• ৯ম বর্ষ ৬ষ্ঠ সংখ্যা (১০২)

    ২০১৯ , নভেম্বর



স্বপ্ন হলেও সত্যি
আনুমানিক পঠন সময় : ৫ মিনিট

লেখিকা : কেকা হালদার
দেশ : India , শহর : Arambagh

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , সেপ্টেম্বর
প্রকাশিত ২০ টি লেখনী ২৭ টি দেশ ব্যাপী ১৪১৪০ জন পড়েছেন।
চৌরাস্তার মোড়ে শিউলি ফুলের গাছটার নিচে অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে আছে ছেলেটা। দেখতে বেশ, লম্বা, ফর্সা, মুখে হালকা চাপ দাঁড়ি, পরনে একটা টি-শার্ট আর ট্র্যাক স্যুট। চোখেমুখে অধৈর্যের ছাপ।
কিছুক্ষণ পর পিছন থেকে একটা মেয়ে গিয়ে কোমল স্বরে ডাকল অনি, ছেলেটা চমকে পিছনে ফিরে তাকালো কিন্তু মুখে দেখা গেল এক মিষ্টি হাসি। বললো পর্না। এই তোর ৪ টা বাজছে ? দেখ ৪ টে পেরিয়ে ৪:৩০ বাজছে, সেই কখন থেকে এসে দাঁড়িয়ে আছি। আচ্ছা বাবা ভুল হয়ে গেছে আর দেরি হবে না, বলল পর্ণা।
পর্না র পুরো নাম হলো সুপর্ণা দে, বাংলা অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। গায়ের রঙ একটু চাপা, খুব মিশুকে, লম্বা চুল চোখে মুখে একটা মিষ্টতা আছে। আর অনি হলো অনিরুদ্ধ রায়। BBA কমপ্লিট করে MBA পড়ছে।
পর্না জিজ্ঞাসা করলো, পুজোয় আসবি তো রে ?..বলতে পারছি না বাবা মা এইবারে পুজোয় বিশাখাপত্তনোম প্ল্যানিং করছে, বলল অনি। পর্না কিছুক্ষণ চুপ করে রইল, তার মন টা যেন খারাপ হোয়ে গেলো। শুধু মুখে বললো, আমার পড়ানো আছে রে, আমি আসি পরে কথা হবে। পর্না চলে গেলো। পর্নার হঠাৎ এইরকম আচরণে অবাক হল অনি। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো শিউলি গাছ টার নিচে।

