গৃহিণী কন মধুর সুরে,''শুনছ খোকার বাপ,
চা ক’রেছি,গরম গরম খেয়ে নাও এক কাপ।
বাদাম ভাজা ভালবাস,তা ও দিয়েছি সাথে,
তাড়াতাড়ি খেয়ে একটু যাবে বাজারেতে।
সকাল থেকেই 'ইলশা গুঁড়ি' বৃষ্টি পড়া দেখে,
সাধ হয়েছে ইলিশ খাবো,আনো বাজার থেকে।
মাছ টা যেন বেশ বড় হয়,ডিম ভরা হয় পেটে,
আয়েস করে ক’রবো ভাপা,সর্ষে-লঙ্কা বেঁটে।''
একে গিন্নী মুখরা তায় অপূর্ব সুন্দরী,
পত্নীবৎসল ভীতু পুরুষ,'না' কি ক'রে করি ?
তৈরী হয়ে,পাঁচশো টাকা পকেটেতে ভ'রে,
ছাতার বাঁটে ঝুলিয়ে থলি,এগোই ধীরে ধীরে।
মাছ-বাজারে গিয়ে দেখি,ইলিশ মাছের ডাঁই,
ক্রেতার ভিড়ে সরগরম,যে দিকেতেই চাই।
রূপোর পাতে মোড়া,নদীর রূপালী ফসল,
মনোলোভা রূপের শোভা ! জিভে আসে জল।
খুঁজে,বেছে,পেট মোটা এক ইলিশ নিয়ে হাতে,
মেছুয়া কে ব'লি-''বলো,কত হবে দিতে ?''
ওজন করে মেছুয়া কয়,''দেড় কিলোগ্রাম,
আটশো টাকা কিলো দরে বারশো হয় দাম।''
পকেটে মোট পাঁচশো টাকা,সাতশো আরো লাগে !
হেসে বলি-''রাখো বাপু,ঘুরে দেখি আগে।''
মেছুয়া কয়,''বুঝছি মশায়,ঐ দিকেতে যান,
খোকা ইলিশ নিয়ে গিয়ে,কাঁটা বেছে খান।''
লজ্জ্বা পেয়ে সরে পড়ি,মনে লাগে ব্যথা,
কি বেদনা !কেউ ভাবে না,সাধারণের কথা।
বারশো টাকায় কিনলে চাউল,দেড় মাস যায় চলে,
সেই টাকাতে একটি ইলিশ,কিনবো কোন আক্কেলে ?
মন জ্বলে যায়,এই যে ইলিশ স্তুপাকার চার ধারে,
সব ই তো তার বিক্রি হবে,এমন চড়া দরে !
কাদের এত টাকার গরম,কোথায় টাকা পায়,
মহার্ঘ সব উপকরণ,একাই কিনে খায় ?
বর্ষা কালে ইলিশ খেতে কার না ইচ্ছা করে ?
সাধ্যে যদি না কুলায় তো কিনব কিসের জোরে।
মনের দুঃখে খোকা ইলিশ কিনে ফিরি বাড়ি,
আমায় দেখে গিন্নী ছুটে আসেন তাড়াতাড়ি।
মাছের থলি দিয়ে হাতে,স্মরি জগন্নাথ !
গিন্নী যদি চটেন,তবে জুটবে না আজ ভাত।
বলি-''শোনো,বাংলা দেশে বন্যা হ'লো,তাই-
ইলিশ মাছ সব ভেসে গেছে,আমদানী আজ নাই।
কোলাঘাটের খোকা ইলিশ বাজারেতে ছিল,
তোমার জন্য বাধ্য হয়ে তাই আনতে হ'লো।
ক'রবে কি আর,এই ইলিশ-ই ভাপা তুমি করো,
আনব-ই ঠিক যে দিন আবার আসবে ইলিশ বড়।''
মহাক্রোধে গিন্নী বলেন হাত পা ছুঁড়ে ছুঁড়ে,
''মিথ্যাবাদী,পোড়ামুখো,দূর হয়ে যাও দূরে।
রমার বাবা,গুপীর কাকা,সবাই পেলো মাছ,
বুড়ো ঢেঁকি,তুমি আমায় দেখাও কলাগাছ ?
বাংলাদেশে বন্যা হ'লো,জানলে শুধু তুমি ?
সহ্য আমি ক'রবো না আর,তোমার এ ন্যাকামি।
মুরদ তো নেই,তবু আমায় বিয়ে ক'রতে গেলে,
নষ্ট হ'লো জীবন আমার,কাটলো অবহেলে।
থাকলে টাকা বুড়ো বর ও সহ্য করা যায়।
গরীব লোকের বিয়ে করা শোভা নাহি পায়।''
এই না বলে,মাছের থলি ছুঁড়লো কূয়োর পাড়ে,
'ওত পাতা এক হুলো বিড়াল' পালায় মুখে ক'রে।
বহু দিনের অভিজ্ঞতায় জানতো 'হুলো বিড়াল',
মাছের থলি আসবে উড়ে,যে দিন ভাল কপাল !
ইলিশ মাছের ভাপা তো দূর,জুটলো না আর ভাত !
সুখের সকাল মৃত হ'লো,মনে গভীর রাত।
************************************
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি
*************************************
রচনাকাল : ১/৯/২০১২
© কিশলয় এবং শ্রী সমর কুমার সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।