• ৯ম বর্ষ ১০ম সংখ্যা (১০৬)

    ২০২০ , মার্চ



প্রায়শ্চিত্ত
আনুমানিক পঠন সময় : ৮ মিনিট

লেখিকা : সায়ন্তী সাহা
দেশ : India , শহর : সিঙ্গুর

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , ডিসেম্বর
প্রকাশিত ২৫ টি লেখনী ২৭ টি দেশ ব্যাপী ১৫৫৩৭ জন পড়েছেন।
নামকরা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের বয়েস হোস্টেল। হোস্টেলের একটি রুমের দেওয়ালে তাজা রক্ত দিয়ে বড়ো বড়ো করে লেখা-"আই কুইট"। দেওয়াল থেকে এখনও রক্ত গড়িয়ে পড়ছে নীচেরদিকে। সুইসাইড নোট লেখাও প্রায় কমপ্লিট। তাতে স্পষ্টভাবে বলা আছে-

শ্রদ্ধেয় মা-বাবা,
 পড়াশোনার অতিরিক্ত চাপ নিতে না পেরে আজ আমি আত্মহত্যার পথ বেছে নিলাম। কোনোদিনই আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চাইনি। তবে তোমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আমি কোনোদিনই প্রতিবাদ করতে পারিনি। বরাবরই আমি প্রাণীবিদ্যা নিয়ে পড়তে চেয়েছিলাম। কিন্তু তোমাদের কে যে সেকথা জানাব,ভয়ে তা আর হয়ে ওঠেনি। যদি তোমরা আমার ওপর রেগে যাও, আমায় মারধর করো তখন? তখন কি হবে আমার? আমার রেজাল্ট এবারেও জঘন্য হয়েছে। জানি বাবা আমার রেজাল্ট দেখলে পরে আমায় খুব বকবে, হয়ত মারতেও পারে। আসলে ইঞ্জিনিয়ারিংটা ঠিক আমার জন্য না। নিজের জীবনটা পশু-পাখিদের সাথেই কাটাব ভেবেছিলাম। কিন্তু তা আর হল কই। শুনেছি মা-বাবারা নাকি সন্তানদের মনের সব কথা বুঝতে পারেন। তাদের কাছে কোনো লুকোছাপা চলেনা। আচ্ছা তোমরা কি আমার মনের ইচ্ছাটা বুঝতে পেরেছিলে? হয়ত পারোনি। পারোনি বলছি কেনো,আমার মনে হয় তোমরা চেষ্টাও করোনি। যাক কি আর করা যাবে। এমনিতেই অনেক দেরী হয়ে গেছে। আর তো কিছুই বদলানো সম্ভব নয়। তাই আমি স্বেচ্ছায় পৃথিবী থেকে চলে যাচ্ছি। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। তোমরা সবাই ভালো থেকো।"
                     ইতি,
              তোমাদের বাবান

নিজের লেখা সুইসাইড নোটটা আগাগোড়া একবার পড়ে নিল অর্ণব। নাহ্ কোথাও কোনো ভুল নেই।সবই ঠিকঠাক আছে।দরজার ছিটকিনিটাও ভালো করে আটকে দিয়েছে সে। সিলিং ফ্যান থেকে দড়িটাও ঠিকঠাকভাবে লাগানো হয়ে গেছে। এবার ঝুলে পরতে পারলেই হল। তারপর অপার শান্তি। কেউ আর বিরক্ত করবে না, থাকবেনা কোনো প্রতিযোগিতা, থাকবেনা কোনো লোকদেখানো ইঁদুর দৌড়।
 
 টুলের ওপর উঠে গলায় ফাঁসটা লাগাতে যাবে,ঠিক এমনসময়ই দরজা ঠেলে ঢুকল একজন বলিষ্ঠ যুবক। বয়স আন্দাজ বাইশ-তেইশ। ফর্সা,সুঠাম চেহারা। বজ্রকন্ঠে চেঁচিয়ে উঠল আগন্তুক,
-"এই কি করছিস তুই।থাম বলছি,পাগল হলি নাকি?"

