জুন মাসের মাঝামাঝি । মৌসূমী বায়ূ প্রবল বেগে বয়ে চলছে হিমালয়ের সাথে আলিঙ্গনের জন্যে । জলপাইগুরীর এই মনোরম ফুরফুরে বাতাসে অনুপ আর আমি গেটে দাঁড়িয়ে আছি । অনুপ , মিহির আর আমি জলপাইগুরি সরকারী ইনজি্নয়ারিং মহা বিদ্যালয়ের ১ম বরষের ছাত্র - এক রুম এর সাথী - প্রানের বন্ধু । আজকে 2nd sem সবে শেষ হল । মানে আমরা 2nd year এ উঠে গিয়াছি । আর ragging এর কোনো চিন্তা নেই । এক মাস পড়ার কোনো চাপ নেই । আজকের পরীক্ষা ভালো হয়নি কিন্তু জলপাইগুরীর পড়োন্তো বিকেলের এই মনোরম পরিবেশ মনকে হারিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কোন আজানা আচেনা রূপকথার দেশে । হটাৎ এই নিরবতাকে ভেঙে মিহির অনুপ কে বললে
- কি রে বাইরে ওভাবে কি করছিস ?
অনুপ জবাব দিলে
- আমরা 2nd yr এ উঠে গেলাম? এই তো সেদিন এসেছিলাম কলেজে বড়োবড়ো ব্যাগ নিয়ে বাবার হাত ধরে। মনে ragging এর ভয় আর নতূণ ইনজি্নয়ার হওয়ার উত্তেজনা ।
- হাঁ রে ২ নং হস্টেল ছাড়তে খারাপ লাগছে ।
আমি বললাম - চল আজকে সারা রাত এই হস্টেল টা কে উপভোগ করি । অনুপ প্রস্তাব দিলো আজকে ROYAL STAG দিয়ে শেষ দিনটাকে মানাতে । কিন্তু মিহির বাধা দিয়ে বললে - ROYAL STAG এর থেকে বড়ো নেশার বস্তু আমার জানা আছে । সেটা হল "১৯" নং রুমের বন্ধ থাকার রহস্য উদ্ধার করা । আমি তো এক কথায় রাজী । কারন ওই রুমটা প্রথম থেকেই বন্ধ থাকতো । বলা হত ওটা ভূতের রুম .কোনোরকমে বিজয় দাকে (আমাদের get man come seiner দের থেকে বাঁচাবার মানুষ) পটিয়ে ওই রুম এর তালার চাবি নিয়ে আসলাম । সন্ধ্যা ৭ তাই সুরু হল আমাদের operation ghost hunt. প্রায় ২৫ বছর পর রুম টা খোলা হল । ধূলো আর বাজে গন্ধে রুমে থাকা প্রায় অসম্ভোব । মিহির বড়ো টরচ লাইট নিয়ে রুম এর চারিদিক ভালো করে দেখতে লাগলো । আমি হটাৎ লহ্ম করলাম রুমের মধ্যে একটা লকার তালা দিয়ে বন্ধ । বাকি চারিদিকে কোনো আস্বাবিকতা লহ্ম করলাম না । তালা টা ভালকরে পরিহ্মা করে দেখলাম যে তাতে জং ধরে গেছে । বোধ-হয় ২০ - ২৫ বছর ধরে ওটা বন্ধ আছে । অনুপ কোথা থেকে লোহার রড নিয়ে এসে তালাটা ভাঙতে লাগলো । আনুপের শক্ত হাতের দুই আঘাতে তালাটা ভেঙে গেলো । লকারের ভেতর আমরা আনুসন্ধিন্সু চোখ রাখলাম । দেখলাম এক সিসি তেল, এক ফাইল কোল্ড ক্রিম, কিছু পুরানো বই । মিহির হটাৎ বললে - বইয়ের মাঝে ওটা ডায়রী মনে হচ্ছে । আমি ডায়রী টা নিয়ে দেখলাম ১৯৮৬ সালের আর তার মলাটে লেখা রয়েছে "মাসুদ আহমেদ , 3rd year electrical engg."
