চারিদিকের আবহাওয়ায় কেমন গুমোট ভাব।কেমন যেনো একটা থমথমে ভাব।অনেকদিন পরে প্রায় দেড় বছর পরে আজ নীল বাড়ি ফিরছে। ডঃ নীলাঞ্জন রায় । একুশ বছরের সেই বিখ্যাত ঐতিহাসিক স্থান কার্গিল , যে জায়গা এই যুগের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রোয়েছে , সেখানকার সেনাবাহিনী বিভাগের একজন স্বনামধন্য সার্জেন নীল। সারা বিশ্ব জুড়ে করোনা সংক্রান্ত যে ভয়াবহতা শুরু হয়েছে , যে ভাবে সংক্রামিত হচ্ছে তাতে আর সবার মতো নীলও খুব উদ্বিগ্ন। উদ্বিগ্ন তার বাড়ির লোকজনকে নিয়ে । সবাই ঠিক আছে তো ? এমন অজানা আশঙ্কায় খামিক ভীত নীল।সে বাড়ি থেকে হাজার মাইল দূরে থাকে বোলে হয়তো সব কথা বলে না তাকে। কাজ তাকে এতো টাই ব্যাস্ত রাখে যে , নীল ও সময় পায় না বিস্তারিত ভাবে আলাপচারিতা চালিয়ে যেতে।
একদম ছোট্টবেলা থেকেই নীলের অনেক স্বপ্ন ছিলো এই কার্গিলকে নিয়ে। নীলের তখন ছয় বছর , টিভি টার সামনে দাঁড়িয়ে অবাক নয়নে দেখেছিলো বীর জওয়ানদের আত্মত্যাগ।মনে পড়ে , নীল দিন পনেরো স্বাভাবিক হতে পারিনি।বিশেষ কোরে ১৪ই মে সৌরভ কালিয়া সহ যে কয়েকজন ভারতীয় সেনাদের কে পাশবিক অত্যাচারের কবলে পড়ে প্রাণ দিতে হয়েছিলো ।তারপরে তো লাগাতার ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনী প্রায় ৬০ দিন ধরে যুদ্ধ কোরেছিলো। জল-স্থল-বায়ুসেনা
এই তিন দিক থেকে আক্রমণ চালায় ভারতীয় সেনারা , এর ফলে পাকিস্তানি সেনারা ধীরে ধীরে পিছু হটতে থাকে।
সেদিন ,১৯৯৯ সালের ২৬ শে জুলাই ৫৯৯ জন মতো দুঃসাহসিক সেনার মৃত্যু ও ১৫৬৩ জনের আঘাতের বিনিময়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী সমস্ত জায়গা নিজেদের অধীনে নিতে সক্ষম হয় ও পাকিস্তানি সেনাকে পিছু হটতে বাধ্য করে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কার্গিল যুদ্ধে জয়লাভ কোরেছিলো ভারত। আর সেই থেকেই ২৬ শে জুলাই কার্গিল যুদ্ধে শহীদ জওয়ানদের শ্রদ্ধা জানানো হয় ।
কার্গিলের দুঃখের কাহিনী ভাবতে ভাবতে নীল খেয়াল করেনি কখন সামরিকবাহিনীর গাড়ি এয়ারপোর্টের সামনে চলে এসেছে। এক জওয়ান নীলকে বোললো , ' ডক্টর সাব হামলোগ আগায়ে"।
নীল বললো : ঠিক হ্যায় ভাইসাব
জওয়ান : সাব , উধার উও কোভিট টেস্ট হ রাহা
হ্যায়।
নীল সেখানে গিয়ে টেস্ট করিয়ে বেরোবার সময় দেখলো প্রত্যেকে টেস্ট করানোর জন্য অপেক্ষা করছে। সারা বিশ্বের অবস্থা যে কতোটা আশঙ্কাজনক তা ভেবে নীলকে বেশ চিন্তিতই লাগলো।এমন সময় নীলের মোবাইলটা বেজে উঠলো , পকেট থেকে বের কোরে দেখলো নীলা ফোন কোরছে ,
নীলা : দাদাই , কোথায় আছিস ? আর কতক্ষন অপেক্ষা কোরবো ? তাড়াতাড়ি আয় দাদাই।
নীল : দাঁড়া , আমি আগে সব ফর্মালিটিস গুলো মেটাই , তারপরে ফ্লাইট , তারপরে তো কোলকাতা।
নীল ভাবে আজ সারাবিশ্বের কোথাও শান্তি নেই।কার্গিলের সেই মর্মান্তিক ঘটনার পর থেকেই নীল ওই আহত জওয়ানদের সেবা কোরবে এমনটাই ভেবেছিলো , সেটাই সে কোরছে। নীলের দেশের প্রতি আলাদা একটা অনুভুতি আছে। এখন তো বিশ্বে কোভিট আতঙ্ক , ওদিকে চলছে সীমান্তে গোলা বর্ষণ। এ কেমন দেশে আমরা আছি । একুশ বছরের সেই কার্গিল যুদ্ধ , আজকের এই করোনা , ওদিকে চীন সব যেন মিলেমিশে এক হয়ে যাচ্ছে।
অবশেষে , কলকাতা।নীলের জন্মস্থান।বাড়ির পথে নীল। নীল নিজের মনকে বলে , একটু শান্তি কি কোনো মানুষ চায় না , এতো মানুষের বলিদান কি মানুষের মন কে শান্তি দিতে পারে না ?স্বাধীনতা তো মানুষকে শান্তি এনে দেয় , তবু কেনো চারিদিকে এতো অশান্তি । অনেক দিন পরে তার সেই চেনা শহর । প্রতি বছর ২৬ শে জুলাই কার্গিল বিজয় দিবসে সেনাবাহিনীর তরফ থেকে নীলকে একটা বাংলা গান পরিবেশন করার অনুরোধ করে , তবে আজ একটা গান নীলের অজান্তে মনের মাঝে এসে একটা মুক্তির স্বাদের অনুভূতি তাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে , এই মুক্তির আনন্দ নীল সবাইকেই দিতে চায় । তাই সে গুনগুনিয়ে গেয়ে চলে বাড়ি ফেরার পথে ----
মুক্তিরও মন্দিরও সোফানো তলে
কতো প্রাণ হোলো বলিদান
লেখা আছে অশ্রু জলে..........
রচনাকাল : ১৬/৭/২০২০
© কিশলয় এবং লিজা মন্ডল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।