• ৯ম বর্ষ ১০ম সংখ্যা (১০৬)

    ২০২০ , মার্চ



অসমাপ্ত স্বপ্ন
আনুমানিক পঠন সময় : ৪ মিনিট

লেখিকা : সুমিতা গাঙ্গুলি
দেশ : India , শহর : দূর্গাপুর

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , জানুয়ারী
প্রকাশিত ১৩ টি লেখনী ২৫ টি দেশ ব্যাপী ৮২২১ জন পড়েছেন।
রমেন রায় ও তার স্ত্রী সোমা আর তাদের একমাত্র কন্যা রুপসা এই তিনজনের সুখী পরিবার। তাদের সুখেই দিন কাটে। রমেনবাবু হাই স্কুলের হেড মাস্টার আর ওই স্কুলের ছাত্রী হল রুপসা। রুপসা ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখে সে বড় সাইনটিস্ট হবে। তাই পড়াশুনোয় কোনদিন কোন ফাঁকি থাকে না। পড়াশুনার সাথে গান, নাচ আবৃতি সব দিক থেকে রমেনবাবু মেয়েকে পারদর্শী করে তুলেছেন। আর রুপসা দেখতেও খুব সুন্দরী। রুপসা ছোট থেকেই কোনোদিন স্কুলে প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হয় নি। তাই রমেনবাবু নিজের মেয়েকে নিয়ে খুব ই গর্ব বোধ করেন। যখন স্কুলে তাঁর মেয়েকে নিয়ে আলোচনা হয় তখন রমেনবাবুর গর্ব আর সন্মানে বুকটা ভরে ওঠে। তবে রুপসার একটাই বদ অভ্যাস যেখানে অন্যায় দেখে তার প্রতিবাদ করতে ছাড়ে না। তবে রুপসা দিনরাত স্বপ্ন দেখে ভালো রেজাল্ট করবে প্রথম হবে, তারপর বড় সাইনটিস্ট হয়ে অনেক নতুন জিনিস আবিস্কার করবে। দেশে বিদেশে ওর নাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে। খবরের কাগজে টিভির পর্দায় ওকে দেখাবে ওর ইনটারভিউ নেবে। এই স্বপ্ন ওর চারিদিকে ঘুরে বেড়ায়। তাই মেয়েকে নিয়ে রমেনবাবুর আর সোমাদেবীর কোন চিন্তাই নেই। রমেনবাবু আর সোমাদেবী খুব ভয় পান তাদের মেয়ে রুপসার সব ব্যাপারে প্রতিবাদ করা নিয়ে।তাঁরা বোঝান মেয়েকে দিনকাল ভালো নয় তাই সব জায়গায় প্রতিবাদ না করলেই নয় কি? কিন্তু রুপসা এক জেদ অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহ্য করে দুজনে সমান দোষী তাই প্রতিবাদ না করলে মুখ বুঝে সহ্য করা রুপসার পক্ষে অসম্ভব। পাড়ার মোড়ে যতো বাজে ছেলে আজে সবাই ওখানে বসে আড্ডা দেয়, মেয়েদের দেখলে অশ্লীল ভাষা বলে।এমনি এক দিনে রুপসা পাড়ার এক বৌদির সাথে যাচ্ছিল টিউশন পড়তে। দুজনে গল্প করতে করতে যেতেই বৌদিকে লক্ষ‍্য করে ছেলেগুলো অনেক অশ্লীল ভাষা বলে এই শুনে রুপসা নিজেকে সামলাতে পারছিল না কিছু বলতে যাবে এমন সময় বৌদি ওকে থামিয়ে দেয় বলে এটা রোজকার ব্যাপার তাই আর গায়ে মাখে না, তাছাড়া ছেলেগুলো খুব বাজে এমন কাজ নেই যেটা  ওরা করতে পারে না। পরের দিন ও সেই এক ই ঘটনা ঘটে রুপসা ওর বান্ধবীর সাথে স্কুল থেকে ফিরছিল এমন সময় ছেলেগুলো ওদের সাথেও অসভ্য আচরন করে সেটা দেখে রুপসা আর চুপ থাকতে না পেরে একটা ছেলের গালে চড় মারে, এতে ছেলেগুলো ক্ষিপ্ত হয়ে যায় আর ওদের জামা কাপড় ছিঁড়ে দেয় এই দেখে লোকজন সবাই জড়ো হয়ে যায় ভয়ে ছেলেগুলো তখনকার মতো পালায়। রুপসার জামা কাপড়ের অবস্থা দেখে ওর বাবা মা ভয়ে আঁতকে ওঠেন। পড়ে সব শুনে রমেনবাবু সিদ্ধান্ত নেন পুলিশকে সব জানাবেন । পরের দিন রমেনবাবু আর রুপসা দুজনে পুলিশের কাছে ডায়রী করেন পুলিশ এসে ছেলেগুলোকে তুলে নিয়ে যায় এবং কোটে কেস ওঠে ।কিছুদিন পর ছেলেগুলো জামিনে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে। এসব খবর রমেনবাবু ও তার পরিবারের কেউ মাথা ঘামান না ভাবেন ছেলেগুলো হয়তো নিজেদের শুধরে নিয়েছে কিন্তু না ছেলেগুলো মনে মনে একটা যে বড় বিপদ ঘটাতে চলেছে সেটা ভ্রূনাক্ষরেও বুঝতে পারেন নি।