• ২য় বর্ষ ৯ম সংখ্যা (২১)

    ২০১৩ , ফেব্রুয়ারী



সুবর্ণ সদৃশং পুষ্পং ,ফলে রত্নং ভবিষ্যতি,আশয়া সেবিতো বৃক্ষঃ,পশ্চাৎ তৎ ঝনঝনায়তে।
আনুমানিক পঠন সময় : ৪ মিনিট

লেখক : শ্রী সমর কুমার সরকার
দেশ : INDIA , শহর : Siliguri

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১২ , আগষ্ট
প্রকাশিত ৪৮ টি লেখনী ৫৬ টি দেশ ব্যাপী ৬৬৪৯৪ জন পড়েছেন।
সুবর্ণ সদৃশং পুষ্পং,ফলে রত্নং ভবিষ্যতি,আশয়া সেবিতো বৃক্ষঃ,পশ্চাৎ তৎ ঝনঝনায়তে। 
 
উপরোক্ত সংস্কৃত শ্লোক টি এক বাহ্য জ্ঞান রহিত পণ্ডিতের নিষ্ফলা পরিশ্রম শেষে খেদোক্তি বিশেষ। 
শ্লোকটির যথাযথ অর্থ এই রূপ:
সুবর্ণ সদৃশং পুষ্পং' -অর্থাৎ সোনার মত দেখতে সোনালী রঙের ফুল,
'ফলে রত্নং ভবিষ্যতি'- অর্থাৎ ফলে ভবিষ্যতে রত্ন জন্মিবে,
'আশয়া সেবিতো বৃক্ষঃ'-অর্থাৎ সেই আশায় বৃক্ষকে পালন করিলাম,
'পশ্চাৎ তৎ ঝনঝনায়তে'-অর্থাৎ পরে দেখি,তা কেবল ঝনঝন শব্দ করিতেছে।

গল্পটা তবে শুরু করা যাক। এক বাহ্যিক জ্ঞান শূণ্য,অথচ স্বঘোষিত পণ্ডিত বাংলা দেশের 
গ্রামাঞ্চলে বেড়াতে গিয়ে,কোন এক স্থানে শণ গাছের আবাদ দেখে খুবই মুগ্ধ হলেন। 
শণ গাছগুলোতে উজ্জ্বল সোনালী রঙের রাশি রাশি ফুল ফুটে ছিল। বাহ্যিক জ্ঞান শূণ্য 
পণ্ডিত ভাবলেন,"যে মূল্যবান গাছে সোনার মত ফুল ফোটে,সেই গাছের ফুল থেকে যে 
ফলের সৃষ্টি হবে,তাতে নিশ্চয় রত্ন জন্মাবে। ভবিষ্যতে সুখ বৃদ্ধির কল্পনায় পণ্ডিত বোঝা 
বোঝা শণ গাছের চারা সমূলে উপড়ে,পরম যত্ন সহকারে বাড়িতে নিয়ে এলেন। 
রাস্তায় অনেক লোকই এই দৃশ্য দেখলেন,কিন্তু পণ্ডিত ব্যক্তির খেয়াল মনে করে তাকে 
কিছু বললন না। পণ্ডিত পরম যত্ন সহকারে চারা গুলোকে জমিতে পুঁতে দিলেন,তারপর 
নিয়মিত গাছগুলোতে জল দিতে থাকলেন। কিছু দিন পরে শণ গাছে যখন রাশি রাশি সোনালী 
রঙের ফুল ফুটল,তখন পণ্ডিতের আনন্দের সীমা নেই। তিনি স্বপ্ন দেখতে থাকলেন,ফুল গুলো 
থেকে যে ফল জন্মাবে,সেই ফলের বীজগুলোই হবে মূল্যবান রত্ন। ক্রমে ফুল গুলো থেকে রাশি 
রাশি ফল জন্মালো। পণ্ডিত আশায় আছেন,ফল পাকলেই তিনি তার থেকে রত্ন গুলো আহরণ করবেন। 
যথা সময়ে ফল গুলো পেকে শুকিয়ে গেলে পণ্ডিত ফল তুলে দেখলেন,ফল গুলো ঝনঝন করে বাজছে। 
পণ্ডিত তো আনন্দে দিশা হারা,ফলের মধ্যে যে রত্ন গুলো রয়েছে,সে গুলোই ঝনঝন করে বাজছে। 
কিন্তু ফল ভেঙেই পণ্ডিতের চক্ষু স্থির,ফল গুলো থেকে কালো কালো বীজ পড়ে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। 
এত কঠোর পরিশ্রমের পর এই রকম ফল পেয়ে এবং আশাহত হওয়ার বেদনায় পণ্ডিত 
ঐ শ্লোক টি রচনা করলেন। শ্লোক টার অর্থ হলো,"সোনার মত ফুল দেখে ভাবলাম,এর থেকে যে ফল 
হবে তাতে রত্ন জন্মাবে। সেই আশায় এতদিন কঠোর শ্রম করে গাছগুলোকে পালন করলাম,
কিন্তু দেখা গেল ফল গুলোতে কোন রত্ন নেই,ফলগুলোর কেবল ঝনঝন করে বাজা মাত্র সার।"

এত ক্ষণে আপনাদের নিশ্চয় ধৈর্ষচ্যুতি ঘটেছে,ভাবছেন,কি বলতে চাও,তা বাপু তাড়াতাড়ি নিবেদন করো,
খামোখা পণ্ডিতের গল্প শুনে আমাদের কি লাভ? আর তোমার উদ্দেশ্যই বা কি? উদ্দেশ্য নিশ্চয় আছে,
না হলে এই গল্পের অবতারনা করার তো কোন কারণই দেখি না।

