• ১০ম বর্ষ ১ম সংখ্যা (১০৯)

    ২০২০ , জুন



বাবা হওয়া নয় মুখের কথা।
আনুমানিক পঠন সময় : ৪ মিনিট

লেখিকা : মুসকান ডালিয়া
দেশ : India , শহর : Dankuni

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , জুন
প্রকাশিত ১৬ টি লেখনী ২৯ টি দেশ ব্যাপী ৯৭৫৮ জন পড়েছেন।
Muskan Dalia
(বিষয় -আন্তর্জাতিক পিতৃ দিবস।)
--
বাবা হওয়া নয় মুখের কথা।
মুসকান ডালিয়া। 
----
প্রিয় আব্বু। 
জীবনের অনেকগুলি বসন্ত পেরিয়ে এলাম । আজও পাইনি কারুর কাছে ঠিক তোমার মতো স্নেহ ভালবাসা। লোকে বলে জুন মাসের তৃতীয় রবিবার নাকি আন্তর্জাতিক পিতৃ দিবস। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক থেকেই এটার শুরু।  আচ্ছা আব্বু সত্যিই কি তোমার  জন্য কোন বাবা দিবস দরকার?  আমার তা মনে হয় না। যিনি আমার  রক্ত, হৃদয়, শিরা - ধমনী, অস্থি মজ্জায় মিশে রয়েছেন তাকে সন্মান করার, ভালবাসার  আলাদা দিনের কোনো প্রয়োজন নেই। আমার জন্য সব দিবসই বাবা দিবস। এতটা আগে বুঝিনি,  কিন্তু যেদিন তুমি আমাকে চিরজীবনের মতো ছেড়ে গেলে, সেদিনই যথাযথ বুঝতে পারলাম বাবা আসলে কি? ঠিক কতখানি প্রয়োজন বাবাদের?
প্রথম মা ডাকটা তোমার মুখেই শোনা। প্রথমবার ভাত রান্না করতে গিয়ে যখন গলিয়ে দলা পাকিয়ে দিয়েছিলাম। তুমি বলেছিলে- "জানিস ডালু- আমার না আজ দাঁতে ভীষণ ব্যাথা। ভাগ্যিস তুই নরম ভাত করেছিস, নাহলে যে কিভাবে খেতাম আজ? আর ওই যে ওই দিনটা, যেদিন কাঁচা হাতে  প্রথমবার মাংস রান্না করতে গিয়ে লঙ্কায় ডুবিয়ে দিয়েছিলাম। খেতে গিয়ে ঝালে তোমার জিভ জ্বলে গিয়েছিল। চোখ দিয়ে জল পড়ছিল। কিন্তু তুমি তৃপ্তি করে খেয়ে বললে-" মাংস একটু ঝাল ঝাল না হয়ে খেয়ে মজা হয়না। তুই তো তোর আম্মুর থেকেও ভালো রেঁধেছিস।" বিশ্বাস করো সেদিন নিজে খেতে গিয়ে বত্রিশ গ্লাস জল খেয়ে ফেলেছিলাম। তারপর ওই যে সেদিন মনোয়ারা বুয়া এসে বলেছিল- "মেয়েটির মুখে লক্ষীশ্রী, শুধু রংটা যদি মায়ের মতো পেতো, তাহলে---তাকে তুমি থামিয়ে বলেছিলে- "আমার মেয়ের আসল নাম  জানো?জাহানারা, মানে  বিশ্বভূষন। দেখো একদিন ও আমার সত্যিই বিশ্বের অলংকার হয়ে উঠবে। "
সেদিন অত বুঝিনি কিন্তু আজ সেকথা মনে পড়লে চোখের কোন ভরে আসে অজান্তে। কতই না আগলে রেখেছিলে আমায়। সব ঝড়, ঝঞ্জা কিভাবে যেন পেরিয়ে যেতাম। তোমার বইয়ের আলমারি, তোমার আতরদান, তোমার খন্ড কোরান শরীরের ত্রিশটি পারা, তোমার জায়নামাজ, তোমার তসবী সব কিছুতে আজও তোমার স্নেহস্পর্শ খুঁজে পাই। 
জানো আব্বু, এখন আর বিছানায় সাদা চাদর বিছাইনা। তুমি আর আমি দুজনেই সাদা চাদর খুব ভালবাসতাম। শ্বশুরবাড়িতে তুমি দেখা করতে এলেই আমি সাদা চাদর বিছিয়ে দিতাম। তুমি এসে বসতে আর মুগ্ধ হয়ে বলতে- তোর সব কাজ একদম আমার মনের মতো। এখন সাদা চাদর বিছাতে গেলেই মনে হয়- তুমি তো আর আসবে না? আর বলবেনা- "তুই শ্বশুরবাড়ি চলে আসার পর আমার ঘর আর মনের মতো সাজানো হয়না। আমার বইয়ের আলমারি আর ঠিকঠাক গোছানো হয়না। আমার কড়া চা আর খাওয়া হয়না। "
আমি জানিনা তুমি মিথ্যে বলতে। কারণ আমার মা যে ছিলেন পরম রূপ গুনের আধার। মা ও যে সব সুন্দর করে রাখতে পছন্দ করতেন। তার হাতের রান্না খেয়ে লোকে বলতো - সাক্ষাৎ অন্নপূর্ণা।  আসলে বাবারা মনে হয় এমনই হয়। কন্যা সন্তান যেন তাদের জীবনের সবচেয়ে প্রিয় উপহার৷ মেয়ের খুশিই যেন তার জীবনের অক্সিজেন। 
