সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি
*********************
গিয়েছিলাম বিশেষ কাজে সরকারী অফিসে,
বিভাগীয় প্রধান ছিলেন খোশমেজাজে ব’সে।
হাসি মুখে প্রশ্ন করি,‘আসতে পারি স্যার?’
জবাব এলো মন্দ্র স্বরে-‘বলুন,কি দরকার।’
ঠিকাদারির প্রকল্পটি বাড়িয়ে দিলাম হাতে,
চেয়ার টেনে বসতে বলেন হাতের ইশারা-তে।
দর পত্রের পাতায় পাতায় কলম দিয়ে দেগে,
প্রধান বলেন-“শর্তগুলো সাফ বলে দিই আগে।
সরকারী এই প্রকল্পটির পঁচিশ লাখের ঠিকা,
দশ পার্সেন্ট দিতে হবে,আমায় শুধু একা।
আমার হাতেই প্রকল্পটির দেখাশোনার ভার,
তবুও আছে উপর-নীচে অনেক পাওনাদার।
উপর মহল টাকা পাঠায়,পাঁচ পার্সেন্ট চাই,
নীচের মহল পাঁচ পার্সেন্ট,নইলে উপায় নাই।
চেক নেবো না,পাওনা আগাম নগদ টাকায় দিলে,
হাতে হাতে কাজের বরাত আজই যাবে মিলে।”
জানাই ছিল বলবে এমন,আমি ও কম নই,
হেসে বলি-“শুনুন আগে,আমি কে কার হই।
শাসক দলের স্থানীয় নেতা,আত্মীয় হন তিনি,
বললে তাকে এসব কথা,কি ভাববেন শুনি?”
চমকে উঠে প্রধান বলেন-“শাসক দলের নেতা?
আগেই এসব বলতে হতো,আপনি মশাই যা-তা।
উপর-নীচ,আর আমার মিলে দশ পার্সেন্ট চাই,
নগদ টাকায় আগাম দিয়ে কাজটি ধরুন ভাই।”
আমি বলি,“আরে মশাই,সবটা শুনুন আগে,
কথার মাঝে ধানাই পানাই,ভীষণ বাজে লাগে।
শাসক দলের বিধায়ক ও আমার পরিচিত,
তার বাড়ীতে বেশ যাতায়াত আপন ভাইয়ের মত ।”
প্রধান বলেন,“সে কি মশাই?বিধায়ক ও দাদা?
আপনি দেখি বাড়া ভাতে ছড়িয়ে দিলেন কাদা!
ঠিক আছে,এই শেষ কথা,মোট পাঁচ পার্সেন্ট চাই,
এর নীচেতে কোন মতেই নামার উপায় নাই।
বলি-“কথা হয়নি তো শেষ,তাতেই এত নামা?
এই এলাকার সাংসদও যে স্ত্রী-এর কেমন মামা।”
বেজার মুখে প্রধান বলেন-“হায় রে এ দুর্দিনে,
ঠিকাদারও জুটলো আমার এমন অলক্ষুণে।
দুই পার্সেন্ট না দিলে ভাই থাকবে না আর মান,
আগাম দিয়ে হুকুমনামা নিয়েই বাড়ী যান।
আস্তে বলি-“শেষ টা শুনুন,দিচ্ছি না স্যার ধোঁকা,
এই প্রদেশের মন্ত্রী যে এক,আমার আপন কাকা।”
বিভাগীয় প্রধান হঠাৎ বুকের পাঁজর চেপে,
টেবিলেতে নামিয়ে মাথা,বলেন কেমন কেঁপে-
“বুকটা আমার ধুকুর পুকুর করছে এমন জোরে,
পিঠ টা করুন দলাই মালাই,নইলে যাব মরে।”
ভীষণ ভয়ে ঘাবড়ে উঠে দৌড়ে গিয়ে পাশে,
পিঠ করে দিই দলাই মালাই,সাধ্যমত ঠেসে।
ঘন্টাখানেক পরে প্রধান আরামে চোখ মেলে-
বলেন-“এমন পরিস্থিতি হয়নি কোন কালে।
ছাত্রজীবন শেষে যখন চাকরি তে দিই যোগ,
সহজ,সরল,তরুণ যুবক,ছিল না এই রোগ।
সরকারী দপ্তরে ঢুকেই পড়ি এ খপ্পরে,
মন্ত্রী বলো,আমলা বলো,সবাই বাঁধা সুরে।
বিশাল টাকা না দিলে ঘুষ,পায় না ঠিকাদারি,
কাজের গুণমানেতে তাই হয় না কড়াকড়ি।
যা ঠিকাদার খরচা করে,তোলে কয়েক গুণ,
খুব বেশী কেউ বাগড়া দিলে,শেষ পরিণাম খুন।
আপনি অতি ঘোড়েল মানুষ,প্যাঁচগুলো সব জানা,
শাসক দলের মন্ত্রী,নেতার বাড়ী আনাগোনা।
ঘাঁত-ঘোঁত সব জেনেও আমায় জড়াচ্ছিলেন জালে।
বুঝতে পারি,টাকা এবার জুটবে না কপালে।
বিনা ঘুষে,বিনা সেবায়,কাজ করে দেয় কে বা ?
ঘন্টাখানেক দলাই মালাই,এটাই ধরুন সেবা।
কি হয়েছে ঘরের ভিতর,কেউ দেখেনি আজ,
কাজের বরাত পাবেন,তবে বুঝেও নেবো কাজ।
********************************
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি
********************************
রচনাকাল : ৩১/৭/২০১৪
© কিশলয় এবং শ্রী সমর কুমার সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।