হকচকিয়ে যায় অর্ণব।দরজা তো সে ঠিক করেই বন্ধ করেছিল।তবে এই ছেলেটা দরজা দিয়ে ঢুকলো কি করে? আমতা আমতা করে সে জিজ্ঞেস করল
-"কে তুমি? ঘরের মধ্যে ঢুকলে কি করে?"
ততক্ষণে আগন্তুক ছেলেটি অর্ণবকে টুল থেকে নামিয়ে বিছানায় বসিয়েছে। বলল, "আমি প্রভাত,তোর সিনিয়র। আমি কিভাবে ঘরে এলাম সেটা ম্যাটার করে না, তুই এখন কি করছিলি সেটা বল? ইশশ! হাতটা কতোটা কেটে গেছে। দাঁড়া হাতটা আগে ব্যান্ডেজ করে দিই। First aid boxটা কোথায় রেখেছিস বল?"

অর্ণব মাথা নামিয়ে বলে-"ওই তো টেবিলের নীচে রাখা আছে। আমি আসলে সুইসাইড করতে যাচ্ছিলাম।" 

-"কেন? কি এমন আহামরি হয়েছে তোমার জীবনে যে এত বড়ো একটা সিদ্ধান্ত তুমি নিয়ে নিলে।"

-"আমার রেজাল্ট একেবারে জঘন্য হয়েছে। বাবা খুব বকবে। তাই...."

-"ওহ্! রেজাল্ট খারাপ হয়েছে বলে ভাবলি মরেই যাই,তাহলেই সব প্রবলেম সল্ভ হয়ে যাবে। ওরে গর্দভ ভালো রেজাল্ট করতে হলে পড়াশোনাটাও ঠিক করে করতে হয়। পড়াশোনা না করে আড্ডা মারলে কি মুখ দেখে রেজাল্ট ভালো হবে?"

-"আমি ইঞ্জিনিয়ারিং-এর চাপ আর নিতে পারছিনা দাদা। আমি প্রাণীবিদ্যা নিয়ে পড়তে চেয়েছিলাম। বাবাই জোর করে আমায় এখানে ভর্তি করে দিল।"

-"তা বাবাকে তুই বলেছিলি, যে তুই জ্যুলজি নিয়ে পড়তে চাস?"

-"না! বলা হয়ে ওঠেনি। বাবাকে বললে বাবা খুব বকত আমায়।"

-"বাবাকে না জানিয়েই তুই ধরে নিলি তুই কাকুকে সব বললে তোকে কাকু কি কি বলবে? আজব ছেলে তো তুই!"

-"কেনো? ওনারাও তো বাবা-মা,কই ওনারা তো কখনো জানতে চাননি আমি কি চাই? মায়েরা তো সন্তানের মনের সব কথা বুঝতে পারে, তবে আমার মা কেনো বুঝতে পারেননি? মনের সব কথা জানানোর দায় কি একা আমারই?"

-"আরে বোকা এটা কি সত্যযুগ নাকি?যে মা-বাবারা মুখ দেখে সব মনের কথা বুঝে যাবে!নাকি তোর বাবা-মা সাধু-সন্ন্যাসী।তারা কিছু বলেনি কারণ তুই কখনো তাদের কোনো কথার বিরোধিতা করিসনি।ওনারা যা বলেছেন তুই তাতেই হ্যাঁ করে এসেছিস,এমনকি নিজের ভালোলাগাটাও ওনাদের কোনোদিন খুলে জানাসনি।তাই তো ওনারা ভেবেছেন তুই এখানে ভালো আছিস।ইঞ্জিনিয়ারিং ভালো না লাগে জ্যুলজি নিয়ে পড়।খামোখা মরতে যাবি কেন?"

-"দাদা দেখো তুমি কি সুন্দর বুঝে গেলে,কিন্তু আমি জানি বাবা-মা কিছুতেই বুঝবেনা আমার মনের কথা,ওরা জবরদস্তি আবার আমায় এখানেই পাঠাবে।"

-"শোন তুই কালই বাড়ি যা।সরাসরি মা-বাবার সাথে গিয়ে কথা বল,এটাও বলবি যে তুই সুইসাইড করতে গিয়েছিলিস।"

-"তুমি পাগল নাকি দাদা?বাবা জানলে পরে আমাকে চাপগে লাল করে দেবে।"

