শ্রেয়া বাড়ি ফিরে ব্যাগ টা টেবিলে ছুঁড়ে দিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। আজ দিন টা যাচ্ছেতাই গেছে। কার মুখ দেখে যে উঠেছে কে জানে। কলেজেও বেফালতু স্যার এর কাছে বকা খেলো, বিনা কারণে। সুদীপ বইটা বার করতে গিয়ে সিগারেট এর প্যাকেট টা ব্যাগ থেকে পড়ে গেলো। পড়বি তো পড় শ্রেয়ার পায়ের কাছে। তুলে সুদীপ কে দিতে যাবে স্যার দেখে কি না কি ভেবে ওকেই সবার সামনে দুকথা শুনিয়ে দিলো। সেটা দেখে তৃষা আবার খুব দাঁত বের করে হাসছিলো। শ্রেয়ার তখন খুব ইচ্ছা হচ্ছিলো দাঁত গুলো ভেঙে দেয়। কোনোরকমে মাথা ঠান্ডা করে ক্লাস করে বেরিয়ে বাসে উঠবে হঠাৎ ঋষির ফোন। কদিন ধরেই রোজ কিছু না কিছু নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে ঋষির সাথে। এত ঠান্ডা মাথার ছেলে হঠাৎ আজকাল একটু তেই যেন রেগে যাচ্ছে। শ্রেয়া বার বার চেষ্টা করেও জানতে পারেনি। ঋষি বড্ড চাপা। শ্রেয়ার মতো প্রাণখোলা নয়। ঝামেলা টা বাড়ছিলো তাই শ্রেয়া কদিন একটু ঋষি কে একা ছাড়তে চেয়েছিলো। তাই বেশ কয়েকদিন দেখাও হয়নি। ওর যে দেখা করতে ইচ্ছা হচ্ছিলো না তা নয়। তাই ঋষির ফোন পেয়ে ও আর কোনে কিছু না ভেবেই দেখা করতে চলে গেলো।
নন্দনে পৌঁছে শ্রেয়া দেখলো একটা জায়গায় ঋষি একটা বড় ব্যাগ নিয়ে বসে আছে। শ্রেয়া যেতেই ঋষি বললো, " শোনো, এই ব্যাগে তোমার দেওয়া সমস্ত কিছু গিফ্ট আছে, এগুলো এখন আমার কাছে রাখার কোনো মানেই হয়না।" বলে ওর হাতে ব্যাগ টা ধরিয়ে ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হনহন করে হেঁটে বেরিয়ে গেলো। শ্রেয়া এতটাই অবাক যে ও ঋষিকে ডাকতেও পারলোনা। ঘোর কাটতেই ওর প্রথমে ঋষির উপর রাগ হলো, এতদিনের সম্পর্ক, বাড়ি থেকে সবকিছু ঠিকঠাক, এখন এইসব হঠাৎ কি? তারপরেই হঠাৎ খুব কান্না পেতে একটা ট্যাক্সি ডেকে বাড়ি ফিরেই সোজা নিজের ঘরে। মা দুবার নক করেছে কিন্তু সারা দেয়নি। খুব রাগ হচ্ছে নিজের উপর, ঋষি এটা করতে পারলো? একবার কিছু বুঝতেই দিলো না। রাশি ঠিকই বলে, কেউ ভালোবাসার মর্য্যাদা দেয়না।
এই সব ভাবতে ভাবতে কাঁদতে কাঁদতেই কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিলো। ঘুম ভাঙলো জোরে জোরে দরজা নক করার আওয়াজে। দরজা খুলতেই দেখলো মা দাঁড়িয়ে। বললো, "ঋষি নীচে বসে আছে, তাড়াতাড়ি আয়"। শ্রেয়ার আবার রাগ টা এলো, মুখ হাত ধুতে ধুতে মনে মনে বললো, "এখন আবার কি চায়, ফেরৎ দিয়ে শান্তি হয়নি?"।
যাই হোক, নীচে গিয়ে কথাগুলো ঋষিকে জিজ্ঞাসা করতে যাবে দেখে ঋষি ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি মিষ্টি হাসছে। ওকে দেখেই ঋষি বলে উঠলো "চটপট তোর হাতের সেই স্পেশাল সরবত টা বানা তো, খুব গরম হচ্ছে"। শ্রেয়া তো বেজায় চটে , সকালে কাঁদিয়ে এখন আবার সরবত খাবে, খাওয়াচ্ছি সরবত। গজগজ করতে করতে রান্নাঘরে গিয়ে দেখলো কয়েকটা লিচু আর এক প্যাকেট জাম রাখা আছে। লিচুর সরবত টা ও দারুণ বানায় আর ঋষিও ওটা বেশ পছন্দ করে। ও লিচু গুলো নিয়ে নিজের জন্য এক গ্লাস সরবত বানিয়ে, "খাওয়াচ্ছি আজ তোমায় লিচুর সরবত" বলে প্যাকেট থেকে কয়েকটা জাম নিয়ে ওটা দিয়ে কি একটা বানিয়ে ঠান্ডা জলে গুলে নিলো। এবার দুটো গ্লাস নিয়ে ঋষির সামনে গিয়ে জামের গ্লাস টা ঋষি কে দিয়ে লিচুর সরবত টা নিজে খেতে শুরু করলো। ওমা ঋষি তো রাগ করার বদলে হাসছে। ঋষি হাসতে হাসতে শ্রেয়াকে বললো, "পাগলি, কয়েকদিন ধরে তোর আমার একদম নিজের একটা ফ্ল্যাট কেনার চেষ্টা করছিলাম, তোর জন্য সারপ্রাইজ। তোর উপর রাগ না দেখালে তুই তো সব বুঝেই যেতিস। আর আজ ওগুলো দিলাম কারণ সত্যিই তো এখন আর আমার কাছে ওগুলো রেখে কি হবে? নতুন বাড়িতে সাজিয়ে রাখবো সব যত্ন করে। তোকে এইটুকু কষ্ট না দিলে এখন এই অবাক করা মুখটা দেখতে পেতাম, বল?" বলে ওই জামের জল দেওয়া গ্লাসে চুমুক দিলো ঋষি।
শ্রেয়া কথাগুলো শুনতে শুনতে কেঁদে ফেলেছিলো। ঋষির গ্লাসে চুমুক দেওয়া দেখে ও হেসে ফেললো, "তোকে জব্দ করার জন্য জাম সিদ্ধ করে ওটা বানালাম, রাগ হয়েছিলো খুব তোর উপর। ওটা খাস না, এই নে তুই এই লিচু টাই খা"।
ঋষি জামের গ্লাসের সরবত টা পুরোটা শেষ করে বললো, "জব্দ করতে গিয়ে কিন্তু নিজেই জব্দ হলি, এবার থেকে লিচু না এই জামের সরবত টাই আমার চাই, ফাটাফাটি বানিয়েছিস কিন্তু"।
এরপর?? নটে গাছটি মুরালো, আমার গল্প ফুরালো।
রচনাকাল : ১৪/১১/২০১৯
© কিশলয় এবং শানিয়া ময়রা কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।