বিপুল বাবু সখের কবি,বাসনা তার মনে,
ইচ্ছাপূরণ ঠিক হবে তার আগামী এক দিনে।
কাব্য লিখে কত জনের কত না উন্নতি !
মানপত্র,চাদর,মালা,সভার সভাপতি।
বাড়ী,গাড়ী,টাকা-কড়ি এ সবও আজ হয়,
সমাজেতে কল্কে মেলে বাড়লে পরিচয়।
ধন সম্পদ কম নেই তার,একটি কেবল আশা,
'কবি হয়ে সভাপতির আসনেতে বসা।'
রোজ কবিতা লেখেন তিনি শতেক কাজের ফাঁকে,
সুযোগ পেলেই বই ছাপিয়ে সাজিয়ে রাখেন তাকে।
বন্ধু,স্বজন,প্রতিবেশী পাড়ার ঘরে ঘরে,
বই বিলিয়ে বলে আসেন,"দেখুন সবাই পড়ে"।
ঘষলে পাথর তা ও ক্ষয়ে যায়,মাঙ্গনা দিয়ে এলে,
অনিচ্ছাতেও দুই এক পাতা পড়েন সবাই খুলে।
এইভাবেতে ক্রমে ক্রমে সবাই তাকে চেনে,
বই কেনে না,তবুও তাকে কবি বলেই মানে।
মন জুড়ালেও প্রাণ ভরে না,হন তিনি উতলা,
"কবির পরিচয়ে কবে পাবেন ফুলের মালা।
মান্যগণ্য লোকের মাঝে পাবেন তিনি স্থান,
সভাপতি করবে সবাই,জানাতে সন্মান।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নানা অনুষ্ঠানে,
উদ্বোধনে ডাকবে সবাই সাদর আমন্ত্রণে।"
মনের কথা রয় না গোপন,ছড়ায় কানে কানে,
বন্ধুমহল,পরিচিত,যে আছে যেখানে।
বিপুল বাবু হঠাৎ সুযোগ পেলেন বরাত জোরে!
পাড়ায় বিশাল আবাসন এক তৈরী ছিল পড়ে,
রথযাত্রা-র শুভ দিনে হবে উদ্বোধন,
উদ্যোগীরা গিয়ে তাকে করেন নিমন্ত্রণ-
"জাঁকজমকের সাথে হবে নানা অনুষ্ঠান,
সবার শেষে খানাপিনা অঢেল অফুরান।
দাদা,তুমি পাড়ার কবি,চাইছি অনুমতি।
উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে তুমিই সভাপতি।"
বিপুল বাবু বেজায় খুশী,মনের আবেগেতে
কয়েক হাজার টাকা তুলে দিয়ে তাদের হাতে,
বলেন-"লিখে করেছি যে অনেক উপার্জন,
সে সব নেহাত তুচ্ছ,আমার সবই 'জনগণ'।
তাদের খুশীই আমার খুশী,তাদের সুখেই সুখ,
সামান্য এই টাকায় করান তাদের মিষ্টিমুখ।
এমনি আমি চাই না,কোথাও হতে সভাপতি,
পাড়ার মানুষ ধরলেন,তাই পালটে দিলাম রীতি।"
অনুষ্ঠানের দু'দিন আগে এমন হলো হাল,
বদলে গেলো সভাপতি,সবাই নাজেহাল।
স্থানীয় এক উটকো নেতা মন্ত্রী হতে চায়,
"আমিই হবো সভাপতি"- ডেকে দিলেন রায়।
তার কথা না শুনলে পরে বিপদ হতে পারে,
উদ্যোগীরা এই ভয়েতে পড়েন আতান্তরে।
নেতার কথায় হাসি মুখেই দিয়ে আসেন সায়,
ভাবতে বসেন,কি ভাবে সব সামলে নেওয়া যায়।
উদ্যোগীরা ভাবেন- "কবির শুনলে হবে গোঁসা,
কোন ফ্যাসাদে পড়ি আবার,পাচ্ছি না ভরসা।
তার চেয়ে সব চুপ করে রই চেপে ব্যাপারটাকে,
যা হোক পরে করা যাবে,যা কপালে থাকে।
কবি হলেও লোকটা সরল,এক্কেবারে বোকা!
নইলে কি কেউ সখ করে দেয় মিষ্টি খাওয়ার টাকা?
অনুষ্ঠানে এলে,যে কেউ বসিয়ে ও কে পাশে,
গল্প করে ভুলিয়ে রেখো দিব্যি হেসে হেসে।
বিপুল বাবু সেজেগুজে রথযাত্রার দিনে,
শুরু হবার অনেক আগেই এলেন অনুষ্ঠানে।
দুই আবাসিক গল্প ক'রে ভুলিয়ে রাখে মন,
অপর দিকে অনুষ্ঠানের চলে আয়োজন।
হঠাৎ সভায় হয় ঘোষণা- "আজকে শুভ দিনে,
তরুণ নেতা রাতুল সাহা এলেন শুভ ক্ষণে।
গর্বিত আজ আমরা সবাই,ভাগ্যবান ও অতি,
আজকের এই অনুষ্ঠানে তিনিই সভাপতি।"
চমকে ওঠেন বিপুল বাবু,এটা কেমন হলো?
কেমন করে কথার খেলাপ করে মানুষ গুলো ?
সভাপতি বরণ হলো পরিয়ে ফুলের মালা,
দীপাধারে সারি সারি প্রদীপ হলো জ্বালা।
ভাষণ শেষে সভাপতি গেলেন আবাসন,
রঙ্গীন ফিতা কেটে হলো ভবন উদ্বোধন।
হাততালি আর হুল্লোড়েতে সরব সভাস্থল,
মলিন মুখে সখের কবি লুকান চোখের জল।
সভাপতি বিদায় নিলে ,বলেন ক্ষোভের সুরে,
"ডেকে এনে মান খোয়ানো সইব কেমন করে ?
মিষ্টি বাবদ গচ্ছা গেল কয়েক হাজার টাকা,
সজ্ঞানেতে তোমরা আমায় দিলে বিরাট ধোঁকা।"
উদ্যোগীরা বিপদ বুঝে ক'রে আলোচনা,
বলেন,"দাদা দ্বারোদ্ঘাটন হয়েছে আধখানা।"
মগ,বালতি,জল এনে দেয় তাদেরই এক জন,
বলেন,"দাদা,পায়খানাটা-ই করুন উদ্বোধন।"
*******************************
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি
*******************************
রচনাকাল : ২৬/৬/২০১৩
© কিশলয় এবং শ্রী সমর কুমার সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।