একদিন রুপসা বান্ধবীর বাড়ি থেকে পড়ার নোটস নিতে যায় আর গল্প করতে করতে দেরী হয়ে যায়। এতেই ঘটে যায় বিপদ। হায়না ক্ষুদার্থর দল অপেক্ষা করে বসে ছিল শিকারের আশায়। শীতের রাত তাই রাস্তা জনমানবহীন সেই সুযোগটা কাজে লাগায় হায়নার দল। রুপসা কে একা পেয়ে চারজন মিলে মুখে কাপড় বেঁধে নেমে যায় একটা ফুলের নিচে তারপর চলে একে একে গণধর্ষন এতে রুপসা নিজেকে বাঁচাবার চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু শরীর আর সাথ দেয় না নিঃস্তেজ হয়ে পড়ে । এতোও হায়নার দল ক্ষান্ত হয় নি শেষে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দেয়। শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে করতে রুপসার শরীর নিঃস্তেজ হয়ে যায় চীরকালের মতো। মেয়ে এতো রাত হয়ে গেল ঘরে না ফেরায় রমেনবাবু ও তার স্ত্রী অস্থির হয়ে পড়েন। শেষে বান্ধবীর বাড়ি ফোন করে জানতে পারেন অনেক আগেই বেড়িয়ে গেছে। এবার রমেনবাবু  আকুল আর্তনাদ করে মেয়েকে ঠেকে চলেন ।কোথাও মেয়েকে না পেয়ে শেষে পুলিশের দ্বারস্থ হন। পুলিশ সারা রাত খুঁজেও কোথাও রুপসার সন্ধান করে উঠতে পারে নি। সকালে কিছু লোক ওই ফুলের নিচে দিয়ে যাবার সময় দেখে কিছু কুকুর কিছু ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে। কাছে যেতেই তারা দেখতে পায় আধপোড়া একটা মানুষের শরীর। পুলিশের খবর দিলে পুলিশ রমেনবাবুকে ও তার স্ত্রীকে ফুলের নিচে আসতে বলেন। রমেনবাবু রুপসার হাতের চুড়ি আর আধপোড়া জামা দেখে বুঝতে পারেন তাদের আদরের একমাত্র কন্যা আর নেই। পুলিশ রুপসার দেহ নিয়ে যায় ময়নাতদন্তের জন্য। আজ রুপসার পরিচিতি পেল শবদেহ নাম্বার ১২। রুপসা চেয়েছিল খবরের কাগজে, টিভির পর্দায় ওর নাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ুক। রুপসার স্বপ্ন স্বপ্ন ই রয়ে গেল বাস্তবে পরিণত হল না।সব জায়গায় রুপসার নাম ছড়িয়ে পড়লো তবে বিখ্যাত সাইনটিস্ট হিসাবে নয় এক মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর হয়ে।
রচনাকাল : ১৫/৩/২০২০
© কিশলয় এবং সুমিতা গাঙ্গুলি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 8  China : 11  France : 2  Germany : 5  India : 243  Ireland : 38  Russian Federat : 1  Saudi Arabia : 2  Thailand : 1  Ukraine : 3  
United States : 273  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 8  China : 11  France : 2  Germany : 5  
India : 243  Ireland : 38  Russian Federat : 1  Saudi Arabia : 2  
Thailand : 1  Ukraine : 3  United States : 273  
লেখিকা পরিচিতি -
                          সুমিতা গাঙ্গুলি ১৯৭৭ সালের ১৫ই নভেম্বর দূর্গাপুরে জন্মগ্ৰহন করেন। 
তিনি একজন গৃহবধূ। 
ছোটোবেলা থেকেই তিনি সাহিত্য চর্চা নিয়ে খুব ই আগ্ৰহী। ছোট গল্প এবং কবিতা লেখা তাঁর খুব প্রিয় বিষয়। তিনি বাস্তবকে নিয়ে লিখতে ভালোবাসেন। বিভিন্ন পত্র- পত্রিকায়  এবং অনলাইন পত্র-পত্রিকাতেও তিনি লেখেন। এর পাশে তিনি সমাজ সেবামূলক কাজের সাথেও যুক্ত আছেন। 
                          
  • ৯ম বর্ষ ১০ম সংখ্যা (১০৬)

    ২০২০ , মার্চ


© কিশলয় এবং সুমিতা গাঙ্গুলি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
অসমাপ্ত স্বপ্ন by Sumita Ganguly is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.
fingerprintLogin account_circleSignup