মধ্যবিত্তের বড়ই জ্বালা,
উপর-নীচের খাচ্ছি ঠ্যালা,
বল দেখি কি করি উপায় ?
নিম্নবিত্ত হিংসে করে,
উচ্চবিত্ত ঘাড়ে চড়ে,
মাঝে পড়ে জীবন বৃথাই যায় !
কেহই আমায় দেয় না ছেড়ে,
সুযোগ পেলেই গালি পাড়ে,
খুঁজে পেতে নিন্দা-মন্দ গায়।
যতই ভাবি থাকব দূরে,
সেধে এসে গায়ে পড়ে,
নিত্য নতুন বিপদ কে ঠেকায় ?
নিম্নবিত্তের মনে ধন্দ,
বলে-"আমার স্বভাব মন্দ,
খুব বেশী তো করি না উপায়,
কেমন ক'রে বানাই বাড়ি,
গিন্নী কে দিই গয়না,শাড়ী,
চুরি ছাড়া এ সব করা যায় ?"
উচ্চবিত্ত করে হেলা,
বলে-"ব্যাটা কাঁচাকলা,
পাকে না কো,কাঁচাই থেকে যায়।
মওকা বুঝে নে না লুটে,
খেয়ে ফেল সব চেটেপুটে,
আধা-চোরের ভাগ্য কি পাল্টায় ?"
মধ্যবিত্তের ভাগ্য বটে !
শাঁখের করাত যেমন কাটে,
আগু-পিছু ছাড়ান নাহি পায়।
সামনে কাঁটা,পিছে কাঁটা,
কাটা ঘা-য়ে নুনের ছিটা,
কাঁটায় কাঁটায় জীবন কাঁটাময়।
হঠাৎ মাথা গেল ক্ষেপে,
হিসাব-নিকাশ ক'রে,মেপে,
উপায় কিছু না করলেই নয় !
মই নাই,তাই চড়তে নারি,
লাফ দিয়ে তো নামতে পারি !
কিছু লোকেও শান্ত যদি হয়।
অনেক ভেবে,ফন্দি ক'রে,
গরীব সেজে বেড়াই ঘুরে,
নিম্নবিত্ত শান্তি যদি পায়,
চাল চলনে পড়ে ধরা,
গরীব সেজে ঠাট্টা করা?
ফল বিপরীত,বেজায় চটে যায়।
নামতে গিয়ে লাগছে দ্বিধা,
উঠতে তবে কিসের বাধা ?
সব ভীরুতা করতে হবে জয়।
উচ্চবিত্ত হ'তে গেলে,
মিশতে হবে সেই মহলে,
অভিজ্ঞতায় যদি কিছু হয়।
আবার ভাবি আকাশ-পাতাল,
উচ্চবিত্তের কি হাল-চাল,
গাড়ি চড়া,ভোজন,মদ্য পান ?
মাঝে মাঝে বাঈজী পাড়া,
ইয়ার নিয়ে স্ফূর্তি করা,
আয়েস করে শোনা চটুল গান ?
টানা ক'দিন গাড়ি চড়ে,
মদ্যপান আর ভোজন ক'রে,
জমা টাকায় পড়ল ভীষণ টান।
বাইজী পাড়া যেতে হ'লে,
যা আছে,তা ও যাবে চলে,
শেষে কাটা যাবে নাক ও কান !
উঁচু তলার লোক সেয়ানা,
মনের তালা কেউ খোলে না,
পথের হদিস দিতে নাহি চায়।
নীচের তলা বড়ই ঘোলা,
কথায় তাদের বিষের জ্বালা,
সকল কিছুই কেড়ে নিতে চায়।
এবার তবে কি করি আর ?
কোন দিকেই যেতে নাচার,
মধ্যবিত্ত থাকাই দেখি ভাল !
একটু এ-দিক,একটু ও-দিক,
তাল ঠুকলে সঠিক-বেঠিক,
আঁধার মনে জ্বলতে পারে আলো।
*****************************
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি
******************************
রচনাকাল : ২৩/৮/২০১২
© কিশলয় এবং শ্রী সমর কুমার সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।