আমার যত ঋণ
আনুমানিক পঠন সময় : ২ মিনিট

কবি : শ্রী সমর কুমার সরকার
দেশ : INDIA , শহর : Siliguri

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১২ , আগষ্ট
প্রকাশিত ৪৮ টি লেখনী ৫৬ টি দেশ ব্যাপী ৬৬৪৮৪ জন পড়েছেন।
আমার যত ঋণ

দিন ফুরালো;শুরু হলো,নিজের মনেই খোঁজা,
এই জীবনে কার কাছে মোর কত ঋণের বোঝা।
পিতা-মাতার স্বপ্নে গড়া জন্মেছিলাম আমি,
তাদের প্রতি ঋণের হিসাব করাই যে মূর্খামি।
আমার সারা জীবনেতে যা কিছু অর্জন,
তাদের ঋণের তুলনাতে নগন্য সে ধন।
যা কিছু যশ,সুকৃতি লাভ ঘটেছে জীবনে,
নত শিরে অঞ্জলি দিই তাদের শ্রী-চরণে।


জন্মভূমির আলো,বাতাস,জল ও মাটির গুণে,
শিশু থেকে বড় হলাম ক্রমে দিনে দিনে।
জন্মভূমি মাতার সমান,শাস্ত্রমতে জানি,
প্রণাম তোমায় জন্মভূমি,তোমার কাছে ঋণী।
ছাত্র যখন,শিক্ষকেরা দিলেন আমায় দান,
আঁধার হতে আলোর পথে উত্তরণের জ্ঞান।
তাদের কাছে শিক্ষা পেয়ে হলাম জ্ঞানী গুণী,
শিক্ষাগুরুর কাছে আমি চিরকালের ঋণী।


লেখাপড়ার শেষে পেলাম সরকারি চাকুরি,
শাসক শোষক যা মনে হোক,তার-ই কর্মচারী।
জীবনেতে সুখের সোপান,অন্নসংস্থান,
সচ্ছলতা,নিশ্চয়তা,প্রভূত সন্মান।
ছেলেমেয়ের ভরণপোষণ,বাসগৃহ নির্মাণ,
শ্রমের বিনিময়ে পেলেও সরকারের-ই দান।
অবসরের পরেও আমার ভার তাদের-ই জানি,
সারা জীবন অন্নদাতার কাছে আমি ঋণী।


যৌবনেতে বিবাহেতে স্ত্রী-কে পেলাম কাছে,
তার চেয়ে আর বড় আপন,কে আর বলো আছে?
শীর্ণ নদী সম জীবন ছিল যে আমার,
ভালবাসার জোয়ার পেয়ে হলো পারাবার।
ছেলে মেয়ে নিয়ে সুখী,এই যে গৃহকোণ,
একটি নারীর অবদানেই ধন্য এ জীবন।
কি চেয়েছি,কি পেয়েছি,হিসাব কি তার জানি?
শূন্য জীবন পূর্ণকারী স্ত্রী-র কাছে তাই ঋণী।


ছেলে মেয়ে পালন ক'রে পেলাম কত সুখ,
তাদের সুখেই পরাণ সুখী,গর্বে ভরে বুক।
আমার আশা-আকাঙ্ক্ষাকে রূপ দিয়েছে তারা,
তাদের মাঝেই থাকব বেঁচে,হবো না নাম হারা।
অনিত্য এ সংসারেতে স্থায়ী কেহই নয়,
বংশধরের মাঝে বাঁচে জীবের পরিচয়।
পরম স্নেহের আকর তারা,অতুল রতন,মণি,
ভালবাসার অন্ধ স্নেহে তাদের কাছেও ঋণী।


বাঁচতে হলে পদে পদে হাজার জিনিস চাই,
অজ্ঞাত সব লোকের শ্রমে সময় মতই পাই।
শ্রমিক,চাষী,ব্যবসায়ী,নানান বৃত্তিজীবী,
সারা জীবন দিচ্ছে যোগান,যা প্রয়োজন সব-ই।
অল্প বেশী যেমনই হোক,তাদের সেবার ফলে,
দিব্যি কেটে যাচ্ছে জীবন,পড়ি নি তো জলে।
সরল চোখে যদিও সেবা অর্থ দিয়েই কিনি,
সূক্ষ্ম বিচার করলে পরে ওদের কাছেও ঋণী।


আস্তিকে আর নাস্তিকেতে দেখি নি তফাত,
যার প্রয়োজন যেমন ধারায়,তেমন মতামত।
দেবতা সে সাকার-ই হোক,কিংবা নিরাকার,
আসলে তা সৎ পথেতে বাঁচার হাতিয়ার।
ধর্ম করে সমাজ ধারণ,নাশে কলুষতা,
পরস্পরে বন্ধু ক'রে গড়ে যে সখ্যতা।
সঠিক পথে চলা যদি ধর্ম বলে মানি,
ধর্ম পালন করেন যারা,তাদের কাছেও ঋণী।


এক জীবনে আমি যদি এত ভাবেই ঋণী,
তবে কেন অন্তরেতে এত অভিমানী?
চারদিকে ঋণ জমে আছে পাহাড় প্রমান হয়ে।
জগৎ থেকে বিদায় নেবো ঋণের বোঝা নিয়ে?
কি ভাবে ঋণ মিটবে আমার,কি সে সমাধান?
ভেবে দেখি,ঋণ হলো এক কৃতজ্ঞতার টান।
শ্রদ্ধা,ভালবাসা মনে জাগায় ঋণের বোধ।
সমান-অধিক প্রতিদানে হয় সে ঋণের শোধ।


জীবন হলো ঋণী হয়ে,ঋণ চুকানোর লীলা,
আদি হতে অনন্তকাল চলেছে এই খেলা।
জন্মভূমি,শিক্ষাদাতা,অন্নদাতার ঋণ,
আমার সেবার মূল্যেতে শোধ হচ্ছে প্রতিদিন।
পুত্র হয়ে ঋণ যা ছিল,পিতা হওয়ায় লয়,
সবার কাছে সবাই ঋণী,ঋণেতে ঋণ ক্ষয়;
একটি কেবল ঋণ রয়েছে,শোধ কভু না হয়,
মায়ের কাছে ছেলের যে ঋণ,অমর ও অক্ষয়।


********************************
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি
********************************
রচনাকাল : ৩১/১২/২০১৬
© কিশলয় এবং শ্রী সমর কুমার সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger
আরম্ভ



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 3  Canada : 6  China : 15  France : 2  Germany : 3  Hungary : 11  India : 254  Japan : 1  Russian Federat : 8  Saudi Arabia : 5  
Ukraine : 34  United Arab Emi : 1  United Kingdom : 3  United States : 308  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 3  Canada : 6  China : 15  France : 2  
Germany : 3  Hungary : 11  India : 254  Japan : 1  
Russian Federat : 8  Saudi Arabia : 5  Ukraine : 34  United Arab Emi : 1  
United Kingdom : 3  United States : 308  


© কিশলয় এবং শ্রী সমর কুমার সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
আমার যত ঋণ by SAMAR KUMAR SARKAR is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৪৮৪৯৬৫
fingerprintLogin account_circleSignup