল। ঋষি বরাবরই একটু মেজাজী গম্ভীর প্রকৃতির। কিন্তু শরীরের কোন অংশ দিয়ে যে মনের মধ্যে ভালবাসা প্রবেশ করল, বুঝতেই পারল না সে। হঠাৎ করে এক দমকা হাওয়ায় যেন সব এদিক ওদিক করে দিল মন। এর নামই বোধ হয় বসন্তকাল। মনে পড়ে গেল কাজলে পূর্ণ দুটো দীঘল টানা চোখ, গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁটে গোলাপী লিপস্টিক, মুখে মুক্ত ঝরানো হাঁসি, পিঠের ওপরে লম্বা খোলা চুল ছড়ানো আর শরীরের ছন্দমালায় যে কোন পুরুষেরই সবকিছু এলোমেলো  হয়ে যাবার কথা। মনে মনে অনুভব করল সুচিত্রাকে তার জীবনে প্রয়োজন, তাকে ছাড়া ও আর থাকতে পারবে না। 

বাবা মায়ের ঐ একই মেয়ে সুচিত্রা। অত সুন্দরী দেখেই মা শখে নাম রেখেছিলেন সুচিত্রা। চিত্র শিল্পীর সুনিপুন হস্তে আঁকা যেন ছবি। ঈশ্বর সময় করে ছুটির দিনে বসে একটু একটু করে বানিয়েছিলেন ওকে। 

ঋষি মনে মনে ভাবল যে করেই হোক আজ সে জানাবেই তার মাকে, যে সুচিত্রাকে সে পছন্দ করে। কিন্তু মা কি মেনে নেবে তার প্রস্তাব?? 

মাকে ডেকে জানাল সব আস্তে আস্তে ঋষি, বাড়িতে না মানার যথেষ্ট কারন রয়েছে।  ছেলের বাড়ি মুখার্জি আর মেয়ের পদবী ঘোষ। জাত পাতের ব্যপারে বরাবরই ঋষির বাবা মা নাক উঁচু, সে কথা ঋষির অজানা নয়। মা সব শুনে বললেন বাবাকে তিনি জানাবেন তবে কিছু দিন সময় লাগবে।

বাবার তরফে উত্তর আসতে আসতে বেশ কিছু দিন দেরী হল। যেদিন ঋষি জানতে পারল মায়ের অনেক অনুরোধে বাবা রাজী হয়েছেন সেদিন তার খুশি আর দেখে কে? আনন্দে সারা শরীরের স্নায়ুকোষ গুলোর উত্তেজনা যেন দ্বিগুন মাত্রায় বেড়ে গিয়েছিল। সুচিত্রাকে আর তার কাছ থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবেনা। 

আর বিন্দুমাত্র দেরী করল না ঋষি। পরদিন সকালেই  স্টেশনে গিয়ে ট্রেনের টাইম টেবিল দেখল সে। ট্রেনটা আজ ঠিক টাইমের থেকে একটু দেরী করেই আসছে। যাই হোক শেষে ট্রেনে চাপল ঋষি। অপেক্ষা যেন আর সহ্য হচ্ছে না।

সুচিত্রার বাড়ির সামনে যেতেই দেখল বাড়িতে অনেক লোকজনের আনাগোনা। কিছুই বুঝতে পারল না সে যে বাড়িতে কি অনুষ্ঠান হচ্ছে। কারন বাড়ি সাজানো নেই সেভাবে, হয়ত ভাড়া বাড়িতেই সব ব্যবস্হা করা, এসব হাজারটা কথা ভাবতে ভাবতেই কাছে গিয়ে একজনকে ডেকে জিজ্ঞেস করতেই সে বলল সুচিত্রার আজ বিয়ে।

কথাটা শুনেই ঋষির মাথায় আর কাজ করছে না। কোনায় রাখা একটা চেয়ারে সে বসে পড়ল, মাথাটা ঘুরছে।
সুচিত্রা দূর থেকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে এসে একটা ঘরে ডেকে নিয়ে ঋষির  বুকে মাথা রেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল।
জড়িয়ে ধরে বলল আর কিছু দিন আগে আসতে পারলে না? আমার যে সবই শেষ হয়ে গেল। সুন্দর দুটো চোখে তখন অঝোর ধারায় জল পরিপূর্ণ, ঠোঁট কাঁপছে। ঋষি মূহুর্তের মধ্যে কি উত্তর দেবে ভেবে পেল না। বাইরে ভৈরবী রাগে গান ভেসে আসছে.......

 " রং দে চুনারিয়া, এ্যায়সি রং দে কে রং নাহি টুটে, ধোবিয়া ধোয়ে চাহে সারি উমরিয়া, রং দে চুনারিয়া "...........................!!!!

কি করে সেদিন বাড়ি পৌঁছাল ঋষি নিজেই জানে না। যথাসময়ে  অনিচ্ছা সত্বেও বিয়ে হয়ে গেল সুচিত্রার। শ্বশুরবাড়ি যাবার পর কালরাত্রি পেরিয়ে ক্রমে ক্রমে এল ফুলশয্যার মুহূর্ত। 

পাত্র চাটার্ড অ্যাকাউন্ট। বাবা মায়ের বড় ছেলে টাকার কোনো অভাব নেই। পাত্রী সুন্দরী দেখে একবাক্যে রাজি হয়েছিল স্বর্নাভ। দামী ফুলে মুড়ে সাজানো হয়েছে গোটা বাড়ি। ক্রমশ সেই অপেক্ষার মুহূর্ত ঘনিয়ে এল। সুচিত্রার কাছে এসে লাল চেলী সরিয়ে দুহাতে গাল ধরতেই সুচিত্রা এলিয়ে পড়ল বিছানায়। হাতে ধরা রয়েছে বিষের শিশি।

একটা সাদা পাতায় লেখা " আমার অসমাপ্ত জীবন কাহিনী আজ সমাপ্ত করলাম নিজের হাতে, ভাল থেকো তোমরা। সাদা রজনীগন্ধার সুমধুর গন্ধে ভাসছে গোটা ঘর।

পরদিন খবরের কাগজে খবরটা পড়ার পর ঋষির ঠিকানা হোলো বাড়ির ব্যালকনির সেই চেয়ারটা। যেখানে বসে একদিন অনুভব করেছিল যে সুচিত্রা কে সে কতটা ভালবেসে ফেলেছে। সুচিত্রা আর নেই শোনার খবরে সে এখন বাকশক্তি হারিয়েছে। মাথাও আর আগের মত কাজ করে না। চোখের দৃষ্টিতে শুধুই শূন্যতা। 

সেই দৃষ্টির ভাষায় একটাই জিজ্ঞাসা? সব চাওয়া কি পূর্ণতায় পরিনত হয়...??
রচনাকাল : ২২/১১/২০১৯
© কিশলয় এবং সুমিতা সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 1  Canada : 6  China : 24  Germany : 4  Hungary : 1  India : 210  Ireland : 51  Russian Federat : 1  Saudi Arabia : 6  Spain : 1  
Ukraine : 21  United States : 374  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 1  Canada : 6  China : 24  Germany : 4  
Hungary : 1  India : 210  Ireland : 51  Russian Federat : 1  
Saudi Arabia : 6  Spain : 1  Ukraine : 21  United States : 374  
  • ৯ম বর্ষ ৭ম সংখ্যা (১০৩)

    ২০১৯ , ডিসেম্বর


© কিশলয় এবং সুমিতা সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
সাক্ষী রজনীগন্ধা by Sumita Sarkar is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.
fingerprintLogin account_circleSignup