"সহ্য আমি করবো না আর তোদের বাড়াবাড়ি,
জগৎ ছেড়ে বিদায় নেবো,গলায় দিয়ে দড়ি।"-
গৌরমোহন দাসের ছিল এটাই বাঁধা বুলি,
নিত্য অভাব সংসারে তার,নিত্য চুলোচুলি।
পিঠাপিঠি দুই ছেলে তার,মদ ও জুয়ায় নেশা,
নগদ টাকার খাঁই মিটাতে করে মেলামেশা,
ছন্ন-ছাড়া ছিঁচকে চোর আর পকেটমারের সাথে,
পুলিস আসে তাদের খোঁজে,দিনে এবং রাতে।
মান-সন্মান সব ডুবেছে, "গোদেতে বিষ ফোঁড়া",
দুই ছেলে দুই বউ এনেছে,ঝগড়ুটে,মুখরা।
ঝগড়াঝাঁটি লেগেই আছে,সঙ্গে মারামারি,
পাওনাদারের জোর তাগাদা রোজ জোটে উপরি।
মন টেঁকে না সংসারেতে,গৌরমোহন তাই-
দুঃখে বলেন,"গলায় দড়ি ছাড়া উপায় নাই।
থাকলে বেঁচে সইতে হবে,কুৎসা,কেলেঙ্কারি,
শপথ নিলাম,মুক্তি পেতে দেবই গলায় দড়ি।"
গ্রীষ্মের এক সন্ধ্যাবেলা,থানার পুলিস এসে,
গৌর বাবু কে ধমক লাগান, "করেন টা কি বসে ?
ছেলে দুটো চোর-ছ্যাঁচড়া,আনছে ঘরে টাকা,
দিব্যি আছেন চোখটি বুঁজে,ভিজে বিড়াল ? নেকা ?
মারবো কষে রুলের গুঁতো,হাড়ের জোড়ে জোড়ে,
ঠুঁটো হয়ে থাকতে হবে,সারা জীবন ধরে।
চুরির টাকায় পিণ্ডি গেলেন,নেই যে দেখি লাজ,
শেষ বার এই বলে গেলাম,যাচ্ছি তবে আজ।"
অপমানে,দুঃখে পাগল গৌরমোহন দাস,
গাছে ওঠেন দড়ি নিয়ে,বাঁধেন ডালে ফাঁস।
কপালে হাত ঠেকিয়ে কাঁদেন,"শোনো ভগবান,
শপথ পালন করবো আজই,রাখতে আমার মান।
কিন্তু প্রভু,কষ্ট ভীষন,গলায় দড়ি দিলে,
বিকল্প এক বুদ্ধি মাথায় এসেছে শেষ কালে।
রাখছি শপথ,ঝুলছি ফাঁসে,গোস্তাকি হোক মাফ!"
দড়ির ফাঁসে পা গলিয়ে,গৌর মারেন লাফ।
ঝপাৎ ঝপাৎ শব্দ শুনে বউ রা পেয়ে ভয়,
ছুটে আসে গাছের তলায়,চোখেতে বিস্ময়!
'ছিপের ডগায় বঁড়শি গাঁথা মাছ' যে ভাবে দোলে,
পায়ে দড়ির ফাঁসে শ্বশুর তেমনি আছে ঝুলে।
পড়শীরা সব দড়ি কেটে নামিয়ে তাকে নীচে,
বলে- "মশাই,পায়ে দড়ি কে কবে দেখেছে ?"
গৌরমোহন বলেন- "আমার পূর্ণ হলো পণ,
যান ফিরে সব আপন ঘরে,ঘুমাবো এখন।"
************************************
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি
************************************
রচনাকাল : ২৬/৬/২০১৩
© কিশলয় এবং শ্রী সমর কুমার সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।