• ৯ম বর্ষ ১১তম সংখ্যা (১০৭)

    ২০২০ , এপ্রিল



তবে যাওয়ার আগে
আনুমানিক পঠন সময় : ৪ মিনিট

লেখিকা : সঞ্চারী বোস
দেশ : India , শহর : কোলকাতা

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , জুলাই
প্রকাশিত ৪ টি লেখনী ১৬ টি দেশ ব্যাপী ২৩০৩ জন পড়েছেন।
রোজ একটু একটু করে চোখের সামনে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর মত শেষ হতে দেখছিল সম্পর্কটাকে পর্ণা।কয়েকমাস ধরে উজ্জ্বলের ব্যাবহার বদলেছে।বিশেষ করে গত একমাসে উজ্জ্বলের ব্যাবহার ও কথাবার্তায় আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করে সে।নিজের প্রিয় মানুষের এই সুক্ষ পরিবর্তন গুলি অনেকদিন আগে থেকেই বুঝতে পারছিল সে।শান্তশিষ্ট, বুদ্ধিমতী মেয়ের পক্ষে এইটা বোঝার কোনো অসুবিধা হলো না যে তার প্রেমিক অল্প অল্প করে দূরে সরে যাচ্ছে।সারারাত উজ্জ্বল আজকাল অনলাইন থাকে...থাকে পর্ণা ও কিন্তু আজকাল তাদের নিস্তব্ধতাও কথা বলে না।নাহ কোনো মনমালিন্য বা মতবিরোধ তো হয় না তাদের।পর্ণা চুপচাপ কাঁদে অথচ তার কান্না গুলো বালিশেই শুকিয়ে যায়...পৌঁছায় না উজ্জ্বল পর্যন্ত।
গত একমাসে উজ্জ্বল বদলে গেছে তার কারন হলো তার নতুন ফেসবুক ফ্রেন্ড নীলাঞ্জনা।স্বপ্নের নারী যাকে বলে আর কি...নীলাঞ্জনা যেমন রূপে ঠিক তেমন গুণী।ফুটফুটে মিষ্টি মুখে কালো টিপটা জ্বলজ্বল করে তার।উজ্জ্বল এই একমাস হলো নীলাঞ্জনার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।অফিসে কাজের ফাঁকে তার প্রোফাইল পিকচার টা গালে হাত দিয়ে দেখে সে।নীলাঞ্জনা ভারী বাকপটু মেয়ে।আবার রান্নাবান্না ও করে ছবি পোস্ট করে সে।এ যেন রূপে লক্ষী আর গুনে সরস্বতী।নীলাঞ্জনাকে ফেসবুকে প্রথম দেখে উজ্জ্বল তিনমাস আগে তারপর ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট...আস্তে আস্তে কথা শুরু।আর এখন?এখন তো নীলাঞ্জনাও আভাস ইঙ্গিতে উজ্জ্বলকে বুঝিয়ে দেয় যে তার দিক থেকেও সে রাজি আরো এগিয়ে যাওয়ার জন্য।
একদিন রাত দুটো হবে...বাইরে ঝমঝম করে বৃষ্টি।গল্প হচ্ছে উজ্জ্বল আর নীলাঞ্জনার।গল্প আস্তে আস্তে অন্য পথে ধাবিত হচ্ছে।বৃস্টির বেগ এর সাথে তাল মিলিয়ে আবেগ বাড়ছে দুজনের।এদিকে পর্ণা অনলাইনে বসে আছে...বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটা তাকে সান্ত্বনা দিয়ে মাটিতে মিশে যাচ্ছে।
কথা বলতে বলতে উজ্জ্বল নিজেকে আর সামলে রাখতে পারল না।নীলাঞ্জনা কে বলেই ফেলে সে মনের কথা।সুন্দরী নীলার ও টাইপ করতে গিয়ে হাত কাঁপে।কাঁপা কাঁপা হাতে শুধু "আমিও" লিখে অফলাইন হয়ে যায় সে।উজ্জ্বলের সারারাত ঘুম হলো না।পাশবালিশটা জড়িয়ে ধরে কত স্বপ্ন এঁকে নেয় সে।অজান্তেই মুখে ফুটে ওঠে হাসির রেখা।মনে মনে ভাবতে থাকে কোথায় পর্ণা আর কোথায় এই নীলাঞ্জনা!এতদিন পর্ণাকে সে অনেক উপেক্ষা করেছে কিন্তু এইবার তাকে সরাসরি বলে দিতেই হবে।এতদিনে অবশ্য পর্ণা বুঝেই গেছে কিছু।এই ভেবে সে চোখ বুঝে নীলাঞ্জনার হাত ধরে হারিয়ে যায় স্বপ্নপুরীতে।