-"সেটাই তোকে করা উচিত!নিজেকে কি মনে করিস তুই?কালই বাড়ি যাবি আর আমায় যা যা বললি বাবাকেও সব কথা বুঝিয়ে বলবি বুঝলি।আসলে কি বলত আমরা মা-বাবাকে বন্ধু নয়,বাঘ-ভাল্লুক মনে করি।ওরে ওনাদের থেকে বড়ো শুভাকাঙ্খী আর আমাদের জীবনে কেউ নেই রে,কেউ নেই।যেদিন ওনাদের ছায়া মাথার ওপর থাকবেনা সেদিন মা-বাবা কি জিনিস ভালো করে বুঝবি।চল শুতে চল,আমি তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিই।"

প্রভাতের কথা মতো অর্ণব ঘুমিয়ে পড়ল আর প্রভাত ওর মাথায় বিলি কেটে দিতে লাগল।প্রভাতদার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল অর্ণব।

পরেরদিন সকালে ঘুম ভেঙে অর্ণব দেখল প্রভাতদা ঘরে নেই।"দাদার হয়ত কোনো ক্লাস আছে"- মনে মনে ভেবে নিল অর্ণব।তড়িঘড়ি ফ্রেশ হয়ে নিল সে।তারপর মানিব্যাগ আর ফোনটা পকেটে ভরে রওনা হল বাড়ির দিকে।

সকালবেলাতে নমিতাদেবী বড্ড বেশীই ব্যস্ত থাকেন।সকালের চা-জলখাবার-টিফিন-ভাত-তরকারি সব একা হাতে সামলে তিনি আর তার স্বামী রওনা দেন স্কুলে।দুজনেই তারা স্কুলের শিক্ষক।

ছেলেটা এখন বাড়ি নেই তাই।নাহলে ব্যস্ততা আরও বেশী থাকে।ছেলেটা তার বড়ো মুখচোরা।কিছুতেই মনের কথা ভাগ করে নেয় না মা-বাবার সাথে।তিনি চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু বারেবারে বিফল হয়েছেন।
এবারে জন্মদিনে ছেলে একটা ল্যাপটপ বায়না করেছে।তাই স্বামী-স্ত্রী টাকা জমাচ্ছেন ছেলেকে চমকে দেবেন বলে।তাতে যদি ছেলে একটু খুশি হয়।

হঠাৎ কলিংবেলের শব্দে তার ভাবনায় ছেদ পরল।দরজা খুলে দেখলেন অর্ণব।অবাক হন নমিতাদেবী।ছেলের কি তবে শরীর খারাপ করল নাকি?মাকে দেখেই অর্ণব বলে উঠল,
-"ঘরে চলো মা তোমাদের সাথে আমার কিছু কথা আছে।"
 
ততক্ষণে অর্ণবের বাবাও বসার ঘরে চলে এসেছেন।কোনো ভূমিকা ছাড়াই অর্ণব বলতে শুরু করল,
-"কাল আমার রেজাল্ট বেরিয়েছে বাবা।এবারে আরও খারাপ গ্রেড হয়েছে।মাত্র 5।আমি ইঞ্জিনিয়ারিং-এর চাপ আর নিতে পারছিনা বাবা।আমার ভালো লাগেনা এসব।আমি জ্যুলজি নিয়ে পড়তে চেয়েছিলাম।কিন্তু তোমাদের ভয়ে আমি এতদিন কিছু বলতে পারিনি।তোমাদের কাছে অামার ইচ্ছের তো কোনো দামই নেই।তাও তোমাদের মুখ চেয়ে আমি এতদিন চেষ্টা করেছি।কিন্তু বিশ্বাস করো কিচ্ছু হচ্ছে না।বরং আমি আরো ফ্রাস্টেটেড হয়ে পরছি।কাল তো আমি সুইসাইডও করতে গিয়েছিলাম।প্রভাতদা যদি না থাকত আমি হয়ত মরেই যেতাম।"এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে থামল অর্ণব। হঠাৎ ধপ্ করে একটা শব্দ হলো আর অর্ণব চমকে উঠে দেখল তার বাবা চেয়ারে বসে পরেছে।অর্ণব ছুটে গেল বাবার কাছে।যে বাবার চোখে অর্ণব কোনোদিন জল দেখিনি সেই বাবাই আজ অঝোরে কাঁদছেন।ছেলের দিকে তাকিয়ে তিনি কাঁদতে কাঁদতেই বললেন,

