আজ আমি যার কথা বলতে এসেছি যদিও সে আর শিশু নেই।তবে শিশু বয়সেই তার শৈশব হারানোর সাক্ষী আমি। আজও ওর সেই 15বছর আগের শিশু মুখটা মনে পড়লে আমি অস্হির হয়ে যাই। এক বিশেষ পাপবোধ আমায় চেপে ধরে। নুসরতের শৈশব হারানোর যন্ত্রনায় আমিও কি দায়ী নই???
সালটা 2005 দক্ষিণ 24পরগনার এক মুসলমান পাড়ায় গজিয়ে ওঠা এক বিশাল খৃষ্টান স্কুলে আমার প্রথম চাকরি। আমি তখন 25। teacher's training শেষ হয়নি বলে পুরোপুরি শিক্ষিকা হিসাবে joinকরতে দিলেন না principal। আমি join করলাম একটা project এ।coordinator হিসাবে। আমার কাজ ছিল ঐ এলাকার schoolছুট শিশুদের আবার school মুখি করার জন্য যাবতী কাজ করা। ওদের বাড়ী গিয়ে সমস্যা শুনে বুঝে জড়ো করে রোজ school এর ছুটির পর ওদের পড়ানো। যদি সম্ভব হত তো ওদের কারো কারোকে আবার সরকারি school এ ভর্তি করে দেওয়া। বই পত্র টিফিন এসব সরবাহ করে ওদের স্কুল যাওয়াতে পড়াশুনোতে encourage করা। ধীরে ধীরে বাড়ছিল আমার টোলে বিভিন্ন ধরনের বিভিন্ন বয়সেরstudent সংখ্যা। ওরা আসত...কলকল করতো। আমার আসে পাশে ঘুরঘুর করত সপ্তাহে 5দিন 3টে থেকে 6টা।ওদেরই একজন ছিল নুসরত।12 বছরের নুসরত শুধু নামে নয় রূপে ও সে স্বনামধন্যা। একটু বেশীই নেওটা ছিল আমার। ওছিল ওর আব্বার প্রথম স্ত্রীর একমাত্র সন্তান।ওর আব্বার সাথে ওর মা এর তলাক এর পর ও থাকত বাবা আর ছোটো মা এর সংসারে ছোটো ভাই এর আয়ার মত। নিজের মা দিল্লিতে কাজ করত আর ওকে মাঝে সাঝে phone করে খবরাখবরও করত।মা কে ও খুব miss করত। ছোটোমার সংসারে আধপেটা খেয়ে ভরপুর মারধোর সয়ে স্কুলের পথ বাধ্য হয়ে ছেড়ে জীবনের শৈশবটাকে ওদের দলের বাকিদের মতই কাটিয়ে দিচ্ছিল। আমি ওর কথা শুনে ওর ফুলের মত শরীরটায় মারধোরের চিহ্ন গুলো দেখলেই ওকে বলতাম কেন এভাবে এখানে পরে পরে মার খাচ্ছিস। মা যখন phone করে বলতে পারিসনা তোকে এখান থেকে নিয়ে যেতে। ও হাসত কেবল।
হঠাৎ একদিন এসে বলল"miss মা বলেছে এই ঈদে এসে আমায় নিয়ে যাবে।" আনন্দ হল শুনে খুব। তবু ওর চলে যাওয়ার সময় যত এগিয়ে আসছিল আমার মনটা খারাপ হচ্ছিল। ওর fairwell করলুম সব্বাই মিলে class এর। খুব আনন্দ করেছিলাম সেদিন পূজোর ছুটি পড়ার দিনটা। ও কথা দিয়েছিল দিল্লি থেকে phone করবে আমায়।
ছুটির পর class এ ঢুকেই বুকটা ছ্যাত করে উঠদের সবার আমায় ঘিরে থাকাটাকে ছাপিয়ে যাচ্ছিলওর না থাকাটা।ধীরে ধীরে সময়ের সাথে সাথে মনটাকে মানিয়ে নিচ্ছিলাম এই ভেবে ও এখন তো ভালো আছে। কিন্তু সেই যে গেল আমায় যেন ভুলেই গেল। একটা phone ও করেনি নুসরত আমায় দিল্লি থেকে। প্রায় বছর ঘুরতে গেল নুসরত ওর মা এর কাছে গেছে। আমাদের class চলে কালের নিয়মে। আমি ওর পাড়ার বাকিদের ওর কথা জিজ্ঞাসা করি কখনও সখনও। কেও কোনো সদ্উত্তর দিতে পারে না আমায়।
একদিন ওর পাড়ার রুবীনা হাফাতে হাফাতে class এ এসে বলল"miss নুসরতের খবর শুনেছো????" একঝলক দমা হাওয়া এল যেন। বললুম"এসেছে বুঝি?নাকি আসছে??????"এর উত্তর টা এত অপ্রত্যাশিত এল যে আমার সবটুক যেন কেউ নিংড়ে নিয়ে গেল। রুবীনা এক নিশ্বাসে বলে গেল"ও আর এসেছে। ওর আববা আজ বলল কি,ওর মা ওকে কয়েক মাস আগেই নাকি আরবের কোন শেখ এর কাছে কুড়ি হাজার টাকায় বেচে দিয়েছে"।।
class কোনোরকমে বন্ধ করে ছুটলাম ওর বাবার ছোট্ট কাঠের দোকানটায়। নিজের ইন্দ্রীয় গুলোকে অগ্রাহ্য করে মানতে না চাওয়া মনটাকে টেনে হিজরে ওর বাবার দোকানের সামনে এনে দাঁড়াতেই লোকটা হাউমাউ করে কেঁদে উঠল।
বিলাপ করে চলল সমানে এই বলে"এখান থেকে মা এর কাছে যাওয়ার জিদ যে ওর কেন চাপল। শেষ করে দিল ঐ ডাইনি টা ওর জীবন। মেরে ফলল আমার মেয়েটাকে........." আরও কিছু বলছিলো লোকটা, আমার কানে যায় নি। আমি ভাবছিলাম তবে কি আমি শেষ করে দিলাম ওর শৈশবটা?আমার প্ররোচনায় ও গেছিল দিল্লি। আমি কি করে বুঝবো যে ওকে নিরাপদ আশ্রয় দিতে গিয়ে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিলুম।
আজ ও নিজেকে ক্ষমা করতে পারিনা। principal বুঝিয়েছিলেন নিজের ঘাড়ে অকারণে দোষ নিও না। ভুলে যাও। আমি পারিনি। school ছেড়ে পালিয়ে গেলাম। আরও দুরের একটা school এ।
কিন্তু আজ ও পারিনি ওকে ভুলতে। আজও আমি আমার student দের মধ্যে ওকে খুঁজি। রাস্তায় কোনো সুন্দরী মেয়ে দেখলে অপলকে তাকিয়ে থাকি।আজ ও প্রায় 27....আর কি চিনতে পারবো???
ও ভালো আছে তো?আদেও আছে তো?আচ্ছা আমায় কি দোষারোপ করে ও?????বলতে পারেন কেও???
রচনাকাল : ৩০/৫/২০২০
© কিশলয় এবং অঙ্কিতা বসু কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।