3rd July, 1986
আমি সেক মাসুদ আহমেদ আঠারো বছর বয়স । সবে ডায়রী লেখা শুরু করেছি । জানি না কতো দিন লিখবো বা কতো দিন এটা continue করতে পারবো । এখন আমি ট্রেনে । Darjeeling mail এর sleeper কামরার passage এর সিট এর upper birth এ শুয়ে শুয়ে ডায়রী লিখিছি । এটাই আমার প্রথম long journey । জলপাইগুরি যাচ্ছি jalpaiguri govt. Engg. college এ engineering পড়ার সুযগ হয়েছে । কালকে admission হবে । আমার মামা বলেন engineering খুব কঠিন বিষয় । এটা পড়তে পড়তে অনেকে নিজেকে হারিয়ে ফেলে । তাই এটা থেকে বাঁচার জন্যে নিজের সাথে কথা বলতে হবে । আর এটার সহজ উপাই হল সারা দিনে যা হলো তা ডায়রী তে লীপিবদ্ধ করা । তাই আমার মহামান্ন্য মামার যুক্তি মেনে আজকে প্রথম ডায়রী তে হাত দিলাম । ডায়রীর প্রথম পাতায় 3rd July দিয়ে মানে আজকের তারিখ দিয়ে সুরু করলাম কারন আগের পাতা নণ্ঠ হবে আর তা ছাড়া আমি রোজ লিখতে পারবনা । তাই ডায়রীর তারিখে না লেখাই ভালো আর ডায়রীতে তারিখ উল্লেখ না করাই উত্তম ।
আজকে একটা ঘটনা ঘটলো । জেনারেল কামরাতে খুব ভিড় থাকায় এক গরীব যুবক ছেলে আমাদের কামরায় ওঠে । তার পরনে ছিলো আধময়লা প্যান্ট আর টাঁকি দেওয়া জামা । সে জিন্স টপ পরা এক ভদ্রমহিলার পাসে দাঁড়ায় । ভদ্রমহিলা ছেলেটি কে তাড়াবার জন্ন্যে নিজের জুতো পরা পা ছেলেটির গা ঠেকিয়ে রাখলো । এতে ছেলেটি না সরায় মহিলা বলতে লাগলেন ছেলে হয়ে মেয়েদের জুতো খেতে লজ্জা লাগেনা । ছেলেটি আপমানিত হয়ে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ালো । কিন্তু উনি এতেই ক্ষান্তো হন নি । টিটি আসলে তিনি ছেলেটি কে ধরিয়ে দেন । খুব খারাপ লাগল । অর্থের আহংকার মানুষ কে অন্ধ করে দেয় । মেয়েদের অহংকার ও ছোটো মন এর জন্যে মেয়েদের প্রতি একটা রাগ ছিল । আজকের ঘটনা সেটাকে ঘৃণা তে রৃপান্তরিত করলো ।
রাত্রি হয়ে গেলো । সবাই লাইট অফ করার জন্য বলছে । যাই ঘুমিয়ে পড়ি । .......................................
……………………………………………………………………………………………………….
Admission হয়ে গেলো । আমি এখন engineering কলেজের ছাত্র ......... ভাবলে রোমাঞ্চো লাগে । বাড়ীর আর্থিক অবস্থা খারাপ । ভেবেছিলাম নিক্লিওফিজিস্ক নিয়ে গবেষনা করবো । কিন্তু চাকরীর এই shortcut যায়গা নিতে হল । যাক এখন engineering নিয়ে কাটাবো । Admission এর ঝামেলায় তিনদিন ডায়রী লেখার সময় পাইনি । তবে কলেজ টা খুব বড়ো । ভালো লাগছে । আমরা এক রুমে চার জন করে আছি । ragging এখনও সুরু হয়নি । দাদারা তবে কীভাবে intro মানে নিজের introduction দিতে হবে শিখিয়ে গেছে । এই intro টা হয় পুরো বাংলা না হয় পুরো ইংলিশে দিতে হবে । কাল থেকে ক্লাস শুরু । হয়তো ragging ও । রাত হয়ে গেলো । ৯ টা থেকে ক্লাস । যাই ঘুমাই ........................................................................।
