• ১০ম বর্ষ ২য় সংখ্যা (১১০)

    ২০২০ , জুলাই



জাতীয় চিকিৎসক দিবস
আনুমানিক পঠন সময় : ৫ মিনিট

লেখিকা : মোনালিসা রায়
দেশ : India , শহর : হাওড়া

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , মে
প্রকাশিত ২২ টি লেখনী ২৮ টি দেশ ব্যাপী ১৪৫০৪ জন পড়েছেন।
Monalisa Roy
 এই বিশ্ব জগৎ এর যিনি স্রষ্টা তিনি এই জগৎকে সাজিয়েছেন বিচিত্র সম্ভারে। সব - ই তাঁর সৃষ্টি। এই যে প্রকৃতি, নানা ফুল - ফল, গাছপালা, বৃক্ষরাজি সব ই তাঁর সৃষ্টি। আবার তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষ, পশু-পাখি, কীটপতঙগ ।এই আকাশ-বাতাস, জল-স্হল, এসবও তাঁর সৃষ্টি। আবার এই সৃষ্টি কালের নিয়েই বিলুপ্ত হয়ে যায়। অর্থাৎ জন্ম - মৃত্যু সবই তাঁর হাতে। সমস্ত জীবজগতের মধ্যে মানুষ হল অন্যতম। মানুষের মধ্যে আছে চেতনা ও জ্ঞান। মানুষ হল এমন এক সত্তা যে সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। সভ্যতার দ্বার উন্মুক্ত করতে পারে সকলের কাছে নব নব সৃষ্টির মাধ্যমে। ঈশ্বর এই মানবসত্তাকে কাজে লাগিয়েছেন তাঁর ই সৃষ্ট সমস্ত বস্তুকে কাজে বাঁচিয়ে রাখতে। তাঁর উপর ই ভার দিয়েছেন নর-নারী, শিশু প্রভৃতি এমনকি জীবকূলকেও বাঁচিয়ে রাখতে জন্ম-মৃত্যুর মাঝখানে সেবা করতে - আর্থিক সেবা, পীড়িতের সেবা, রোগীর সেবা, রোগের চিকিৎসা। সমাজে যাদের উপর এই সেবা করার দায়িত্ব তাদেরকে আমরা বলি চিকিৎসক। বাড়িতে ফুলদানিতে ফুল রেখে তার পরিচর্যা যেমন করেন যিনি ফুল সাজিয়েছেন তিনি তেমনি মানুষ যতদিন জীবিত থাকে তার জীবদ্দশা কালে তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন চিকিৎসক।
      যাঁর জন্মদিনে এই চিকিৎসক দিবস পালন করি আমরা তিনি হলেন ডঃ বিধান চন্দ্র রায়। তিনি ছিলেন চিকিৎসক রূপে এক বিস্ময়কর অভাবনীয় ব্যক্তিত্ব। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি অসাধারণ সাফল্য পেয়ে সম্মানের সঙ্গে এম. ডি. ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর তিনি এল.আর.সি.পি, এম.আর.সি.পি,এম.আর.সি.এম ও এফ. আর. সি. এস ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি ভারতীয় মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। পরে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো ও ভাইসচ্যান্সেলারের সম্মানজনক পদ লাভ করেন। তিনি আবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পদেও নির্বাচিত হন। তিনি ভারতরত্নও পান। বিধানচন্দ্র ছিলেন আধুনিক পশ্চিমবঙ্গের রূপকথার। বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির উন্নতি কল্পে তিনি বহু পরিকল্পনার বাস্তব রূপায়ণ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের দূর্গাপুর, চিত্তরঞ্জন প্রভৃতি স্থান কলকাতার লবণ হ্রদ ও কল্যাণী তাঁর মানব স্বপ্নের রূপায়ণ ।এমনি পশ্চিমবঙ্গের বহু কিছুই তাঁর পরিকল্পনার ফসল ।রোগ নির্ণয় ও নিরাময় তাঁর ছিল অভূতপূর্ব ক্ষমতা ।তিনি দেখেই বলে দিতে পারতেন রোগীর কী রোগ হয়েছে ।এবং তিনি খুব সহজ ও সাধারণ চিকিৎসা করেও রোগীকে সারিয়ে তুলতে পারতেন ।রোগীর কাছে ব্যবহার ছিল অত্যন্ত বন্ধু সুলভ ও শিশুর কাছে ছিল পিতৃ সুলভ ।