প্রেম কথাটি খুবই ছোট,কিন্তু এর মাহাত্ম অনেক।জীবনে কখনও প্রেমে পড়েনি
এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল।প্রত্যেকটি মানুষই প্রেমে পড়ে।কখনও মনের ভুলে,
কখনও আবেগে,কখনও মনের টানে মানুষ প্রেমে পড়ে।প্রেমের ধরন একেক জনের
একেক রকম।আমি নিজেও এর ঊর্ধ্বে নই।আমারও মন আছে,আছে প্রেমের আকাঙ্খা,প্রত্যাশা।
আছে প্রেমের ঘটনা,আছে প্রেমের অভিজ্ঞতা।আছে না পাওয়ার বেদনা।
সুন্দর একটা মেয়ে আর সুন্দর একটা মন কে না পেতে চায়?কেউ পায়,কেউ ভোগে
না পাওয়ার হতাশায়,আবার কেউ পেয়েও হারায়।কেউ প্রেম করে অনেক বাধা বিপত্তি
পেড়িয়ে,আবার কেউ সবার চোখ এড়িয়ে। আমাদের সময় যখন খুব ছোট ছিলাম তখন
এসব প্রেম টেম কিছু বুঝতাম না।বিশেষ করে আমরা যারা গ্রামের ছেলে ।ছোটবেলায়
যখন প্রাইমারীতে পড়তাম তখন গ্রামের কেউ কেউ ঠাট্টা করত আমাকে আর টিনা’কে
জড়িয়ে।টিনা ছিল আমার ক্লাসের 2nd girl আর আমি 1st.টিনা ছিল সম্পর্কে ভাতিজী।
একই গ্রামে বড় হয়েছি দু’জন।একসাথে গ্রামের সবাই মিলে স্কুলে যেতাম।খুব মজার
ছিল প্রাইমারী জীবন।হেঁসে খেলে পার করেছি ছেলেবেলা আর প্রাথমিক পাঠশালা।
বৃত্তি পরীক্ষার জন্য প্রাইভেট পড়তে যেতাম আমাদের স্কুলের ম্যাডাম নাজমা আপার কাছে।
যদিও উনি সম্পর্কে আমার ফুফু ছিলেন কিন্তু ম্যাডাম হবার কারনে আপাই বলতাম।
আমরা একসাথে দল ধরে মাঠ পেরিয়ে উনার বাসায় পড়তে যেতাম।তিন জন যেতাম একসাথে।
আমি,টিনা আর ওর ছোট বোন ডিনা।এটা নিয়েও অনেকে ঠাট্টা করত।লজ্জা পেতাম কিন্তু খারাপ
লাগতনা।কারন টিনা দেখতে মন্দ ছিলনা।একদিন আমি আর নাজমুল মিলে টিনার চোখে খালেদা
বাম লাগিয়ে দিয়েছিলাম।নাজমুল আমার বন্ধু আর খালেদা বাম হল আমাদর স্থানীয় হাটে বিক্রি
হওয়া এক ধরনের মলম।যা মাথাধরা,জ্বালাপোড়া ইত্যাদি উপশমে ব্যবহৃত হয়।ও তখন
হেড স্যারকে নালিশ করেছিল।বলা বাহুল্য সকল শিক্ষকই আমাকে অনেক বেশি স্নেহ করতেন।
কারনটা অবশ্য আমার আব্বা ।কারন উনিও একজন হেডমাস্টার।কিন্তু বাপের পরিচয়ে সেদিন
কাজ হয়নি।ইসমাইল স্যার অর্থাৎ হেডস্যার আমাকে মেরেছিলেন।খুব অভিমান হয়েছিল ওর উপর ।
কিন্তু এর স্থায়িত্ব ছিল মাত্র দেড় দিন।তারপর আবার সেই উদ্দিপনা মুখর দিন।
আরেক দিনের কথা বলি,তখন টিফিন পিরিওড ছিল।হঠাৎ ঠিক করলাম আমরা অভিনয় করব।
যেই কথা সেই কাজ।আমি হলাম নায়ক আর যথারীতি টিনা আমার নায়িকা।আমাদের ফিল্মি নাম