Ragging পুরো দমে চলছে সেই সাথে ক্লাস ও । তাই এক সপ্তাহ ডায়রী লেখা হইনী । weekend, আজকে শনিবার । তাই আবার লেখায় হাত দিলাম । তবে senior রা আমাকে চিনে গেছে । তাই খুব একটা Ragging খেতে হচ্ছে না । এখানে আমাদের মানে মেদেনিপুরের ছেলেদের টুম্পা বলে ডাকা হয়। টুম্পা এর পুরোটা হল (tumpa), tripical uncultured mednipurian public association.জানি না আমরা আবার uncultured কবে থেকে হলাম । বরং শিক্ষা ক্ষেত্রে আমরা সবার থেকে এগিয়ে ।... নাহ senior রা আবার ডাকছে । যেতে হবে । আজকে আর লেখা হলোনা ।
............................................................................................................।।
দীর্ঘ একমাস পর আবার ডায়ারিতে হাত দিলাম । এখন আমি মেসে একা একটি রুমে । হস্টেলের আমার রুমের ছেলেদের সাথে লাইট বন্দ করা নিয়ে একটা ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিলাম । তাই ভাবলাম । ওদের সাথে আর থাকবনা । তাই মেসে চলে আসলাম । এখানে একা একটা রুম পেয়ে গেলাম । ভাবলাম যাক লাইট নিয়ে আর ঝামেলা নেই । আসলে লাইট জ্বললে আমার ঘুম আসে না।
মেসটা কলেজ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে আরবিন্দ নগরে। জায়াগাটা সবার কাছে মাসকলাই বাড়ি নামে বেশি পরিচিত । আমার পাশের দুটোও single room। একরুমে থাকে আমার স্কুলের বন্ধু অখিল, আর আর একরুমে থাকে আমাদের এক বছরের সিনিয়ার মানস দা ।অখিল কম্পিউটার সাইন্স, মানস দা ম্যাকানিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ছে। বেশ ভালোহল । এই দুজনের সাথে আমার বেশ ভাব জমে গেছে । বেশ আনন্দে দিন কাটছে ।মেসের অন্য দিকে আরো পাঁচ জন আছে । তাদের সাথে তেমন মিশিনি । রাত্রি ২ টা বেজেগেছে । কালকে সকালে ক্লাসে যেতে হবে । আজ এই খানেই বন্ধ করলাম ........................................................................................................................................................................।।
ডায়রী লেখাতে নিয়মিত তো দূরের কথা, কখন লিখব আমি নিজেই জানি না । তাই যে দিন ঘটনাবহুল বা যে দিন কে মনে রাখবার মনে হয় সে দিনই ডায়রী লিখি ।
আজকে মেস থেকে সবাই মিলে তিস্তাপারে বেড়াতে গিয়েছিলাম । আজকে জলপাইগুরি শহরটা কে মোটামুটি ভাবে দেখলাম । বেশ নির্জন ও পরিষ্কার শহর । তিস্তা যাবার সময় সার্কিট হাউস, ফরেস্ট হাউস, দেখলাম । আমি নির্জনতা ভালোবাসি তাই শহরটা কে ভালোবেশে ফেললাম । তিস্তানদীটা বেশবড়ো । জলের স্রোতও খুব । আমরা সবাই নেমে তিস্তার জলে পা ধুলাম । খুব ঠান্ডা জল । আজকে পরীষ্কার ভাবে পাহাড় দেখলাম । পুরো উত্তর দিকটা কে ঘিরে রেখেছে । এখান থেকে পাহাড় খুব বেশি দূরে নয় । বিকেলের দিকে মেঘের আড়াল থেকে পাহাড়ের দর্শন হয় । সারিসারি মেঘ পাহাড়কে ঘিরে রয়েছে । এক মনরম দৃশ্য রচনা করে । লেখার আর কিছুই নেই । তাই এই পর্যন্তই আজকে লিখলাম ।
...............................................................................................................................................................
