• ৯ম বর্ষ ৭ম সংখ্যা (১০৩)

    ২০১৯ , ডিসেম্বর



চাকা
আনুমানিক পঠন সময় : ৪ মিনিট

লেখিকা : শানিয়া ময়রা
দেশ : India , শহর : ডানকুনি

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , নভেম্বর
প্রকাশিত ৪ টি লেখনী ১৩ টি দেশ ব্যাপী ২২৫১ জন পড়েছেন।
"জন্ম হতে না হতেই,
কান ফুটো নাক ফুটো করার যন্ত্রনা!!!

কয়েক বছর অগ্রসর হতে না হতেই,
শারীরিক যন্ত্রনা যার ভ্যালিডিটি প্রায় বার্ধক্য পর্যন্ত..!

আরও কয়েক বছর যেতে না যেতেই,
পরিবার ছাড়ার যন্ত্রনা..!

রোজ রাতে,
মুড থাকুক বা না থাকুক শয্যার যন্ত্রনা..!

তার কয়েকবছর পরেই,
প্রসব যন্ত্রনা..!
( প্রথমেই ছেলে হল তো ভালো পর পর যদি মেয়ে হতে থাকে তাহলে ব্যাস,
ছেলে না হওয়া অবদি একই যন্ত্রনা সহ্য করো )

ছেলে-মেয়ে মানুষ করা,
পরে তাদের বড় করে তাদেরই কাছে পাওয়া যন্ত্রনা..!
জীবনে পাওয়া না পাওয়া
অপ্রাপ্তিগুলো না হয় বাদই দিলাম।

কাঁচা বয়স থেকে বুড়ো বয়েস অবদি যেখানে নারীর সহ্য ক্ষমতা, সেখানে ক্ষমতায় পুরুষ সিংহ হয় কি করে ?
আমি মনে করি, তলোয়ারের তুলনায় ঢালের ঘনত্ব বেশি, তাই শক্তির থেকেও সহ্যশক্তিটাই আসল যা অবিনশ্বর।"

লেখাটি একটি পুরুষের। একজন পুরুষ যদি নারীদের জন্য এই চিন্তাভাবনা গুলো রাখতে পারে তাহলে আমরা তাদের নিয়ে কেনো ভাববো না? 
আমরা বেশিরভাগ সময় নারী পুরুষকে নিয়ে হাস্যকর মিমস পড়তে বা শেয়ার করতে ব্যাস্ত থাকি। নারী পুরুষ একে অপরের পরিপূরক এটা আমরা জেনেও অনেক সময় মনে রাখিনা বা মানতে চাইনা।
কখনোও কি ভেবে দেখেছি যে সেই পুরুষগুলো মনের মধ্যে কতটা চেপে রেখে আমাদের জন্য কিছু করে?
ছোটো থেকেই একজন পুরুষকে শেখানো হয়, "ছেলেরা কাঁদে না"। কথাটা বড় হবার সাথে সাথে তাদের মনে এমন ভাবেই গেঁথে যায় যে তারা হাজার কষ্টেও কাঁদতে পারে না। চুপ থাকতে শিখে যায়। অনেক সময় চেপে রাখতে না পেরে যদিও বা চোখের জল বার করেও ফেলে তাকে শুনতে হয় "মেয়েলি"। কারণ কান্না বা চোখের জল আমাদের মেয়েদের একচেটিয়া অধিকার, ছেলেরা তো কাঁদে না।
কখনও কোনো পুরুষকে দেখেছো নিজের মনের ভিতরের কষ্ট টা সবাই কে বলতে? নিদেনপক্ষে খুব কাছের মানুষদের সাথে শেয়ার করতে? ছেলেরা সাধারণত শেয়ার করে না বা করতে পারে না। শেয়ার করলে  যে তারা "ন্যাকা" দের দলে পড়বে। কারণ আবারও পেট পাতলা তো মেয়েরাই হয়। ছেলেদের কোনো অধিকারই নেই মনের কষ্ট শেয়ার করার। তারা না পুরুষ।
বড় হবার সাথে সাথে তাদের কাঁধে হাজার টা দায়িত্ব এসে পড়ে। বাবা মা ভাই বোন সবার খাওয়া পড়ার দায়িত্ব। অনেক পুরুষই নিজের শখ, আহ্লাদ, স্বপ্ন গুলোকে অঙ্কুরেই বিনাশ করে কারণ স্বপ্ন দেখার সময় কোথায়? ভালো রেজাল্ট করে আগে কেরিয়ার গড়তে হবে। কারণ ছেলেদের যে পকেটমানির জন্য বাবার কাছে হাত পাতা মানায় না। বরং তাদেরই জমি টা শক্ত করতে হবে যাতে তাদের উপর দাঁড়িয়ে বাকিরা ঠিক ভাবে বাঁচতে পারে। বিবাহযোগ্য হয়ে সেই পুরুষই যদি কখনোও চাকুরীরতা বৌ খোঁজে তাহলে তো সোনায় সোহাগা। তাকে তখন এটা শুনতে হয় যে, "বৌ এর দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে চাইছে" অথবা "বৌ এর পয়সায় খাবার ধান্দা"। কখনোও আমরা এটা কেন ভাবিনা যে সংসার টা সুন্দর ভাবে টেনে নিয়ে যাবার জন্য তাদেরও পাশে একটা  support দরকার হতে পারে। এটা কেন ভাবতে পারি না যে দায়িত্ব টা ভাগাভাগি করে নিলে কারো উপরেই চাপটা বেশি পড়বেনা।
ছেলেরা কোনো কাজ করার আগে অনেক ভাবনা চিন্তা করে বা আশেপাশের সব বাধা গুলোকে সরানোর চেষ্টা করে। সেখানে কোনো বিবাহযোগ্যা মেয়ের বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য জোর করলে তার প্রেমিক যখন একটু অপেক্ষা করতে বলে, তখন সেই প্রেমিক "ভীতু", "দায়িত্ব নিতে ভয় পায়"। কেন তখন সেই প্রেমিকা বাবা মা এর কথায় বিয়ে না করে প্রেমিকের উপর ভরসা করে রুখে দাঁড়াতে পারে না?

