"করিলে রক্তদান বাঁচিবে একটি প্রাণ"
আমরা অনেকেই নিজের ও পরিবারের আপনজনদের রক্তের গ্রুপ জানি কারণ হঠাৎ কোনো দুর্ঘটনা শল্যচিকিৎসা বা রক্ত রোগ (HIV, Malaria, Anemia, Hepatitis B/C)জনিত কারনে রক্তক্ষরণ হলে যাতে দ্রুত রক্ত জোগান দিয়ে প্রিয়জনকে যেন সুস্থ করে তুলতে পারি। আজকাল বিদ্যালয়ে শিশুদের নাম ঠিকানা বয়সের সাথে রক্তের গ্রুপ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। নোবেলজয়ী অস্ট্রিয়ান জীববিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডেস্টেইনার রক্তের গ্রুপ A, B ,O ,AB আবিষ্কার করেছিলেন। ২০০৪ সাল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, রেডক্রস এবং রেড ক্রিসেন্ট একত্রে ১৪ই জুন এই বিজ্ঞানীর জন্মদিনটিকে আন্তর্জাতিক রক্তদাতা দিবস হিসেবে সারা বিশ্ব জুড়ে পালন করে চলেছে। ১৮১৮ সালে জেমস ব্লান্ডেল প্রথম সফলভাবে মানুষ থেকে মানুষে রক্ত সঞ্চালন করেন। স্বেচ্ছায় রক্তদানের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এবং বিনামূল্যে স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতি বছর এই দিনটি উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই দিনটির উদ্দেশ্যে হল নতুন নতুন রক্তদাতা তৈরী করা, নিরাপদ রক্ত ব্যবহারে উৎসাহদান করা।
রক্ত মানবদেহের খুব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান । সঠিক মাত্রায় রক্ত দেহে না থাকলে দেহ দুর্বল নির্জীব হয়ে পড়ে। বিজ্ঞানীরা যথেষ্ট চেষ্টা করেও এখনো রক্তের বিকল্প আবিষ্কার করতে পারেনি। রক্ত কোন কলকারখানায় তৈরী হয়না । মানুষের জন্য মানুষকেই রক্ত দিতে হবে। ধর্ম জাতি নির্বিশেষে সকলের রক্ত একই লাল রঙের।
১৮ -৫০ বছর বয়সী যেকোন সুস্থ পুরুষ বা নারী যার ডায়াবেটিস উচ্চ রক্তচাপ থাইরয়েড নেই, যিনি মানসিক রোগী বা মাদকাসক্ত নন,অন্তঃসত্ত্বা নন বা সন্তানকে স্তন্যপান করাননা রক্তদান করতে পারবেন। রক্তদানের নির্দিষ্ট স্হানে রেডক্রস, হাসপাতাল, যেকোন রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন যেখানে করা হয়েছে সেখানে রক্তদান করা যায় কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার পর।
রক্তদানের ফলে উচ্চ রক্তচাপ ও কোলস্টেরলের মাত্রা কমে তাই হৃদরোগে, স্ট্রোক ইত্যাদির সম্ভাবনা কমে। প্রতি ৪মাস পরপর রক্তকণিকাগুলো এমনিতেই ভেঙে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। তাই তাদের এভাবে নষ্ট না করে রক্তদান করলে মানুষের প্রাণ বাঁচে। বছরে ৪বার একজন মানুষ রক্তদান করতে পারে । আমরা বিভিন্ন ভুলভালধারণার বশবর্তী হয়ে রক্তদানে নিরুৎসাহী থাকি।অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হল এই যে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮২% মানুষ বাস করলেও স্বেচ্ছায় দান করা বাৎসরিক ৮ ইউনিট রক্তের মাত্র ৩৮% এখান থেকে সংগৃহীত হয় ।
"রক্ত দিন এবং বিশ্বকে একটি স্বাস্থ্যকর জায়গা করুন "
এই হল ২০২০ আন্তর্জাতিক রক্তদাতা দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ।
"নিরাপদ রক্ত জীবন বাঁচায়"
এবছর কোভিড-১৯ এর জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা virtualy ১৪ই জুন উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ।
রক্তদানের সময় যে ডোনার কার্ড দেওয়া হয় তা দেখিয়ে রক্তদাতা তার প্রযোজনে রক্ত সংগ্রহ করতে পারে। সরকারি ও বেসরকারি ভাবে আরও বেশি উদ্যোগ গ্রহণ করে স্বতঃস্ফূর্ত রক্তদাতাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য আমরা সবাই প্রচেষ্টা চালিয়ে গেলে সমগ্র পৃথিবী রক্তের আকালে আর ভুগবেনা।এই লেখাটি যাঁরা পড়েছেন তাঁরা যেন নিজ জীবনে রক্ত সংকটের মুখোমুখি হই বা না হই রক্তদানে অঙ্গীকারবদ্ধহতে পারি। রক্তের মান ও সুরক্ষা নিশ্চিত করে রক্ত অপচয় রোধে রক্তের ঘাটতি দূর করার মধ্য দিয়ে আমরা এভাবেই আন্তর্জাতিক রক্তদাতা দিবসে মানববন্ধন গড়ে তুলতে পারি তবেই সার্থক হবে ১৪ই জুন।
বিশ্বজুড়ে অসংখ্য রক্তদাতা বিশেষত ছাত্র ছাত্রীরা এবং যুবসম্প্রদায় এই রক্তদান উৎসবে প্রধান ভূমিকা পালন করে ।সকল স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতাদের কাছে মানবসমাজ যুগে যুগে কৃতজ্ঞ ,যাঁর লক্ষ লক্ষ প্রাণ বাঁচাতে সাহায্য করে চলেছেন।
রচনাকাল : ১/৬/২০২০
© কিশলয় এবং অর্পিতা চক্রবর্তী কণ্ঠ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।