রবিবার, এই একটা দিন যেটাকে ভালোভাবে উপভগ করা যায় । আজকে আমরা মেসের সবাই মিলে চা বাগান ঘুরতে গিয়েছিলাম । কলেজের পাশ দিয়ে চা বাগানের রাস্তা । অনেক খানি জায়গা নিয়ে চা বাগান বিস্তৃত। সন্ধার সময় চা বাগান আরো মহময় হয়ে ওঠে । চারিদিকে ঝিঁ ঝিঁ পোকার আওয়াজ ও নাম না জানা এক পাখির মিষ্টি ডাক আরো রহস্যময় করে তোলে, ঠিক যেন বিভূতিভূষন বনধ্যপাধ্যায়ের লেখা আরন্যাকের মহালিখার আরন্য ।
মেসে দিনগুলি বেশ ভালই কেটে যাচ্ছে । সকাল ৯টা থেকে কলেজ । ছুটি হয় বিকেল ৪.৩০ সে । কলেজ থেকে এসে । আমরা তিনজন মিলে মেসের গেটে দাঁড়াই ও আড্ডাদিই । ওরা রাস্তা দিয়ে যাওয়া মেয়েদের দেখে । যেটা এই বয়সেই স্বাভাবিক । আমার এই মেয়েদের পছন্দ হয় না । মেসের পাশের বাড়ির কিছু মেয়ে এসে দাঁড়ায়, যাতে আমরা তাদের প্রেমে পড়ি । মেসের আর এক বন্ধু লালা কৌতুক করে বলে, “ প্রতেক সফল পূরুষের পিছনে একটি মেয়ের হাত আছে, কিন্তু কেউ জানেনা যে এই চালাক মেয়েরা কেবল সফল পূরুষের প্রেমে পড়ে” । কথাটা এই মেয়েদের দেখে সত্যি বলে মনে হয় । সত্যি কী অদ্ভুত এই মেয়ে জাতি । তবে অখিলরা আমাদের মেসের ঠিক বিপরীত দিকে বাড়ির এক মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে । কিন্তু ওই মেয়েটিকে কনোদিনও আমাদের দিকে তাকাতে দেখিনাই । অখিলরা বলে মেয়েটি খুব ভাল । একদিন মেসমালিক আমরা যাকে জেঠু বলি, কথায় কথায় বললেন যে মেসের বিপরীত দিকের বাড়ির মেয়েগুলি খুব ভাল । আমিও দেখি ওই মেয়েটি সবসময় বাড়ির কাজ করে । অন্য মেয়েদের মত মেসের ছেলেদের লাইন মারে না । মনে হল এই মেয়েটি সবার থেকে আলাদা । মেয়েদের প্রতি আমার রাগ থাকলেও এই মেয়েটির উপর রাগ করার কনো যুক্তি কখনও পাইনি । মানসদা বলে এই মেয়েটি স্ত্রী হবার পক্ষে একেবারে উপযুক্ত । যদি মানসদার প্রেমিকা না থাকত তাহলে মেয়েটিকে propose করতো । কিন্তু আমরা মেয়েটির নাম জানতাম না । অখিল কোথা থেকে মেয়েটির নাম জোগাড় করেছিল । নাম হল সোনা । কিন্তু সিওর ছিলাম না যে তার নাম সত্যিই সোনা কি না । আমি সোনাকে ভাল মেয়ে বললেও তারদিকে খুব একটা তাকাতাম না ।
যাই হোক পরীক্ষা চলে এল । আগের সেমে শরীর খারাপ থাকায় রেজাল্ট খুব খারাপ ছিল । এবার ভাল নাম্বার তুলতে হবে । আর মাত্র ১৫ দিন । এখন সবকিছু বাদ । সুধু পড়া আর পড়া ।
………………………………………………………………………………………………………
সত্যি আমরা ইজ্ঞিনিয়ারিং কলেজে আছি না প্রেসার কুকারে আছি বোঝা যায় না । পরীক্ষা আগে সব ল্যাবের লেখা আর অ্যসাইনমেন্ট লেখার চাপ দেয় , আগে এই কাজ গুলি দিলে চাপটা কম হত । আবার কালথেকে পরীক্ষার হবার কথা ছিল কিন্তু আজকে আবার বলেদিল পরীক্ষা একমাস পিছিয়ে গেল । মেসের সবাই বাড়ি যাবে বলছে । কালকে মনে হয় যাবে । তবে আমি যাবনা । এই সুযোগে পড়াটা এগোন যাবে । যাই হোক এবারে আমাকে TOP করতে হবে। কলেজের সেকেন্ড ইনটেক, সম্মান তো রাখতে হবে ।
............................................................................................................................................................
