"জানিস, আজকে ওকে বাজারে দেখলাম।" সিগারেটের ধোঁয়া আকাশে উড়িয়ে একটু উদাসভাবেই কথা গুলো বলছিল রঞ্জন। বন্ধুর কথা শুনে চোখ কপালে তুলে ভ্রু কুঁচকে বিরক্তি প্রকাশ করে ওঠে নীল।
- উফ! কলকাতায় চাকরি করতে গিয়েও এই রিমঝিমের ভূত তোর মাথা থেকে গেল না?
- জানিস ওর হাতে বাজারের ব্যাগটা বেশ ভারী ছিল মনে হলো। কেমন ছেলে বিয়ে করলো মেয়েটাকে বাজার করতে হয়!
দীর্ঘনিঃস্বাস ছেড়ে আবার সিগারেটে টান দেয় রঞ্জন। এখন সে কলকাতার আই.টি সেক্টরে চাকরি করে কিন্তু কাজের চাপে ছুটির দিনগুলো ও আর আসা হয় না বালুরঘাটে। অনেকদিন পরে এসেছে নিজের বাড়িতে।তাই ছোটবেলার বন্ধুর সাথে পাড়ার মোড়ে আড্ডাটা আজ বেশ জমে উঠেছে।
- আচ্ছা আমার মধ্যে কি ছিল না বল তো নীল? সেই কোচিন থেকে ওকে পছন্দ করতাম। ও লেখাপড়ায় ভালো আর বেশ গম্ভীর প্রকৃতির মেয়ে ছিল তাই তো আমিও বলতে সাহস পেতাম না।
- ওই তোর ঘুরে ফিরে সেই এক কথা। প্রায় একবছর হতে চললো রিমঝিম আর সজল দার বিয়ে হয়ে গেছে। ছাড় না ভাই!আর তুইও তো এখন মৌমিতার সাথে ভালোই আছিস।
-হম, ভালো আছি। কিন্তু এখনো ভাবি আমার মধ্যে কি নেই যা সজল দার মধ্যে আছে? আমাকে কেন না বলতে রিমঝিমের এক মুহুর্ত ও লাগেনি?
-সেটা ওর ব্যাপার। অনেক আগে থেকেই তো ওদের সম্পর্ক ছিল।
-আচ্ছা, সজল দার ইলেক্ট্রিকের দোকানটা চলে নাকি রিমঝিম এর স্কুলের মাইনেটা আত্মসাৎ করে নেয়?
-এত আমি জানি না রে। তবে সজল দার পার্সোনালিটি নেই। সেইদিন ওর দোকানের সামনে থেকে যাচ্ছিলাম। সে কি হাসাহাসি এক কাস্টমারের সাথে।
-পার্সোনালিটি কি করে হবে? ওর কথা শুনেছিস কোনোদিন? একটা আস্ত কমেডিয়ান বা জোকার ছাড়া কিছুই মনে হয়না। তারমধ্যে আবার জর্দা পান....
হঠাৎই ফোনটা বেজে ওঠে রঞ্জনের। মৌমিতা ফোন করেছে। রঞ্জনের কপাল মুহূর্তে কুঁচকে গেল।
-এই রাত 9.30 টায় তুমি বাড়ি ঢুকলে?.... না না এইভাবে রোজ দেরি করা যাবে না.... নাহ এত বাহানা দিও না প্লিজ....তাহলে চাকরি ছেড়ে দাও.... শোনো তোমার বাহানাবাজি বন্ধ করে ফোনটা রাখো।... রাগের মাথায় ফোনটা কেটে বিড়বিড় করে রঞ্জন কিছু বলতে থাকে।
নীল তাকে ইশারা করে শান্ত হতে বলে। হঠাৎই একটা সাইকেল বেশ দ্রুত গতিতে পাশ কাটিয়ে যেতে চায়। নীল বেশ উৎসাহের সাথে ডাক দেয় তাকে।
কোনরকমে সাইকেলটা স্ট্যান্ড করিয়ে সজল দা তার বোকা বোকা হাসিটা দিয়ে জিজ্ঞেস করে তারা কেমন আছে! রঞ্জন প্রায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও মুচকি হাসি দিয়ে উত্তর দেয়।
-তা এত রাতে কোথায় যাচ্ছ সজল দা?
- এই তোমার বান্ধবী দুটো মেয়েকে পড়ায়। ওর রাত হলে আমি দোকান বন্ধ করে ওকে আনতে যাই।
-এত রাত পর্যন্ত পড়ায়? দিনকাল তো ভালো না। মেয়ে মানুষ।
রঞ্জনের কথাটা শেষ না হতেই সজল দার উত্তর
-দিনকাল ভালো না বলে কি মেয়েমানুষ কাজকর্ম করবে না? আমার বউ তো দিদিমণি, তার কি এত সময় বেঁধে দিলে হয় বলো তো? তাই তো যেদিন রাত হয় আমি গিয়েই নিয়ে আসি।
সজলদা সাইকেলের প্যাডেলে পা রেখে বলে "একদিন এসো আমাদের বাড়িতে। তোমাদের বান্ধবী নতুন নতুন রান্না শিখছে আর বানাচ্ছে আবার আজকাল পাকা গিন্নির মত বাজারটাও করতে যায়। একা আমি বলির পাঁঠা হবো কেন!" বলে সে আবার হাসতে থাকে।
সাইকেলে প্যাডেল মেরে হিন্দি গানের বুলি গুনগুন করতে করতে সজল দা চলে যায় তার দিদিমণিকে আনতে। রঞ্জন আর নীল তখন ও নির্বাক।
কি নেই সজল দার মধ্যে!!?
রচনাকাল : ১২/৩/২০২০
© কিশলয় এবং সঞ্চারী বোস কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।