• ৯ম বর্ষ ১০ম সংখ্যা (১০৬)

    ২০২০ , মার্চ



দাগ
আনুমানিক পঠন সময় : ৬ মিনিট

লেখিকা : ঝিমলি ব্যানার্জি
দেশ : India , শহর : দুর্গাপুর

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , জানুয়ারী
প্রকাশিত ৩৩ টি লেখনী ৩৫ টি দেশ ব্যাপী ২১২২৫ জন পড়েছেন।
মেঘনা আজ সকাল থেকে ভীষণ ব্যস্ত শ্বশুর বাড়ির লোক আসবে , সকাল থেকেই রান্না ঘরে , কাজের শেষ নেই | পাশের ঘর থেকে হেমলতা দেবী মেঘনার শাশুড়ি জোরে জোরে বলতে শুরু করেছে বৌমা তাড়াতাড়ি হাত চালিয়ে করবে ,তুমি তো ..আমার বোন ভগ্নিপতি অনেকদিন পর আসছে , দেখো যেন ত্রুটি নাহয় | মেঘনা শীল নোড়ায় মশলা বাটছিলো ...শুনে বললো , কোনোদিন কি এমন হয়েছে আপনার আত্মীয় না খেয়ে আপনার বাড়ি থেকে চলে গেছে ? দেখেছো বৌমা তুমি চুপ থাকতে জানো না যেন ...উত্তর দিতেই হবে | আগে তো চুপই থাকতাম মা ..মেঘনা আর কিছু বলার মতো উত্তর দিতে যাবে অনিমেষ দৌড়ে এলো রান্নাঘরে , চুপ করো না মেঘ ...নাইবা তর্ক করলে ...মেঘনা চুপ করে গেলো … নিজের কাজে মনোনিবেশ করলো |
**
মেঘনা আর অনিমেষের বিয়ে হয়েছে দশ বছর হলো | মেঘনা যখন সতেরো বছর বয়েস তখন অনিমেষের সাথে বিয়ে হয় বাবা মার পছন্দে | অনিমেষ তখন সাতাশ বছরের , দশ বছরের ছোট বড়ো মেঘনা অনিমেষ | যখন প্রথম ফুলসজ্জা হয় মেঘনা ভয়ে বিছানার একপাশে বসে ছিল আজ ও মনে পড়ে মেঘনার ...একটা ছোট্ট মেয়ে সদ্য যৌবনে পা দিয়েছে ...যার দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই  , তার সাথে আজ কি ঘটতে চলেছে সে বিষয়ে সে যেন অন্ধকারের যাত্রী , মনে ভয় আর শরীরে যৌবনের শিহরণ নিয়ে শুরু হয় তার দাম্পত্য জীবন | 
****
এইভাবেই দশ বছর পার করেছে মেঘনা এখন তার বয়েস সাতাশ | এখন সে যুবতী | এক কন্যার জননী |
অনেকটাই পরিণত | ছোট্ট থেকে সংসারে এসে আদর কম অনাদর বেশি পেয়েছে যা তার কিন্তু পাওয়ার কথা ছিল না কারণ সে হেমলতা দেবী আর সুকুমার বাবুর একটিমাত্র ছেলের বৌ |  হেমলতা দেবী জাদরেল শাশুড়ি , সংসারে তারই লাঠি ঘুরবে এটাই চেয়েছেন আর পেয়েছেন স্বামী আর ছেলের দৌলতে |  লাঠি ঘোরানোর চক্করে অনেক অত্যাচার করেছেন বৌমার  ওপরে | 
****
প্রতিদিন রাতে নিয়মিত পা টিপে তারপর মেঘনা অনিমেষের কাছে যাবে এইটাই রুটিন সে যত কাজই থাক না কেন | আজ ও তার ব্যাতিক্রম হয় নি ...শাশুড়ির বোন ভগ্নিপতি চলে যাবার পর সব গুছিয়ে যখন নিজের ঘরে যাবে অমনি হেমলতা দেবী ডাকলেন , বৌমা চললে নাকি ছেলের কাছে ..যাওয়ার আগে পা টিপে দিয়ে যাও ..অগত্যা মেঘনা শাশুড়ির সেবা করে যখন নিজের  ঘরে ঢুকছে  , অনিমেষ জেগে রয়েছে  বিছানায় অপেক্ষা করছে , দেখে একটুও আনন্দ হলো না মেঘনার , কারণ মেঘনা ক্লান্ত , তার মন চাইছে না এখন অনিমেষ এর কাছে মেলে ধরতে তার শরীর কে , কিন্তু কে শুনবে !  মেঘনার ক্লান্তির থেকে অনিমেষ এর শারীরিক খিদে অনেক বেশি , মেঘনার ক্লান্ত শরীর অনিমেষের দানবীয় ইচ্ছে সব যেন মিলেমিশে মেঘনার চোখের জলে রূপ নেয় | 
