"কাকিমা, দিঘি কৈগো?"
"কে ? ও রিন্টু! দিঘি? ঐতো ওপরে।"
"ওহঃ"
"ওরে দাঁড়া, দোলের দিন এলি একটা মিষ্টি খেয়ে যা আগে।"
আর দাঁড়া।। সিঁড়ি বেয়ে রিন্টু ততক্ষনে ছুট লাগিয়েছে ওপরে। দিঘি জানলার সামনে দাঁড়িয়ে।মুখখানায় একরাশ সন্ধ্যে নেমে আসা অন্ধকার। দুচোখে টলটল করছে নদী। ওপর থেকে বাচ্ছাগুলোর রং খেলা দেখছে।
"কিরে রং খেলবিনা?"
খানিকটা চমকে ওঠে দিঘি "ওহঃ তুই? কখন এলি?"
"চল নিচে চল"
"না রিন্টু আমি রং খেলবোনা।"
রিন্টুও নাছোড়বান্দা। দিঘির হাত ধরে হিড়হিড় করে টানতে থাকে। পাল্টা হ্যাঁচকা টান মারে দিঘিও। হাত ছড়িয়ে নেয়। খানিকটা রাগে, দুঃখে চোখ মুখ লাল।টুপটাপ মুক্ত ঝরে পড়বে মনে হচ্ছে। অথচ মুখে কথা সরছে না।
আসলে গত বছর এই দোলের দিনই বিয়ে হয় ওর আর সোহমের। মাস খানেক যেতে না যেতেই শুরু হয় অকথ্য অত্যাচার। রাতে মদ খেয়ে এসে মারধোর, গালিগালাজ। ভদ্রলোকের মুখোশধারী মানুষরূপী এক জন্তুর সাথে বিয়ে হয়েছিল ওর। তারপর অনেক লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, অত্যাচার আর সহ্য করতে না পেরে ফিরে এসেছে কদিন আগে।
রিন্টু খানিকটা কাছে সরে আসে দিঘির। চোখে চোখ। হাতের লাল অবিরটা দিয়ে ওর ফর্সা গাল দুটো রাঙিয়ে দেয়।
"আরেকবার শুরু করতে পারবিনা দিঘি? আমার সাথে?"
এবার সত্যিই ঝরে পড়লো মুক্তোগুলো। সেই ছোট্টবেলার পাগল বন্ধুটা কবে যে এত বড় হয়ে গেছে বিশ্বাস হয়না। হঠাৎ ওর নিজের সাদাকালো জীবন টা ভারী রঙীন মনে হতে লাগে দিঘির।।
"সিঁথি রাঙাতে তো সবাই পারে। জীবন রাঙাতে পারে কজন?".....
রচনাকাল : ৯/৩/২০২০
© কিশলয় এবং বৈশাখী রায় কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।