রাখা হল সালমান শাহ্ আর মৌসুমি।কারনটা পরিস্কার।তখন কেয়ামত থেকে কেয়ামতের বাজিমাত
চলছিল।ঘরের মধ্যে আমরা শুধু ক্লাস ফাইভের ছাত্রছাত্রীরা ছিলাম।কিন্তু যখন দরজা খুলে সবাই
বের হলাম তখন ছোট ক্লাসের সবাই আমাকে সালমান ভাই আর ও কে মৌসুমি আপু বলে ডাকা
শুরু করল।আমাদের বুঝতে বাঁকি রইলনা যে ওরা দরজার ওপাশ থেকে সব শুনে ফেলেছে।
এমন আরো অনেক মজার মজার ঘটনার ঘনঘটার মধ্য দিয়ে এক সময় কিভাবে যেন
প্রাইমারীর পাঁচটা বছর কেটে গেল।
সেই সময় ভান্ডারপুর স্কুলের খুব নামডাক ছিল।কারন বৃত্তি এবং এস এস সি পরীক্ষাই
ভাল রেজাল্ট হত।কোলা হাই স্কুল ছিল কিছুটা পিছিয়ে।যদিও এখন গনেশ উল্টে গেছে।
ভান্ডারপুর হাই স্কুল আমাদের বাড়ি থেকে একটু দূরে হওয়ায় আমি ভর্তি হই কোলা হাই স্কুলে।
আর যাদের সাথে মহাআনন্দে পাঁচটা বছর কাটালাম তারা প্রায় সবাই ভর্তি হল
ভান্ডারপুর হাই স্কুলে।ফলে সবার সাথে তখন থেকে সম্পর্কের ভাটা পড়তে শুরু করে।
অপর দিকে প্রসারিত হতে থাকে মাধ্যমিক বন্ধুমহল।প্রথম প্রথম ভাল লাগতনা ।
কিন্তু পরে যখন সবাই পরিচিত হতে লাগল তখন থেকে শুরু হল নতুনদের সাথে মেলামেশা,
চলাফেরা ,সক্ষতা।সত্যিকথা বলতে কি ,প্রথম দিকে ভীষন অন্তর্মূখি ছিলাম আমি।
অপরিনত বললে ভুল হবেনা।মজার মজার সব ঘটনার ছড়াছড়ি আমার হাই স্কুল জীবন।
যার অধিকাংশই আমার মনে নেই ।কিন্তু যেটুকু মনে আছে তাও একেবারে কম নয়।
তখন চরিদিকে নকলের জয়জয়কার ছিল।আমি সেদিন মাধ্যমিক জীবনের প্রথম পরীক্ষা
দিতে গিয়েছিলাম।কিছুক্ষন পরীক্ষা দেবার পর স্যার ঘন্টা পড়ার কথা বলছেন।
আর যায় কোথায়?দিলাম কেঁন্দে ।স্যার আমার কান্নার কারন জানতে চাইলে বললাম,
আমার এখন পর্যন্ত যা লেখা হয়েছে তা দিয়ে পাশও হবেনা স্যার।স্যার বুঝতে পেরে বললেন,
আরে বোকা এইটা ঘন্টা হবার ঘন্টা,পরীক্ষা শেষ হবার নয়।সেদিনই জানলাম পরীক্ষার মধ্যে
প্রতি ঘন্টায় ঘন্টা পড়ে। আগেই বলেছি তখন নকল চলত।আর এই বিষয়ে আমার কোন
ধারনায় ছিলনা। প্রস্তুতি কম হওয়ায় সমাজ পরীক্ষার দিন সাথে নোট নিয়ে গেলাম।
উদ্দেশ্য প্রশ্ন কমন না পড়লে দেখে লিখব। যথারীতি পরীক্ষা শুরু হল।আর প্রস্তুতির
নড়বড়ে অবস্থার কারনে বই বের করে লিখতে লাগলাম।তাও আবার বেঞ্চের উপড় বই রেখে।
কেরানী স্যার দেখতে পেয়ে এসে ধরলেন আমাকে।জিজ্ঞেস করলেন ,কেন দেখে লিখছি?
