• ৯ম বর্ষ ৭ম সংখ্যা (১০৩)

    ২০১৯ , ডিসেম্বর



ভালোবাসা
আনুমানিক পঠন সময় : ৬ মিনিট

লেখিকা : শানিয়া ময়রা
দেশ : India , শহর : ডানকুনি

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , নভেম্বর
প্রকাশিত ৪ টি লেখনী ১৩ টি দেশ ব্যাপী ২২৫০ জন পড়েছেন।
সমুদ্র বড্ড প্রিয় তিন্নির। ওর প্রথম ভালোবাসা। ছোট্টো থেকেই সমুদ্রের টানে বার বার দীঘা পুরী ঘুরেছে। যত বড় হয়েছে সমুদ্র প্রীতি বেড়েই চলেছে। ওর অনেক দিনের ইচ্ছা ও বিয়ের পর হানিমুনে কোনো sea এলাকাতেই যাবে। 
এরকমই একটু বড় হবার পর ভাইজাগ গিয়েছিলো একবার। তখন তিন্নি কলেজে 2nd year.. চুটিয়ে প্রেম করছে রায়ানের সাথে। তো একদিন বিকেলবেলা রায়ানের সাথে ফোনে একটু কথা বলবে বলে ও একাই বেরিয়ে পড়েছিলো হোটেলের আশেপাশের এলাকা গুলো ঘুরে দেখবার জন্য। ঘুরতে ঘুরতে সামনেই রামকৃষ্ণ beach এ চলে গেছিলো। ফোনে কথা বলতে বলতেই খেয়াল করছিলো প্রায় ওরই বয়সি একটি ছেলে সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে পা ভিজিয়ে, আর যখনই ঢেউটা আসছে দৌড়ে সরে যাচ্ছে পিছনে। ও অনেকক্ষণ ছেলেটাকে লক্ষ্য করার পর কথা শেষ করে তার দিকে এগিয়ে গেলো। সামনে যেতে সে ভালো করে ছেলেটার মুখের দিকে তাকাতে বুঝতে পারলো যে তার মুখটা ভীষণ মায়ায় জড়ানো। ও নিজে থেকেই হাত বাড়ালো আলাপচারিতার জন্য, "হাই, আমি তিন্নি"। ছেলেটি কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে শেষে হাত মেলালো, বললো, "আমি ঋজু"। তারপর একটু একটু করে কথা শুরু হলো। গল্প করতে করতে সন্ধ্যে হয়ে যেতে তিন্নি, "আজ উঠি" বলার পর ও খেয়াল করলো ঋজু যেন চাইছে না গল্প টা শেষ হোক। তিন্নিরও বেশ ভালোলাগছিলো কথা বলতে। ও হঠাৎ ঋজুর থেকে ওর ফোন নাম্বার টা চেয়ে বসলো। তারপর নাম্বার নিয়ে ও ওখান থেকে হোটেলে ফিরে এলো। 
হোটেলে ফেরার পর থেকেই মাঝে মাঝেই ওর ঋজুর মুখ টা মনে পড়ছিলো আর ওর কিছু কথা,  'ঋজুর সমুদ্রে খুব ভয় কিন্তু ও শুধু ওর বোন রাশি আর বাবা মা এর জন্য ওদের সাথে এসেছে'। তিন্নি একটু অবাকও হলো এই ভেবে যে সমুদ্রে আবার কেউ ভয় পায় নাকি। এইসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই ফোন টা বেজে উঠলো, দেখলো ঋজুর ফোন। 
এরপর যে কটা দিন ওরা ছিলো ওখানে,  রোজ বিকালে ও আর ঋজু সমুদ্রেপ পাড়ে বসে গল্প করতো। দুজনের বন্ধুত্ব টা আস্তে আস্তে বাড়তে লাগলো। তিন্নির বেশ একটা মানসিক শান্তি হতো ঋজুর সাথে কথা বলে। ঋজুর শান্ত চোখ, ঠান্ডা শান্ত স্বভাব ক্রমশই তিন্নির মনে জায়গা করে নিতে লাগলো, হয়তো ও নিজে একটু প্রাণবন্ত, চঞ্চল বলে। 
কয়েকদিন পর ওরা ফিরে এলেও ওদের বন্ধুত্ব টা রয়েই গেলো। মাঝে মাঝেই ওরা এদিক ওদিক দেখা করা, ঘোরা, একসাথে সময় কাটাতে লাগলো। তিন্নি বুঝলো বেশ কিছু ক্ষেত্রে ঋজুর সাথে ওর স্বভাবে বা পছন্দের অমিল হলেও মতের মিল খুব একটা হয় না, আর এদিকে রায়ানের সাথে দুরত্ব তিন্নির বাড়তে লাগলো। ঋজুর সাথে বন্ধুত্বের পরই তিন্নি বুঝতে পারছে যে রায়ান অত্যন্ত পসেসিভ, সন্দেহপ্রবণ। কয়েকবার কথা কাটাকাটির সময় রায়ান ওর গায়ে হাত ও তুলতে গেছে। ও পুরোপুরি সম্পর্ক টা নষ্ট না করলেও মানসিক টান টা আর অনুভব করছিলো না।
