বুড়ো বুড়ীর ঝগড়া কেন ?
*******************
বুড়ী বলে-‘শুনছ?ওগো,যাও দেখি বাজারে,
চাল,চা পাতা,চিনি,আটা,কিছুই তো নেই ঘরে।’
বুড়ো তখন আয়েস করে পড়ছে কাগজ খানা,
ভীষণ রেগে বলে,‘আহা !আহ্লাদে আটখানা!!
দেখছ,বসে পড়ছি কাগজ,তাও দেওয়া চাই বাঁশ?
টাটকা খবর পড়ার সময় রোজ যত ফরমাশ!
এখন যেতে পারব না,এই দিচ্ছি আমি বলে,
চিনি,আটা,চায়ের পাতা ছাড়াও যাবে চলে।’
ঘন্টা দুয়েক পরে বুড়ো,বলে-‘ওগো,শোনো,
বেলা হলো,চা-জলখাবার দিলে না এখনো?
জানো আমার চায়ের নেশা,বারে বারেই খাই,
কি এত কাজ?সকাল থেকে চায়ের দেখাই নাই ?’
ভীষণ ক্ষেপে বুড়ী বলে-‘বকছ কেন বাজে ?
পড়ছ যত বাসি খবর,যা লাগে না কাজে।
চা বানাবো,কোথায় পাব চিনি,চায়ের পাতা?
আটা ছাড়া বানাই রুটি,নেই তো সে ক্ষমতা।’
বুড়ো বলে-‘নেই কোন কাজ,ঘুমিয়ে কাটাও দিন,
বাজার থেকে জিনিস আনা এমন কি কঠিন ?
তুমি ও তো করতে পারো,একটু নড়াচড়া,
আসল কথা,ইচ্ছে তোমার,খাটিয়ে আমায় মারা।’
একে একে দুই যদি হয়,দুয়ে দুয়ে চার,
চলতে থাকে ঝগড়া,সাথে গালি ও চীৎকার।
মাঝের থেকে ঘোর বিবাদে বন্ধ খাওয়া দাওয়া,
নিরিবিলি সংসারেতে গরম আবহাওয়া।
ক’দিন পরে বুড়ী বসে দেখছে টেলিভিশন,
বুড়োর হঠাৎ পেয়ে গেল,তেষ্টা চায়ের ভীষণ।
মধুর স্বরে বুড়ো বলে-‘চা দাও না এক কাপ।’
বুড়ী বলে-‘এখন বাপু,করতে হবে মাপ।
খল নায়কের সঙ্গে নায়ক করছে মারামারি,
এমন সময় চা খাওয়াটা এতই কি জরুরী?
রান্নাঘরে সবই আছে,নাও বানিয়ে নিজে,
টেলিভিশন দেখার সময় বায়না আজেবাজে।’
বুড়ো বলে-‘কি দিন এলো ? গিন্নীদেরই রাজ !
সন্ধ্যা হলে,ঘন্টা কয়েক টি.ভি. দেখাই কাজ।
আমার বুঝি এ সংসারে নেই কোন আর দাম?
ভাবছি বাড়ী ছেড়ে এবার থাকব কাশী ধাম।’
বুড়ী বলে-‘রোজ বিকালে তাসের আসর যাও,
আমার কথা মনে থকে ? সঙ্গে আমায় নাও ?
তোমার কাজে ব্যস্ত তুমি,আমার কাজে আমি,
দাসী,বাঁদী নই কো তোমার,যতই ভাব তুমি।’
ভাবছ সবাই বুড়ো-বুড়ী খুব বুঝি ঝগড়াটে ?
বিনা কাজে আজেবাজে ঝগড়া তে দিন কাটে?
মোটেই তা নয়,বড়ই গভীর ওদের ভালবাসা,
পরখ করে বাজিয়ে নেওয়ার আজব এ এক নেশা।
ছেলে মেয়ে হয় কাছে নেই,নয় তো বিদেশবাসী,
কেমন করে থাকবে বজায়,ওদের মুখের হাসি?
যৌবন ও নেই, একঘেয়ে দিন কাটবে কেমন করে ?
বেঁচে থাকার আনন্দে তাই ঝগড়া করেই মরে।।
*****************************************
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি
*****************************************
রচনাকাল : ৩১/৭/২০১৪
© কিশলয় এবং শ্রী সমর কুমার সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।