আমার সোজা উত্তর,নকল করছি স্যার।শুনেই স্যার আমার কান টেনে দিলেন, সাথে পেটের চামড়াও।
সত্যি বলছি,সেদিন থেকে আজ অবধি নকলের সাথে আর দেখা হয়নি।কথা গুলা মনে করলে
আজও খুব মজা পাই। বছর পেরিয়ে উঠলাম সেভেনে।একদিন ক্লাস করছিলাম।
জিল্লু স্যার নিচ্ছিলেন সাধারন বিজ্ঞান ক্লাস।হঠাৎ ক্লাসরুমে প্রবেশ করল এক অনন্যা।
আমি অপলক তাকিয়ে।বলল,বাবা আমাকে কয়টা টাকা দাও,আইসক্রীম খাব।
কালো ফ্রগ পরা নগ্ন পায়ের সেই অতূলনীয়া সেদিন আইসক্রীমের সাথে খেয়েছিল আমার মাথা।
তারপর থেকে এক সেকেন্ডও ভুলতে পারিনি তাকে।আসলে ভোলা হয়ে ওঠেনি।কি করে ভুলি
প্রথম দেখায় যার প্রেমে পড়েছি তাকে? সেই শুরু।নিজের কাছেই শিখে নিলাম প্রেম।
খোঁজ নিয়ে জানলাম সে আমাদের স্কুলের পাশেই অবস্থান করা প্রাইমারী স্কুলে ক্লাস ফাইভে পড়ে।
শুরু হল দূর থেকে দৃষ্টি আকর্ষন।আমার সাথে সবসময় থাকত আবিদ।ও আমাকে যথেষ্ট
সহযোগিতা করেছিল। ছেলেটার কথা মনে পড়লে কষ্ট লাগে।কারন সে এখন অস্বাভাবিক,
মানষিক প্রতিবন্দি। যাই হোক,মেয়েটার জন্য তখন থেকেই বুকের কোথায় যেন একটা
অজানা ব্যথা হতে লাগল যার প্রতিসেধক জানা ছিলনা।জিল্লু স্যারের বাসায় প্রাইভেট
পড়তে যেতাম।যদিও উনি কাউকেই তখন পড়াতেন না।একাই পড়তাম ওনার শোবার ঘরে।
আমাকে পড়াতে উনি অনেকটা বাধ্যই ছিলেন।কারন আব্বা ছিলেন ওনার শিক্ষক।প্রতিদিন সকালে
যেতাম সেখানে পড়তে।একদিনও মিস করতাম না।কারন ছিল অবশ্য দুইটা। একটি ছিল পড়া
আর তারচেয়েও বড় কারন ছিল ‘রিজভী’কে দেখা। ও হ্যাঁ ,বলতে তো ভুলেই গেছি।
অদ্বিতীয়ার নাম ছিল রিজভী।ফারজানা রাহী রিজভী।অনেকবার তাকে মনের কথা বলার
চেষ্টা করেছি কিন্তু সাহস করে বলা হয়ে ওঠেনি।যদি সে ভুল বোঝে? তবে সেও বুঝতে পারত
এবং আমাকে দেখার জন্য বাহিরে দ্বাঁড়িয়ে থাকত।মাঝে মাঝে পড়া দেখানোর নাম করে ওর
বাবার কাছে আসত ,যেখানে আমি থাকতাম।এভাবেই দূর থেকে চোখাচখি করেই দিন চলে যাচ্ছিল।
একদিন ইংরেজি প্রাইভেট পড়ে আমি আর বিপ্লব রিজভীদের বাড়ির পাশ দিয়ে আসছিলাম।
যদিও ঐ দিয়ে যাবার কোন দরকারই ছিলনা।কারন ওদের বাড়ি ঠিক উল্টা দিকে।তবুও
তিন বেলা না দেখলে বুকটা কেমন খালি খালি লাগত।সকালে ওদের বাড়িতে,বেলা বাড়লে
বিকাল অবধি স্কুলে আর সবশেষে সন্ধ্যায় আবার ওভাবে।এর জন্য পরিশ্রমও কম করতে হয়নি ।