আজকে একটা অদ্ভুৎ ঘটনা ঘটোল । মেসের সবাই বাড়ি যাওয়ায় আমি একা হয়ে গেলাম । বিকেলে গেটের কাছে দাঁড়িয়ে মেসের কাছে ভাড়ায় থাকা এক ফ্যামিলির ছোট্ট বাচ্চা আমরা তাকে পুচকে বলে ডাকতাম, তার সাথে গল্প বলছিলাম । হটাৎ সোনা মেসের পাশের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল । এই রাস্তায় সে সাধারনত যায় না । তার সাথে আমার চোখচোখি হয়ে গেল । কী আতল ভেদী সে দৃষ্টি । হালকা ঘুম জড়ানো সে চোখের দিকে তাকিয়ে আমি অবশ হয়ে পড়লাম । পরক্ষনেই থাকতে না পেরে চোখটা নামিয়ে নিলাম । সত্যিই সৃষ্টিকর্তা সোনাকে মেয়ের সমস্ত গুন দিয়েই পৃথিবীতে পাঠিয়েছে । সে চোখটার কথা আমি কিছুতেই ভুলতে পারছিনা । আমার দেখা সবথেকে সুন্দর চোখ, হালকা ঘুমজড়ানো এরকম চোখ যে কোনো মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করবে ।
জানিনা আমার কী হল । সোনাকে নিয়ে এতো লিখছি বা কেন, আর ভাবছি বা কেন । পরীক্ষা সামনে পড়তে হবে । কিন্তু আমার মনে হচ্ছে যেন সুধু গেটের সামনে গিয়ে দাঁড়াই আর সোনা আমাকে ওই ভাবে দেখুক । ধূত এসব কী লিখছি । যাই আজকে আর পড়া হবে না । গিয়ে স্নান করে মাথা ঠান্ডা করে ঘুমিয়ে পড়ি ।
......................................................................................................................................................
জানিনা আমার কী হয়েছে । সামনে পরীক্ষা কিন্তু আমার পড়ায় মন নেই । আবার আজকে লিখতে বসলাম । বিকেলে আমি পুচকে কে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম সোনাকে দেখার ইচ্ছায় । দেখলাম সোনা একটি লাল চুড়িদার পরে পড়াতে বেরিয়েছে, হাতে একটা পলিপ্যাক । লাল ড্রেসে তাকে কী আপূর্ব লাগছে । মনে হচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত সৌর্ন্দয তার কাছে ম্লান । আমি আবাক চোখে তার দিকে চেয়ে রইলাম । তারপর অপেক্ষা করতে লাগলাম তারবাড়ি ফেরার । সন্ধের ঠিক আগে সে ফিরে আসছিল, আমি আবক নয়নে তারদিকে চেয়ে রইলাম । বাড়িতে ঢোকার আগে সে আমার দিকে একবার চেয়ে নিল । আমি হতবাক । সন্ধ্যা নামার পর আমি রুমে পড়তে গেলাম । কিন্তু সারাসন্ধা তার কথা ভাবতে লাগলাম । পড়া কিছু হলনা । ৯ টার কিছু আগে আমি বাথরুমের জন্যে বাইরে বেরলাম । দেখি ও রাস্তা থেকে বাড়িতে ঢুকছে । আমি তাকে ভালকরে দেখার জন্যে দাঁড়িয়ে গেলাম । ও সেটাবুঝতে পেরে বাড়ির ঠিক আগে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে গেল,confirm হবার জন্য যে আমি ওকে follow করছি । কিন্তু ও যে অন্ধকারে দাঁড়িয়েছে সেটা আমি লক্ষ করে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়েগেলাম । আমি তাই এদিক ওদিক হাঁটতে লাগলাম যেন আমি পড়া রোমন্থন করছি । কিছুক্ষন পরে আমি ওখান থেকে সরে আসলাম । আর মনেমনে হাসতে লাগলাম । আচ্ছাএটা কে কি বলে । এটাকেই কি প্রেম বলে ? আমি কি তাহলে প্রেমে পড়লাম ? মেয়ের সাথে প্রেম? যাদের কে আমি দেখতে পারতাম না । তাদের সাথে !
............................................................................................................................................................
