অতিথি সেবার ইস্তাহার
******************
জাঁকিয়ে গরম পড়লে পরেই কেবল বাজে ফোন,‘
কেমন আছো?’-খবরটা নেন,যতেক আপন জন।
সারা বছর নেইকো খবর,নেইকো আনাগোনা,
পড়লে গরম,মনটা নরম,আহ্লাদে আটখানা!
এ-কথা,সে-কথা বলে,জানতে সবাই চায়-
“দার্জিলিঙ-এ যাব এবার, কোথায় থাকা যায় ?”
কেউ বা বলেন-“কাছেই যখন তোমার নিজের বাড়ী,
আপন জনের সাথে থাকার সুযোগ কেন ছাড়ি ?”
কেউ বা বলেন-“আগে গিয়ে উঠবো তোমার ঘরে,
দার্জিলিঙে যাব না হয় দু দিন থাকার পরে।”
অনেক লোকেই বলেন-“আহা ! সিকিম এত কাছে!
না বেড়িয়ে ফিরবো ঘরে,এমন বোকাও আছে ?”
কেউ বা আবার এসব ছাড়াও নেপাল,ভুটান যান,
তাদের সেবায় ওষ্ঠাগত এই গরীবের প্রাণ।
সবার মুখে একই কথা,দশ-বারো দিন মোটে,
থাকতে নিজের আপন জন আর হোটেলে কে ওঠে?
সব জিনিসের সীমা আছে,করলে অতিক্রম,
থাকে না আর লজ্জা-শরম,আত্মীয়তার ভ্রম।
এই যে সবাই আমার বাড়ী আসেন দলে দলে,
তাদের বাড়ী যেতেই হবে,মন থেকে কেউ বলে ?
আগুন দরে বাজার থেকে জিনিস কিনে এনে-
অতিথিদের মাঙ্গনা সেবা,সইবে কত প্রাণে ?
বুদ্ধি করে ইস্তাহার এক ছাপিয়েছি তাই-
আসতে যে চায় আমার বাড়ী,তক্ষুনি পাঠাই।
“আপন যে জন,যেথায় আছো,দার্জিলিঙে এলে,
থাকতে আমার বাড়ী কেন উঠবে গো হোটেলে?
অতি ভালো মানুষ আমি,মনটা যে দিলখোলা,
হাসি মুখেই কথা বলি,নেইকো ছলা কলা।
হিমালয়ের উদার হাওয়ায় উদার আমার মন,
অতিথিদের করবো সেবা,এই করেছি পণ!
আমার বাড়ী এলে পরে কি কি সুযোগ পাবে,
রেলের টিকিট কাটার আগে পড়ে নিলেই হবে।
সকাল বেলায় চায়ের সাথে লুচি,ছোলার ডাল,
দুপুর বেলায় মাংস,পোলাও,খাসির মেটের ঝাল।
রুই-কালিয়া,ইলিশ ভাপা,চিতল মাছের পেটি,
শেষ পাতে দই,নানা রকম মিষ্টি পরিপাটি।
বিকাল বেলায় চায়ের সাথে মুচমুচে পকোড়া,
কড়া পাকের বালুশাই,আর পনির-ছানাবড়া।
রাত্রিবেলা ছানার পায়েস,হরেক পিঠা,পুলি,
শোবার আগে হজম করার কবিরাজি গুলি।
সত্যি না কি পরখ করার ইচ্ছা যদি জাগে,
আসতে পারো সপরিবার,খবর দিয়ে আগে।
মাথা পিছু হাজার টাকা প্রতি দিনের ভেট,
কোথায় পাবে থাকা-খাওয়ার সস্তা এমন রেট?
বিশেষ অসুবিধা হলে,মিলবে কিছু ছাড়,
তোমার সেবায় আমার যেন না হয় টাকা ধার।
সবটা পড়ে যদি বোঝো,নেই কো অসুবিধা,
অতিথিদের সেবায় আমার কিসের তবে বাধা?”
**********************************
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি
***********************************
রচনাকাল : ৩১/৭/২০১৪
© কিশলয় এবং শ্রী সমর কুমার সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।