শুধু মনভরে দেখার সুবিধার্থে ওদের বাড়ির ঐটুকু রাস্তা আমি সাইকেলের পেছনে
বসে থাকতাম আর বিপ্লব চালাত।বিনিময়ে সারাটা রাস্তা আমাকেই চালাতে হত।তবে
কখনও কষ্ট মনে হয়নি।মনে হয়েছিল আজীবন চালাতে পারব।ওদের বাড়ির কাছে আসতেই
দেখি বাড়ির প্রধান দরজার কাছে রিজভী ওর মা আর ওর দাদী বসে গল্প করছে।
আমাকে দেখেই ওর মা থামতে বলল।এবং কাছে ডেকে নিয়ে যা বলেছিল তা মনে হলে
আজও লজ্জা পাই।খুব খারাপ কিছু না বললেও সেটা হতাশ করার জন্য যথেষ্ট ছিল।
মৃদু ভর্তসনা ,যেটা হয়ত আমার প্রতি ওর মায়া বাড়িয়ে দিয়েছিল। আমাদের স্কুল ভবনের
পাশেই মসজিদ ছিল।একদিন সেই মসজিদের টিউবয়েল থেকে হাতমুখ ধুয়ে আসছিলাম।
স্যার যখন রোল কল করতেন তখন নিজেরটা হয়ে গেলেই টয়লেটে যাবার নাম করে
বের হয়ে আসতাম।স্যারও কিছু বলতনা কারন না থাকলে স্যারের রোল কল করতে
সুবিধা হয়।তবে শর্ত হল ,ক্লাস শুরুর আগেই ফিরে আসতে হবে।আর রুম থেকে বের
হয়েই মসজিদের টয়লেটের দিকে যেতাম।যদিও স্কুলেরটাও বেশ ভাল ছিল তবুও যেতাম।
এক্ষেত্রেও দুটি উদ্দেশ্য ছিল।এক ,ওদের রুমের সামনে দিয়ে যাওয়া আর দুই, একটু বেশি ঘুড়া।
সেদিন মসজিদের টিউবয়েল থেকে হাতমুখ ধুয়ে আসছিলাম।আমার সাথে ছিল আমার
স্কুল জীবনের বেস্ট ফ্রেন্ড এবং আমার অন্ধ ভক্ত ‘ডলার’।স্কুল ভবনের কোনার কাছাকাছি
আসতেই হঠাৎ পেছন থেকে দুটো মেয়ে আমাকে দ্বাঁড়াতে বলল।আমাদেরকে মসজিদের দিকে
যেতে দেখে ওরা আমাদের পিছে পিছে এসেছিল বুঝলাম।ওদের একজনের নাম ‘তুলি’ ,
আরেকজনের নাম আমি জানতাম না। আমরা দ্বাঁড়ালাম।তুলি আমার হাতে একটা চিঠি
দিয়ে বলল, ‘এটা রিজভী আপনাকে দিয়েছে’।চিঠিটা হাতে নিয়ে আমিতো কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
তখন মনের আনন্দে গাইতে ইচ্ছে করছিল, ও সুন্দর মেয়েটি, পেয়েছি তোমার চিঠি ।
ডলার ছোঁ মেরে আমার হাত থেকে চিঠিটা নিয়ে দৌড় দিল।সবাই মিলে পড়ল চিঠিটা।
বিপ্লব,হীরা,শামীম,আবিদ,সুমন,মিলন,ইয়াকুব সহ আরো অনেকেই।আমিও না করিনি।
এখানেও কারন ছিল দুইটা।এক,ওদের অনেকেই রিজভীকে পছন্দ করত।
তাছাড়া না করার কোন কারন নেই।কারন রিজভী ছিল প্রায় এগার শ ফুলের মধ্যে
একমাত্র লাল গোলাপ।অনন্যা,অতুলনীয়া,অদ্বিতীয়া,অপরূপা সবটায় বলা যায় ও কে।
আর দ্বিতীয় কারনটা হল,ওদের অনেকের ধারনা ছিল যে,রিজভীর সাথে আমার সম্পর্ক