****
মেঘনার দশটা বছর এইভাবেই ইচ্ছে অনিচ্ছে তে কেটেছে | অনিমেষ এমনি ভালো ছেলে সাংসারিক দায়িত্ব পালন করে কিন্তু মেঘনার চাওয়া পাওয়া এর হিসাব সে রাখে না |  কখনো মন ভালো থাকলে হয়তো মেঘনা কে নিয়ে বাইরে গেলো , ঘুরে এলো সেও খুব  কালে ভদ্রে | মেঘনা তার ছোট্ট মেয়ে ..সংসার এসব নিয়েই ব্যস্ত থাকে ...ভালো লাগা মন্দ লাগা সেদিনই জলাঞ্জলি দিয়েছে যেদিন অগ্নিসাক্ষী করে বিয়ে হয়েছে | 
***
মেঘনা বসে আছে বারান্দায় হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো ...হ্যালো , মেঘনা শুভ বিবাহ বার্ষিকী ...প্রণাম  নিও  মা  আমাদের , বাবাকে ও আমাদের প্রণাম জানিও , হ্যাঁ তোরাও ভালো থাকিস | হুম মা আমি ভালো আছি , একদম চিন্তা করবে না | মেঘনার মা সুলতা দেবী মেয়ের গলার আওয়াজে  সেইভাবে স্বতঃস্ফূর্ততা না পেলেও কিছু বুঝতে দিলেন না ...খবর নিয়ে ফোন রেখে দিলেন | সংসারের প্রতি মোহো মায়া সব যেন কোথায় হারিয়ে গেছে , প্রথম প্রথম  বিবাহবার্ষিকী নিয়ে উন্মাদনা ছিল এখন আর নেই , অনেক আশা করে থাকতো অনিমেষ তার জন্য গিফট আনবে , একটা দিন অফিস ছুটি নেবে , সময় কাটবে শুধুই দুজনের ,  সব ভাবনা বৃথা ! প্রতিবার মেঘনা মনে করাতো তাদের আজ বিবাহবার্ষিকী , মনে করাতে করাতে আজ সে ক্লান্ত , তার আনন্দ চাওয়া পাওয়া তে যেন পলি পড়েছে , সে নিরুত্তাপ থাকে এখন | 
আজ অনিমেষ যেমন সময়ে ফেরে অফিস থেকে তেমনই ফিরলো ,  মেঘনা চা দাও তো ...বড্ডো মাথা ধরেছে , মেঘনা  চা  নিয়ে আর সাথে বাম নিয়ে হাজির হলো অনিমেষের সামনে | অনিমেষ চা তে চুমুক  দিতে যাবে  ফোন বেজে উঠলো ...ফোনের ওপার থেকে ছোটবেলার বন্ধু রঞ্জু বলে উঠলো হ্যাপি এনিভার্সারি অনিমেষ | অনিমেষ বলে উঠলো এই রে ...আজ বিবাহবার্ষিকী আমাদের !  দেখেছিস ভুলেই গেছি ...মেঘ আজকাল মনে করায় না আমাকে | মেঘনা যেন শুনেও শুনলো না , সে নিজের ঘরে চলে গেলো | চা খেয়ে বন্ধুর সাথে কথা বলা শেষ করে  অনিমেষ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো মেঘনাকে ...শুভ বিবাহ বার্ষিকী মেঘ , উত্তরে মেঘনা বললো তোমাকেও শুভেচ্ছা জানাই ..ভালো থেকো ..ছাড়ো আমায় , পর্দা সরানো আছে , কে কি ভাববে আবার |  অনিমেষ একটু মনোক্ষুন্ন হয়ে বলে উঠলো তোমার মধ্যে প্রেম বলে বোধহয় কিছু নেই | 
সারাদিন শুধু রান্না করা ছাড়া কিছুই বোঝো না , আগে মেঘনার খারাপ লাগতো শুনে এখন আর লাগে না , নিজের ইচ্ছে অনিচ্ছে ভালো লাগা ..সব যেন কোথায় হারিয়ে ফেলেছে , সে নিজেও জানে না ! মুচকি হেসে উত্তর দিলো মেঘনা তবু ভালো তোমার মধ্যে প্রেম বেঁচে আছে ...আমি তো ভাবলাম ..কি ভাবলে মেঘ না ..কিছু না|  যাও রেডি হও মেঘ আজ বাইরে খাবো , শুনে মেঘনা বললো , ঘড়ি র দিকে একবার দেখো , কটা বাজে এখন ? 