মেসের সবাই এসেগেছে । পরীক্ষা আর মাত্র কয়েক দিন বাকি । কিন্তু পড়ার কিছু হইনি । পড়তে গেলেই ভুলভাল সব চিন্তা মাথায় আসছে । সুধু মনে হয় তার সাথে দেখা হলে কিভাবে কথা বলব, কিভাবে তার সাথে পরিচয় করব, কিভাবে তাকে মনের কথা বলব । এই কয়েকদিনে অনেকগুলি ঘটনা ঘটে গেলো ।
এক সিনিয়ার দাদার কাছ থেকে তার নাম জানতে পারলাম “মোহা” । তবে এটাতার ডাক নাম । সে বাড়ির মেজোমেয়ে । তাদের তিন বোনের নাম হল সোনা, মোহা , মিতা । সোনা হল তার বড়ো বোনের নাম যেটাকে তার নাম ভাবতাম । আর জানলাম যে এক সিনিয়ার তাকে প্রোপজ করেছিল কিন্তু সে জানায় যে সে সুধু তাকে প্রেম করবে যে তাকে বিয়ে করবে । এখানকার অন্যান্য মেয়েরা ইঞ্জিনিয়ার ছেলের পিছনে পড়ে আছে কিন্তু, সে সবার থেকে আলাদা । এই কথায় তার প্রতি স্রদ্ধা আরো বেড়ে গেল সেই সাথে ভালবাসাও । এই প্রথম একটি মেয়েদেখলাম যে আমার মতো, যে সত্যিই ভালবাসাকে সত্যিকারের ভালবাসা রূপে চেনে ।
একদিন আমি বাথ্রুম থেকে নিজের রূমের দিকে ফিরছি, আমি প্রাচিলের দিকে চাইলাম কে যাচ্ছে দেখার জন্য দেখি সেও রাস্তা দিয়ে যাবার সময় প্রাচিলের এপারে দেখার জন্য চাইল । হটাৎ চোখাচোখি হয়ে গেল । আমি সঙ্গেসঙ্গে চোখ নামিয়ে নিমাল । সে এদিকে দেখছিল কেন? সে কি তাহলে বুঝতে পেরেছে যে আমি তাকে পছন্দ করতে শুরু করেছি, না সাধারন কৌতুহল? scientist বলেন যে ব্রেনের একটি ভাগ আছে যেটি নাকি বুঝতে পারে কে তাকে পছন্দ করে আর কে না, কে খারাপ কে ভাল । ঠিক যেন পতঙ্গের ফেরমেনের মত । এই ঘটনা কি তারই এক রূপ?
আজকে খুব বৃষ্টি হচ্ছিল । কাজের মাসি তাই আসেনি । আমরা নিজের রান্না করতে লাগলাম । দূপুরের ভাত ছিল, সুধু ডিম হলে হবে । তাই পাশের দোকানে গেলাম ডিম আনতে । দোকানের সামনে গিয়ে দেখি মোহা দাঁড়িয়ে আছে দোকানে । প্রথমে ভাবলাম ঢুকবো কি ঢুকবনা । তারপর মাথা ঠান্ডা রেখে দোকানের ভিতরে ঢুকলাম । এইপ্রথম আমি ওর এতো কাছাকাছি আসলাম । সে দোকান থেকে মসাতাড়ানোর ধূপ চাইল আর আমি ডিম । এই প্রথম তার গলা শুনলাম । আমি নিজেকে কন্ট্রোল রেখে অন্য দিকে চেয়ে রইলাম । সে কয়েকবার আড়চোখে আমার দিকে চাইল । তারপর তার কেনা হয়েগেলে সে চলে গেল । রুমে এসে আমি ওই সুন্দর মুহুর্তের কথা ভাবতে লাগলাম । প্রেমে মানুষ কেন পাগল হয় আজ তা ভাল করে বুঝতে পারলাম ।
……………………………………………………………………………………………………………
পরীক্ষা হয়ে গেল। কিন্তু যে রকমের প্রিপ্রারেসন ছিল তার সিকি পরিমানের ও খাতায় লিখতে পারিনি। কিন্তু আমার মনে কোনো দুঃখ নেই । চিন্তা শুধু মোহা কে নিয়ে । বাড়ির চাপে আমাকে আবার হস্টেলে ফিরে যেতে হবে । কিন্তু তাহলে যে মোহা কে দেখতে পারব না । শেষ প্রযন্ত ঠিক করলাম যে মাসকলাই বাড়ীর দিকে কোনো টিউসন করব, এতে কিছু হাত খরচ টাকা ও আসবে আর রোজ বিকেলের দিকে মোহা কে ও দেখা যাবে । মোহাকে সারাদিন বাড়ি থেকে বের হতে দেখি না। সুধু বিকেলের দিকে বের হয়।
********************************************************************************
ঢং ঢং ঢং…… হটাৎ সমস্ত নিরবতাকে ভেঙ্গে খবার ঘন্টা বাজল । আমরা ডায়রীর মধ্যে দিয়ে দুটি সত্তা মাসুদ ও মোহা কে দেখছিলাম। আমরা সবাই খাবার উদ্দেশ্যে গেলাম ডায়ানিং হলে । কিন্তু আমাদের কারোর মুখে কনো কথা নেই । সবাই আচ্ছন্ন হয়ে আছি দুটি জীবনের মধ্যে । কন রকমের গোগ্রাসে গোলদ্ঘরন করে সবাই হাজির হলাম পরের ঘটোনা জানার জন্যে । মিহির বললে –“চল তাড়াতাড়ি ডায়ারি টা কে পড়তে হবে। রহস্য মনে হয় climax এর আগে”