- হ্যালো পর্ণা..
- হম বলো
-আজকে বিকালে অফিসের পর দেখা করতে পারবে?
- হঠাৎ?
-নাহ মানে কিছু কথা ছিল
- ঠিক আছে গোলপার্কের মুখে ওই কফিশপে এসো দেখা করে নেব।
-ঠিক আছে।পাক্কা সাড়ে ছয়টার।এসো কিন্তু।
-হম আসবো।
ফোনটা রেখে পর্ণা আবার কম্পিউটারে চোখ রাখে।বুঝতে পারে উজ্জ্বল হয়তো আজকে কিছু বলতে চায়।যেদিন প্রপোজ করেছিল এইরকম কাঁপা গলায় ফোন করেই সে ডেকেছিল।
সন্ধ্যে সাতটা বাজে।কফিশপের দরজা ঠেলে ঢুকতেই উজ্জ্বলকে দেখতে পেলো পর্ণা।তবে উজ্জ্বলকে আজ বেশ উজ্জ্বল লাগছে।সাইড ব্যাগ পাশে রেখে পর্ণা গিয়ে বসে তার বিপরীতে।উজ্জ্বল তার অপরাধীর মত চোখ দুটো পর্ণার চোখে ঠিক রাখতে পারছে না।
- কিছু বলবে উজ্জ্বল?
- ভালো আছো তো তুমি?
-যেমন রেখেছো আর কি।কিছু বলবে বলছিলে!
-হ্যাঁ মানে পর্ণা...দেখো আমাদের সম্পর্কটা ইদানিং খুব...মানে তুমি বুঝতে পারছো!
- হম..ব্রেকআপ করতে চাও তাই তো?
-আসলে আমি ভেবেছিলাম সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু হঠাৎ..
- হঠাৎ কি?বলো?
- হঠাৎ আমার জীবনে নীলাঞ্জনা চলে আসলো।সব বদলে গেল পর্ণা।বুঝতেই পারলাম না কবে কিভাবে কি করে কিন্তু হঠাৎ করেই মনে দাগ কেটে গেল।
টেবিলের সাইডটা চেপে ধরে পর্ণা।মুখটা লাল হয়ে আসে... চোখে জল ও আসে না তার।পাথরের মতন বসে থাকে।উজ্জ্বল বলতে থাকে নীলাঞ্জনার কথা আর পর্ণা দেখতে থাকে নির্লজ্জ্ব প্রেমিকের চেহারা।
উজ্জ্বলের কথা শেষ হওয়ার অপেক্ষা করে সে।
-আর কিছু বলবে?
- না আর কিছু না।পর্ণা তুমি ভালো মেয়ে।অনেক ভালো ছেলে পাবে দেখো...
পর্ণার চোখ গেল হঠাৎ কফির সাথে দেওয়া টিসুপেপারের দিকে।প্রথমবার উজ্জ্বল যখন তাকে প্রপোজ করেছিল উত্তরে সে যাওয়ার আগে টিসুপেপারে 'হ্যাঁ' লিখে গিয়েছিল।উজ্জ্বল যখন নীলাঞ্জনার প্রশংসায় ব্যস্ত তখন পর্ণা পেন বের করে টিসুপেপারে কিছু লিখলো।
-তাহলে আমি আসি উজ্জ্বল।তুমি আর নীলাঞ্জনা খুব ভালো থেকো।
পর্ণা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো।উজ্জ্বল ও উঠে দাঁড়ায়।বাইরে গিয়ে ক্যাব আসার অপেক্ষা করে পর্ণা পাশে উজ্জ্বল এক অচেনা মানুষের মত দাঁড়িয়ে থাকে।ক্যাব আসতেই পর্ণা গাড়ির দরজা খুলে ওঠার আগে উজ্জ্বলের হাতে টিসুপেপারের চিরকুট দিয়ে যায়।গাড়ি চলে যায়।রাস্তা পার হয়ে উল্টোদিকে আসে উজ্জ্বল।চিরকুটটা খোলে।সুন্দর গোল গোল হাতের লেখায় লেখা "নীলাঞ্জনা কর্মকার আমারই ফেক আইডি। নে এইবার বিয়ে করে সংসার কর হারামজাদা"।
ক্যাবে চোখ মুছতে মুছতে খিল খিল করে হেসে ফেলে নীলাঞ্জনা..না না পর্ণা।
রচনাকাল : ১৬/৪/২০২০
© কিশলয় এবং সঞ্চারী বোস কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 4  China : 10  France : 1  Germany : 6  India : 208  Ireland : 28  Russian Federat : 2  Saudi Arabia : 6  Ukraine : 8  United States : 361  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 4  China : 10  France : 1  Germany : 6  
India : 208  Ireland : 28  Russian Federat : 2  Saudi Arabia : 6  
Ukraine : 8  United States : 361  
লেখিকা পরিচিতি -
                          সঞ্চারী বোস ১৯৯২ সালের ২২ শে জানুয়ারি কোলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।
বর্তমানে তিনি এইচআর এক্সিকিউটিভ, পাশাপাশি তিনি ঘরোয়া শিক্ষকতাও করেন।
ছোটবেলায় সমস্ত বঙ্গসন্তানের মতনই তাঁর সাহিত্যচর্চার শুরু হয় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছত্রছায়ায়। রহস্য ও হাস্যরসপ্রেমী হওয়ায়  তাঁর প্রিয় লেখকের শীর্ষস্থানে আছেন শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শিবরাম চক্রবর্তী। গল্প, কবিতা, উপন্যাস পড়ার নেশা বিদ্যমান। মনের এলোমেলো চিন্তা গুলো তিনি লিখতে ভালোবাসেন। তিনি বিভিন্ন অনলাইন পত্র - পত্রিকায় লেখালেখি করেন। 
                          
  • ৯ম বর্ষ ১১তম সংখ্যা (১০৭)

    ২০২০ , এপ্রিল


© কিশলয় এবং সঞ্চারী বোস কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
তবে যাওয়ার আগে by Sanchari Bose is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৩৬২৪৭৭
fingerprintLogin account_circleSignup