পর্না চলে যাওয়ার পর অনি তার অদ্ভুত আচরণে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো শিউলি গাছটার নিচে। শিউলি গাছ থেকে টুপ টাপ করে ফুল ঝরে পড়তে লাগলো তার মাথায় গায়ে। কি একটা মনে হতেই অনি আর একমুহুর্ত ও অপেক্ষা না করে সোজা বাড়ি চলে গেল। পুজো আসছে সামনে অনেক আনন্দ ও উৎসাহ নিয়ে পুজোর জন্য কেনাকাটা করলো অনি। এদিকে পর্না সেদিন বিকালের পর থেকেই কেমন যেন হয়ে থাকে। অনি র সাথে দেখা হলেও ভালো ভাবে কথা বলে না। অন্যমনস্ক হয়ে কি যেন ভাবতে থাকে। কি হয়েছে জানতে চাইলেও বলে কি হবে কিছুই হয়নি। এমনকি অনি কে সে দ্বিতীয় বার পুজোয় যাওয়ার জন্যও বলে না। মহালয়ার দুদিন পর থেকেই পর্না কাজের ব্যস্ততা দেখিয়ে অনির সাথে দেখা করা ও বন্ধ করে দিল। অনির মনে পর্নাকে নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তা শুরু হলো...সে তাকে এইরকম করতে আগে কখনো দেখেনি। এই সব চিন্তা ভাবনা করতে করতে পুজো চলে এলো। 
   পুজোর সপ্তমীর দিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে স্নান করে একটা নীল পাঞ্জাবী পরে হাতে  কয়েকটা প্যাকেট নিয়ে বেরিয়ে যায় অনি। টানা এক ঘন্টা হাই স্পিডে গাড়ি চালানোর পর গাড়িটা ঘোরালো আনন্দ আশ্রমের দিকে।অবশেষে পৌঁছালো আনন্দ আশ্রমে। গাড়ি থেকে নেমেই দেখলো সপ্তমীর পুজো শুরু হয়ে গেছে। অনি সব প্যাকেট গুলো গাড়ি থেকে নামিয়ে চলে গেলো ফাদার এর ঘরে, যেখানে ফাদার বসে ছিল আশ্রমের ভিতরে। অনেকদিন পর আশ্রমে এলো  অনি..ঘরে ঢুকেই ফাদার কে প্রণাম করলো। আসলে এই আশ্রম টা হলো অনাথ বাচ্চাদের নিয়ে অনাথ আশ্রম। তাদের মধ্যে কয়েকজন অনেকদিন আগে থেকে আছে তারা এখন ফাদার এর সাথে মিলে এই আশ্রমের বাচ্চাদের দেখাশোনা করে।
   এদিকে মণ্ডপে পর্না খুব অস্থির মন নিয়ে পুজো দেখছে। মনে মনে যেন কারোর অপেক্ষায় সময় গুনছে। পর্না আজ পড়েছে লাল আর হলুদে একটা শাড়ি। সদ্য স্নান করা লম্বা ভিজে খোলা চুলে কি স্নিগ্ধ আর পবিত্র লাগছে পর্নাকে। ঠাকুরমশাই পুষ্পাঞ্জলি র জন্য সবাই কে মণ্ডপে আসতে বলল। কেউ আর এলোনা দেখে ঠাকুরমশাই পুষ্পাঞ্জলি শুরু করলো। পর্না হাত বাড়ালো ফুল নেওয়ার জন্য তখন ই তার হাতের ওপর একজোড়া হাত রেখে কেও বলে উঠলো ঠাকুরমশাই ফুল দিন পুষ্পাঞ্জলি দেবো। পর্না তাকিয়ে দেখলো তার পাশে অনি এসে দাঁড়িয়েছে পরনে নীল পাঞ্জাবী চোখ মুখ ভর্তি দুষ্টু মিষ্টি হাসি। কি অপূর্ব দেখতে লাগছে অনিকে এক ভাবে তাকিয়ে রইলো পর্না। পুষ্পাঞ্জলি শেষে বাচ্চাদের জন্য আনা সব উপহার গুলো সবাইকে ভাগ করে দিল অনি। তার মনে পড়ে গেলো বেশ কয়েকবছর আগে এইরকমই এক পুজোর দিনে এক কমবয়সি মহিলা ছুটতে ছুটতে কাঁদতে কাঁদতে এসে উপস্থিত হয়েছিল এই আশ্রমে।