হ্যাঁ, ব্যতিক্রম নিশ্চয়ই আছে। নারীদের অনেকেই প্রকৃত নারীর মতো সবদিক সুন্দর ভাবে সামলায়। তাদের জন্য আমার মন থেকে ভালোবাসা।
সব নারী যেমন খারাপ হয়না। সব পুরুষও খারাপ হয় না। আমার চারপাশে আমি এই রকম ভালো সত্যি পুরুষ অনেক দেখি। 

যে মানুষ গুলো নিজেদের শখ আল্হাদ সব বিসর্জন দিয়ে দিনরাত খেটে চলেছে আমাদের খুশি রাখার জন্য বা আমাদের স্বপ্ন পুরণের জন্য, সারাদিন কষ্ট করছে যাতে আমরা একটু সাচ্ছন্দ্যে বাঁচতে পারি, নিজেদের সমস্যা নিজেদের মধ্যেই রেখে নিজেদের দায়িত্ব পালন করে চলেছে যাতে আমাদের উপর মানসিক চাপ না পড়ে, আমরা কি পারি না তাদের কে একবার মন থেকে "SORRY"  বলতে, মন থেকে "THANK YOU" জানাতে? পারি না কি তাদের একটু appreciate করতে? পারিনা কি তাদের হাতে হাত রেখে বলতে, "চিন্তা কোরো না, সব ঠিক হবে"? পারিনা কি তাদের hug করতে যাতে তাদের ভিতরের কষ্ট টা একটু কম হয়? পারিনা কি তাদের পাশে বসে সব শুনতে এবং তাদের বলতে ," কে বলেছে ছেলেরা কাঁদেনা, কাঁদে তো"?
পারিনা কি তাদের ভালো থাকার দায়িত্ব নিতে।
আমার চারপাশের সেই সব পুরুষদের আমি কুর্ণিশ জানাই এবং তাদের জন্য অনেক শ্রদ্ধা।
আমি মন থেকে বলি, "তাদের জন্য আমি গর্বিত, ঢাল তলোয়ার দুটোর ঘনত্বই সমান, একে অপরকে ছাড়া অসম্পুর্ণ। বরং ঢাল না থাকলেও তলোয়ার চলতে পারে, কিন্তু তলোয়ার না থাকলে ঢাল অচল।"
পুরুষ নারী একটি গাড়ির দুটি চাকা। জীবনের গাড়ি টা চালাতে গেলে দুটো চাকার অবদানই অনস্বীকার্য।
রচনাকাল : ৪/১২/২০১৯
© কিশলয় এবং শানিয়া ময়রা কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 3  China : 38  France : 2  Germany : 4  India : 204  Ireland : 11  Russian Federat : 3  Saudi Arabia : 4  Ukraine : 18  United States : 302  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 3  China : 38  France : 2  Germany : 4  
India : 204  Ireland : 11  Russian Federat : 3  Saudi Arabia : 4  
Ukraine : 18  United States : 302  
  • ৯ম বর্ষ ৭ম সংখ্যা (১০৩)

    ২০১৯ , ডিসেম্বর


© কিশলয় এবং শানিয়া ময়রা কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
চাকা by Shaniya Mayra is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৪৮৪৭৮৩
fingerprintLogin account_circleSignup