রাজার ছেলে খাতার পাতায় আঁকলো হঠাৎ গোল,
তাই না দেখেই রাজসভাতে তুমুল শোরগোল।
অমাত্যরা সচকিত,ব্যাপার কি চাই জানা,
অসুখ বিসুখ হলো না কি? হাসতে কি ওর মানা ?
ঘুমটা সঠিক হয়েছে ওর দিনে এবং রাতে ?
হঠাৎ কেন রাজার ছেলে গোল আঁকে খাতা তে ?
পাত্র মিত্র,পারিষদে করেন আলোচনা,
খবর পাঠান গণকেরে,করতে যে গণনা।
ডেকে পাঠান চিত্রকরে,নৈয়ায়িক প্রবীন,
লেখক-কবি,রাজ-কবিরাজ,ওঝা ও গুণিন।
দিকে দিকে খবর নিয়ে সেপাই রা সব ছোটে,
এমন আজব দেখার জিনিস নিত্য কি আর জোটে ?
গণক এসে খড়ি দিয়ে ছক কেটে উঠানে,
বিচার করেন,'গ্রহরা সব কে আছে কোন স্থানে'।
হাতের রেখা,পায়ের রেখা,সব ক'রে বিচার,
রায় ঘোষণা করেন শেষে মুখটি ক'রে ভার।
"শনি এখন বক্রী আছেন বৃহস্পতির ঘরে,
অশান্ত মন রাজার ছেলের,তাই তো এমন করে।
গ্রহের পূজা করতে হবে,শান্তি স্বস্ত্যয়ন,
মুক্ত হলে গ্রহের প্রকোপ,শান্ত হবে মন।"
চিত্রকর এক এসে বলে,-"বিমূর্ত এ ছবি,
ক্ষিতির উপর বিরাজমান নীল গগনের রবি।
সাদা পাতায় কালোর আঁচড়,আঁধার এবং আলো,
শিল্পী-জগৎ 'প্রতিভা' এক নতুন খুঁজে পেলো।"
খবর পেয়ে সেথায় এসে প্রবীণ নৈয়ায়িক,
উচ্ছাসেতে বলেন,"অহো ! কোনটি অধিক ঠিক।
'খাতার মাঝে বৃত্ত',না কি 'বৃত্ত খাতার মাঝে',
সেই মীমাংসা হলেই,এ সব লাগবে দশের কাজে।
চলতে থাকুক চুল চেরা এই তত্ত্ব বিশ্লেষণ,
নস্য নাকে দিয়ে সুখে করি নিরীক্ষণ।"
এলেন কবি চশমা চোখে অতি আধুনিক,
উদাস চোখে তাকিয়ে বলেন,ভেবে দিক বিদিক-
"দুনিয়া টা গোলক ধাঁধা,কুহেলিকা ময়,
তারই মাঝে তুমি আমি,কেউ কাহারও নয়।
বৃত্তাকারে জীবন মরণ ঘুরে ফিরে আসে
সুবোধ বালক তাহাই বুঝি খাতা তে প্রকাশে।''
রাজ-কবিরাজ দেখে বলেন,"পেটে হলে বায়ু,
মন উচাটন হয় যে এমন,কমতে থাকে আয়ু।
ছাগলাদ্য ঘিয়ের সাথে পিষে নিমের ফল,
মিশিয়ে তাতে আধেক মধু,আধেক গোলাপ জল।
চাটনি খেতে হবে ক'দিন,দিনে দু-তিন বার,
সুস্থ হলে এমন ছবি আঁকবে না তো আর।"
গুণিন ওঝা এসে বলেন,"ব্যাপারটা অদ্ভুত!
বাড়ির ভিতর ঘুরছে দেখি আবছায়া এক ভূত।
তার কু নজর পরেছে ওই রাজার ছেলের পরে,
তাই তো এমন অশান্তি তে গোল্লা এঁকে মরে।
ভূতের পূজা-ই করুন,যে দিন ভূত চতুর্দশী,
খিলখিলিয়ে হাসবে ছেলে,মন টা হবে খুশী।"
রাজার বাড়ী যজ্ঞ,পূজা,নেই কো কারো ঘুম,
পায়রা উড়ায়,বাজী পুড়ায় লক্ষ লোকের ধুম।
রাজার ছেলের স্ফুর্তি ভারী,মুখে মধুর হাসি,
সবাই বলে তোমার আঁকা বড়ই ভালবাসি।
উৎসাহেতে রাজার ছেলে আঁকে আর ও গোল,
স্তাবকেরা চালায় প্রচার,বাজিয়ে ঢাক,ঢোল।
দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে,রাজার ছেলের কথা,
কথার সাথে কথা জুড়ে,লতায় বাড়ে পাতা।
দেশ বিদেশের ব্যবসায়ী,বুদ্ধিজীবী,ধনী,
রাজার ছেলের আঁকা ছবি কেনেন টাকা গুনি।
অমূল্য সব ছবি বিকায় লক্ষ,কোটি দরে,
সে সব ছবি পায় যে শোভা,ধনীর ঘরে ঘরে।
দরিদ্র এক চাষীর ছেলে,খবরটা কে শুনে,
দোকান থেকে সাদা খাতা আনলো যে এক কিনে।
পেনসিলেতে যত্ন করে আঁকলো খাতায় গোল,
ভেবেছিলো তার বাড়ীতে ও পড়বে শোরগোল।
উৎসাহেতে বাবার হাতে খাতা দিয়ে বলে,
'সাদা খাতার পাতাতে গোল আঁকে রাজার ছেলে।
আমিও তাই এঁকেছি যে,দেখো কেমন হলো।'
চাষী বলে করুণ মুখে,মুখটি করে কালো,-
"রাজার ছেলে যা আঁকে,তা কুড়ায় অনেক নাম,
দেশের ধনী লোকের কাছে তার যে অনেক দাম।
একই জিনিস আঁকলে তুমি খুঁজবে সবাই দোষ,
বলবে এটা কি এঁকেছিস,"বাপের অণ্ডকোষ”?
রচনাকাল : ৩০/১/২০১৩
© কিশলয় এবং শ্রী সমর কুমার সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।