-"ওরে আমরা কি তোর শত্রু নাকি রে।আমরা তোর কাছে এতটাই পর হয়ে গেছি?তোর ভালো হবে ভেবে আমরা এতকিছু করলাম আর তুই কিনা বলছিস তোর ইচ্ছের মর্যাদা আমরা দিয়নি।কোনোদিন বলেছিস বাবাকে যে তোর কি ভালো লাগে।এতটাই বড়ো হয়ে গেছিস যে  নিজে নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলি যে আত্মহত্যা করবি।তুই ছাড়া আমাদের কে আছে বল দেখি?তুই চলে গেলে আমাদের কি হত?সারাজীবন আমরা কি নিয়ে বাঁচতাম বাবান!তোর সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য আমরা সারাজীবন রক্তজল করে অর্থ উপার্জন করে গেছি,আর তুই কিনা......"শেষ করতে পারেন না বিকাশবাবু।

নমিতাদেবীও এতক্ষণ ফু্ঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছেন।অর্ণবও মা-বাবাকে কাঁদতে দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলনা।সেও বাবার কোলে মুখ গুঁজে কেঁদে ফেলল।

কিছুক্ষণ পর বিকাশবাবু বললেন,
-"তা তোর কি নিয়ে পড়ার ইচ্ছা বল?"
-"বাবা আমি জ্যুলজি নিয়ে পড়তে চাই।সারাজীবন পশু-পাখিদের নিয়েই কাটাতে চাই।"
-"তোমার মতোন বাঁদর-গর্দভের ওসব নিয়েই পড়া উচিত।"-হাসতে হাসতে বলেন বিকাশবাবু।
তারপর বললেন-"একটা কাজ কর কলেজের ব্যাপারটা তুই সামলে নে আর এবারেই  কলেজগুলোতে ফর্ম ফিলাপ কর।আশা করি হায়ার সেকেন্ডারিতে তোর যা নাম্বার আছে তুই একটা না একটা কলেজে ঠিক চান্স পেয়ে যাবি।তবে আমার মাথা ছুঁয়ে তোকে একটা প্রতিজ্ঞা করতে হবে।"
-"কি বাবা!"
-"আত্মহত্যার কথা তুই আর কোনোদিন ভুলেও মাথায় আনবি না।কথা দে আমায়.."
-"কথা দিলাম বাবা"

সেদিনই কলেজে গিয়ে সব কিছু মিটিয়ে নিল অর্ণব।তারপর এক প্যাকেট মিষ্টি কিনে ছুটল প্রভাতদার কাছে।কিন্তু কোনো ক্লাসেই খুঁজে পেলনা তাকে।হোস্টেলেও কেউ খোঁজ দিতে পারলনা প্রভাতের।মনমরা হয়ে বাড়ি ফিরে এল অর্ণব।

রাতেরবেলা শুয়ে শুয়ে এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখল সে।দেখল প্রভাতদা তাকে বলছে,
-আমায় আর খুঁজিস না অর্ণব।আমায় যে তুই আর কোথাও খুঁজে পাবিনা।বহুবছর আগে ওই হস্টেলেই আমিও সুইসাইড করেছিলাম।জানিস বরাবরই আমার বাংলা নিয়ে পড়ার খুব ইচ্ছে ছিল।কিন্তু আমিও তোর মতো বাবাকে সাহস করে বলে উঠতে পারিনি।এদিকে চাপও নিতে পারছিলাম না।একদিন তাই ঝুলে পরলাম সিলিং ফ্যান থেকে।ভাবলাম এবার বোধহয় শান্তি পাবো;কিন্তু তা আর পেলাম কই?নিজের চোখে নিজের পার্থিব শরীরটাকে পুড়তে দেখলাম।তারপর বিদেহী আত্মা হয়ে রয়ে গেলাম পৃথিবীর বুকে।
 
জানিস আমার মা টা না আমার মৃত্যুর আঘাতটা ঠিকমতো কাটিয়ে উঠতে পারেননি।মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন।জানিস মানুষটা আজও বিশ্বাস করে আমি বেঁচে আছি।রোজ আমার ফটোটাকে স্নান করায়,তারপর আঁচল দিয়ে ফটোটা মুছিয়ে দিয়ে যত্ন করে থালায় খাবার সাজিয়ে আমার ফটোয় খাইয়ে দেয়।রাতেরবেলা ফটোটাকে বুকে জরিয়ে গান গেয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।

