পাড়ার কবি ক্ষেপা ভজন এসে,
বললে-"দাদা,করো না উপকার!
লিখেছি যে কবিতা অনেকগুলো,
পড়বে কে তা ? লোক মেলা যে ভার।
যার কাছে যাই,সেই বলে- 'শোন ভজা,
আমার এখন বড়ই কাজের চাপ,
সময় করে আসিস বাপু পরে,
আজকে আমায় করতে হবে মাপ।'
টাটকা,তাজা কবিতাগুলো শুধুই
পড়ে থেকে হচ্ছে কেবল বাসি,
সবাই কি আর বাসি মড়া ঘাঁটে?
তাই ভাবলাম,তোমার কাছেই আসি।
জানলা দিয়ে দেখি,তুমি বসে-
খাতা খুলে,চক্ষু বুঁজে ভাবো,
ওতেই হবে,এর বেশী কি চাই!
তোমায় ছেড়ে কার কাছে আর যাবো ?
ঘুম ভাঙতেই আজকে সকাল বেলা-
ইচ্ছে হলো,শব্দ নিয়ে খেলি,
অভিধানের শব্দ বেছে নিয়ে,
মনের সুখে খেলেছি যে হোলি।
পড়তে হবে তোমায় দিয়ে মন!
বলতে হবে, মন্দ,না কি খাসা!
কানা ডোমের বাঁশবন ই যে বাগান,
তাই তো দাদা,তোমার কাছে আসা।"
খাতা খুলে চক্ষু আমার স্থির,
খটমট শব্দ সারি সারি,
অর্থ তবু যদিও করা চলে,
কবিতা কি তায় বলতে পারি ?
গোটা গোটা অক্ষরেতে ভজন
যা লিখেছে,পড়ছি সবাই শোনো,
হুবহু ওর লেখা দিলাম তুলে,
যোগ করি নি কিছুই আমি জেনো।
"শাখোট শাখায় শাঙল শাখামৃগ
স্মের বদনে শকর-কন্দ খায়,
উড়ুম্বরে উটক্করা বায়স
উড্ডীয়মান শলভ পানে চায়।
সহকারের মূলে শতমূলা-
শতপদী মণ্ডলী কিলবিল,
শল্লকী ধায় বল্মীকের স্তুপে,
সরট ঠোঁটে ঘূর্ণায়মান চিল।
মগরা শুন এক মহাশঙ্খ লয়ে
ক্রীড়ারত,গোধার পরে দিঠি,
কোবিদারে দ্বিরেফ নাড়ে পাখা,
ফুলে ফুলে পরাগ মিলন চিঠি।
তড়াগে টান অম্লজানের,ভাসে
চিত্রফলক,রোহিত,শকুল,বদাল,
শ্যামাক ক্ষেত্রে তৃণাদ গলস্তনী,
হাল তবিয়ত- 'হজম হামেহাল'।
বসন্ত শেষ,নিদাঘ আগুয়ানে-
দর্দুর দল,দাত্যূহ অস্থির,
ঢোসকা,ঢ্যাঙা,ঢেমনা চেরা জিভে
বাতাস কাটে,উচ্চে দোলায় শির।
কুণ্ডলাকার কিঞ্চুলুক মাটি,
পলাণ্ডু চাষ,মাচানে রাজফল,
যামিনীতে যামঘোষেরা কাঁদে,
শিকার শিকায়,ক্ষুধায় হীনবল।"
মুচকি হেসে বলতে হলো-"ভজন,
কবিতা তোর সরেস মিহিদানা,
কণায় কণায় রসের ছড়াছড়ি,
শুরু থেকে শেষ অবধি টানা।"
(মন্দ বলার উপায় কি আর আছে ?
কবি মানেই ছিটেল,অভিমানী,
মন্দ কেন বললে,তখন বোঝাও,
কি দায় আমার !! ব্যাখ্যা দেবো,শুনি?)
খুশীর তোড়ে,না কি বেজার স্বরে,
বললো ভজন-"ঠিক ধরেছি আমি,
বুজরুকেরা জাঁকিয়ে বসে আছে,
তারাই তো আজ কবি! যেমন-'তুমি'।
মনের কথা লিখব সহজ করে,
যুগ আধুনিক,হবে না কবিতা ?
ঘাটতি মেধার,কায়দা দিয়ে ঢাকা,
কত না ছক,কত না ভণিতা!!!
ছিটেল ভজন হোক না আধা-পাগল,
কথাটি ওর মিথ্যে মোটেই নয়,
ভেজাল যুগে আসল মেলা কঠিন,
'কবি কারা ?'- তাই নিয়ে সংশয়।
দুরূহ সব শব্দ জোড়া দিয়ে-
লিখছে যারা,দিচ্ছে যুগের দোহাই,
হোক না যতই স্ব-ঘোষিত কবি,
পাঠক মনে নেই তাহাদের ঠাঁই।
*****************************
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি
*****************************
রচনাকাল : ২৯/৩/২০১৩
© কিশলয় এবং শ্রী সমর কুমার সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।