শৈশবকাল হলো ঠিক ছোট্ট চারাগাছের মতো। একটি ছোট্ট গাছকে যেমন বেড়ে উঠতে গেলে, ফলনশীল হতে গেলে অনেক যত্ন দিয়ে বড় করতে হয়, ঠিক তেমনই একটি শিশুকেও নিজের পায়ে দাঁড়াতে এবং পরিবারের ও সমাজের পাশে প্রকৃত মানুষ হয়ে দাঁড়াতে গেলে তাকেও তার প্রয়োজনীয় সমস্ত চাহিদাগুলি যথাযথভাবে পূরণ করে বড় করে তুলতে হয়। এই প্রয়োজনীয় উপাদানগুলির মধ্যে অন্যতম হলো শিক্ষা। শিক্ষার অভাব মানুষকে তথা পুরো সমাজকে এক বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দেয়।
প্রতি বছর ১২ই জুন তারিখটিকে পালন করা হয় "বিশ্ব শিশুশ্রম-বিরোধী দিবস" হিসেবে। নতুনভাবে চেষ্টা করা হয় শিশুশ্রমিকদের সংখ্যা কমিয়ে বা সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করে তাদের শিক্ষার মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে। গরীব পরিবারের ছেলেমেয়েরা অভাবের তাড়নায় পরিবারের পাশে আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়াতে ছুটে যায় কাজের খোঁজে। কিন্তু এ সময়ে তাদের শ্রমদান করার নয়, এ সময় হলো শিক্ষার আলোতে নিজেকে বিকশিত করার সময়। তাই এই শিক্ষার আঙিনা থেকে দলছুট শিশুশ্রমিকদের সমাজে সঠিকপথে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব নিতে হবে প্রতিটি মানুষকে। চায়ের দোকান বা অন্যান্য জায়গায় এই সব শিশুশ্রমিকদেরকে যেমন বোঝানোর প্রয়োজন শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা, ঠিক তেমনই তাদেরকে ও তাদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য ও শিক্ষার আশ্বাসও দিতে হবে। তা না হলে যে সময় তাদের খেলাধূলা ও পড়াশুনার মাধ্যমে নিজের শারীরিক ও মানসিক ব্যাপ্তি ঘটানোর সময়, ঠিক তখনই তারা নিক্ষেপিত হবে অজ্ঞানতার অন্ধকারে। অচিরেই লুপ্ত হবে শৈশব, তৈরি হবে এক অন্ধকার সমাজ যেখানে দরিদ্ররা দিনে দিনে দরিদ্রতর হতে থাকবে। তাদের ওপর অত্যাচার বাড়তেই থাকবে। শ্রমজীবী মানুষেরা যারা আমাদের সমাজের হাতিয়ার তারা দূর্বল হয়ে পড়বে। ফলস্বরূপ বিপন্ন হবে সমাজ তথা সভ্যতা।
রচনাকাল : ৩১/৫/২০২০
© কিশলয় এবং পূর্বালী চক্রবর্তী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।