হস্টেলে চলে এলাম । কিন্তু কোনো টিউসন পেলাম না । ফলে রোজ মহাকে দেখার কোনো সুযোগ হচ্ছে না । তাই কোনো সামান্য সুজগ পেলেই আমি চলে যাই মেসে । শুনছি মোহা নাকি এখন ঘর থেকে বেরয় না । তাই অল্প সময়ের জন্যে দেবীদর্শ্নন হয় আবার কখনও আবার হয় না ।
…………………………………………………………………………………………………………………………
সামনে কালীপূজা । শুনেছি মাসকলাই বাড়ীর কালীপূজা সারা বাংলা বিখ্যাত । আর মাত্র চার দিনপর পুজাশুরু । বাড়ির সামনের পূজোয় নিশ্চোই মোহা আসবে । খুব কাছ থেকে মোহা কে দেখতে পাবো । ভাবছি এই বারেই তাকে মনের কথা জানাব । তাই মনে মনে ঠিক করলাম কিভাবে তার সাথে কথা বলব। কিন্তু এই চার দিন যেন কাটতে চাইছেনা । মনে হচ্ছে চার বছর । ……………………………………………………………………………………………………………………
এখন কয়েকদিনের জন্য মেসে আছি । পূজাটা খুব বড়ো মাসকলাই বাড়ীর । খুব সুন্দর প্যান্ডাল ও আলোকসজ্জা হয়েছে । প্রচূর মানুষের ভীড় । আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম তার বাড়ী থেকে বেরিয়ে আসার প্রতিক্ষায় । ঠিক আটটার দিকে সে ও তার বোন বের হল । সে একটা লাল সাড়ি পরেছিল । আমিও তাদের পিছে পিছে রওনা হলাম । কেউ একজন বলেছেন প্রাকৃতিক সর্বদা কৃত্তিম থেকে উত্তম । আজ সেটা প্রমান পেলাম । মোহার অতিসাধারন মেকআপ আন্যদের চড়া প্রাসাধন কে ম্লান করে দিচ্ছিল । কাল অবশ্যই তাকে মনের কথা বলব । তার জন্য একটা প্রেমের চিটি লিখলাম ।
আর একটা কবিতা তার উদ্দসে নোট করলাম,
I awake each day with a smile
And greet it with a laugh;
The world is a treasure to me
Because of you.
Every time I think of something sad,
I replace the thought- with you!
My mind is instantly changed
And my heart is filled with gladness.
কাল তাকে জানাব আমার মনের কথা । ভয় লাগছে খুব যদি সে আমাকে অস্বীকার করে । তাহলে আমি যে বেঁচে ও মরে যাব । নাহ ঘুমাই সাহস সঞ্চয় করতে হবে কালকের জন্য ।
….....................................................................................................................................................................
কিছু মানূষ মায়ের পেট থেকে ভাগ্য নিয়ে আসে । আমি ও তাদের মধ্যে একজন । জীবনে যা চেয়েছি তা কোনোদিন পাইনি আর পাবোও না। আর যা চাইনা তা সব সময় আমার জীবনে আসে । তাই তো আমি “born with bad luck” । আজকে মোহা হালকা সবুজ রঙের সাড়ি পরেছিল । অসাধারন লাগছিল তাকে । আমি হাতে চিঠিটা নিয়ে তার পিছনে গেলাম মনের কথা গুলি বলতে । আমি তার থেকে মাত্র একফুট দূরেছিলাম, হটাৎ দেখি প্যান্ডেলের পাশের বাড়ি থেকে কালোধোঁয়া কুন্ডোলী পাকিয়ে বেরিয়ে আসতে লাগল । চারিদিকে ছোটাছুটি লেগেগেল । আর আমার হাত থেকে চিঠিটা পড়েগেল । আর আমার প্রপোজ করা হল না । আগুন লাগার ফলে পূজোটা বন্ধ হয়ে গেল । আর এতোসুন্দর সুযোগ কী কখনও আসবে ? আমি কি আবার সাহস জোগার করতে পারবো ?..