খুব মনে পড়ে - প্রথম যখন পুরানো বাড়ি ছেড়ে নতুন বাড়িতে গৃহপ্রবেশ করলাম।  তুমি সেদিন আসতে পারনি। পরে যেদিন আসলে- আমার একমাত্র সিলিং পাখাটা বিগড়ে ছিল। অসহ্য গরম ছিল সেদিন। আমি হাতপাখা নিয়ে হাওয়া করছিলাম তোমায়। দেখলাম তোমার চোখের কোনে মেঘ জমেছে। ঠিক পরের দিন সন্ধ্যায় নতুন সিলিং পাখা পাঠালে আমার ঘরে। আমি সেদিন অতটা বুঝিনি, আজ বুঝি সন্তানের কষ্ট বাবামা কে ঠিক কতখানি পীড়ন করে। আমার একতলা ঘরে বিয়ে দিয়ে তুমি তিনতলার শোবার ঘর ছেড়ে নীচে চলে এসেছিলে। এরপর যতদিন আমার নতুন বাড়ি হয়, তোমাকে উপরের তলায় যেতে দেখিনি। মরশুমের প্রথম ফল, শীতের নলেন গুড় তিন মেয়ের বাড়ি না পাঠিয়ে তুমি মুখেও তুলতে না। আমার দোতলা বাড়ি জুড়ে তোমার উপহারের ব্যাপ্তি।  আমাদের জন্য দামী জামাকাপড় কিনে তোমার জন্য বরাদ্দ থাকতো সাধারণ সুতীর পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি। তখন স্কুলের স্যুট বুট পরা বাবাদের দেখে তোমায় খুব সাধারণ মনে হতো। কিন্তু আজ মনে হয়- 
"তুমি তো তুমিই বাবা, সেই তব ঋণ।
আমার জীবন দিয়ে শুধি চিরদিন।"
মায়েরা হয় চিরন্তন কষ্টসহিষ্ণু। হাজার কষ্ট সয়ে সন্তানকে জন্ম দেওয়ার একমাত্র উপায় মা। আর সেই সন্তানকে পরম সুখে সুখী  রাখার একমাত্র উপায় বাবা। প্রতিটি মেয়ে তার বাবার রাজকন্যা, তা সেই বাবা যতই গরীব হোক না কেন। মায়েরা সন্তানের জন্ম দেন শরীরে আর বাবারা হৃদয়ে। তার হয়তো বাবাদের প্রতি মেয়েদের টান, অনুভূতিটা একটু বেশিই হয়।
আব্বা- কিছুই করা হয়ে ওঠেনি তোমার জন্য। শুধু পরম করুনাময়ের কাছে  একান্ত প্রার্থনা  - আকাশের ওই অনন্ত নীলে, চাঁদের আলোক আভায় মিশে ভালো থেকো তুমি আর মা। ভালো থাকুক পৃথিবীর সব বাবা, সব মা।
তোমার জন্য অনেক কিছু লেখার ইচ্ছা হয়। লিখতে থাকি আর চোখ ঝাপসা হয়ে যায়। তোমার বর্ননা করার ভাষা আমার নেই।
অনাদি অনন্ত পথের তোমাদের ঠিকানা আজ আমার জানা নেই। তবে অন্তরের নেটওয়ার্ক এর ক্ষমতা অপরিসীম। জানি আমার এই কান্নাভেজা নীলচিঠি ঠিক পৌঁছে যাবে তোমার কাছে, মায়ের কাছে। 
ভালো থেকো আব্বু। আম্মুকে দেখো। খুব কষ্ট হয় তোমাদের জন্য।
--- তোমার আদরের ডালু।
রচনাকাল।
(13th june--2020
Saturday.. 18ঃ40 pm)
রচনাকাল : ১৪/৬/২০২০
© কিশলয় এবং মুসকান ডালিয়া কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 6  China : 23  Germany : 3  Hungary : 1  India : 190  Ireland : 24  Malaysia : 1  Norway : 1  Philippines : 3  Saudi Arabia : 5  
Sweden : 7  Ukraine : 12  United States : 270  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 6  China : 23  Germany : 3  Hungary : 1  
India : 190  Ireland : 24  Malaysia : 1  Norway : 1  
Philippines : 3  Saudi Arabia : 5  Sweden : 7  Ukraine : 12  
United States : 270  
লেখিকা পরিচিতি -
                          মুসকান ডালিয়া ১৯শে নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি একজন গৃহবধূ এবং দুই সন্তানের জননী। এইসবের পাশাপাশি তিনি সাহিত্য চর্চাতেও সমান আগ্রহী। লেখালেখি তাঁর ভীষণ প্রিয়, তাঁর লেখার চেষ্টা সেই ছোট্ট বয়স থেকে। স্কুলের দেওয়াল পত্রিকায় প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন ছোট ছোট পত্র-পত্রিকায় তিনি লেখালিখি করেন। তাছাড়া তিনি নানারকম অনলাইন পত্র-পত্রিকাতেও লেখেন। লেখালিখির পাশাপাশি তিনি কনে সাজানো আর ঘর সাজানোর শখ রাখেন।

-"যদি প্রেরণা দাও, এক আকাশ গল্প লিখতে পারি।
সাহিত্য তোমাকে যে ভালবাসি ভারি।" 
                          
  • ১০ম বর্ষ ১ম সংখ্যা (১০৯)

    ২০২০ , জুন


© কিশলয় এবং মুসকান ডালিয়া কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
বাবা হওয়া নয় মুখের কথা। by Muskan Dalia is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৪৮৮৬৬৮
fingerprintLogin account_circleSignup