শ্বশুর মশাই জামাই কে কন বিয়ের পরে,
আড়ালেতে ডেকে অতি চাপা স্বরে-
"বুঝলে বাবা,সকল সুখের মূলে টাকা,
যার টাকা নেই,জানবে তার-ই জীবন ফাঁকা।
যেমন তেমন ক'রে পারো দু হাত ভরে,
কামাও টাকা,লুকিয়ে রাখো অন্ধকারে।
ব্যবসায়ের আসল কথাই চাই মুনাফা,
স্থান,কাল ও পাত্র বুঝে করবে রফা।
মন্ত্রী বলো,সান্ত্রী বলো,আমলা,নেতা,
সবারই এই টাকার উপর দুর্বলতা।
বুদ্ধি ক'রে ওদের মাথায় ভাঙলে কাঁঠাল,
পায়ের উপর পা গুটিয়ে কাটাবে কাল।"
শ্বশুর মশাই জামাই কে কন ছ মাস পরে,
"বাবা-মায়ের সাথে আছো কেমন করে ?
আজকালকার ছেলে হয়েও এ কি গেরো!
বাবা-মাকে আজও ভয়ে ভক্তি করো?
পৃথক হয়ে বানাও এবার নিজের বাড়ী,
পারলে পরে সঙ্গে কিনো নতুন গাড়ী।
প্রতিষ্ঠিত হতেই হবে,আসল কথা,
কেমন করে হবে এসব ? খাটাও মাথা।
মূর্খ যারা কাটায় মায়ের আঁচল তলে,
লোকে ভাবে,'এ যে ভীষণ ভাল ছেলে'।
আসলেতে তারাই গাড়ল,নিরেট বোকা,
হয় না মানুষ,রয় চিরদিন 'ধেড়ে খোকা'।"
শ্বশুর মশাই বছর ছয়েক পরে ফোনে
জামাইকে কন,"আনন্দ খুব হচ্ছে মনে।
বাবা মা কে ছেড়ে গিয়ে অনেক দূরে,
বানিয়েছ বিশাল বাড়ী শ্রীরামপুরে।
তিন টা গাড়ীর মালিক তুমি এই ক' দিনে,
শিল্পপতি বলে তোমায় সবাই চেনে।
অনেক ভেবে,তোমায় এ বার বলছি শোনো,
পাল্টে ফেলো ঘরের জিনিস,যা পুরানো।
মূর্খ যারা,তাদের থাকে ফালতু বাতিক,
মায়ায় পড়ে এড়িয়ে চলে যুগের গতিক।
সফল হওয়া নয় কো সহজ, চাই মনে জোর,
দয়া-মায়ার স্থান দিয়ো না মনের ভিতর।"
বছর দশেক পরে জামাই তড়ি-ঘড়ি,
পাঠিয়ে দিলো গিন্নী কে তার বাপের বাড়ী।
সঙ্গে দিলো হাতে লেখা গোপন চিঠি,
তাতে লেখা,"বাবা,এবার চাইছি ছুটি।
বিয়ের পরে যা বলেছেন,সব শুনেছি,
আপন বিবেক,বাবা-মা কে ত্যাগ করেছি।
পুরানো সব পাল্টে নতুন জিনিস এনে,
নেশা আমার বাড়তে থাকে দিনে দিনে।
কে জানতো এমন নেশা সর্বনাশা?
অন্য নারীর সঙ্গে হলো ভালবাসা।
ঠিক করেছি,নতুন তাকেই আনব ঘরে,
শিক্ষা দাতা গুরু,দিয়েন ক্ষমা করে।।
**************************************
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি
**************************************
রচনাকাল : ২৬/৬/২০১৩
© কিশলয় এবং শ্রী সমর কুমার সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।