এইভাবে প্রায় মাস ছয়েক কাটার পর একদিন ও জানতে পারলো যে রায়ান হঠাৎ চাকরী পেয়ে ব্যাঙ্গালোর চলে যাচ্ছে। এবং ওর ফ্যামিলি ওর জন্য একটি মেয়েও দেখেছে আর তাকে রায়ানের পছন্দও হয়েছে। তিন্নি দ্বিতীয় বার না ভেবে রায়ানের সাথে সম্পর্কের সেখানেই ইতি টানলো। মনের মধ্যে একটা অদ্ভুত শান্তি অনুভব করলো যেন একটা পাথর নেমে গেল মন থেকে। 
ও আর দেরী না করেই ঠিক করে ফেললো যে ঋজুকে মনের কথা টা বলতেই হবে যেটা ও বেশ কয়েকদিন ধরে টের পাচ্ছে। সেইমতো ঋজুকে ফোন করে পরের দিনই দেখা করার সময় ঠিক করে ফেললো। সারারাত ঘুমই হলো না উত্তেজনায়। নির্দ্দিষ্ট সময়ে তৈরী হয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেখলো ঋজু আগে থেকেই সেখানে অপেক্ষা করছে। ও কথা শুরু করতেই হঠাৎ ঋজু ওকে চমকে দিয়ে বলে ওঠে, " আমি তোকে ভালোবাসি তিন্নি, will u marry me??". তিন্নি কি বলবে বুঝতে না পেরে বললো, " আমি রাজি, কিন্তু বাড়িতে কথা বলতে হবে"। তারপর সেই সন্ধ্যে টা বেশ ভালো কাটিয়ে তিন্নি বাড়িতে ফিরে মা কে সব কথা বলে বললো, "মা, ঋজু একদিন বাড়িতে আসতে চায় ওর বাবা মা কে নিয়ে"। ওর মা রাজি হতেই একটি শুভদিন দেখে ঋজু ওর বাড়িতে এলো এবং কথাবার্তা পাকা হয়ে বিয়ের দিনও ঠিক হয়ে গেলো। তারপর কেনাকাটা, ঘোরা বেড়ানো, আড্ডা, খুনসুটি, প্রেমের মধ্যে দিয়ে প্রায় 10 মাস কেটে গেলো। ওদের বিয়েও হয়ে গেলো। 
এরপর এলো হানিমুন। আগে থেকেই তিন্নির ইচ্ছা মতো সমুদ্রই ঠিক করা ছিলো। তিন্নি মনে মনে ঠিকই করে রেখেছিলো যে ও ঋজুর সমুদ্রে ভয় টা কাটাবেই, ঋজুকে জলে নামাবেই এবার। 
সেই মতো ওরা হানিমুনে গেলো সেই ভাইজাগ যেখানে ওরা প্রথম একে অপরকে দেখেছিলো। 
প্রথম দিন বেশ রাত করে পৌঁছানোর ফলে সেই দিনটা রেষ্ট নিয়েই কেটে গেলো। পরের দিন বিকালে ওরা রামকৃষ্ণ beach  এ গেলো। তিন্নি ঋজুর হাত ধরে গল্প করতে করতে  সমুদ্রের পাড় বরাবর হাটতে লাগলো, আর যতবার ঢেউ আসছে ও ঋজুর হাতটা আরও শক্ত করে ধরে নিচ্ছে। ঋজুর ভয় টা কাটাতেই হবে। পরের দিন ওরা বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান গুলো দেখে হোটেল এ ফেরার আগে আবার এলো সমুদ্রের পাড়ে। আজ আর হাটলো না। জলের দিকে বেশ খানিকটা এগিয়ে গিয়ে ঋজুর হাতটা শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো। ঋজুর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো ভয় টা একটু একটু কাটিয়ে উঠে ঋজু বেশ উপভোগ করছে ঢেউ টা। ও ঠিক করে নিলো পরের দিন স্নান করতে নামবে। সেই মতো পরের দিন সকালে ওরা স্নান করতে নামলো। ঋজুও বেশ মজা করলো। হোটেলে ফিরে বললোও, "এখন আর ভয় করছে