গল্পের পণ্ডিত আর আমার মধ্যে কোন প্রভেদ নেই। গল্পের পণ্ডিত ছিলেন বাহ্য জ্ঞান শূণ্য 
স্বঘোষিত পণ্ডিত, আর আমি হলাম বাহ্য জ্ঞান শূণ্য সাধারণ এক মানুষ,যাকে আপনারা কবি 
ভেবে নিয়েছেন, অর্থাৎ বৃথা ঘোষিত কবি। ঐ পণ্ডিতের মত আমি ও বৈদ্যুতিন মুখপত্রিকায় লাল,
নীল,হলুদ,সবুজ ও নানা রঙের ঝকঝকে ছবি সংযুক্ত নানা কবিতা দেখে মুগ্ধ হয়ে ভেবেছিলাম,
আমি ও যদি এই রকম লাল,নীল, হলুদ,সবুজ ও নানা রঙ-এর ছবি সম্বলিত কবিতা রচনা 
ও প্রকাশ করতে পারি,তবে ভবিষ্যতে ফল হিসাবে বাংলা সাহিত্যকে নানা মণি মুক্তা উপহার 
দিতে পারবো। এই আশা কে স্বযত্নে মনে লালন পালন করেছি, এবং মূর্খের মত পরিশ্র্ম করে গেছি।

বলে রাখা ভালো,পণ্ডিতের দুর্দশার জন্য পণ্ডিতের অজ্ঞতা দায়ী,শণ গাছের বিন্দু মাত্র দোষ নেই,
তা ছাড়া শণ গাছ যথেষ্ট উপকারী। শণ গাছের আঁশ থেকে যে তন্তু পাওয়া যায়,তা এতই শক্ত 
যে তা দিয়ে জাহাজ নোঙর করার জন্য মোটা কাছি দড়ি প্রস্তুত করা হয়,তাছাড়া শণের আঁশ দিয়ে 
তাঁবু ও ত্রিপল ও তৈরী করা হয়। এ ক্ষেত্রে মুখ পত্রিকার প্রকৃত কবিদেরও কোন দোষ নেই,
কেন না তারা প্রত্যেকেই স্বনাম ধন্য। গল্পের লোকেরা পণ্ডিত কে শণের চারার বোঝা নিয়ে যেতে 
দেখেও কেউ নিষেধ করেন নি। আমাকেও কেউ সাবধান করেন নি যে,কবিতার নামে তুমি যা লিখছো,
তা ছাই ভস্ম ছাড়া আর কিছুই নয়। যাই হোক,মনের বাগানে কবিতার যে চারা রোপণ করেছিলাম,
মাসের পর মাস পরিচর্যার ফলে তা থেকে যে ফল পেলাম,তা দেখে আমারও চক্ষু স্থির। কি ফল পেলাম ? 
বাংলা সাহিত্য কে মণি মুক্তা উপহার দেওয়া তো কষ্ট কল্পনা,বাংলা সাহিত্যকে তুচ্ছ ঝিনুকের খোলাও 
দিতে পারি নি। কবিতার নামে যা রচনা করেছি, তা রসিকতা ছাড়া কিছুই নয়। গল্পের পণ্ডিতের ফল 
গুলো তবু ঝনঝন করে নূপুরের মত মিষ্টি শব্দ উৎপন্ন করতো,মন ভালো না থাকলে ঝনঝনানি শুনেও 
পণ্ডিত সময় কাটাতে পারতেন। কিন্তু আমার শূণ্য কলসী টা যে রকম ঠন ঠন শব্দ করে আমার 
শূণ্যতার জানান দিচ্ছে,তাতে মুখ দেখানো ভার। তাই আমার আক্ষেপ পণ্ডিতের মতই মর্মন্তুদ।:

           "রতন বলিয়া রচিয়াছি যাহা,ছাই দেখি আজ সব-ই,
           বৃথা গেল কাল,সন্ধ্যা-সকাল,ফল অ-কবির কবি।"	
রচনাকাল : ৩০/১/২০১৩
© কিশলয় এবং শ্রী সমর কুমার সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger
সমাপ্ত



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 29  Canada : 1  China : 77  France : 7  Germany : 18  Hong Kong : 12  India : 237  Ireland : 15  Israel : 12  Lithuania : 31  
Netherlands : 31  Norway : 12  Qatar : 12  Russian Federat : 10  Russian Federation : 16  Saudi Arabia : 18  Sweden : 12  Ukraine : 35  United Arab Emi : 1  United Kingdom : 33  
United States : 1165  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 29  Canada : 1  China : 77  France : 7  
Germany : 18  Hong Kong : 12  India : 237  Ireland : 15  
Israel : 12  Lithuania : 31  Netherlands : 31  Norway : 12  
Qatar : 12  Russian Federat : 10  Russian Federation : 16  Saudi Arabia : 18  
Sweden : 12  Ukraine : 35  United Arab Emi : 1  United Kingdom : 33  
United States : 1165  
  • ২য় বর্ষ ৯ম সংখ্যা (২১)

    ২০১৩ , ফেব্রুয়ারী


© কিশলয় এবং শ্রী সমর কুমার সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
সুবর্ণ সদৃশং পুষ্পং ,ফলে রত্নং ভবিষ্যতি,আশয়া সেবিতো বৃক্ষঃ,পশ্চাৎ তৎ ঝনঝনায়তে। by SAMAR KUMAR SARKAR is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৪৮৫৩৩৭
fingerprintLogin account_circleSignup