……………………………………………………………………………………………………………………....................................................
নাহ এ হতে পারে না । মোহা অন্যকারোর সাথে বিয়ে করতে পারেনা । আজকে এ বিয়ে আমি কোনোমতে হতেদেবনা ।
********************************************************************************
“যা ডায়ারি শেষ হয়ে গেল”, হটাৎ নিরবতাকে ভংগ করে মিহির আর্তনাদ করে উঠল । “আরে লকার ভাল করে খুজে দেখ আর ডায়ারি পাবি”- আমি বললাম ।
অনুপ বললে –“না রে কোনো ডায়ারি পাওয়া যাচ্ছে না”
মিহিরঃ- “মাসুদের কি হল তা কি আমরা জানতে পারবনা?”
আনুপঃ-“চল বিজয় দা কাছে ও হয়ত জানবে”
আমিঃ-“চল তাহলে,কিন্তু এখন রাত্রি একটা বেজে গেছে,”
আনুপঃ- “আরে একদিনের তো কথা চল বিজয় দা কে ঘুম থেকে তুলি”
হটাৎ loadsheding হয়ে গেল।
বাইরে এসে দেখলাম বিজয়দা তখন ও ঘুমায়নি । বাইরে তখন পূর্নিমার চাঁদের রূপালী আলো চারিদিককে গ্রাস করেছে । আমরা বিজয়দার কাছে এসে বসলাম । বিজয়দা কে মাসুদের কথা বলতেই বিজয়দা আৎকে উঠলেন । তারপর বললেন
“মাসুদ… মাসুদ আহমেদ । তোমরা মাসুদকে কিভাবে চেনো?”
মিহির জবাব দিলে, “না তেমন কোনো কথা নয়, আমরা রুমের দওয়ালে তার নাম দেখলাম তাই…। এখন সে কি করে?”
বিজয় দা আঙ্গুল দেখাল কমন রুমের টাঙ্গান একটি ছবির দিকে, যেটা আমরা আগে কমন রুমে দেখেছি কিন্তু কার তা জানতাম না ।
বিজয়দা বলতে শুরু করলেন, “ওই একটি ছেলে দেখেছিলাম যেটা সবার থেকে আলাদা ছিল। কিছুটা পাগলধরনের । কিন্তু ও বলত ও crazy পাগল নয়। বলত যারা কোনো বাধা মানেনা তারাই হল crazy । সবসময় প্রানচঞ্চলে ভরপুর । কিন্তু হটাট ছেলেটার মধ্যে কি যে পরিবর্তনএসেছিল, তিন চার দিন কারোর সাথে কথা বলেনি তারপর একদিন রাত্রি ১০টা দিকে হস্টেল থেকে বেরিয়ে গেল । জীগ্যাস করলে কিছু উত্তর নাদিয়ে চলে গেল । পরদিন তিস্তার ধারে লাস পাওয়া গে্ল । সেদিনটাও ছিল এ রকম পূর্নিমার রাত্রি । পুলিস ও বলতে পারলনা ঘটনাটা হত্যা না আত্মহত্যা । তার পর থেকে ওই রুমে কেউ থাকতে চাইত না । পরে অবশ্য এক ডানপিটে ছেলে ওই রুমেথেকেছিল কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে তাকে ওই রুমে গলয় দড়ি অবস্তায় পাওয়া যায় । তারপর থেকে রুমটা বন্ধ ।”
পূর্নিমার রাত্রে পরিবেশটা কে আরো মোহহয় করেতুলে ছিল । ঠিক এরকম একটি পূর্নিমার রাত্রে দুটি সজ্জা ঘটেছিল একটি মৃত্যুসজ্জা আর একটি ফুলসজ্জা দুটি ভালবাসার । দূরে তমসাচ্ছন্ন পেঁচার কণ্ঠ মনকে উদাস করে দিল ।
রচনাকাল : ১২/৬/২০১৩
© কিশলয় এবং Sk. Tarik Ahmed কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।