ডঃবি. সি. রায় চাইল্ড মেমোরিয়াল হাসপাতাল তাঁর ই নামে গঠন করা হয়েছে। তিনি সারাজীবন অন্যান্য কাজে লিপ্ত থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসা ব্যবস্থাকে এমন এক সাধন মার্গে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন যাতে সাধারণ মানুষ, দরিদ্র মানুষ তাঁর চিকিৎসায় উপকৃত হয়েছিল। তিনি দরিদ্র নর-নারীর বিনা পয়সায় চিকিৎসা করেছেন। ওষুধও কিনে দিয়েছেন। এই অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, সুমহান জীবনাদর্শ, বলিষ্ঠ চরিত্র ধর্ম, উদার মানসিকতা, প্রগাঢ় পান্ডিত্য ও সুগভীর হৃদয়বোধ সম্পন্ন চিকিৎসক এই মানুষটিকে আমরা শুধু চিকিৎসা দিবসেই নয়, সারাজীবনই সকল চিকিৎসা ক্ষেত্রে আমরা অন্তরের শ্রদ্ধা, ভক্তি জানিয়ে আসব। এইরকম আরও অনেক চিকিৎসক সেইসময় পশ্চিমবঙ্গে ছিলেন। যেমন ডঃ নীলরতন সরকার ও ডাক্তার আর. জি. কর নাম উল্লেখযোগ্য। তাঁদের নামে আজ পশ্চিমবঙ্গে ডঃ নীলরতন সরকার হাসপাতাল ও ডঃ আর. জি. কর. হাসপাতাল বিভিন্ন চিকিৎসার প্রাণ কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। অসম্ভব মেধাবী ছাত্র হিসেবে বৃত্তি লাভ করে নিজেদের পড়াশোনা চালিয়েছেন ও জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন ।এমন আর একজন চিকিৎসকের নাম করা যেতে পারে তিনি হলেন ডঃ রোনাল্ড রস ।শুধু এ্যালাপ্যাথি চিকিৎসার ক্ষেত্রেই নয় এমন অনেক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক আছেন যাঁরা অনেক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার দ্বারা অনেক কঠিন অসুখও সারিয়েছেন ।যাঁরা আজকের এই চিকিৎসক দিবসে সমান সম্মানের অধিকারী - যেমন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ডঃহ্যানিমান, ডঃভোলানাথ চক্রবর্তী ইত্যাদি। এমন অনেক চিকিৎসক এ্যালাপ্যাথি চিকিৎসায় সফলতা লাভ করতে পারেন নি, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় সফল হয়েছেন ।
       বর্তমানে পৃথিবীর বহু দেশ আমেরিকা, চীন, ফ্রান্স, জাপান ও ভারতবর্ষ প্রভৃতি এমন অনেক দেশ আজ এক কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে। দেশের বহু মানুষ মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগ করোনা ভাইরাস কোভিড - ১৯ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। আজ পর্যন্ত ৫ লাখের উপরে লোক এই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বহু লোক মারাও গেছেন এবং যাচ্ছেনও। কিছু লোক আবার সুস্থ ও হচ্ছেন। যদিও এই রোগ নিরাময়ের জন্য ওষুধ এখনও তেমনভাবে আবিষ্কৃত হয় নি তবুও চিকিৎসা বিজ্ঞানের সমস্ত চিকিৎসকই এই রোগের প্রকৃত ওষুধ আবিষ্কার করার জন্য নিরলস  সাধনা চালিয়ে আসছেন। আজ চিকিৎসক দিবসে এঁনারা প্রত্যেকেই সম্মানের যোগ্য। লকডাউনে বিভিন্ন পর্যায়ে সুফল পেলেও এখনও রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি যথেষ্ট অস্হির। সংশ্লিষ্ট সকল চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রম এক্ষেত্রে আশার আলো দেখাচ্ছেন। এক্ষেত্রে এদের সবাইকে অভিনন্দন জানাই। ডাক্তাররা নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন করোনা ভাইরাস মোকাবিলা করতে। যদিও আমাদের সেভাবে এই রোগ নিরাময়ের জন্য যথেষ্ট হাসপাতাল গড়ে ওঠে নি। স্বাস্থ্য পরিসেবাও যথেষ্ট নয়। রোগীদের পরিচর্যা ও যথেষ্ট নয়। আশা করা যায় অদূর ভবিষ্যতে চিকিৎসকদের সঠিক চিকিৎসা, সুলভ ওষুধের যোগান ঠিক মত হলে করোনা ভাইরাসের চিত্রটা বদলাতে