না, শুধু শুধুই ভয় পাচ্ছিলাম"। শুনে তিন্নি হেসেই কুটোপাটি। তারপর দুপুরের খাওয়া সেরে একটা ছোট্টো ঘুম। বিকালে ঘুম ভেঙে বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে তিন্নি দেখলো ওর মাথা টা খুব ভার হয়ে আছে আর একটু একটু জ্বর জ্বরও লাগছে। এদিকে ঋজু রেডি beach এ যাবার জন্য। তিন্নির অবস্থা দেখে তাড়াতাড়ি ঋজু ওকে ওষুধ খাওয়াতে যেতেই তিন্নি বললো, " আমি ওষুধ খেয়ে নিচ্ছি, তুই বরং আজ একটু একাই ঘুরে আয়"। ঋজু যেতে না চাইলেও ও একপ্রকার জোর করেই পাঠালো। তারপর ও একটা pain killer খেয়ে আবার একটু ঘুমানোর চেষ্টা করলো। কখন ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতেই পারেনি। ঘুম ভাঙতেই উঠে ঘর অন্ধকার দেখে তাড়াতাড়ি আলো জ্বালাতেই দেখলো রাত 8 টা বাজে এবং ঋজু ঘরে নেই। প্রথমে ভাবলো হয়তো খাবার আনতে গেছে কিন্তু তারপরেই মনে হলো তাহলে তো আলো জ্বেলে দিয়ে যেতো। কথাটা মাথায় আসতে ভয়ে বুকটা কেঁপে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে ফোন করতেই দেখলো ফোন বন্ধ। কি করবে ও এখন, কিছুই তো বুঝতে পারছে না। রিসেপশনে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলো  ঋজু সেই যে বেরিয়েছে এখনও ফেরেনি। তাহলে কি? একটা ঠান্ডা স্রোত শিড়দাঁড়া বেয়ে বয়ে যেতেই ও সব কথা রিসেপশনিস্ট কে জানালো এবং বললো তাড়াতাড়ি ঋজুর খোঁজ লাগাতে এবং নিজে এক কর্মচারী কে নিয়ে স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে গেলো। সারারাত খোঁজা খুজির পরেও যখন খোঁজ পাওয়া গেলো না তিন্নি মনে মনে প্রমাদ গুনলো। বাড়িতে ফোন করে কেঁদে উঠলো। পরের দিনই পুলিশি তৎপরতায় সমুদ্রে ডুবুরি নামানো হলো এবং তল্লাশি চললো। বেলার দিকে তিন্নির বাবা মা ও পৌঁছে গেলো। প্রায় বিকালের দিকে ঋজুর দেহ খুঁজে পাওয়া গেলো সমুদ্রে। ঘুরতে এসে তলিয়ে গিয়েছিলো। 

ওর জীবনের সমস্ত রং কেড়ে নিয়েছে ওর সবচেয়ে প্রিয় সমুদ্র, ওর প্রথম ভালোবাসা। তারপর থেকে আর সমুদ্র ভালোলাগে না তিন্নির।

সমাপ্ত।
রচনাকাল : ৪/১২/২০১৯
© কিশলয় এবং শানিয়া ময়রা কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 1  Canada : 6  China : 11  France : 2  Germany : 3  India : 228  Ireland : 15  Russian Federat : 2  Saudi Arabia : 6  Ukraine : 9  
United States : 328  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 1  Canada : 6  China : 11  France : 2  
Germany : 3  India : 228  Ireland : 15  Russian Federat : 2  
Saudi Arabia : 6  Ukraine : 9  United States : 328  
  • ৯ম বর্ষ ৭ম সংখ্যা (১০৩)

    ২০১৯ , ডিসেম্বর


© কিশলয় এবং শানিয়া ময়রা কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
ভালোবাসা by Shaniya Mayra is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৪৮৪৫৩৪
fingerprintLogin account_circleSignup