পুজোর অষ্টমীর দিন সবাইকে চমকে দিয়ে অনি আশ্রমে যায়। অনিকে দেখে অবাক ও একইসাথে আনন্দে অভিভূত হয়ে যায় পর্না। সবাই একসাথে পুষ্পাঞ্জলি দেয় ও বাচ্চাদের জন্য নিয়ে যাওয়া উপহার সবাইকে ভাগ করে দেয় অনি। তার মনে পড়ে গেলো বেশ কয়েকবছর আগে এইরকমই এক পুজোর দিনে এক কমবয়সি মহিলা ছুটতে ছুটতে কাঁদতে কাঁদতে এসে উপস্থিত হয়েছিল এই আশ্রমে। এসে লুটিয়ে পড়েছিল মণ্ডপে তারপর ফাদারের পা এ ধরে আশ্রয় চায়। মহিলাটির সাথে ছিল বছর তিনেকের একটি বাচ্চা মেয়ে। দেখতে খুব সুন্দর কিছু চোখে মুখে কোথাও যেন ভয়ের ছাপ। তার মা এর শাড়ি র আঁচল টা আঁকরে ধরে ছিল। ফাদার ওদের দুজনকে ভিতরে নিয়ে যায়। তার কিছুক্ষণ পর মহিলাটি  একছুটে আশ্রম থেকে বেরিয়ে যায় একা। ঠিক তারপরে ফাদার বেরিয়ে আসে কোলে সেই বাচ্চা মেয়েটি তার চোখে জল। জানা যায় মেয়ে টি ওই মহিলার মেয়ে কোনো বিপদে পড়ে মেয়ে টা কে রেখে গেছে। কদিন খুব কান্নাকাটি করেছিল মেয়ে টা। তারপর আস্তে আস্তে সবার সাথে মিশে যায়। অনির সাথে মেয়েটির বন্ধুত্ব হয়। তখন অনির বয়স ছয় বছর। ধীরে ধীরে আশ্রমে সবার খুব প্রিয় হয়ে ওঠে মেয়ে টি। বছর দুই পর এক বিশাল বড়োলোক দম্পতি আশ্রমে আসে। এবং অনি কে নিয়ে যেতে চায়। অনি যেতে চায় না। তাকে বলা হয় তারা নাকি ওর বাবা মা। অনির মনে মনে খুব রাগ হয়। তবুও যেতে বাধ্য হয়। তাদের সাথে গিয়ে তার প্রথম কয়েকদিন খুব ভালো কাটে। তারপর থেকে তার ওই ঘর টা লোহার খাঁচা মনে হয়। আর একটু যখন বড়ো হয় অনি তখন সে লুকিয়ে লুকিয়ে আশ্রমে যেতে শুরু করল। কিন্তু বেশিক্ষণ থাকতে পারলো না। মাঝে মাঝে ওর সাথে দেখা হতো সেই ছোট্টবেলার সঙ্গী সেই মেয়ে টার সাথে। সেই ছোট্টবেলার মেয়ে টি আজকের পর্না। বেশ কয়েকবছর এই ভাবে কাটার পর একদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলছে অনি আর 
পর্না। ঠিক সেই সময় কয়েকজন লোক এসে পর্নাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।অনি প্রাণপণে চিৎকার করার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। হঠাৎ কে তাকে জোরে জোরে নাড়া দেয়। চমকে উঠে বসে অনি। দেখে তার মা তাকে অনেকক্ষন ধরে ঘুম থেকে তোলার চেষ্টা করছে। সে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিল বুঝতে পারে অনি। নিশ্চিন্তে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অনি।  মনে পড়ে আজ অষ্টমী। ফোন টা অন করে দেখে ৫টা মিসড কল, ২ টা মেসেজ। লেখা আছে...কি ঘুম ভাঙলো মিস্টার অনিরুদ্ধ রায় ? কখন আসছিস? তাড়াতাড়ি আয় পুজো তো শুরু হল বলে। অনির মুখে উজ্জ্বল হাসির রেখা।
রচনাকাল : ১৪/১১/২০১৯
© কিশলয় এবং কেকা হালদার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 16  China : 16  Germany : 4  Iceland : 1  India : 222  Ireland : 4  Korea, Republic : 1  Russian Federat : 10  Saudi Arabia : 6  Ukraine : 27  
United States : 207  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 16  China : 16  Germany : 4  Iceland : 1  
India : 222  Ireland : 4  Korea, Republic : 1  Russian Federat : 10  
Saudi Arabia : 6  Ukraine : 27  United States : 207  
লেখিকা পরিচিতি -
                          সুনন্দা ওরফে কেকা হালদার ১লা আগস্ট পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার আরামবাগে জন্মগ্রহণ করেন।
বর্তমানে তিনি বাংলা বিষয়ে স্নাতক বিভাগে পাঠরতা। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি আবৃত্তিতে বেশ পারদর্শীনী। এছাড়াও অঙ্কন চর্চা, সঙ্গীতচর্চা ও নাটকচর্চা করে থাকেন। গল্প, কবিতা, উপন্যাস পড়ার নেশা বিদ্যমান। বিভিন্ন অনলাইন পত্র - পত্রিকায় লেখালেখি করেন। 
                          
  • ৯ম বর্ষ ৬ষ্ঠ সংখ্যা (১০২)

    ২০১৯ , নভেম্বর


© কিশলয় এবং কেকা হালদার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
স্বপ্ন হলেও সত্যি by Keka Halder is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৫৪০০১৮
fingerprintLogin account_circleSignup