পারে। আমরাও যদি সজাগ থাকি তবে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভবপর হবে। বর্তমান চিকিৎসকরা যা বলছেন তাতে আমরা জানতে পারি যে এই কোভিড - ১৯ কীভাবে ছড়ায়। মানুষে মানুষে এই রোগ ছড়ায়। যাঁরা পরস্পরের কাছাকাছি আসেন তাঁরা (২ মিটার কম) দূরে বা তরল ফোঁটার মাধ্যমে, যদি সংক্রমিত লোক হাঁচেন ও কাশেন তাদের থেকে এই রোগ ছড়ায়। তাই এই সংক্রমিত ব্যক্তিকে দূরে রাখা উচিত। কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে। শুধু মানবদেহের মাধ্যমে নয়, মানব দেহের বাইরেও অনেক ক্ষেত্রে এই করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব দেখা যায়। আমরা বিভিন্ন চিকিৎসক মহলের আলোচনার মাধ্যমে ও সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের বিস্তারের প্রকোপ কীভাবে কমিয়ে আনা যায় তাও জানতে পারছি। মুখে মাস্ক পরতে হবে সব সময়, বার বার হাত সাবান দিয়ে ধুতে হবে, চোখ - নাক ও মুখে বার বার হাত না দেওয়া, গরম জল খাওয়া, গ্লাভস্, টুপি, পিপি ব্যবহার করা, সংক্রমিত ব্যক্তির থেকে আলাদা থাকা, স্কুল - কলেজ বন্ধ রাখতে হবে, যত দিন সম্ভব টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে কাজ করা। যদিও চিকিৎসকদের প্রচেষ্টায় সারা বিশ্বে টীকা তৈরীর কাজ পুরোদমে চলছে তবে নিরাপদে ভ্যাকসিন তৈরী হতে বলা হচ্ছে ১২-১৮ মাস লাগতে পারে। ক্লোরোকুইন দিয়ে কোভিড - ১৯ দূর করতে চিকিৎসক মহলের ছোটো ছোটো পরীক্ষার দ্বারা অনেকটাই সাফল্য পাওয়া গেছে। তবে আমাদেরও চিকিৎসকদের সাথে সহায়তা করার জন্য বিবেকবান হতে হবে। সামাজিক সুশৃঙ্খল হতে হবে।
        এই জন্যই চিকিৎসকদের সঙ্গে জনগণের সক্রিয় মোকাবিলা করা উচিত। পাশেও থাকা উচিত ।তবেই করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করা যাবে। এই রোগ নিরাময়ের জন্য সকল চিকিৎসকরা বর্তমানে যে ভূমিকা পালন করে আসছেন সেজন্য তাঁদের এই চিকিৎসক দিবসে (১ লা জুলাই) আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
রচনাকাল : ৩০/৬/২০২০
© কিশলয় এবং মোনালিসা রায় কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 13  China : 20  France : 6  Germany : 4  Hungary : 1  India : 174  Ireland : 18  Russian Federat : 15  Saudi Arabia : 6  Sweden : 21  
Ukraine : 11  United States : 176  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 13  China : 20  France : 6  Germany : 4  
Hungary : 1  India : 174  Ireland : 18  Russian Federat : 15  
Saudi Arabia : 6  Sweden : 21  Ukraine : 11  United States : 176  
লেখিকা পরিচিতি -
                          মোনালিসা রায় ১১ই ফেব্রুয়ারি হাওড়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।

উনি অনার্স গ্রাজুয়েট ও এম. এ। লেখালেখি করতে উনি খুবই ভালোবাসেন। ওনার লেখালেখির অনুপ্রেরণা ওনার বাবা, মা।

লেখালেখি ছাড়াও আঁকা, গানেও উনি সমান উৎসাহী। 
                          
  • ১০ম বর্ষ ২য় সংখ্যা (১১০)

    ২০২০ , জুলাই


© কিশলয় এবং মোনালিসা রায় কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
জাতীয় চিকিৎসক দিবস by Monalisa Roy is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৫০৭২০২
fingerprintLogin account_circleSignup