যে বাবাকে কোনোদিন কাঁদতে দেখিনি সেই বাবাইএখন রোজদিন আমার ফটোটা জড়িয়ে ধরে সবার অলক্ষ্যে কাঁদে।নিজেকে সর্বদা দোষারোপ করে যে আমার মৃত্যুর জন্য নাকি বাবা নিজে দায়ী।কিন্তু আমি তো জানি আমার মৃত্যুর জন্য কেবল আমি দায়ী।যদি আমি সেদিন বাবাকে বন্ধু ভেবে সবটা বলতাম তাহলে হয়ত আমার পরিবারটা এভাবে ধ্বংস হয়ে যেতনা।আমি নিজে হাতে আমার পরিবারটাকে ছারখার করে দিলাম।

যে মা তিলেতিলে নিজের রক্ত দিয়ে আমায় দশ মাস দশ দিন গর্ভে আশ্রয় দিল তাকে আমি একরাশ হতাশা আর ক্ষত ছাড়া কিচ্ছু দিতে পারিনি।যে বাবা ওভারটাইম করে আমার শখ-আহ্লাদ মিটিয়েছে তাকে আমি আজীবন আত্মগ্লানি আর অনুশোচনা ছাড়া কিছু দিতে পারিনি।তাই হয়ত আজও বিদেহী হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি।তাই যখনই দেখি কেউ আত্মহত্যা করতে চলেছে তখনই আমি তাকে আটকে দিই।নিজের দোষে এক মায়ের কোল খালি করেছি,তাই যথাসাধ্য চেষ্টা করি যাতে অন্যমায়ের কোলটা খালি না হয়।তাতে করে যদি আমার পাপের একটু হলেও প্রায়শ্চিত্ত হয়।তুই ভালো থাকিস,আর মা-বাবাকে সবসময় ভালো রাখিস।"

ধরফরিয়ে বিছানায় উঠে বসল অর্ণব।তারপর ছুটল মা-বাবার ঘরের দিকে।দেখল কত নিশ্চিন্ত হয়ে মা বাবা ঘুমিয়ে আছেন।গলার কাছের দলাপাকানো কান্নাটা গিলে নিয়ে অর্ণব বললো,
-"মা আমায় তোমাদের কাছে ছোটোবেলার মতো একটু শুতে দেবে?"
হাসতে হাসতে নমিতাদেবী বললেন,-"একা শুতে ভয় লাগছে?আয় চলে আয়,মাথায় তোর হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।"
মায়ের বুকে মাথা রেখে অর্ণব মনে মনে বলে-"ধন্যবাদ প্রভাতদা,ভাগ্যিস তুমি ছিলে।নাহলে মারাত্মক একটা ভুল করতে যাচ্ছিলাম আমি।মা-বাবাকে আমি আর কষ্ট দেবো না।প্রমিস।তুমি মিলিয়ে নিয়ো।খালি তোমায় যদি শেষবারের মতো একবার দেখতে পেতাম।"

ঘরের কোণে প্রভাতের বিদেহী আত্মা মিলিয়ে যেতে যেতে অস্ফুট বলে উঠল-"গুড বাই অর্ণব।খুব  ভালো থাকিস আর মা-বাবাকে ভালো রাখিস।"
রচনাকাল : ২৬/১/২০২০
© কিশলয় এবং সায়ন্তী সাহা কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 10  China : 43  Europe : 1  France : 4  Germany : 7  India : 294  Ireland : 57  Russian Federat : 15  Saudi Arabia : 6  Sweden : 21  
Ukraine : 13  United Kingdom : 7  United States : 450  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 10  China : 43  Europe : 1  France : 4  
Germany : 7  India : 294  Ireland : 57  Russian Federat : 15  
Saudi Arabia : 6  Sweden : 21  Ukraine : 13  United Kingdom : 7  
United States : 450  
  • ৯ম বর্ষ ১০ম সংখ্যা (১০৬)

    ২০২০ , মার্চ


© কিশলয় এবং সায়ন্তী সাহা কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
প্রায়শ্চিত্ত by Sayanti Saha is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৬৭৩০৫৩
fingerprintLogin account_circleSignup