ব্রেকিং নিউজ......
হঠাৎ স্ক্রীনে জনপ্রিয় তরুণ অভিনেতার আত্মহত্যার খবরটা দেখতেই ডক্টর অবিনাশ সেন কিছুটা হতাশ হলেন পাশাপাশি বিরক্তি বোধ করলেন।দীর্ঘ ১৩ বছর থেকে নিরলস পরিশ্রম করে কত মানষিক রোগীকে বিশ্বাস,ভরসা ও সান্তনা দিয়ে আসছেন ডক্টর সেন।মনের ব্যাপারীর মনটা কেমন যেন ক্লান্তি অনুভব করলো।চায়ের পেয়ালার শব্দে সম্বিত ফিরতেই অবিনাশ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে চা- এ চুমুক দিলো।
কয়েকদিন থেকে অসহ্য গরম পড়েছে।বারান্দা থেকে বাগানের দিকে তাকাতে তার মনে হলো গাছের পাতারাও যেন ডিপ্রেসনে ভুগছে।
ইদানিং মনোবিদ অবিনাশ সেন খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তার থিসিস নিয়ে,পাশাপাশি চেম্বার,সেমিনার এসব তো লেগেই আছে।চেম্বারে যাওয়ার পথে ড্রাইভারকে ডান দিক নিতে বলেন অবিনাশ।কয়েক সপ্তাহ তিন্নির কোনো খোঁজ নেওয়া হয়নি তাই গন্তব্য এখন ' দিগন্ত অ্যাপার্টমেন্ট '।টেলিভিশনে খবরটা পাওয়ার পর থেকেই বুকের ভেতর টা তিন্নির জন্য কেমন হাহুতাশ করে উঠলো।
সেপারেশন এর পর থেকেই বহ্নি তিন্নিকে নিয়ে তার বাবার কাছে চলে আসে। তিন্নি এবার উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছে। বহ্নিও ইদানিং ক্ষত ভোলার জন্য সবসময় কাজের পিছনে ছোটে।মাঝেসাঝে কখনো কখনো সেমিনারে দেখাও হয়ে যায় অবিনাশের সঙ্গে।
অবিনাশ গাড়িতে বসে কষতে থাকে জীবনের হিসেব নিকেষ।এরই মাঝে তিন্নির কষ্টমাখানো মুখ খানি ভেসে উঠতেই অবিনাশের পিতৃ সত্তা গুমরে ওঠে।গাড়ির কাঁচ ঝাপসা হয়ে আসে।
ডোর বেল এর শব্দ পেয়ে অমলবাবু দরজা খুলে কিছুটা বিস্মিত হয়ে জানতে চান হঠাৎ আবির্ভাবের হেতু। তিন্নিও দাদানের পিছন পিছন এসে দাঁড়াই।
পৃথিবীর সব চাইতে মূল্যবান ওষুধ - ভালোবাসা,যা সমস্ত দুরারোগ্য ব্যাধি কে নির্মূল করে দিতে পারে নিমেষে। ব্যালকনিতে অবিনাশ তিন্নির পাশে দাঁড়িয়ে এক অদ্ভুত নীরবতা অনুভব করে।বার বার তরুণ অভিনেতার হাসিমাখানো মুখখানি ভেসে ওঠে অবিনাশের চোখের সামনে।তিন্নিকে জড়িয়ে ধরতেই যেন বুকের ভেতর অভিশপ্ত পাথরখানি গলে জল হয়ে যায়। শুধু ভালোবাসাই পারে মনের অব্যক্ত যন্ত্রনা গুলোকে ধুয়ে মুছে ফেলতে।মনোবিদ হয়েও সে যেটা পারিনি,তার মেয়ে সেটা পেরেছে নিখাদ ভালোবাসা দিয়ে। তার ভেতরের পিতৃ সত্তা সব জড়তা ভুলে বৃষ্টি মাখছে।তিন্নি শুধু তার মেয়ে নয় মা ; তার জন্যই তো এই পুনর্জন্ম।
গবেষণার পাশাপাশি ডক্টর অবিনাশ ঠোঁটে নিষ্পাপ হাসি জড়িয়ে বাড়িয়ে দেয় মানবিক হাত সমাজের কাছে। মনের ক্ষত সারানোর মন্ত্রে ব্রতী হয়ে শহর থেকে দূরে 'মায়াকানন' সেজে ওঠে নতুন অঙ্গীকারে।
রচনাকাল : ৩০/৬/২০২০
© কিশলয় এবং অরিন্দম মার্জিত কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।