হবেনা কখনও।তাদরকে বৃদ্ধঙ্গুলি দেখানো।ও তখন ক্লাস সিক্সে আর আমি এইটে।
অবশেষে সবার হাত ঘুরে চিঠিটা আমার হাতে এল।একটা চুমু দিলাম চিঠিটাতে।
তারপর খুললাম চিঠিটা। সেই সময় ও কবিতার বই পড়ে খুব মজার কিছু কথা
লিখেছিল।যা একান্তই আমার জন্য।তার সমস্ত চিঠি জুড়ে ছিলাম শুধুই আমি।আর কারো
অস্তিত্ব ছিলনা সেখানে ।সেদিনের সেই অনুভূতির কথা লিখার মত ভাষা আমার জানা নেই।
শুধু স্মৃতিতে ফিরে গেলে আন্দোলিত হই এটুকু বলতে পারি আর বাঁকিটা ভীষন অনুভব করি।
এটাই আমার জীবনের প্রথম প্রেমের মৃদু হাওয়া,যার উৎস রিজভী আর সীমান্ত আমার মন
মন্দির।যেখানে রিজভী ছাড়া কল্পনাতেও কাউকে ঢুকতে দেইনি আজও। শুরু হয় চিঠি চালাচালি।
তবে দুই আব্দুলের চিঠির সাথে আমাদের চিঠির কোন মিল নেই।তাদের চিঠি ছিল প্রতিহিংসা
বাড়ানোর চিঠি,দেশকে অস্থিতিশীল করার চিঠি,অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেবার চিঠি।
কিন্তু আমাদের চিঠি ছিল দুটি মনের একান্ত আপন হবার চিঠি। শুরু হয় কানাকানি।
একসময় মুখে মুখে রটে যায় আমাদের প্রেম কাহিনী।জানতে পারে আমার পরিবার।
তবে মেজভাই জেনেছিল সবার আগে কারন ও কোলা বাজারে আড্ডা দিত সবসময়।
কিছু বলেনি।ছোটভাই একদিন আব্বা আম্মার সামনে বলেছিল।খুব অসুবিধা হয়নি।
একটু বকেছিল আর আমি লজ্জা পেয়েছিলাম।জানতে পারে স্যারও। একদিন বৃত্তির কোচিংএ
আমাকে মেরেছিল খুব।সবাই বলে ৫৪ টা বেতের বারি মেরেছিল আমাকে। আমিও রাগ, জিদ
আর অভিমানে চুপচাপ দ্বাঁড়িয়েছিলাম।ক্লাসের সবাইকেই মেরেছিল,তবে পরিমান প্রায় দশগুন কম।
মারার কারন ছিল জ্যামিতি বক্স না নিয়ে যাওয়া। বীজগণিত ক্লাসে কেউ জ্যামিতি বক্স নিয়ে
যাবেনা এটাই স্বাভাবিক।মূল কারন ছিল আমার ভালবাসা,আর ওরা মার খেয়েছিল আমাকে
সহযোগিতা করার দায়ে।তবে ক্ষতি হয়নি,বরং বহুগুনে বেড়ে গিয়েছিল আমাদের ভালোবাসা,
আমাদের আবেগ।আমাকে মারার খবর শুনে পাগলের মত বাবার সামনে দিয়ে ছুটে এসেছে
আমাকে দেখতে।অথচ আগের রাতেই আমার জন্য চুলার গরম কাঠি দিয়ে ও কে অনেক
মেরেছে ওর মা। এবং আর যেন কিছু না শোনে এমন করে শাশিয়েছে।।যেটা আমি পরে
জেনেছি।উপরন্তু ওর জন্য আমাকে এতগুলা মার খেতে হয়েছে এই জন্য আমার প্রতি নিজেদের
অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ওকে উল্টা বকেছিল আমার বান্ধবী,শাকিরা,রুমা,সমাপ্তী,খুশিরা।
আর একদিনের কথা বলি।ও আমাকে একটা চিঠি দিয়েছিল যার মধ্যে ছিল কিছু টাকা যা
দিয়ে সাইটেস(সিভিট জাতীয় ট্যাবলেট) কিনে খেয়েছিল বিপ্লব,ডলাররা।আমিও খেয়েছিলাম।
তবে আমার জন্য ঐ চিঠিতে আর যা ছিল তা আমি সেদিনই জীবনে প্রথম পেয়েছিলাম।
ঠোঁটে লাল লিপস্টিক দিয়ে তার ছাপ ফেলা হয়েছিল চিঠিতে।আর ঠোঁটটা ছিল আমার মন
মনিষা রিজভীর।আমার পাগলামি দিন দিন বেড়েই যাচ্ছিল।প্রতিদিন নিয়মিত টিফিন পিরিয়ডে
ও আসত আমার কাছে।এ ব্যাপারে সহযোগিতা করত সমাপ্তী,রুমা,খুশি,নিলু সাথীরা।
কালীপূজার সময় মেলা বসে কোলা বাজারে।আর ঐ মেলা মানেই উৎসব।একবার দু জনেই
মেলাতে গিয়েছিলাম।হঠাৎ বৃষ্টি এসেছিল,সাথে মৃদু বাতাস।ওর কাছে ছাতা ছিল।ঐদিনই প্রথম
দেড় বর্গফুটের মধ্যে পাশাপাশি হেঁটেছিলাম দুজন।বৃষ্টিতে দুজনেই আধাভেজা।তবে ঠান্ডা লাগেনি।
ও পাশে ছিল সে জন্যই হয়ত।আমরা ঘুরছিলাম আর ওর বান্ধবী তুলি ওর ছোটবোন নাজিফা
এবং ছোটভাই তৌফিককে নিয়ে আদর্শ ক্লাবের বারান্দায় দ্বাঁড়িয়ে ছিল।আর আমার সাথে
গিয়েছিল আবিদ আর ডলার।মেলায় যেয়ে মোশাররফ,বিপু,সিহাবদের সাথে দেখা হওয়ায়
ওরা ওদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিল।ঐদিনই নাজিফা আমাকে দুলাভাই বলেছিল।ওদের পাড়াতে,
এমনকি আশে পাশের স্কুলের ছেলেরাও ওর জন্য পাগল ছিল।ওরা যখন আমাদের কেমন
চলছে জানতে চাইত তখন বুঝতাম ওদের দুঃখটা।স্কুলের অনুষ্ঠান গুলাতে স্যার দেখে
ফেলার ভয়ে পাশাপাশি না বসলেও সামনা সামনি বসতাম যাতে দুজন দুজনকে দেখতে পাই।
তখনকার প্রেমে দেখতে পাওয়াতেই অনেক পাওয়া ছিল,আর এখন রুম ডেট না হলে কিছুই
পাওয়া হয়না। এভাবেই এক সময় মাধ্যমিক জীবনের পাঠ চুকিয়ে ওকে ছেড়ে উচ্চ শিক্ষার
জন্য চলে আসি শহরে।সাথে ছেড়ে আসি আত্মার একান্ত আত্মীয়কে।তারপর থেকে আজ অবধি
তার সাথে কোন দেখা ,যোগাযোগ নেই,কথাও নেই। কি করে থাকবে?তখন তো আর
মোবাইল ছিলনা।চিঠি লেখারও উপায় ছিলনা। কারন বাড়ির ঠিকানায় লিখলে পড়বে ওর
মায়ের হাতে।আর স্কুলের ঠিকানায় মেয়েদের নামে আসা চিঠি যাচাই করা হয়।
মানে হল সোজা ওর বাবার হাতে।
চলবে...
রচনাকাল : ২৯/৯/২০১২
© কিশলয় এবং নির্জন দ্বীপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।