ও ও  তাই তো ...এখন গেলে আর খাবার পাওয়া যাবে না তাহলে ঘরেই কিছু রেঁধে নাও | মেঘনা চটজলদি জবাব দিলো , সব রান্না হয়ে গেছে , আমি জানি যাওয়া হবে না তাই আমি ঘরেই রান্না করেছি | যদিও তুমি বললে আমি রান্না ছাড়া কিছু বুঝি না ...কি করবো বলো ...এইটাই জীবন আমার | 
টেবিল এ সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া সেরে যে যার মতো উঠে চলে গেলো ...প্রতিদিনের মতো সব কাজ সেরে শাশুড়ির সেবা করে ঘরে ঢুকতে যাবে এমন সময় অনিমেষ চেঁচিয়ে বলে উঠলো , আজকে একটু তাড়াতাড়ি আসতে পারলে না , আজকের দিনে ও তোমাকে একটু আগে বিছানায় পেলাম না ..তোমার কি মনে হয় না কিছু মেঘ ? মেঘনা নিজের দিকের জায়গা পরিষ্কার করে শুতে যাবে অমনি অনিমেষ যেন ক্ষুধার্থের মতো ঝাঁপিয়ে পড়লো ...বিছানায় পড়ে রইলো মেঘনার নিথর দেহ | নানা প্রশ্ন মেঘনার মনকে সেই মুহূর্তে ক্ষত বিক্ষত করতে লাগলো আমি কি শুধুই অনিমেষের শয্যাসঙ্গিনী ? অনিমেষ আমার মন কে নয় আমার শরীর কে ভালোবাসে , কিন্তু আমি কি চাই অনিমেষ কি কোনোদিন জানতে চায় ? আমি চাই একজন ভালো বন্ধু ...আমি চাই একজন ভালোবাসার মানুষ যে আমার শরীর নয় মন কে ভালোবাসবে , যে স্ত্রী কে যন্ত্র নয় মানুষ ভাববে , তাকে হৃদয় দিয়ে অনুভব করবে |  মেঘনার অন্তর চিৎকার করে যেন বলতে চাইছে ...আমি তো শারীরিক আর মানসিক ভাবে ধর্ষিতা নারী , আমার মনের ক্ষত এর দাগ যে রয়ে যাবে আমৃত্যু অনিমেষ | 
রচনাকাল : ৩/৩/২০২০
© কিশলয় এবং ঝিমলি ব্যানার্জি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 14  China : 22  Germany : 3  India : 284  Ireland : 81  Russian Federat : 10  Saudi Arabia : 1  Sweden : 9  Ukraine : 8  United Kingdom : 1  
United States : 457  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 14  China : 22  Germany : 3  India : 284  
Ireland : 81  Russian Federat : 10  Saudi Arabia : 1  Sweden : 9  
Ukraine : 8  United Kingdom : 1  United States : 457  
লেখিকা পরিচিতি -
                          ঝিমলি ব্যানার্জী ২রা জুলাই দুর্গাপুরে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি একজন গৃহবধূ হওয়ার সাথে সাথে গৃহশিক্ষকতার সাথে যুক্ত। সেইসবের পাশাপাশি তিনি সাহিত্য চর্চাতেও সমান আগ্রহী। কবিতা লেখা তাঁর ভীষণ প্রিয়, তবে তিনি ছোটগল্পও লেখেন। বিভিন্ন ছোট ছোট পত্র-পত্রিকায় তিনি লেখালিখি করেন। তাছাড়া তিনি নানারকম অনলাইন পত্র-পত্রিকাতেও লেখেন। লেখালিখির পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের সাথে যুক্ত। 
                          
  • ৯ম বর্ষ ১০ম সংখ্যা (১০৬)

    ২০২০ , মার্চ


© কিশলয় এবং ঝিমলি ব্যানার্জি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
দাগ by Jhimli Banerjee is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৫৩৮৮৭২
fingerprintLogin account_circleSignup